Tuesday 16 August 2011

পুলিশের নৃশংসতা বেড়েই চলেছে ভেঙে পড়েছে চেইন অব কমান্ড










নাছির উদ্দিন শোয়েব
পুলিশের নৃশংসতা বেড়েই চলছে। ভেঙে পড়েছে চেইন অব কমান্ড। পুলিশ বাহিনীতে অনেকটা বেসামাল অবস্থা। রাজনৈতিক দল দলনেই পুলিশের অতিউত্সাহ একের পর এক বিতর্কিত ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। এতে এই বাহিনী এখন ব্যাপকভাবে সমালোচিত। নিরপরাধ মানুষের ওপর পুলিশি নির্যাতনে ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে মানবাধিকার। সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত কয়েকটি ঘটনায় পুলিশের উচ্ছৃঙ্খল আচরণ ও বেআইনি কর্মকাণ্ডে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও হতাশ ও ক্ষুব্ধ। পুলিশের নির্যাতনের কয়েকটি ঘটনায় আদালত রুল দিতে বাধ্য হয়ছেন। ঘটনা তদন্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে গঠন করা হয়েছে কমিটি। সাসপেন্ডসহ বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। পুলিশের প্রতি আস্থা না থাকায় নির্যাতনের কয়েকটি ঘটনায় বিচারবিভাগীয় তদন্ত শুরু করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দফতরে দফায় দফায় বৈঠক করেও কাজ হচ্ছে না। কোনো অবস্থাতেই শৃঙ্খলা ফিরে আসছে না পুলিশ বাহিনীতে।
সুপ্রিমকোর্টের খ্যাতনামা আইনজীবী অ্যাডভোকেট এমইউ আহমেদকে আটক এবং নির্যাতনের কারণে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র আব্দুল কাদেরকে আটকের পর ডাকাত সাজিয়ে নির্যাতন, নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জে ডাকাত সন্দেহে কিশোর মিলনকে পিটিয়ে হত্যা, আমিনবাজারে ছয় ছাত্রকে গ্রামবাসী কর্তৃক পিটিয়ে হত্যার ঘটনা তদন্তে স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীদের পক্ষে পুলিশের অবস্থান, এর আগে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকের ওপর বর্বরোচিত হামলা, হরতালে মিছিলে অংশ নেয়া নারীদের ওপর পুলিশের ঝাঁপিয়ে পড়া এবং বেধড়ক লাঠিপেটা, বিরোধী জোটের রাজনৈতিক নেতাদের আটকের পরই রিমান্ড ও টিএফআই সেলে নিয়ে নির্যাতন, দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে আটক করতে এসে পত্রিকা অফিসে হামলা ও পুলিশের যুদ্ধংদেহী আচরণ, সম্পাদককে টিএফআই সেলে নিয়ে নির্যাতন, সম্প্রতি অনলাইন সংবাদ সংস্থা শীর্ষ নিউজ ও শীর্ষ কাগজের সম্পাদক একরামুল হককে আটক করে চোর-ডাকাতের মতো হাতকড়া পরিয়ে আদালতে হাজির এবং পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
জয়নুল আবদিন ফারুকের ঘটনা তদন্তে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল জলিলকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও তদন্তের ফলাফল এখনও আলোর মুখ দেখেনি। এ ঘটনায় উল্টো পুলিশ বাদী হয়ে ফারুকসহ ১২/১৩ জন আইনজীবীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। আর হামলাকারী পুলিশ সদস্য এডিসি হারুন ও এসি বিপ্লব কুমার সরকার চিকিত্সার নামে হাসপাতালে ভর্তি হয়। কিছুদিন আগে এডিসি হারুন ১৫ দিনের ছুটি নিয়ে আমেরিকা গিয়ে এখনও ফিরে আসেনি। এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আব্দুল কাদেরের ডাকাতির ঘটনা মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় খিলগাঁও থানার ওসি হেলাল উদ্দিন, এসআই আলম বাদশা এবং এএসআই তৌহিদুর রহমানকে হাইকোর্টের নির্দেশে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে আইন সচিবকে এ ঘটনা তদন্তের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়। কোম্পানীগঞ্জে পুলিশের সহযোগিতায় কিশোর মিলনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি রফিক উল্লাহসহ ৪ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার জেলা পুলিশ সুপার হারুন-উর-রশিদ হায়দারী জানিয়েছেন, এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। কমিটির প্রধান মাহবুব রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, প্রতিবেদনের সার-সংক্ষেপ হলো—‘দায়িত্ব পালনে পুলিশের গাফিলতি।’ তারা মিলনকে রক্ষায় যথাযথ দায়িত্ব পালন করেনি। এজন্য ওসি রফিক উল্লাহ, এসআই আকরাম শেখ ও দুই কনস্টেবল আবদুর রহিম ও হেমারঞ্জন চাকমার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
