Saturday 26 June 2010

লোহার শিকের সাথে হাতকড়া লাগিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ



কবরের মতো ছোট অìধকার প্রকোষ্ঠে চোখ বেঁধে এবং লোহার শিকের সাথে হাতকড়া লাগিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে আমার দেশ সম্পাদক ও সাবেক জ্বালানি উপদেষ্টা মাহমুদুর রহমানকে। গত বুধবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ১০ ঘন্টা এভাবেই তাকে টিএফআই সেলে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। গতকাল আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে তিনি এসব কথা বলেন। মাহমুদুর রহমান আদালতের উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে বলেন, টর্চারের ‘ডেফিনেশন’ (সংজ্ঞা)-এ কী আছে তা আপনারা ভালো বলতে পারবেন। আমি যতদূর জানি, বাংলাদেশ ‘ইউনাইটেড নেসন্স’র ‘কনভেনশন এগেইনেস্ট টর্চার’-এ স্বাক্ষর করেছে। এতে সই করার পর কোনো সরকার তার যেকোনো নাগরিকের সাথে এ ধরনের আচরণ করতে পারে কি না? এ ছাড়া সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চোখ বেঁধে রাখার কোনো আইনি বিধান আছে কি না? এটা বিবেচনা করার দায়িত্ব মাননীয় আদালতের।
বিমানবন্দর থানার দায়েরকৃত রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চার দিনের রিমান্ড শেষে গতকাল তাকে আদালতে আনা হয়। এ নিয়ে চারটি মামলায় তিনি ১২ দিন রিমান্ডে ছিলেন। গতকাল আদালতের নির্দেশে তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
আদালতের অনুমতি নিয়ে মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘বুধবার সকাল সাড়ে ৬টায় আমাকে ডিবি অফিস থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়। বলা হয়, এটা র‌্যাব-১ অফিসের টিএফআই সেল। ওই সেলে নিয়ে আমার হাতকড়া পরানো হয় এবং আমার চোখ বাঁধা হয়। সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আমাকে চোখ বেঁধে এবং হাতকড়া বেঁধে রাখা হয়। এটা আইনের বিধান কি না মাননীয় আদালত আপনারা বিবেচনা করবেন। এখানে আইনের লোকজন আছেন। তা দেখবেন। সারা বাংলাদেশে আইনকে কোথায় নিয়ে যেতে চাওয়া হচ্ছে তা আপনারা বিবেচনা করবেন।’ তিনি বলেন, ‘পুরো সময়টা চোখ বেঁধে রেখে এবং হাতকড়া পরিয়ে আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আমাকে যখন সেল নামক একটি জায়গায় দেয়া হয়েছে, সে জায়গাটা খুব বেশি হলে একটা কবরের সাইজ হতে পারে।’ আদালতের কাঠগড়ার শিক দেখিয়ে মাহমুদুর রহমান বলেন, সেখানে এ রকম শিকের সাথে আমার এক হাত হাতকড়া বাঁধা এবং বাকিটাও ওই শিকের সাথে বাঁধা অবস্খায় ছিলাম। এভাবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আমাকে সেখান থেকে আবার ডিবি অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়।
আদালতে তিনি বলেন, যে অত্যাচারের মধ্য দিয়ে আমি ২৪ দিন অতিবাহিত করছি সে অত্যাচারটা করা হচ্ছে আইনকে সামনে রেখে। আইনকে ব্যবহার করে। আইনকে ব্যবহার করে যদি এ ধরনের অত্যাচার একজন নাগরিকের ওপর করা হয়, তাহলে এর ধারাবাহিকতা চলতে থাকবে। এতে রাষ্ট্র কোন অবস্খায় যাবে তা আপনি বিবেচনা করবেন। আদালতকে ধন্যবাদ দিয়ে তিনি তার বক্তব্য শেষ করেন।
