Saturday 29 January 2011

বিদেশে কলঙ্কিত হচ্ছে দেশ


আলাউদ্দিন আরিফ

বাংলাদেশের কলঙ্ক বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। স্বাধীনতার কিছুদিন পর থেকে শুরু হয় এই হত্যাকাণ্ড। তার আগে প্রতিবেশী দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নকশালপন্থী কমিউনিস্ট তরুণদের দমন করার জন্য নয়াদিল্লি সরকার ১৯৭১ সালে সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ (সিআরপি) দিয়ে অগণিত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটায়। সে সময় বাংলাদেশে চলছিল হানাদার পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। কিন্তু দুঃখজনকভাবে দেশ মুক্ত হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতে সরকারবিরোধীদের সন্দেহভাজন উগ্রপন্থী বলে খুন করার সরকারি কৌশল চালু করা হয়। ওই সময় কমিউনিস্টদের গোপন সশস্ত্র সংগঠন পূর্ববাংলা সর্বহারা পার্টির কয়েকজন ক্যাডার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পরই আটক অবস্থায় নিহত হয়। তাদের মধ্যে ছিলেন কমরেড আনিস, কমরেড মুজিব, কমরেড বাদল, কমরেড লালগাজীসহ অনেকে।
তত্কালীন সরকারের সেই ধারাবাহিকতায় আজও চলছে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিশ্রুতি, আ’লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে অগ্রাধিকার, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মানবাধিকার কর্মীদের জোরালো প্রতিবাদ সত্ত্বেও কোনোভাবেই এসব হত্যাকাণ্ড বন্ধ হচ্ছে না। এতে রাষ্ট্র দেশের মানুষের সাংবিধানিক ও নাগরিক অধিকার কেড়ে নেয়ার পাশাপাশি বহির্বিশ্বে দেশের ইমেজও চরমভাবে ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
প্রতিদিন সারাদেশে বিপুলসংখ্যক মানুষ হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছে। এগুলো সব বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নয়। মানবাধিকার কর্মী ও বিশিষ্ট আইনজীবীদের মতে, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে সংঘটিত হত্যাগুলোই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। পাশাপাশি সরকারি দল বা রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ব্যক্তিদের আশ্রিত বিভিন্ন বাহিনীর হাতে যেসব হত্যাকাণ্ড হয় সেগুলোও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বা এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিংয়ের আওতায় পড়ে। এর বাইরে প্রতিনিয়ত যেসব হত্যাকাণ্ড হয় সেগুলো ‘ফৌজদারি অপরাধ বা ক্রিমিনাল অফেন্স’। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সূত্রপাত নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কমরেড রইসউদ্দিন আরিফ আমার দেশ-এর সঙ্গে এক সাক্ষাত্কারে বলেন, এ হত্যাকাণ্ড শুরু হয় ’৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর পরিকল্পনা অনুসারে মুজিব বাহিনীর দুর্বৃত্তরা শত শত দেশপ্রেমিক বিপ্লবীকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করেছিল। গুলশানের একটি বাড়িতে পাকিস্তানি জেনারেলদের সঙ্গে বৈঠকে শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীলদের নির্মূল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। জি ডব্লিউ চৌধুরী ‘দি লাস্ট ডেজ অব পাকিস্তান’ বইয়ে উল্লেখ রয়েছে ‘মুজিবুর রহমান গর্বসহকারে বলতেন, তিনি পাকিস্তানের বামপন্থীদের নির্মূল করে দিবেন’। যার ফলশ্রুতিতে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালেও অভিযান, বৈঠক ও আলোচনার কথা বলে বামপন্থী সমর্থক মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপকভাবে হত্যা করা হয়েছিল। এ থেকে স্বাধীন বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শুরু।
কিছুটা দ্বিমত পোষণ করে অধিকারের প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট আদিলুর রহমান খান বলেন, ’৭১-এর ২৬ মার্চ থেকে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে যুদ্ধ ছিল। ওই সময়কার হত্যাকাণ্ডগুলো বিচারিক জায়গায় হয়েছে কি হয়নি এটা নতুন বিতর্কের জন্ম দেবে। ওই সময় মুজিবনগর সরকারের হাতে ক্ষমতা ছিল না। ক্ষমতা ছিল পাকিস্তানের হাতে। আমাদের সংবিধানেও ’৭১-এর ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডগুলোকে ইনডেমনিটি দেয়া রয়েছে। তাই ওইসব হত্যাকে বিচারবহির্ভূত বলা যায় না। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শুরু ১৯৭২ সাল থেকে। এরপর ’৭৩ সালে জাতীয় রক্ষীবাহিনীর হাতে অসংখ্য বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হয়।