পুলিশের আইজি হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেছেন, মুষ্টিমেয় কিছু সদস্য ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম ও অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। তবে পুলিশ সদস্যরা সততা, নিষ্ঠা ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে। যাদের বিরুদ্ধে অপরাধে জড়িয়ে পড়ার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধেই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। সাভারের আমিনবাজারে ছয় ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কাদেরের ঘটনায় পুলিশের বিভাগীয় পর্যায়ে তদন্ত চলছে। কাদেরের ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাকে তার দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এসব ঘটনায় তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পরই প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে। তবে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন এবং প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু বরাবরই বলছেন, এগুলো বিচ্ছিন ঘটনা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মতে, ‘আমার পুলিশ বাহিনী’ কখনও শৃঙ্খলা ভঙ্গ করতে পারি না। যদি এরকম কিছু হয়ে থাকে তবে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, আদালতের নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এপর্যন্ত আলোচিত কোনো ঘটনায়ই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা পুলিশ সদর দফতর থেকে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
ঢাবি ছাত্র কাদের প্রসঙ্গে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মিজানুর রহমান আদালতে উপস্থিত হয়ে বলেছেন, পুলিশ কাস্টডিতে নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্মমভাবে নির্যাতন করেছে। এটা লজ্জাজনক। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে একজন পুলিশ বলেছে, পুলিশকে লাঠি দেয়া হয়েছে কি চুমো খাওয়ার জন্য? জনগণের স্বার্থরক্ষার জন্য। সেই লাঠিকে ব্যবহার করা হয়েছে একজন ছাত্রের ওপর। তার মানবাধিকার ও সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে। ওসি বলেছেন, গণপিটুনিতে আহত হয়েছে। তবে যারা গণপিটুনি দিয়েছে, তাদের ধরা সম্ভব হয়নি। বারবার এই গণপিটুনির কথা বলে ৫ জন, ৬ জন করে হত্যা করা হলো। এতে গণপিটুনি বৈধতা পাচ্ছে। একজন পুলিশ কর্মকর্তা যদি গণপিটুনিকে বৈধতা দেয়ার কাজে উত্সাহ দেন, তাহলে রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোথায় যাবে? এ সময় আদালত বলেন, পুলিশের মানুষকে পেটানোর কোনো অধিকার নেই। পেটানোর দায়ে পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা হতে পারে।