এ দিকে পৃথক তিনটি মামলায় ১২ দিনের রিমান্ড শেষে মাহমুদুর রহমানকে গতকাল জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। বিমানবন্দর থানায় দায়ের করা রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চার দিনের রিমান্ড শেষে গতকাল দুপুরে তাকে আদালতে হাজির করা হলে নতুন কোনো রিমান্ড আবেদন না থাকায় আদালত তাকে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন। একই সাথে কারাবিধি অনুযায়ী তার চিকিৎসার ব্যবস্খা ও অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করারও নির্দেশ দেয়া হয়।
আদালতে মাহমুদুর রহমানের আইনজীবীরা বলেন, রিমান্ডের নামে তার ওপর নির্যাতন করা হয়েছে। তাকে রক্ষার জন্য মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে সুচিকিৎসা দরকার। আইনজীবীরা আদালতকে আরো বলেন, মাহমুদুর রহমানের বিষয়ে হাইকোর্ট যে নির্দেশনা দিয়েছেন পুলিশ তা মানছে না। হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী আদালত আসামিকে অসুস্খ মনে করলে তার সুস্খতার জন্য মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে। কিন্তু মাহমুদুর রহমানের ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি। আইনজীবীরা বলেন, পুলিশ চার দিনের নামে পাঁচ দিন কেন তাকে রিমান্ডে রাখল এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তার কাছে আসামি না রেখে কেন তৃতীয় সংস্খার কাছে হস্তান্তর করল আদালত থেকে তারও ব্যাখ্যা দেয়া উচিত।
মাহমুদুর রহমানকে বেলা ১টা ৫০ মিনিটের সময় আদালতের গারদখানায় নিয়ে আসা হয়। দীর্ঘক্ষণ গারদখানায় রাখার পর তাকে বিমানবন্দর থানায় দায়ের করা রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চার দিনের রিমান্ড শেষে বেলা ৩টা ২০ মিনিটে ঢাকার মহানগর হাকিম মোস্তফা শাহরিয়ার খানের আদালতে হাজির করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নতুন করে রিমান্ড না চাওয়ায় মাহমুদুর রহমানকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। একই সাথে কারাবিধি মোতাবেক তার সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য জেল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।
আদালত মাহমুদুর রহমানের আইনজীবীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে জেলে পাঠানোর আগে এক ঘন্টা আদালত কক্ষে তার আইনজীবীদের সাথে মামলাসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করার অনুমতি দেন। মাহমুদুর রহমান আইনজীবীদের বলেন, ডিবি অফিস থেকে বের করার সময় তিনি তার মাকে রাস্তায় দেখেছেন। তার চোখে পানি দেখেছেন, কিন্তু তার কণ্ঠস্বর শুনতে পাননি।
এ দিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমানকে বিমানবন্দর থানায় না রেখে তৃতীয় সংস্খার (পক্ষের) কাছে কেন হস্তান্তর করেছেন সেই বিষয়ে আদালত কোনো আদেশ দেননি।
এর আগে সকালে মাহমুদুর রহমানের আইনজীবীরা ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে পৃথক তিনটি মামলায় জামিনের জন্য আবেদন জানালে অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো: ইসমাঈল হোসেন শুনানি শেষে জামিন নামঞ্জুর করেন।
মাহমুদুর রহমানের পক্ষে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো: সানাউল্লাহ মিয়া, মো: মাসুদ আহমেদ তালুকদার, মো: খোরশেদ আলম, গোলাম মোস্তফা খান, সালেহ উদ্দিন, ব্যারিস্টার আহসান কবির, মো: মহসিন মিয়া, মোসলেম উদ্দিন জসিম, ওমর ফারুক, খন্দকার দিদারুল ইসলাম, সালেহ উদ্দিন, মো: জাকির হোসেন ভূঁইয়া, মো: তৈমূর আলম খন্দকার, মো: জয়নাল আবেদীন মেজবাহ, মো: তাহেরুল ইসলামসহ প্রায় অর্ধশত আইনজীবী মামলা পরিচালনা করেন।