দেশে কত মানুষ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার তারও সঠিক কোনো হিসাব পাওয়া যায়নি। ২০০৪ সালে র্যাব গঠনের পর তাদের ক্রসফায়ারে মারা গেছে প্রায় সাতশ’ জন। একই সময়ে পুলিশের ক্রসফায়ারে মারা গেছে এক হাজারের বেশি। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বিপ্লবী বামপন্থী ও স্বাধীনতা যুদ্ধে বিরোধিতাকারীদের দমনের নামে বিপুলসংখ্যক মানুষ বিভিন্ন বাহিনীর হাতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে প্রায় প্রতিবছর, প্রতিমাসেই অসংখ্য মানুষ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। ১৯৭৩ সালে জাতীয় রক্ষিবাহিনী সৃষ্টি করে পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল), পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল), পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টির নেতা ও কর্মীদের পাইকারিহারে হত্যা করা হয়েছে। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সর্বাধিক শিকার হয় পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টির নেতাকর্মীরা। ১৯৭৫ সালের ২ জানুয়ারি এ দলের প্রতিষ্ঠাতা ও তত্কালীন প্রধান সিরাজ সিকদার নিহত হন পুলিশি অ্যাকশনে।
স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের ২০ হাজার, মতান্তরে ২৪ হাজার বা ৩০ হাজার নেতাকর্মী বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। যদিও অনেকেই বলেন, তারা এসবের পক্ষে প্রমাণ হাজির করতে পারেননি। জাসদের মহানগর কার্যালয় থেকে প্রকাশিত ‘প্রেরণার মুখ’ শীর্ষক একটি সংকলনে ১৯৭২ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার ৩৫০ নেতাকর্মীর একটি তালিকা দেয়া হয়েছে। জাসদের দাবি ওই তালিকাটি আংশিক। সংকলনটিতে উল্লেখ রয়েছে আওয়ামী লীগের প্রথম আমলে হাজার হাজার জাসদ কর্মীকে হত্যা ও নির্যাতন করা হয়েছে। মুশতাকের শাসনামলেও ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয় জাসদ কর্মীরা। সেনা শাসকদের সময়েও জাসদকে দমানোর জন্য প্রকাশ্য ও গোপনে বহু নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে বলে ‘প্রেরণার মুখ’ সংকলনটিতে উল্লেখ রয়েছে।
র্যাব গঠনের পর র্যাব-পুলিশের সংবাদ বিবৃতি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, চরমপন্থী হিসেবে পরিচিত পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল), পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল) (জনযুদ্ধ), পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল) (লাল পতাকা), পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি (সিসি), পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি (এমবিআরএম), বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল), শ্রমজীবী মুক্তি আন্দোলন, নিউ বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি ও জাসদ গণবাহিনীসহ বিভিন্ন সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক নেতাকর্মীরা বিচারবহির্ভূত হত্যকাণ্ডের (ক্রসফায়ার) শিকার হয়েছে। এছাড়া র্যাব-পুলিশের দেয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তিগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী, দাগি আসামি, বহু মামলার আসামি হিসেবে অভিযুক্ত অনেক ব্যক্তি র্যাব ও পুলিশের অভিযানে বিচারবহির্ভূত হত্যকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।
২০০৪ সালের ২১ জুন র্যাব গঠন করা হয়। ওই বছর ২৪ জুন র্যাবের প্রথম ক্রসফায়ারে একজন নিহত হয়। এরপর থেকে ক্রসফায়ার নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। ২০০৪ সালের ১৮ অক্টোবর সারাদেশে একযোগে অভিযানে নামে র্যাব। ওই বছর ২৬ অক্টোবর র্যাব গঠনের বৈধতা নিয়ে আদালতে মামলা হয়। কিন্তু ওই মামলা আদালতে টেকেনি। এরপর থেকে শুধু র্যাবই নয়, পুলিশ বাহিনীও প্রতিযোগিতা করে ক্রসফায়ার করতে থাকে। দেশ-বিদেশে নানামুখী প্রশ্ন ওঠে এসব হত্যাকাণ্ড নিয়ে। ক্রসফায়ারকে চিহ্নিত করা হয় বিনাবিচারে হত্যাকাণ্ড হিসেবে। দেখা হয় মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন হিসেবে। ২০০৪ সালের ২৯ অক্টোবর বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের এক অনুষ্ঠানে তত্কালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবর বলেন, র্যাবের জন্য ইনডেমনিটির প্রয়োজন নেই; কারণ সন্ত্রাসীরা র্যাবকে আক্রমণ করলে, তখন আত্মরক্ষার তাগিদে র্যাবও পাল্টা গুলি করে। এতে করে সৃষ্ট ক্রসফায়ারে সন্ত্রাসীর মৃত্যু ঘটছে। ফলে আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থায় ইনডেমনিটির প্রসঙ্গ আসে না।
ওই সময় আওয়ামী লীগ ক্রসফায়ারের বিরুদ্ধে বেশ সোচ্চার ছিল। ক্ষমতায় এলে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধেরও প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অনেকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধের ঘোষণা দেন। কিন্তু এরপরও ক্রমাগতভাবেই চলছে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড

এক বছরে ঢাকায় ৪৮২৯ রিমান্ড

অলিউল্লাহ নোমান

রিমান্ডের নামে নির্যাতন অব্যাহত আছে। গত এক বছরে শুধু ঢাকা মহানগরে ৪ হাজার ৮২৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। একটি রিমান্ড মঞ্জুরের ক্ষেত্রেও হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা মান্য করা হয়নি। প্রতিটি রিমান্ডের ক্ষেত্রেই অমান্য হয়েছে হাইকোর্ট বিভাগের বিদ্যমান নির্দেশনা। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা লঙ্ঘন করেছেন অধস্তন আদালত।
প্রতিপক্ষ নির্যাতনের অন্যতম হাতিয়ার হচ্ছে রিমান্ড। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের কারণে-অকারণে রিমান্ড মঞ্জুর করা হচ্ছে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে। এমনকি আসামি উপস্থিত না করেও রিমান্ড মঞ্জুরের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার সময় কারাগারে আটক ছিলেন—পরবর্তীতে এমন ঘটনায়ও শ্যোন এরেস্ট দেখিয়ে রিমান্ড চাওয়া হয়েছে বিরোধীদলীয় একাধিক নেতাকে। অধিকারের এক আলোচনা সভায় বিশিষ্ট নাগরিকরা রিমান্ডকে রাষ্ট্রীয় বর্বরতা হিসেবেও উল্লেখ করেছেন।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গত বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত শুধু ঢাকার সিএমএম কোর্টে ৩৬৫ দিনে ৪ হাজার ৮২৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে। গড়ে প্রতিদিন ১৩ জনকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে শুধু ঢাকা মহানগরে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রিমান্ড মঞ্জুরের ঘটনা ঘটেছে কোতোয়ালি, বংশাল, লালবাগ, চকবাজার ও কামরাঙ্গিরচর থানার অধীনে। এসব থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এক বছরে ৬৩৮ জনকে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। সবচেয়ে বেশি রিমান্ডের ঘটনা ঘটেছে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকা মহানগরে ৪৩৩ জনকে রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে জুলাই মাস। জুলাই মাসে ৪৩০ জনকে রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে ঢাকা মহানগরে। গেল ডিসেম্বরে রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে ৪১২ জনকে।
ঢাকার সিএমএম কোর্টে অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত বছরের জানুয়ারিতে ৪০৫, ফেব্রুয়ারিতে ৪৩৩, মার্চে ৪১২, এপ্রিলে ৩৮৭, মে মাসে ৩৯১, জুনে ৪১০, জুলাইতে ৪৩০, আগস্টে ৪০৭, সেপ্টেম্বরে ৩৬৭, অক্টোবরে ৩৭৪, নভেম্বরে ৪০১ এবং ডিসেম্বরে ৪১২ জনকে রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকেই আছেন, যাদের একাধিকবার রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।
সিএমএম কোর্টের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, এসব রিমান্ড মঞ্জুরের আগে কখনও কারও মেডিকেল রিপোর্ট নেয়া হয়নি এবং রিমান্ড ফেরতের পরও মেডিকেল রিপোর্ট দেখা হয়নি। অথচ হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনায় রয়েছে
রিমান্ড মঞ্জুরের আগে মেডিকেল রিপোর্ট পরীক্ষা করতে হবে। রিমান্ড থেকে ফেরতের সময়ও মেডিকেল রিপোর্ট দেখতে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রতি নির্দেশনা রয়েছে হাইকোর্ট বিভাগের। এছাড়া রিমান্ড মঞ্জুরের আগে মামলা ভালো করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার নির্দেশনাও রয়েছে হাইকোর্ট বিভাগ থেকে। হাইকোর্ট বিভাগের এই নির্দেশনার কোনো তোয়াক্কাই করে না ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। পুলিশ রিমান্ড চাইলেই হলো, মঞ্জুর হয় ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, রিমান্ডের নামে পুলিশ ও আইনজীবীদের বাণিজ্য চলে আদালতে। যে কোনো মামলায় কাউকে ধরলেই রিমান্ডে নেয়া হবে—এই ভয় দেখিয়ে আত্মীয়-স্বজনদের কাছে মোটা অংকের টাকা দাবি করা হয়। আবার আসামির রিমান্ড না চাইলেও আইনজীবীদের পক্ষ থেকে আত্মীয়-স্বজনকে বলা হয় রিমান্ড চাওয়া হয়েছে, বাতিল করতে অনেক টাকা লাগবে। নিরূপায় হয়ে তখন রিমান্ড থেকে বাঁচার জন্য আত্মীয়-স্বজনরা ধার-দেনা করে পুলিশ ও আইনজীবীর চাহিদা অনুযায়ী টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য হন। রিমান্ড মঞ্জুরের পর নির্যাতন করা হবে না—এই নিশ্চয়তা দিয়েও মোটা অংকের টাকা দাবি করে পুলিশ। নির্যাতন থেকে রেহাই পেতে তখন মরিয়া হয়ে ওঠেন আত্মীয়-স্বজন ও আসামি নিজে। পুলিশ যা চায় তখন তাই দিতে বাধ্য হন আত্মীয়রা।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, সরকারি দলের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে রিমান্ডে নেয়ার ঘটনা সম্প্রতি ঘটছে প্রতিনিয়ত। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে রিমান্ড হচ্ছে সরকারি নির্যাতনের বড় হাতিয়ার। বাকস্বাধীনতাকে চাপা দিতে সাংবাদিক ও সম্পাদককে রিমান্ডে নিতেও কসুর করেনি সরকার। বর্তমান সরকারের দুর্নীতি, অনিয়ম নিয়ে কথা বলায় দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার নামে দেয়া হয় একের পর এক মামলা। বিভিন্ন মামলায় দেখানো হয় শ্যোন এরেস্ট। দিনের পর দিন নেয়া হয় রিমান্ডে। একেবারে ঠুনকো অজুহাতে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। তাকে গ্রেফতারের সময় আমার দেশ কার্যালয়ে কারা ছিলেন তাদের নাম ঠিকানা জানার জন্য রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়েছিল তাকে। অথচ আমার দেশ কার্যালয়ে যখন পুলিশ হানা দেয় তখন সাংবাদিকদের ওপরই উল্টা নির্যাতন চালানো হয়েছিল। আহত হয়েছিল অনেক সাংবাদিক। তারপরও সম্পাদকের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। মাহমুদুর রহমানকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করা হয়েছে ক্যান্টনমেন্ট থানায়। নির্যাতনে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন। এ নির্যাতনের কাহিনী আদালতের সামনে উপস্থাপন করার পরও তাকে আবার রিমান্ডে দিয়েছেন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।