এমইউ আহমেদ হাসপাতালে : পুলিশের অমানবিক নির্যাতনে আশঙ্কাজনক অবস্থায় জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে চিকিত্সাধীন আছেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট এমইউ আহমদ। হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের সংশ্লিষ্ট চিকিত্সক বলছেন, এমইউ আহমেদের জীবন সঙ্কটাপন্ন। তিনি হাইরিস্ক পেশেন্ট। ৭২ ঘণ্টা পার না হওয়া পর্যন্ত তার অবস্থা সম্পর্কে কিছু বলা যাবে না। গত বুধবার রাত দেড়টায় সাদা পোশাকধারী পুলিশ এমইউ আহমেদকে তার ১১৬, সেগুনবাগিচার বাসা থেকে গ্রেফতার করে। পরিবারের অভিযোগ, গ্রেফতারের সময়ই তাকে কিলঘুষি মারা হয়। তছনছ করা হয় বাড়ির মালামালা। গ্রেফতারের পর কিলঘুষি মেরে গাড়িতে ওঠায় ডিবি পুলিশ। পরে নেয়া হয় মিন্টো রোডের গোয়েন্দা কার্যালয়ে (ডিবি)। সেখানে তাকে আরও নির্যাতন চালানো হয় বলে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। তারা জানান, নির্যাতনের একপর্যায়ে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরদিন ভোরে তাকে অজ্ঞান অবস্থায় ডিবি পুলিশ নিয়ে যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত ডাক্তাররা অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে তাকে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নেয়ার পরামর্শ দেন। বর্তমানে হাসপাতালে গভীর পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে তাকে। তবে ডিবি পুলিশের এডিসি মেহেদি হাসান সাংবাদিকদের জানান, অ্যাডভোকেট এমইউ আহমদকে নির্যাতন করা হয়নি। পুলিশ আটক করে গাড়িতে তোলার পরই তিনি জানান, তার বুকে ব্যথা হচ্ছে।
কণ্ঠশিল্পী রিজিয়া পারভীনের অভিযোগ : পুলিশের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেছেন কণ্ঠশিল্পী রিজিয়া পারভীন। পুলিশি হামলার প্রতিবাদে গত ১৬ জুন রাজধানীর একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করে বলেন, ১২ জুনের হরতালে জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক সংগঠনের (জাসাস) একটি মিছিলে অংশ নেয়ায় পুলিশি নির্যাতনের শিকার হন তিনি। ওই দিন বেলা ১২টার দিকে জাসাসের একটি শান্তিপূর্ণ মিছিল পেট্রোবাংলা কার্যালয় থেকে এফডিসির গেটের সামনে গেলে হঠাত্ করে পুলিশ আক্রমণ করে। এ সময় পুলিশ মধ্যযুগীয় কায়দায় তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। রিজিয়া পারভীন অভিযোগ করেন, পুলিশ হাত ধরে টানাহেঁচড়া করে তার সম্মানহানি করেছে। তিনি বলেন, বর্তমানে আমি শারীরিকভাবে গুরুতর অসুস্থ। আমার ওপর কেন এই নির্যাতন? একজন শিল্পীর ওপর হামলার ঘটনা গোটা জাতির জন্য লজ্জাজনক। সবাই মিলে এর প্রতিকার করা উচিত। এর আগে বঙ্গোপসাগরে গ্যাস অনুসন্ধানে মার্কিন কোম্পানির সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি বাতিলের দাবিতে কর্মসূচি দেয়ায় কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের ওপর হামলা চালায় পুলিশ। এ ঘটনায় ঢাকায় হরতাল পালন করা হলে সেখানেও পুলিশ হামলা করে। অন্যদিকে আমেরিকায় চিকিত্সা নিতে যাওয়ার আগে জয়নুল আবদিন ফারুক বলেছেন, পুলিশ হত্যার উদ্দেশ্যে তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তিনি আত্মরক্ষার জন্য দৌড়ে ন্যামভবনের একটি কক্ষে গিয়েও তাদের হাত থেকে রক্ষা পাননি। ন্যাম ভবনের ফ্ল্যাট থেকে টানাহেঁচড়া করে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপকে বিবস্ত্র্র করে লাঠিপেটা করেছে। তবে সেদিনের পুলিশের বেসামাল হামলার দৃশ্য মিডিয়ায় ফলাওভাবে প্রচার হওয়ায় দেশে-বিদেশে বহু লোক তা প্রত্যক্ষ করেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতার কারণে পুলিশের শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। পুলিশ বাহিনীতে দলীয় পরিচয়ে নিয়োগ দেয়ার ফলে তারা কমান্ড মানছে না। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর পুলিশ বাহিনীতে দুটি বিশেষ এলাকার লোকদের প্রাধান্য দিয়ে নিয়োগ দেয়া হয়। বর্তমানে পুলিশের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে দায়িত্বপ্রাপ্তদের বেশিরভাগই গোপালগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জ জেলার বাসিন্দা। এই দুই অঞ্চলের বিশ্বস্ত এবং অনুগত পুলিশ সদস্যরা গুরত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন। এসব পুলিশ সদস্যের সঙ্গে মন্ত্রী, এমপি, উপদেষ্টাদের সরাসরি যোগাযোগ থাকায় তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিংবা পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশনাও উপেক্ষা করে চলছে। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, ওইসব দলীয় পৃষ্ঠপোষক পুলিশ সদস্যরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশনাও সঠিকভাবে মানছেন না । কেননা তারা একাধিক নেতা, মন্ত্রী ও এমপির আশীর্বাদপুষ্ট। তাদেরকে সহজেই বদলি ও শাস্তিও দিতে ব্যর্থ হচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রসঙ্গত, গত হরতালে জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকের ওপর হামলাকারী দুই পুলিশ কর্মকর্তাই কিশোরগঞ্জের বাসিন্দা। এখন পর্যন্ত ওই ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাদ্বয়ের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

Tuesday 9 August 2011

চার দিনের রিমান্ড শেষে জেলে : শীর্ষ নিউজ সম্পাদককে হাতকড়া পরিয়ে আদালতে হাজির করা হয়



স্টাফ রিপোর্টার
অনলাইন দৈনিক ও বার্তা সংস্থা শীর্ষ নিউজ ডটকম এবং সাপ্তাহিক শীর্ষ কাগজ সম্পাদক মো. একরামুল হকের জামিন নামঞ্জুর করে তাকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তবে তাকে কারাগারে প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা দেয়ার বিষয়ে আবেদনের ওপর আগামী ১০ আগস্ট শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত। ঢাকা মহানগর হাকিম শাহাদাত হোসেন গতকাল এ আদেশ দেন।
শাহবাগ থানার সাজানো চাঁদাবাজি মামলায় ২ দিনের রিমান্ড শেষে একরামুল হককে গতকাল হাতকড়া পরিয়ে আদালতে হাজির করা হয়। এ দু’দিন তাকে টিএফআই সেলে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এর আগে অপর মামলায় তাকে আরও দু’দিন রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
জামিন চেয়ে তার পক্ষের আইনজীবীরা বলেন, প্রভাবশালীদের দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের জের ধরেই একজন সম্পাদকের বিরুদ্ধে সাজানো মামলা হচ্ছে। তারা শাহবাগ থানার মামলার অভিযোগকে ভিত্তিহীন ও বানোয়াট উল্লেখ করে আরও বলেন, মামলার বাদী একজন ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী এবং ইউনিয়নের নেতা। সচিবালয়ের অভ্যন্তরে একজন কর্মচারী ইউনিয়নের নেতার কাছে চাঁদা দাবি বা তাকে হুমকি প্রদর্শনের ঘটনা অবিশ্বাস্য ও অবাস্তব। তাছাড়া ঘটনার যে তারিখ দেখানো হয়েছে তার অনেক আগেই সচিবালয়ে প্রবেশের জন্য শীর্ষ নিউজ ডটকম ও শীর্ষ কাগজের সবকটি অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিল করা হয়েছে।
একরামুল হকের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন অ্যাডভোকেট ফারুক আহমেদ, রায়হান মোর্শেদ, আনোয়ার হোসেন চৌধুরী প্রমুখ।
জামিন নামঞ্জুরের পর তারা কারাগারে ডিভিশন দেয়ার আবেদন জানান। এ বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী ১০ আগস্ট দিন ধার্য করেছেন আদালত।
শাহবাগ থানার চাঁদাবাজি মামলায় গত ৩ আগস্ট দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এ মামলায় গত শনিবার একরামুল হককে টাস্কফোর্স ইন্টারগেশন (টিএফআই) সেলে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
প্রসঙ্গত, কলাবাগান থানায় দায়েরকৃত মামলায় একরামুল হককে গত ৩১ জুলাই ভোর সোয়া ৪টায় তার বড়মগবাজারের বাসা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গিয়াসউদ্দিন তালুকদার নামে এক ব্যবসায়ী গত ২৮ জুলাই ঢাকা সিএমএম আদালতে একরামুল হকের বিরুদ্ধে ওই সাজানো মামলাটি করেন। অবশ্য অভিযোগপত্রে বাদী তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের যে ঠিকানা উল্লেখ করেছে, সেখানে ওই প্রতিষ্ঠানের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। এর পরও ওই মামলায় ২ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয় একরামুল হককে।
