Friday 4 June 2010

আমার দেশ পত্রিকার প্রকাশনা বাতিল

দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার প্রকাশনা (ডিক্লারেশন) বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার রাত ১০টায় একটি সরকারি সূত্র নিশ্চিত করেছে যে ‘প্রেস অ্যাণ্ড পাবলিকেশন্স অ্যাক্ট’ অনুযায়ী ঢাকার জেলা প্রশাসক পত্রিকার প্রকাশনা বাতিল করেছেন। তবে রাত ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পত্রিকার ছাপার কাজ চলছিল বলে জানা গেছে।
এর আগে আজ বিকেল পাঁচটার দিকে পত্রিকাটির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে পত্রিকাটি বন্ধ করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে বলে অভিযোগ করেন।
এর আগে আজ সকালে পত্রিকাটির প্রকাশক হাসমত আলীকে একটি গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন ধরে নিয়ে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রাখে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কারওয়ান বাজারে আমার দেশ কার্যালয়ে মাহমুদুর রহমান সংবাদ সম্মেলন করেন।
এর পর রাতে হাসমত আলী বাদী হয়ে মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় একটি মামলা করেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, দণ্ডবিধি ৪১৯, ৪২০ ও ৫০০ ধারায় দায়ের করা মামলায় হাসমত আলী অভিযোগ করেন, তিনি গত বছর আমার দেশের সব শেয়ার মাহমুদুর রহমানের কাছে বিক্রি করে দেন। যা জয়েন্ট স্টক কোম্পানির মাধ্যমে হস্তান্তরও করা হয়। এরপর ২০০৯ সালের ১১ অক্টোবর প্রকাশকের পদ থেকে তিনি নির্ধারিত ফরমে আবেদন করে পদত্যাগ করেন। কিন্তু তার পরও মাহমুদুর রহমান পত্রিকায় প্রকাশক হিসেবে হাসমত আলীর নাম ছাপিয়ে আসছেন। এর মধ্যে পত্রিকাটির বিরুদ্ধে ৩০টি মামলা হয়েছে, সবগুলোতে তাঁকেও আসামি করায় তিনি সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হচ্ছেন।
এদিকে আজ বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে মাহমুদুর রহমান বলেন, আমার দেশ বন্ধের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে একটি গোয়েন্দা সংস্থা গতকাল সকালে প্রকাশক হাসমত আলীকে তাঁর শাহজাহানপুরের বাসা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রাখে। তাঁর কাছ থেকে দুটি কাগজে সই নেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘এর মাধ্যমে পত্রিকাটি বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং আমাকে গ্রেপ্তার করা হবে। কিন্তু আমার ভয়-ডর বলে কিছু নেই। আমরা যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করব। আমার বিরুদ্ধে ৩১টি মামলা। এখন গ্রেপ্তারের অপেক্ষা করছি।’
মাহমুদুর রহমানের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে গোয়েন্দা সংস্থার একজন পদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, হাসমত আলীকে তাঁরা ডেকে আনেননি। তিনি নিজেই অভিযোগ দিতে এসেছিলেন। অভিযোগ দেওয়ার পর আবার বাসায় ফিরে গেছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে হাসমত আলীর সঙ্গে কয়েকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনো কথা বলতে চাননি।
মাহমুদুর রহমান বলেন, হাসমত আলীকে ভয় দেখানো হয়েছে। এখন তিনি কারও সঙ্গে কথা বলার সাহস পাচ্ছেন না।
হাসমত আলীর পরিবারের সদস্যরা জানান, জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে মঙ্গলবার সকাল নয়টার দিকে একটি গোয়েন্দা সংস্থার তিন-চারজন সদস্য শাহজাহানপুরের বাসা থেকে তাঁকে নিয়ে যান। এরপর তাঁরা আর কিছু জানেন না। বেলা দুইটার পর তিনি বাসায় ফেরেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মাহমুদুর রহমান বলেন, গণতান্ত্রিক দেশে একটি নির্বাচিত সরকারের আমলে এভাবে গোয়েন্দা সংস্থা কাউকে তুলে নিয়ে যাবে, সেটা চিন্তা করা যায় না।
মাহমুদুর রহমান বলেন, ২০০৮ সালে তিনি আমার দেশ পত্রিকার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেন। এরপর পত্রিকাটির সম্পাদকের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য তিনি জেলা প্রশাসককে চিঠি দেন। ওই সময় থেকেই ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে রয়েছেন তিনি। হাসমত আলীর নাম প্রকাশক থেকে বাদ দেওয়ার অনুমতি মিলেছে কিন্তু এর পরিবর্তে মাহমুদুর রহমানের নাম ব্যবহারের অনুমতি মেলেনি। ওপরের নির্দেশ আছে বলে জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে বারবার ঘোরানো হচ্ছে।
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-06-01/news/67721

No comments:

Post a Comment