সাবেক ছাত্রনেত্রী, ’৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের সময় ছাত্র নেতৃত্বদানকারী মোশরেফা মিশুকে বর্তমান শাসক দলের সময় বার বার রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে। গার্মেন্ট কারখানায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে ইন্দনের অভিযোগে সম্প্রতি তাকে নিজের বাসা থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে রিমান্ড চায়। তার ওপর চালানো হয় নির্যাতন। নির্যাতনের কারণে বর্তমানে তিনি পুলিশ হেফাজতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রিজন সেলে চিকিত্সাধীন আছেন।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে ২৯ জুন হরতালের সময় গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তী সময়ে তাকে শ্যোন এরেস্ট দেখানো হয় মগবাজারে একটি গাড়ি পোড়ানো মামলায়। একই সঙ্গে রিমান্ডে নেয়ার আবেদন জানানো হয় ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে। এ মামলায় সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মোবিন চৌধুরীকেও শ্যোন এরেস্ট দেখিয়ে রিমান্ড চাওয়া হয়। দু’জনেরই রিমান্ড মঞ্জুর করেন ম্যাজিস্ট্রেট।
ঢাকা মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির রফিকুল ইসলাম খানকে গত ৪ ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়ার সময় কারাগার গেট থেকে আটক করে সাদা পোশাকধারী ডিবি পুলিশ। একদিন পর তাকে শ্যোন এরেস্ট দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হয় শাহবাগ থানার একটি মামলায়। এ মামলাটিও দায়ের করা হয় ২৯ জুন হরতালকে কেন্দ্র করে। এ মামলায় তাকে রিমান্ড চাওয়া হলে মঞ্জুর করা হয়। অথচ এ মামলার কোনো পর্যায়ে তার নাম কোথায়ও উল্লেখ নেই। পরবর্তী সময়ে পল্টন থানার একটি মামলায় তাকে আবারও রিমান্ড চাওয়া হয়। এ মামলায় তিনি আগে থেকেই জামিনে ছিলেন। এতে তাকে রিমান্ড না দিয়ে বসিয়ে রাখা হয়। পরবর্তী সময়ে আরেকটি মামলায় শ্যোন এরেস্ট দেখানো হলে রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। সর্বশেষ টানা ১৮ দিন রিমান্ডে থাকার পর তাকে মতিঝিল থানার একটি মামলায় আদালতে হাজির করা হয়। এ মামলা দায়ের ও ঘটনার সময় তিনি কারাগারে ছিলেন। কারাগারে থাকাকালীন ঘটনাকে কেন্দ্র করে দায়ের করা মামলায় শ্যোন এরেস্ট দেখিয়ে রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করা হলে আইনজীবীরা বিষয়টি স্পষ্ট করেন। আদালত তখন রিমান্ড না দিয়ে জেল হাজতে পাঠান।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে গ্রেফতারের পর আদালতে নেয়া হলে তিনি নির্যাতনের কাহিনী তুলে ধরেন। গ্রেফতারের পরপরই তার ওপর এ নির্যাতন চালানো হয়েছিল। তখনও তার নাক দিয়ে ঝরছিল রক্ত। আদালত এ অবস্থায়ই তাকে আবার রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এ সময় ঢাকা মহানগর ছাত্রনেতা ইসহাক সরকারকে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনেই গ্রেফতার করে পুলিশ। একদিন পর আদালতে উপস্থাপন না করেই তাকে রিমান্ড চাওয়া হয়। ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছে এমন একজনকে হত্যার অভিযোগ এনে তার রিমান্ড চাওয়া হয়েছিল। আইন অনুযায়ী রিমান্ডের আবেদন আসামির উপস্থিতিতে শুনানি করার বিধান রয়েছে। ইসহাক সরকারকে আদালতের সামনে উপস্থাপন না করে ম্যাজিস্ট্রেটের খাস কামরা থেকে রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।
পুলিশ যাকে ইচ্ছা তাকেই বিভিন্ন মামলায় শ্যোন এরেস্ট দেখাচ্ছে এবং রিমান্ড চাইছে। আদালতও ঢালাওভাবে রিমান্ড মঞ্জুর করে চলেছেন। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৭ ধারায় রিমান্ড আবেদন একটি নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
২০০৩ সালের ৭ এপ্রিল হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ ১৬৭ ধারা সংশোধন করতে সরকারের প্রতি নির্দেশনা জারি করেন। একই সঙ্গে ওই ধারাটি সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত রিমান্ডে নিতে হলে কী কী পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে এবং রিমান্ড মঞ্জুরের পর কীভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট একটি গাইডলাইনও দেন আদালত। এ রায়টি আপিল বিভাগে এখনও বহাল আছে। এতে গাইড লাইন দিয়ে বলা হয় রিমান্ড আবেদনের সঙ্গে মেডিকেল রিপোর্ট জমা দিতে হবে। রিমান্ড থেকে ফেরতের সময়ও আরেকটি মেডিকেল রিপোর্ট দিতে হবে। রিমান্ড মঞ্জুরের সময় ম্যাজিস্ট্রেটকে মামলার সঙ্গে আসামির সংশ্লিষ্টতা ও রিমান্ড মঞ্জুরের প্রয়োজনীয়তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার নির্দেশনা রয়েছে এতে। রিমান্ডে নিয়ে একটি স্বচ্ছ কাচের ঘরে আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে বলা হয়েছে হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনায়, যাতে আসামির আইনজীবী বা আত্মীয়রা দেখতে পারেন জিজ্ঞাসাবাদে কোনো নির্যাতন হচ্ছে কিনা। প্রয়োজন অনুযায়ী চাহিদা মতো রিমান্ডে ডাক্তারি পরীক্ষার নির্দেশনাও রয়েছে রায়ে। কিন্তু এসব নির্দেশনার একটিও পালন করা হয়নি গত বছরের ৪ হাজার ৮২৯টি রিমান্ডে।