Wednesday 23 June 2010

সমাবেশ করে সাংবাদিককে পেটানোর ঘোষণা

আখাউড়া ও সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি | তারিখ: ২৪-০৬-২০১০


সমাবেশ করে প্রথম আলোর ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি ওয়ালিদ সিকদারকে মারার হুমকি দেওয়া হয়েছে। সমাবেশ শেষে ‘জেএমবি’ আরাফাতের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের অর্ধশত নেতা-কর্মী ওয়ালিদ সিকদারের বাসায় গিয়ে তাঁকে খুঁজতে থাকেন। ওয়ালিদ তখন বাসায় ছিলেন না। তাঁরা পরে শহরের বিভিন্ন স্থানে তাঁর খোঁজে তল্লাশি চালান।
‘সাংসদের আপত্তিতে অতিথি করায়...’ শিরোনামে গত মঙ্গলবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত সংবাদের প্রতিক্রিয়ায় এ ঘটনা ঘটানো হয়। সোমবার সাংসদের উপস্থিতিতে জেলা আইনজীবী সমিতির সম্প্রসারিত ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর ভেঙে ফেলেন ছাত্র ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক একান্ত সচিব রবিউল আলম ওবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীকে বিশেষ অতিথি করায় সাংসদ আপত্তি করেন এবং ক্ষুব্ধ হন। পরে নতুন ভিত্তিপ্রস্তর বানানো হয় এবং মঙ্গলবার আইন প্রতিমন্ত্রী ভবনের কাজ উদ্বোধন করেন।
ভিত্তিপ্রস্তর ভাঙার খবর প্রকাশের পর ওই দিনই স্থানীয় সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি লুৎফুল হাই প্রথম আলোর প্রতিনিধিকে ফোন করে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন। সাংসদ বলেন, ‘তুই আমার কিছু পাইলেই পত্রিকায় নিউজ করিস। অথচ কয়েক দিন আগে শহরে বিএমএর সাধারণ সম্পাদক ও যুবলীগের সহসভাপতি বাবলুর (আশিকুল আলম) মধ্যে অনেক ঘটনা ঘটছে, পুলিশ এই ঘটনা সামলাতে গুলিবর্ষণ করেছে। এই সব নিউজ তুই পিটা খাওয়ার ভয়ে পত্রিকায় না করে অনলাইনে করেছিস। আর আমার বিরুদ্ধে কিছু হলে পত্রিকায় নিউজ করিস।’ তিনি প্রথম আলোর প্রতিনিধিকে দেখে নেওয়ারও হুমকি দেন। তবে তিনি বা তাঁর পক্ষে কেউ সংবাদের কোনো লিখিত প্রতিবাদ করেননি।
এরপর গতকাল আওয়ামী লীগ এবং ছাত্র ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা মাবববন্ধন করেন, পত্রিকার কপিতে আগুন দেন এবং সমাবেশ করেন। সমাবেশে জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম ফেরদৌস ঘোষণা দেন, ‘রবিনকে (ওয়ালিদ সিকদারের ডাক নাম) যেখানে পাওয়া যাবে, সেখানেই পেটানো হবে।’
জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আমানুল হক ওরফে সেন্টুর সভাপতিত্বে পৌর আধুনিক সুপার মার্কেটের সামনে সমাবেশে জেলা যুবলীগের সভাপতি মাহবুবুল আলম খোকন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রথম আলোকে অবাঞ্ছিত করার হুমকি দেন।
আমানুল হক বলেন, ‘প্রথম আলোয় যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, তার প্রতিবাদে যে মানববন্ধন হয়েছে, তাতে অন্য বক্তারা সবই বলেছেন। আমিও বলতে চাই, এমন সংবাদ প্রকাশ করলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রথম আলোকে ঢুকতে দেওয়া হবে না।’
এর আগে শহরের তোফায়েল আজম (টিএ রোড) সড়কে ১৭ আগস্ট বোমা হামলা মামলার অন্যতম আসামি শেখ মো. আরাফাত ওরফে জেএমবি আরাফাত, শহরের কান্দিপাড়ার ব্যবসায়ী শাহীন খাঁ হত্যা মামলার আসামি মো. আল-আমিনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা প্রথম আলোর কপিতে আগুন দেন। এ সময় প্রথম আলোর প্রতিনিধির চামড়া তুলে নেওয়া হবে বলে স্লোগান দেওয়া হয়।