এদিকে ১ আগস্ট শাহবাগ থানায় অপর চাঁদাবাজি মামলাটি (নং-১(৮)১১, ধারা ৩৮৫ ও ৫০৬ বা.দ.বি.) করেন সচিবালয়ের ৪র্থ শ্রেণী কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক। এতে সম্পাদক একরামুল হকের বিরুদ্ধে সচিবালয় অভ্যন্তরে বাদীর কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি ও হুমকি প্রদর্শনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এছাড়াও গত ২ আগস্ট ঢাকার সিএমএম কোর্টে মারধর ও হত্যার হুমকির অভিযোগ এনে আরেকটি মামলা দায়ের করেন আশুলিয়ার মো. শহিদুল ইসলাম। আদালত এ মামলায় বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে আগামী ১১ সেপ্টেম্বর সাক্ষীসহ বাদীকে আদালতে হাজির থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

Friday 5 August 2011

ব্রিটিশ আইনজীবীকে এয়ারপোর্ট থেকে ফেরত পাঠানো হলো : যুদ্ধপরাধ মামলার আসামিপক্ষের উকিল

স্টাফ রিপোর্টার
ব্রিটিশ আইনজীবী টবি ক্যাডম্যানকে গতকাল বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। ঢাকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে আটকে দেয়া হয়। ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে এয়ারপোর্ট থেকে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি না দিয়ে ফিরতি ফ্লাইটে আবার ব্রিটেনে পাঠিয়ে দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
টবি ক্যাডম্যান যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য গঠিত
ট্রাইব্যুনালে আসামিপক্ষের আইনজীবী হিসেবে কাজ করছিলেন। যুদ্ধাপরাধে জড়িত থাকার সরকারি অভিযোগে যাদের আটক করা হয়েছে তাদের পক্ষে আইনি লড়াইয়ে সহযোগিতার জন্য তিনি একাধিকবার বাংলাদেশে এসেছেন। গতকাল হোটেল পূর্বাণীতে অনুষ্ঠিত হওয়া একটি সেমিনারেও তার বক্তব্য রাখার কথা ছিল। বিমানবন্দরে তাকে আটকে দেয়ায় সেমিনারেও উপস্থিত হতে পারেননি তিনি।
এ ব্যাপারে বিমানবন্দর ইমিগ্রেশনের ওসি হায়াতুন্নবীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ সম্পর্কে আমি ভালো জানি না। বিষয়টি মনিটরিং করছে ভিসা সেল কর্তৃপক্ষ। ভিসা সেলের উপ-পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোনো কথা বলতেই সম্মত হননি। রাত পৌনে ৯টায় তিনি বলেন, কিছুক্ষণ আগে ওই বিদেশি আইনজীবীকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তবে বিমানবন্দরের একটি সূত্র জানায়, রাত সাড়ে ৮টায় ই-কে ৫৮৫ ফ্লাইটে ব্রিটিশ আইনজীবী টবি ক্যাডম্যানকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তিনি সকালে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এলে নানা অজুহাতে ইমিগ্রেশন থেকে বের হতে দেয়া হয়নি। ভিসা ও কাগজপত্র তল্লাশির নাম করে কালক্ষেপণ করে ফিরতি ফ্লাইটে রাতে দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়। বিমানবন্দরের ওই সূত্রটি জানায়, বৈধভাবে তিনি বাংলাদেশে এলেও সরকারের নির্দেশেই তাকে বিমানবন্দর থেকেই এবার ফেরত পাঠানো হয়েছে।

যুদ্ধাপরাধবিষয়ক আন্তর্জাতিক সেমিনার : ট্রাইব্যুনাল ভেঙে দেয়ার দাবি আইনজীবীদের



স্টাফ রিপোর্টার
যুদ্ধাপরাধ বিচারের লক্ষ্যে গঠিত ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল ভেঙে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন আইনজীবীরা। একইসঙ্গে তারা অবিলম্বে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমকে তার পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর দাবি জানিয়ে বলেন, তিনি ওই পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠিত গণতদন্ত কমিশন এবং গণআদালতের সঙ্গে বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের সম্পৃক্ত থাকার বিষয়ে তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করে গতকাল আন্তর্জাতিক একটি সেমিনারে আইনজীবীরা এ দাবি জানান। সেমিনারে অংশ নেয়া দেশের খ্যাতিমান আইনজীবীরা বলেন, এ ট্রাইব্যুনাল তার নিরপেক্ষতা হারিয়েছে এবং এ ধরনের বিচারের