Saturday 22 January 2011

অধিকারের মানবাধিকার প্রতিবেদন অনুষ্ঠানে বক্তারা : রিমান্ড এখন চরম রাষ্ট্রীয় বর্বরতা


স্টাফ রিপোর্টার

বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদন উপস্থাপন উপলক্ষে অধিকার আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন বাংলাদেশ এখন রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসী রাষ্ট্রে রূপ নিয়েছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে খুন ও গুমের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। রিমান্ড এখন একটি চরম রাষ্ট্রীয় বর্বরতা। এরকম দীর্ঘ রিমান্ড ও রিমান্ডে নির্যাতনের ঘটনা অন্য কোন দেশে নেই। দেশ স্বাধীন করা হয়েছিল রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের প্রতিবাদে। কিন্তু সেই নির্যাতন থেকে মানুষ রেহাই পাচ্ছে না।
গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’ ২০১০ সালের মানবাধিকার প্রতিবেদন উপস্থাপন করে। সংগঠনটির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, বর্তমান সরকার বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা পূরণে তারা ব্যর্থ হয়েছে। অধিকারের দাবি অনুযায়ী প্রতি ৩ দিনে গড়ে ১ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।
অধিকারের সেক্রেটারি আদিলুর রহমান খান এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। এ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ড. সিআর আবরার। অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন অধিকারের উপদেষ্টা বিশিষ্ট কবি, প্রাবন্ধিক ও চিন্তাবিদ ফরহাদ মজহার, বিশিষ্ট সাংবাদিক কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, আওয়ামী লীগ নেতা সাবের হোসেন চৌধুরী এমপি, বিশিষ্ট সাংবাদিক, কলামিস্ট ও সিএসএসডি মহাসচিব মাহফুজ উল্লাহ, ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না, সৈয়দা আসিফা আশরাফি পাপিয়া এমপি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ড. ফয়জুল হাকিম লালা, বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাজেকুজ্জামান রতন, পাক্ষিক চিন্তা’র সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মুস্তাইন জহির প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ নেতা সাবের হোসেন চৌধুরী এ প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য অধিকারকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, সমস্যা হচ্ছে আমরা মানবাধিকার ইস্যুটিকেও রাজনীতিকীকরণ করেছি। আমাদের উচিত মানবাধিকার বিষয়ে রাজনৈতিক ইচ্ছাকে মজবুত করা এবং দলমত নির্বিশেষে এ ব্যাপারে ঐকমত্য তৈরি করা। মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, অধিকারের এই রিপোর্ট মোটামুটি ভালো। এ অবস্থা বরাবরই চলে আসছে। যতদিন দেখলাম একইরকম অবস্থা দেখছি। আমাদের দেশের শাসক শ্রেণী ক্ষমতায় থাকার জন্য এ ধরনের কর্মকাণ্ড চালিয়েছে। তবে আমরা ভবিষ্যতে ভালো দেখতে চাই।
ফরহাদ মজহার দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, আমরা যদি আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিষয়টি দেখি, তাহলে দেখা যাবে সংবিধানের ১০৮ অনুচ্ছেদের ভিত্তিতে বিচার বিভাগ এখতিয়ার দিয়ে শাস্তি দিয়েছে। যা তারা দিতে পারে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্রে রূপ নিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে এখন গুমের ঘটনা বাড়ছে। এটি একটি ভয়াবহ বিষয়। এ থেকে বোঝা যায় রাষ্ট্র কীভাবে জনগণ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। তবুও রাষ্ট্রের প্রশ্নে, অধিকারের প্রশ্নে, মানবাধিকারের প্রশ্নে আমরা একমত হতে পারছি না। সীমান্তে হত্যাকাণ্ড বিষয়ে তিনি বলেন, র্যাবের বিরুদ্ধে যদি আমরা বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ আনতে পারি, তাহলে বিএসএফের বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ করতে পারব না কেন? বিএসএফ যা করছে, তা চরম বর্বরতা।
সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, আমাদের রাষ্ট্র চরম নিপীড়নমূলক। স্বাধীনতার পর থেকে আমরা একইরকম অবস্থা দেখে আসছি। রিমান্ড একটি চরম রাষ্ট্রীয় বর্বরতা। মানবজাতির ইতিহাসে এত দীর্ঘদিন রিমান্ড আমাদের দেশের মতো অন্য কোনো দেশে হয়নি। অন্য কোনো দেশে রিমান্ডে নিয়ে কাউকে উলঙ্গ করে অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়ন করা হয়নি। তিনি বলেন, সুপ্রিমকোর্টের কাজ হচ্ছে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু তারা তা করেন না। তারা অনেক সময় রাজনৈতিক বক্তব্য দেন। এর প্রতিবাদ করলে আদালত অবমাননার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। অন্যদিকে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার চেয়ে সরকারের রাজনৈতিক স্লোগান দিনবদল নিয়ে বেশি ব্যস্ত।