জেলা আওয়ামী লীগের বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, ১২ মে প্রথম আলোয় ‘দখলের কবলে মেঘনা’ শিরোনামে একটি সচিত্র সংবাদ প্রকাশিত হয়। এর পর থেকেই সাংসদ লুৎফুল হাই প্রথম আলোর ওপর ক্ষিপ্ত হন। মঙ্গলবার ‘সাংসদের আপত্তিতে অতিথি করায়...’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হলে তিনি প্রথম আলোর প্রতিনিধিকে ফোন করে হুমকি দেন।
সংবাদটি সঠিক ছিল বলে মন্তব্য করে জেলার প্রবীণ আইনজীবী ও আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সভাপতি হামিদুর রহমান বলেন, ‘বর্তমানে আওয়ামী লীগের যা কর্মকাণ্ড, তাতে আমি যে আওয়ামী লীগের একজন, তা বলতে ইচ্ছে করে না।’ তিনি প্রথম আলোকে সব প্রতিকূলতার মধ্যেও সত্য সংবাদ প্রকাশ করার অনুরোধ করেন।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও জেলা জাতীয় পার্টির সহসভাপতি হারুনুর রশিদ খান বলেন, ‘প্রথম আলোয় মঙ্গলবার প্রকাশিত সংবাদটি মার্জিত, বস্তুনিষ্ঠ এবং শতভাগ সত্য ছিল। সোমবার ঘটনা ঘটার পর সাংসদ লুৎফুল হাই সাচ্চুকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, “আপনার উপস্থিতিতে এমন ঘটনা কী করে ঘটল?” তিনি এর কোনো উত্তর দেননি।’
সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ নাজমুল হোসেন বলেন, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা সাংসদের সামনেই ফলকটি ভাঙেন। এ নিয়ে প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদন নিয়ে ভিন্নমত প্রকাশ করার কোনো সুযোগ নেই। যা ঘটেছে, শত শত আইনজীবীর সামনেই ঘটেছে।
জাতীয় আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা জাসদের (ইনু) সভাপতি আক্তার হোসেন সাঈদ বলেন, সত্য সংবাদ সবাই মেনে নিতে পারেন না। তাই তাঁরা এসব করছেন।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি সাবেক পিপি শফিকুল ইসলাম বলেন, শত শত আইনজীবীর সামনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতির নির্মাণাধীন সম্প্রসারিত ভবনের ভিত্তিপ্রস্তরটি যাঁরা ভেঙেছেন, তাঁরা সাংসদের সঙ্গে এসেছেন, তাঁর সামনেই ভেঙেছেন, তাঁর সঙ্গেই আইনজীবী সমিতিতে বসেছিলেন এবং তাঁর সঙ্গেই আদালত এলাকা ত্যাগ করেন। তিনি বলেন, ‘আশা করি, প্রথম আলো সত্য সংবাদ প্রকাশের পথ থেকে সরে যাবে না।’
গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সম্পাদক কাজী মাসুদ আহম্মেদ বলেন, ‘ভিত্তিপ্রস্তরটি যাঁরা ভেঙেছেন, তাঁরা লুকিয়ে-ছাপিয়ে ভাঙেননি। আর সংবাদটি বেশ কয়েকটি জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকেও ছাপা হয়েছিল।’
ক্ষোভ ও নিন্দা: জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক খান (বীর প্রতীক) প্রথম আলোর প্রতিনিধিকে মারতে খোঁজ করা এবং পত্রিকা পোড়ানোর ঘটনায় নিন্দা জানান। ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবও গত রাতে জরুরি সভা করে নিন্দা জানায়। বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতির ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আহ্বায়ক দীপক চৌধুরী এ ঘটনায় ক্ষোভ ও নিন্দা জানান।