যোগ্যতা ও দক্ষতা তাদের নেই। এ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে ন্যায়বিচার পাওয়ার কোনো আশা নেই। যুদ্ধাপরাধ বিচার নয়, বরং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিরোধী ইসলামী দল ও নেতৃবৃন্দকে ধ্বংস করাই তাদের লক্ষ্য।
নাগরিক ফোরামের উদ্যোগে রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে বক্তারা বলেন, ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান পদে বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের থাকার কোনো নৈতিক অধিকার নেই। কারণ যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে বর্তমানে যাদের আটক করা হয়েছে তিনি আগে থেকেই তাদের একই অভিযোগে অভিযুক্ত করে তাদের বিচার দাবি করেছেন। একজন বিচারপতি হিসেবে তার এ পদ গ্রহণ করাও ন্যায়সঙ্গত হয়নি।
‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং বাংলাদেশে ফৌজদারি বিচার পদ্ধতি : আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত কি রাবার স্ট্যাম্প’ র্শীষক সেমিনারে আইনজীবীরা বলেন, বিচার নয় বরং বিএনপির কয়েকজন নেতাকে হেয় করা এবং জামায়াতে ইসলামীকে ধ্বংস করার জন্যই যুদ্ধাপরাধের বিচার চলছে। এটি এখন আর এদেশের কারও কোনো বক্তব্য নয়, বরং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখন এ কথা বলতে শুরু করেছে। লন্ডন থেকে প্রকাশিত বিশ্বখ্যাত সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন দি ইকোনমিস্টের চলতি সংখ্যার একটি প্রতিবেদনে একথা বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেনের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার এমপি, ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক, বিশিষ্ট সাংবাদিক সাদেক খান, সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, ঢাকা বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষ ফাহিমা নাসরিন মুন্নি, সুপ্রিমকোর্টের আইনীজীবী ব্যারিস্টার বেলায়েত হোসেন, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হোমাম কাদের চৌধুরী প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার জন্য যুদ্ধাপরাধবিষয়ক ব্রিটিশ আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান সেমিনারে যোগ দেয়ার জন্য বিমানবন্দরে এসে পৌঁছলে তাকে সেখান থেকে ফেরত পাঠানো হয় সরকারের নির্দেশে। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন নাগরিক ফোরামের সভাপতি আবদুল্লাহেল মাসুদ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ যুদ্ধাপরাধ আদালত বিষয়ে চার দফা দাবি উপস্থাপন করে বলেন, বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান পদে থাকার কোনো নৈতিক অধিকার নেই। তিনি ১৯৯২ সালের গণআদালতের রায় বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছিলেন। এছাড়া ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠিত গণতদন্ত কমিশনের সেক্রেটারিয়েট সদস্য ছিলেন তিনি। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন উদাহরণ তুলে ধরে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, কোনো বিচারের সঙ্গে আগেই যাদের দূরতম কোনো সম্পর্ক থাকে তারা কোনোদিন সেই একই বিচারের ক্ষেত্রে বিচারকের আসনে বসতে পারেন না। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, বিচারপতি নিজামুল হক কি তার পূর্ব সম্পৃক্ততার বিষয় অস্বীকার করতে পারবেন?