মাহফুজ উল্লাহ বলেন, অনেকেই এই সরকারের সমালোচনা ও বিরোধিতা করতে রাজি নন। কারণ এটা করলে তাদেরকে স্বাধীনতাবিরোধী বলা হয় এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রতিহত করার প্রয়াস হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তিনি বলেন, একটি নতজানু সরকারের কাছ থেকে সীমান্তে হত্যার বিচারের প্রতিবাদ আশা করা যায় না।
অধিকারের প্রতিবেদনে বলা হয়, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান মহাজোট সরকারের দ্বিতীয় বছরে অর্থাত্ বিগত ২০১০ সালে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ১২৭ জন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে প্রাণ হারিয়েছেন ১১০ জন, রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ২২০ জন, গণপিটুনিতে প্রাণ হারিয়েছেন ১৭৪ জন। ধর্ষিত হয়েছেন ৫৫৬ নারী ও শিশু। এর মধ্যে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১১৯ নারী এবং ৯৩ শিশু। আর যৌতুকের কারণে সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ২৪৩ জন। অন্যদিকে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষাবাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে নিহত হয়েছেন ৭৪ জন এবং ওই বাহিনীর হাতে অপহৃত হয়েছেন ৪৩ বাংলাদেশী। আর অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকারবদ্ধ বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের আমলে গতবছর ধর্মীয় সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ওপর হামলায় নিহত হয়েছেন ২ জন এবং আহত হয়েছেন ২৪৪ জন। মন্দির ভাংচুর হয়েছে ২৩টি। এসময় জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ওপর হামলায় ৬ জন নিহত এবং ১৪০ জন আহত হয়েছেন।
আর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের শাসনামলে ফিরে এসেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গুম। গতবছর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গুম হয়েছেন ১৬ জন।
অধিকারের বিপোর্টে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বিষয়ে বলা হয়, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধে সরকার বরাবর প্রতিশ্রুতি দিলেও তা ২০১০ সালজুড়েই অব্যাহত ছিল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আইন ভঙ্গ করে সন্দেহভাজন ব্যক্তি, বিপ্লবী বামপন্থী এবং নিরীহ ব্যক্তিদের বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করেছে। ২০১০ সালে ১২৭ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। এই হত্যাকাণ্ডগুলো সংঘটিত হয়েছে র্যাব ও পুলিশ অথবা র্যাব-পুলিশের যৌথবাহিনী দ্বারা। অধিকারে সংগৃহীত তথ্যানুযায়ী বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার ১২৭ জনের মধ্যে তথাকথিত ক্রসফায়ারে ১০১ জন, নির্যাতনে ২২ জন, গুলিতে ২ জন এবং ২ জনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এদের মধ্যে র্যাবের হাতে ৬৮ জন, পুলিশের হাতে ৪৩ জন, র্যাব-পুলিশের যৌথ অভিযানে ৯ জন, র্যাব-কোস্টগার্ডের যৌথ অভিযানে ৩ জন, র্যাব-পুলিশ-কোস্টগার্ডের যৌথ অভিযানে ৩ জন এবং বিডিআরের হাতে একজন নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
জেল এবং বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হেফাজতে মৃত্যু প্রসঙ্গে বলা হয়—গতবছর ১১০ জন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে মারা গেছেন। এদের মধ্যে ৬ জন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হেফাজতে থাকাকালে ক্রসফায়ারে, ২২ জন নির্যাতনে এবং ১ জন গুলিতে মারা গেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া ওই সময় ৬০ জন জেল হেফাজতে ‘অসুস্থতাজনিত’ কারণে মারা গেছেন। আর ২ জন কোর্ট হেফাজতে, ২ জন থানায় এবং ১ জন র্যাব হেফাজতে মারা গেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া বিডিআর বিদ্রোহের অভিযোগে আটক ১৫ বিডিআর সদস্য জেল এবং অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে মারা গেছেন।
রিপোর্টে গুম বিষয়ে বলা হয়, গতবছর ১৬ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গুম হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ভিকটিমের পরিবারগুলোর অভিযোগ, উল্লিখিত ব্যক্তিদের সাদা পোশাকধারী আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা র্যাব এবং পুলিশের পরিচয় দিয়ে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।
বিএসএফের হাতে মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রসঙ্গে বলা হয়, গতবছর ভারতীয় সীমান্ত রক্ষাবাহিনী (বিএসএফ) ৭৪ বাংলাদেশীকে হত্যা করেছে। এদের মধ্যে ২৪ জনকে নির্যাতন এবং ৫০ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ সময়ে বিএসএফের হাতে আহত হয়েছেন ৭২ জন। এর মধ্যে ৩২ জন নির্যাতিত এবং ৪০ জন গুলিবিদ্ধ। একই সময় ৪৩ বাংলাদেশী বিএসএফের হাতে অপহৃত হয়েছেন।