source:http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-06-24/news/73371

Thursday 17 June 2010

পটুয়াখালীতে আলতাফ চৌধুরীর সভা ও বাসভবনে হামলা

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরীর পটুয়াখালীর বাসভবনের সামনে তাঁর উপস্থিতিতে এক সভায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। হামলায় অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া একটি মোটরসাইকেল ও আসবাব পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে বিএনপির এই নেতার বাসভবনে। গতকাল বুধবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির নেতা আলতাফ হোসেন চৌধুরী শহরের শেরেবাংলা সড়কের নিজ ভবনের সামনে দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে সভা করছিলেন। এতে দলের অন্তত আড়াই শ নেতা-কর্মী যোগ দেন। সভা চলাকালে দুপুর ১২টার দিকে একদল সন্ত্রাসী সেখানে হামলা চালায়। এতে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের ২৫ জন নেতা-কর্মী আহত হন। আহত ব্যক্তিরা স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন। এ ছাড়া হামলাকারীরা একটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দিয়েছে। হামলাকারীরা একপর্যায়ে আলতাফ হোসেনের বাসভবনের আসবাব ভাঙচুর করে। পরে পুলিশ ও র‌্যাবের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
গতকাল সন্ধ্যায় নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে আলতাফ হোসেন চৌধুরী অভিযোগ করেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের শতাধিক নেতা-কর্মী ওই হামলায় অংশ নেন। এ ঘটনায় তিনি থানায় মামলা করবেন বলেও জানান।
এই অভিযোগ ভিত্তিহীন উল্লেখ করে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খান মোশারফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে বিএনপির নেতা-কর্মীরাই ওই হামলা চালিয়েছেন। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ ও এর কোনো সহযোগী সংগঠনের সদস্যরা জড়িত নন।
পটুয়াখালী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নরেশ চন্দ্র কর্মকার জানান, পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন ছিল।

http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-06-17/news/71570

Wednesday 16 June 2010

ফের আটক সাকা চৌধুরী



চট্টগ্রাম, ১৬ জুন (আরটিএনএন ডটনেট)-- তিন ঘণ্টা আটক রাখার পর ছেড়ে দেয়ার কয়েক মিনিটের মাথায় ফের আটক করা হয়েছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে।