বন্দি ব্যক্তিদের জামিন দিতে হবে দাবি করে মওদুদ আহমদ বলেন, অনেকদিন তাদের আটকে রেখেছেন আপনারা। এক বছর পার হয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কোনো চার্জশিট দিতে পারেননি। এ থেকে বোঝা যায়, রাজনৈতিক কারণে ট্রাইব্যুনাল তাদের বিষয়ে বিলম্ব করছে এবং আটক রেখেছে। এজাতীয় বিচারে কোনোদিন স্বচ্ছতা আশা করা যায় না। ট্রাইব্যুনাল যোগ্যতা হারিয়েছে উল্লেখ করে মওদুদ আহমদ বলেন, এ ট্রাইব্যুনাল ভেঙে দিতে হবে এবং নতুন করে গঠন করতে হবে। যুদ্ধাপরাধের বিচারের লক্ষ্যে গঠিত ট্রাইব্যুনালের এ ধরনের বিচারের কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তারা অদক্ষ। কোনোদিন এ জাতীয় বিচার তারা করেননি। এ ট্রাইব্যুনাল যুদ্ধাপরাধ বিচার করার ক্ষমতা রাখে না। ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি, আইনজীবী এবং তদন্তকারী অনেকেই ঘাতক-দালাল, গণআদালত এবং গণতদন্ত কমিশনের সঙ্গে জড়িত। তারা নিরপেক্ষ নন। ১৯৭৩ সালের যুদ্ধাপরাধ আইনকে সুরক্ষার জন্য যে সংবিধান সংশোধন করা হয় তা ছিল সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তাই এ বিচার প্রক্রিয়াও সাংবিধানিক নয়।
এ চার দফা দাবি জানিয়ে মওদুদ আহমদ বলেন, যদি আপনারা এগুলো না মানেন তাহলে প্রমাণ হবে আপনারা রাজনৈতিকভাবে বিরোধী দলকে ধ্বংস করার জন্য এ বিচার করছেন। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর জন্য তার পরিবার বিদেশি আইনজীবী নিয়োগ দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু আপনারা সে অনুমতি দেননি। একইভাবে জামায়াত নেতাদেরও এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায়, আপনাদের নিরপেক্ষ বিচারের সাহস নেই। টবি ক্যাডম্যান নামে একজন ব্রিটিশ আইনজীবী আজকের এ সমাবেশে যোগ দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তাকে বিমানবন্দরে আটকে দেয়া হয়েছে। এ থেকেও বোঝা যায়, আপনারা নিরপেক্ষ এবং স্বচ্ছ নন। গোটা জাতি এবং বিশ্ব বুঝে গেছে, এ বিচার হচ্ছে রাজনৈতিক কারণে বিরোধী দল দমনের জন্য। ইকোনমিস্টের সর্বশেষ প্রতিবেদনেও সে কথা বলা আছে।
ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, অভিযোগকারী কখনও বিচারের আসনে বসতে পারেন না। যিনি একজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন তিনি কি করে তার বিচার করবেন? এ বিচার তো ন্যায়বিচার হতে পারে না।
খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসীদের ধ্বংস করার জন্য এ বিচার চলছে। বিচারের নামে কেউ কেউ এদের ফাঁসিতে ঝোলানোরও স্বপ্ন দেখছে। তিনি বলেন, আগে আসল যুদ্ধাপরাধী ১৯৫ পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তার বিচার করুন, তারপর দেশীয়দের বিচারের কথা চিন্তা করা যাবে। মাহবুব হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ আজকের এই সেমিনার সম্পর্কে বলবে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্ত করার জন্য এ সমাবেশ করা হয়েছে। কিন্তু এখন আর সে সুযোগ নেই। কারণ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম গণতদন্ত কমিশনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন এবং তা সবাই জেনে গেছে।
ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক বলেন, জামায়াত এবং বিএনপির নেতারাসহ এদেশীয় লোকজন যখন যুদ্ধাপরাধের বিচারকে রাজনৈতিক বিচার হিসেবে আখ্যায়িত করে আসছে তখন সরকার বলেছে, আমরা যুদ্ধাপরাধ বিচারকে বানচাল করার জন্য এসব নাকি বলছি। কিন্তু এ বিচার যে সত্যিই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রতিপক্ষকে দমন করার জন্য করা হচ্ছে, তার পক্ষে শক্ত প্রমাণ রয়েছে। আজ সব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে, এ বিচার রাজনৈতিক, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা উদ্দেশ্য নয়। গত ২১ জুন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত যে সাতজনকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে গ্রেফতার করা হয়েছে তার মধ্যে ৫ জনই জামায়াতে ইসলামীর নেতা এবং দু’জন বিএনপি নেতা। এতে এ ধারণার জন্ম নিচ্ছে যে, শুধু বিরোধী নেতাদের টার্গেট করার জন্যই এ বিচারের আয়োজন চলছে।