Friday 7 January 2011

বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি সন্তোষজনক নয় : মার্কিন রাষ্ট্রদূত



কূটনৈতিক রিপোর্টার

মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি বলেছেন, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি সন্তোষজনক নয়। প্রতিটি বিচারবহির্ভূত হত্যার তদন্ত হওয়া উচিত। তিনি বলেন, উইকিলিকস আমাদের আগামী দিনের কর্মকাণ্ড কঠিন করে তুলেছে। গতকাল হোটেল সোনারগাঁওয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে তিনি এসব মন্তব্য করেন। হোটেল সোনারগাঁওয়ে ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মনমাউথ ইউনিভার্সিটির যৌথ উদ্যোগে শুরু হয়েছে ৫ দিনব্যাপী সুশাসনের মাধ্যমে উন্নয়ন বিষয়ক সিম্পোজিয়াম। সিম্পোজিয়ামে অংশ নেয়া মার্কিন প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের মানবাধিকার শুধু আমরা নই, এদেশের সাধারণ মানুষও পর্যবেক্ষণ করছে। বর্তমান মানবাধিকার পরিস্থিতিতে কেউ সন্তুষ্ট নয়। আমরা বিভিন্ন সময় সরকারকে বলেছি, আজও বলছি প্রতিটি বিচারবহির্ভূত হত্যার তদন্ত হওয়া উচিত। বিনাবিচারে কোনো হত্যা কেউ সমর্থন করতে পারে না। যে কোনো বিচার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।
উইকিলিকসে ফাঁস করা র্যাবের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারে মার্কিন তথ্য সংগ্রহ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে এ ব্যাপারে আমরা কোনো তথ্য পাইনি। বাংলাদেশের গণমাধ্যমে র্যাবের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিভিন্ন তথ্য প্রকাশিত হচ্ছে। আমরা এখন গণমাধ্যম থেকে এসব তথ্য সংগ্রহ করছি।
উইকিলিকসে ফাঁস হওয়া মার্কিন গোপন নথি সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, এ ব্যাপারে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। গণমাধ্যমে যেসব তথ্য প্রকাশিত হয়েছে তা গণমাধ্যমেই থাক। আমি শুধু বলব উইকিলিকস আমাদের আগামী দিনের কর্মকাণ্ড পরিচালনা কঠিন করে তুলেছে। ধরুন আমি অনেকের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে ব্যক্তিগতভাবে অনেক কিছু আলোচনা করি। এসব ব্যক্তিগত আলাপের বিষয় যদি প্রকাশিত হয়ে যায়, তাহলে স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়ে। বিরোধী দলের ওপর সরকারের নির্যাতন, বিরোধী দলের সংসদ বর্জনসহ বাংলাদেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কী তা এদেশের সাধারণ মানুষ দেখতে পাচ্ছে। সংসদ কার্যকর করতে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করা উচিত। সরকারের দায়িত্ব বিরোধী দলের ভূমিকা পালনের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি বিরোধী দলের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া এবং তাদের মতামতকে গুরুত্ব দেয়া। দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী রবার্ট ব্লেকের আসন্ন ঢাকা সফর সম্পর্কে মরিয়ার্টি বলেন, রবার্ট ব্লেক বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি মনিটরিং করেন। বিভিন্ন ইস্যুতে বাংলাদেশের সঙ্গে রয়েছে আমাদের অংশীদারিত্ব। তিনি খাদ্য নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে এখানকার নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন

আসকের ২০১০ সালের প্রতিবেদন : আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নিহত ১৩৩ নির্যাতিত ২৯৮ সাংবাদিক

স্টাফ রিপোর্টার

বিদায়ী ২০১০ সালে সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বিচারবহির্ভূতভাবে ১৩৩ জন নিহত হয়েছেন। সাংবাদিক নির্যাতিত হয়েছেন ২৯৮ জন। ৬২৫ নারী ধর্ষিত হয়েছেন। বিএসএফ গুলি করে ১০০ বাংলাদেশীকে গত এক বছরে হত্যা করেছে। ২০১০ সালের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আইন ও সালিশ কেন্দ্র গতকাল এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে মানবাধিকার প্রতিবেদন-২০১০-এর সারসংক্ষেপ প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের পরিচয়ে মানুষকে ধরে নেয়ার ঘটনা বেড়েছে। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বর্তমান সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা। কিন্তু সরকার তা বন্ধ না করে বরং বন্দুকযুদ্ধ, এনকাউন্টার ইত্যাদি নামে অব্যাহতভাবে এ হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। গত বছরজুড়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ছিল নাজুক।
র্যাবের কার্যকলাপের কথা উল্লেখ করে অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, র্যাবের হাতে নিরীহ মানুষ বন্দি হওয়ার পর তারা হয়তো গুম হচ্ছেন, না হয় ক্রসফায়ারের নামে নিহত হচ্ছেন। উইকিলিকসের ফাঁস করা নথিতেও র্যাবের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের কথা উঠে এসেছে। ক্রসফায়ার নিয়ে ব্যাপক বিতর্কের মধ্যেই নতুন প্রবণতা হিসেবে যুক্ত হয়েছে মানুষ নিখোঁজ হওয়া বা গুপ্তহত্যার ঘটনা। দেশবাসীর জন্য এটাই বড় আতঙ্কের বিষয়। এ বিষয়ে সরকার বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে কোনো গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি। এমনকি কার্যকর কোনো তদন্তের উদ্যোগও নেয়া হয়নি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি গত বছর নাজুক ছিল বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এ সময় ৬২৫ নারী ধর্ষিত হন। এসব ঘটনায় ৩২৩টি মামলা হয়েছে। ধর্ষণের পর ৭৮ জনকে হত্যা করা হয়, ধর্ষণের পর সাতজন আত্মহত্যা করেছেন। গত বছর বখাটেদের উত্পাতে ৩১ নারী আত্মহত্যা করেছে। অপমান সইতে না পেরে একজন বাবাও আত্মহত্যা করেন। যৌতুকের জন্য ৩৯৪ নারী নির্যাতিত হয়েছেন। এ ঘটনায় ৫১টি মামলা হয়েছে। একই কারণে ২২৩ জনকে হত্যা করা হয় এবং ১৮ জন নির্যাতিত নারী আত্মহত্যা করেন।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, গত বছর ৯৩ নারী এসিড নিক্ষেপের শিকার হন। কারা হেফাজতে মারা গেছেন ৭৪ জন। ২৯৮ সংবাদকর্মী হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ১০০ বাংলাদেশী গত বছর ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে নিহত হন। এ ছাড়া গত বছর ৪৩৬টি রাজনৈতিক সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। এতে ৭ হাজার ১০৩ জন আহত ও ৭৫ জন নিহত হন। গত বছর ২ হাজার ২৭৯ প্রবাসী শ্রমিক লাশ হয়ে দেশে ফেরত এসেছেন। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর গত বছর সেপ্টেম্বরের হিসাব অনুযায়ী, জনশক্তি রফতানি প্রায় ২০ শতাংশ কমেছে। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, রাজনৈতিক হয়রানিমূলক হিসাবে চিহ্নিত করে সরকার দুর্নীতি, খুন, ডাকাতি, ধর্ষণের অনেক মামলা প্রত্যাহার করছে। সংবাদ সম্মেলনে অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, পূর্ণাঙ্গ মানবাধিকার কমিশন গঠন করা হলেও কমিশনের জন্য বিধিমালা ও সাংগঠনিক কাঠামো অনুমোদন না হওয়ায় কমিশনের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
এ সময় আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিচালক নূর খান এবং মিডিয়া অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডভোকেসি ইউনিটের জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক সাঈদ আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।