এর আগে বুধবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে তাকে চট্টগ্রামের বলিরহাট এলাকায় আটক করে পুলিশ।

আটকের পর বাকলিয়া থানা পুলিশ থানার সামনে সালাউদ্দিন কাদেরকে নিজ গাড়িতে ঘেরাও করে রাখে। পরে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।

পুলিশ জানায়, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ আটক করা হয়। তবে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় কর্তব্যরত ম্যাজিস্ট্রট তাকে অব্যাহিত দেন।

ছেড়ে দেয়ার পরপরই একই অভিযোগে তাকে ফের আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীরা থানার সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।

পরিস্থিতি থমথমে বলে জানা গেছে। ঘটনাস্থলে মীর নাসির সহ বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা উপস্থিত রয়েছেন।

অবশ্য আটক হওয়ার পর সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী দাবি করেছিলেন, স্থানীয় এক বাসায় দাওয়াত শেষে ফেরার সময় পুলিশ তাকে আটক করেছে। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।

প্রসঙ্গত, গতকাল মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সব ধরনের আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়।

উল্লেখ্য, প্রায় তিন সপ্তাহের টানা প্রচারণার পর আগামীকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে নির্বাচন নির্বিঘ্ন করতে ১৪ জুন চট্টগ্রামে প্রায় ৭০০ সেনা মোতায়েনের পাশাপশি ১৬ হাজার নিরাপত্তাকর্মী মাঠে নামে।

http://rtnn.net/details.php?id=25280&p=1&s=1

Monday 14 June 2010

রায়পুরায় বিএনপি নেতার বাড়িতে আ.লীগের হামলার অভিযোগ

নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ও চর আড়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলামের বাড়িতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল রোববার সকালে ইউনিয়নের বাখাইকান্দি গ্রামে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
বিএনপির নেতা জহিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, চর আড়ালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. জাকির হোসেন ও সহ-সভাপতি নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে ১৫-২০ জনের একটি দল দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তাঁর বাড়িতে হামলা চালায়। হামলাকারীরা বাড়ির পাঁচটি ঘরের জিনিসপত্র তছনছ করে। তারা আলমারি ভেঙে টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যান। এতে অন্তত পাঁচ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগের নেতা মো. জাকির হোসেন বলেন, ঘটনার সময় তিনি ঘুমাচ্ছিলেন। তাঁর অভিযোগ, চেয়ারম্যান পক্ষের হামলায় সুমন নামে তাঁদের পক্ষের এক যুবক আহত হয়েছেন। নুরুল ইসলামও হামলায় নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-06-14/news/70796

মাহমুদুর রহমানকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে চায় সরকার

সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া

বিএনপির চেয়ারপারসন ও জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া বলেছেন, সরকার মাহমুদুর রহমানকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে চায়। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করার নামে রিমান্ডে নেওয়া হলেও কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। বরং চোখ বেঁধে, বিবস্ত্র করে তাঁকে পিটিয়ে অজ্ঞান করে ফেলা হয়েছে।
গতকাল রোববার রাতে বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া এ অভিযোগ করেন। তিনি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাবধান করে দিয়ে বলেছেন, মাহমুদুর রহমান যাঁদের হেফাজতে ছিলেন, কেবল তাঁরাই দায়ী হবেন না; সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সরকারের শীর্ষপর্যায় থেকে যাঁরা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন, তাঁরাও দায় এড়াতে পারবেন না।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমি আবারও রাষ্ট্রের সকল অঙ্গের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে সাবধান করে দিতে চাই। সংবিধান ও আইনের বাইরে কাজ করবেন না। এর পরিণাম ভালো হবে না। ফ্যাসিস্টদেরকে মদদকারী হওয়া থেকে বিরত থাকুন। সরকারি কর্মকর্তারা আইন ভঙ্গ করবেন না। মনে রাখবেন, কোনো সরকারই শেষ সরকার নয়।’
দৈনিক আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের ওপর এই নির্যাতনের তদন্ত ও দোষীদের বিচার দাবি করেন বিরোধীদলীয় নেত্রী। তিনি একই সঙ্গে মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে করা হয়রানিমূলক সব মামলা প্রত্যাহার করে তাঁকে মুক্তি দিতে সরকারের প্রতি দাবি জানান।
খালেদা জিয়া বলেন, গভীর রাতে পাঁচ-ছয়জন লোক ক্যান্টনমেন্ট থানাহাজতে ঢুকে মাহমুদুর রহমানকে চোখ বেঁধে, বিবস্ত্র করে মেঝেতে ফেলে দেন। পৈশাচিক কায়দায় তাঁর ওপর শারীরিক নির্যাতন চালান। এসব তথ্য মাহমুদুর রহমান নিজে প্রকাশ্য আদালতে বলেছেন। তার পরও হাইকোর্টের নির্দেশনা অমান্য করে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই আরেকটি মামলায় তাঁকে আবার চার দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ।
রিমান্ডে নিলে কীভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে, এ বিষয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনা বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের সময়ও মানা হয়নি। রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের দায় বিএনপি এড়াতে পারে কি না—এ প্রশ্নের জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমাদের আমলে সবাই জামিন পেয়েছে। কাউকে রিমান্ডে নেওয়া হয়নি।’
খালেদা জিয়ার এ জবাব দেওয়ার আগে সাবেক আইনমন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আমরা এখানে অতীতের কথা বলতে আসিনি। আমরা এসেছি বর্তমানের কথা বলতে। তা ছাড়া মাহমুদুর রহমানকে যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছে, তখন এভাবে কাউকে নির্যাতন করা হয়নি।’