লন্ডন থেকে প্রকাশিত বিশ্বখ্যাত সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন ‘দি ইকোনমিস্ট’-এর চলতি সংখ্যার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা নয়, বরং বিরোধী ইসলামিক রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীকে ধ্বংস করার জন্যই ট্রাইব্যুনালকে ব্যবহার করা হচ্ছে।’
ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক বলেন, আপনাদের সাহস থাকলে ট্রাইব্যুনালে বিদেশি বিচারপতি, আইনজীবী এবং তদন্তকারী নিয়োগ দেন। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি, আপনাদের সে সাহস নেই, কারণ আপনারা মিথ্যার ওপর বিচার করছেন।
ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক আবারও চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেন, সাহস থাকলে সংবিধানের প্রথম সংশোধনী বাতিল করুণ। কিন্তু আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি আপনারা তা করতে পারবেন না। বিচারের সিআরপিসি প্রয়োগ না করার কারণে তিনি একে আনসিভিলাইজড হিসেবে উল্লেখ করেন।
ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক বলেন, যেখানেই এ জাতীয় বিচার হয় সেখানেই আগে থেকেই অপরাধীদের তালিকা করা থাকে। কিন্তু আজ ৪০ বছর পরও নতুন করে লোকজনকে তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে। এক বছর আটক রাখার পরও তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করতে পারে না। অথচ ৪০ বছর আগে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক একটি উদাহরণ টেনে ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক বলেন, সম্প্রতি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এ জাতীয় অভিযোগে একজনকে গ্রেফতারের এক দিন পরই চার্জশিট প্রদান করা হয়।
সাদেক খান ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন তুলে ধরে বলেন, এ বিচার করা হচ্ছে জামায়াত ধংস করার জন্য। আজ দেশে যা কিছুই করা হচ্ছে তার মূল উদ্দেশ্য হলো দেশকে অকার্যকর করা। অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের ঘাতক-দালাল এবং গণতদন্ত কমিশনের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে বলেন, আপনার এ পদ গ্রহণ করা উচিত হয়নি। আপনি পদত্যাগ করে আবার হাইকোর্টে ফিরে আসুন।
তিনি বলেন, যিনি আইনের শাসনে বিশ্বাস করে না তিনি এখন আইনমন্ত্রী। তারা গোলাম আযমকে ফাঁসির রায় দিয়েছিলেন। তিনি এখন ঘাতক-দালালের নিজামুল হক নাসিমকে বানিয়েছেন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান, যাতে গোলাম আযম ছাড়া বাকি যারা ছিলেন তাদেরও ফাঁসির ব্যবস্থা করতে পারেন।
ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল বলেন, হাইকোর্টের বিচারপতি শুধু হাইকোর্টের বিচার করবেন, এটি সংবিধানে বলা আছে। কিন্তু হাইকোর্টের বিচারপতিকে করা হয়েছে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান। আবার নিজামুল হক নাসিম এটিএম ফজলে কবিরের চেয়ে ২৯ জন পরে ছিলেন সিরিয়ালের দিক দিয়ে, কিন্তু তার অধীনে এখন জুনিয়র হিসেবে কাজ করছেন ফজলে কবির। তিনি বলেন, এ ট্রাইব্যুনাল গুয়ান্তানামো কারাগারের চেয়েও খারাপ। সানাউল হক বলেন, আন্তর্জাতিক আদালতের ‘আও’ নেই এখানে। বিচারের নামে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করাই এর আসল কাজ