http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-06-14/news/70815

Sunday 13 June 2010

হাইকোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও আমার দেশ-এর প্রেস খুলতে দিচ্ছে না পুলিশ



হাইকোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও আমার দেশ পত্রিকার প্রেস খুলতে বাধা দিচ্ছে পুলিশ। তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা পুলিশ নানা অজুহাতে প্রেস খুলে স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড চালাতে বাধার সৃষ্টি করছে। বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের রায়ের পর আইনজীবীর সার্টিফাইড কপি গ্রহণযোগ্য নয় বলে প্রেসে বিপুলসংখ্যক পুলিশ পাঠিয়ে তারা বাধার সৃষ্টি করে। হাইকোর্টের সার্টিফাইড কপি পেলেই প্রেস খুলে দেয়া হবে বলে তখন আমার দেশ কর্তৃপক্ষসহ উপস্থিত গণমাধ্যমের কর্মীদের জানানো হয়। কিন্তু গতকাল আমার দেশ পত্রিকার বিষয়ে হাইকোর্টের আদেশের সার্টিফাইড কপি গ্রহণ করেননি তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওমর ফারুক। হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী আমার দেশ-এর ছাপাখানা গতকাল পত্রিকা খুলে দেয়ার অনুরোধ জানালে থানা কর্তৃপক্ষ তা আমলে নেয়নি। এ মামলায় তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ৪ নম্বর প্রতিপক্ষ হওয়ায় আইন অনুযায়ী তার সার্টিফাইড কপি গ্রহণ করতে অস্বীকৃত জানানোর সুযোগ নেই।
আমার দেশ-এর ডিক্লারেশন বাতিল সংক্রান্ত জেলা প্রশাসকের আদেশ তিন মাসের জন্য স্থগিত করে বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের দেয়া আদেশের কোর্ট সার্টিফাইড কপি আমার দেশ পত্রিকার সাংবাদিক ও আইনজীবীরা গতকাল দু’দফায় শিল্পাঞ্চল থানায় নিয়ে গেলেও থানা তা গ্রহণ করেনি। প্রথম দফায় থানার ওসি ওমর ফারুক সেটা গ্রহণ না করে সাংবাদিকদের ফিরিয়ে দেন। দ্বিতীয় দফায় সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের সঙ্গে নিয়ে আমার দেশ কর্তৃপক্ষ ও সাংবাদিকরা থানায় গেলে সেকেন্ড অফিসার শাহাবুদ্দিন আজাদ তা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান। ওসি তখন থানায় উপস্থিত ছিলেন না। ওসির সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি থানার সেকেন্ড অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। থানার সেকেন্ড অফিসার শাহাবুদ্দিন আজাদ এটা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান। জেলা প্রশাসনের রিসিভ কপি প্রদর্শনসহ বেশ কিছুক্ষণ যুক্তিতর্কের পর সেকেন্ড অফিসার গ্রহণ করতে রাজি হলেও পরে তিনি টেলিফোনে একাধিক জায়গায় কথা বলে শেষে সার্টিফাইড কপি অফিশিয়ালি গ্রহণ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এদিকে মামলার দুই নম্বর প্রতিপক্ষ জেলা প্রশাসন গতকাল হাইকোর্টের আদেশের সার্টিফাইড কপি অফিশিয়ালি গ্রহণ করেছে।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণার পর আমার দেশ-এর পক্ষ থেকে আইনজীবীদের সার্টিফাইড কপি নিয়ে থানায় গেলে থানা কর্তৃপক্ষ তা আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করে। কিন্তু ওইদিন প্রেস খুলে দেয়ার অনুরোধ জানালে হাইকোর্টের রায়ের সার্টিফায়েড কপি পেলেই খুলে দেবেন বলে সেদিন রাতে তেজগাঁওস্থ আমার দেশ প্রেস প্রাঙ্গণে উপস্থিত সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন। কিন্তু গতকাল আদেশের সার্টিফাইড কপি নিয়ে গেলে শিল্পাঞ্চল থানা প্রেস তো খুলে দেয়ইনি, এমনকি আনুষ্ঠানিকভাবে সার্টিফাইড কপিও গ্রহণ করেনি।
থানার পূর্বের বক্তব্যের সূত্র ধরে আমার দেশ পত্রিকার সাংবাদিকরা হাইকোর্টের রায়ের সার্টিফাইড কপির ভিত্তিতে প্রেস খুলে দেয়ার অনুরোধ জানালে পুলিশ গতকালও অস্বীকৃতি জানায়। তারা জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পেলেই তারা কেবল প্রেসটি খুলে দেবেন। এদিকে শিল্পাঞ্চল থানা জানিয়েছে, ঢাকা জেলা প্রশাসকের নির্দেশেই তারা প্রেস সিলগালা করেছে। এদিকে ঢাকা জেলা প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রেস সিলগালা করার নির্দেশ দেয়া হয়নি। প্রকাশনা বন্ধের ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/06/14/35138

মানবাধিকার ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিক্রিয়া : রিমান্ডে মাহমুদুর রহমানের ওপর নির্যাতন সংবিধান ও হাইকোর্টের রায় পরিপন্থী

আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে রিমান্ডে নিয়ে বর্বরোচিত কায়দায় অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে। এ সংবাদে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক এবং মানবাধিকার সংগঠন। সংগঠনগুলো এ নির্মম নির্যাতনের ঘটনার তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছে, রিমান্ডের নামে নির্যাতন বিদ্যমান সংবিধানের ৩৫(৫) অনুচ্ছেদের পরিপন্থী। এছাড়াও রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের ব্যাপারে হাইকোর্ট যে নির্দেশনা দিয়েছিলেন, মাহমুদুর রহমানের ক্ষেত্রে তা মানা হচ্ছে না। সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, বর্তমান সরকার আইনের শাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে পদদলিত করে সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে হরণ করতে চায়। যাতে আর কেউ সোচ্চার কণ্ঠে তাদের দুর্নীতি, দুঃশাসন, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এবং রাষ্ট্র ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী তত্পরতার সমালোচনা করতে না পারে। এজন্যই মাহমুদুর রহমানের ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হচ্ছে। আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের এ আচরণ বিগত অসাংবিধানিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও বাকশাল আমলের নির্যাতনের মাত্রাকেও ছাড়িয়ে গেছে। এর আগে কখনও কোনো পত্রিকার সম্পাদককে এ ধরনের নিষ্ঠুর নির্যাতন করা হয়নি। বর্তমান সরকার মাহমুদুর রহমানের ওপর এহেন নির্যাতন চালিয়ে মধ্যযুগের অন্ধকার শাসন কায়েম করেছে। একটি নির্বাচিত সরকারের কাছে এ ধরনের আচরণ প্রত্যাশিত নয়। গতকাল পৃথক পৃথক বিবৃতিতে এ মন্তব্য করা হয়। একইসঙ্গে তারা রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করার ঘটনা প্রতিরোধ করতে দেশের গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল শক্তির প্রতি আহ্বান জানান।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান রিমান্ডে অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে আদালতে অভিযোগ করেছেন। আইন ও সালিশ কেন্দ্র এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে দেখা গেছে, মাহমুদুর রহমান আদালতে অভিযোগ করেছেন যে, তার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে দেখছি যে, ২০০৩ সালে ব্লাস্ট বনাম বাংলাদেশ মামলায় (আইন ও সালিশ কেন্দ্র ওই মামলায় অন্যতম পিটিশনার ছিল) গ্রেফতার করা ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে হাইকোর্ট যে নির্দেশনা দিয়েছিলেন, মাহমুদুর রহমানসহ অন্যদের এক্ষেত্রে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তা মানা হচ্ছে না। তাছাড়া সংবিধানের ৩৫(৫) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘কোন ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেওয়া যাইবে না কিংবা নিষ্ঠুর, অমানুষিক বা লাঞ্ছনাকর দণ্ড দেওয়া যাইবে না কিংবা কাহারো সহিত অনুরূপ ব্যবহার করা যাইবে না। নির্যাতন বা নিষ্ঠুর, অমানবিক বা অবমাননাকর শাস্তি দেওয়া বা তার সাথে এ ধরনের আচরণ করা যাইবে না।’ আমরা একটি নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে এ ধরনের আচরণ প্রত্যাশা করি না।
জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল সভাপতি বদরুদ্দীন উমর ও সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম এক বিবৃতিতে আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে রিমান্ডের নামে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা কর্তৃক বর্বরোচিত নির্যাতনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন, রিমান্ডের নামে এই অপরাধ জনগণ চলতে দিতে পারে না। তারা আরও বলেন, রিমান্ডের নামে ধরে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন একটি অপরাধ। রাষ্ট্রীয় হেফাজতে এ অপরাধ ব্যাপকভাবে সংঘটিত হয় বিগত সেনা নিয়ন্ত্রিত ফখরুদ্দীন সরকারের আমলে। একথা আজ অজানা নয়, সরকারের নির্দেশে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। বিবৃতিতে তারা রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করার ঘটনা প্রতিরোধ করতে দেশের গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল শক্তির প্রতি আহ্বান জানান।
এদিকে বাংলাদেশী-আমেরিকান জাতীয়তাবাদী ফোরামের নেতারা আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে পুলিশি রিমান্ডে নিয়ে নির্মম নির্যাতনকে বর্তমান সরকারের ফ্যাসিবাদী চরিত্রের চরম বহিঃপ্রকাশ বলে মন্তব্য করেছেন। গতকাল এক বিবৃতিতে তারা বলেন, বর্তমান সরকার বাকশালী কায়দায় বাংলাদেশে আইনের শাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে পদদলিত করে সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে হরণ করতে চায়, যাতে আর কেউ সোচ্চার কণ্ঠে সরকারের সমালোচনা করতে না পারে। এজন্যই আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে। ফোরাম নেতারা অবিলম্বে মাহমুদুর রহমানের ওপর নির্যাতন বন্ধ করে তার সুচিকিত্সার ব্যবস্থা করা এবং তাকে মুক্তি দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান। আওয়ামী-বাকশালী অত্যাচারী এই ফ্যাসিস্ট সরকার রাজনৈতিকভাবে বিরোধী দলকে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে দমন-পীড়ন, জুলুম-নির্যাতনের পথ বেছে নিয়েছে। সরকার পুলিশ নিয়ে জনগণের কণ্ঠ রোধ করতে চায়। কিন্তু জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে গণআন্দোলন বন্ধ করা যাবে না। কোনো সরকারই সংবাদপত্র এবং সাংবাদিকদের ওপর জুলুম করে বেশিদিন ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেনি—এ সরকারও পারবে না।
বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গনি এবং মহাসচিব এ গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক ও দেশের বিশিষ্ট কলামিস্ট মাহমুদুর রহমানকে পুলিশি রিমান্ডে নির্যাতন বর্তমান ক্ষমতালিপ্সু আওয়ামী লীগ সরকারের ফ্যাসিবাদী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। তারা আইনের শাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে পদদলিত করে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করে আবারও ’৭৫-এর মতো বাকশাল প্রতিষ্ঠার চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে। সরকারের বাকশাল প্রতিষ্ঠার বড় বাধা হচ্ছে স্বাধীন ও সাহসী সংবাদপত্র। এ কারণেই আর কোনো সংবাদপত্র যাতে সাহসী ভূমিকা পালন করতে না পারে, সেজন্য মাহমুদুর রহমানের ওপর বর্বরোচিত নির্যাতন চালানো হচ্ছে। নেতারা মাহমুদুর রহমানের ওপর নির্যাতন বন্ধ এবং তার নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/06/14/35127

বিশিষ্ট আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মীদের উদ্বেগ : রিমান্ডে মাহমুদুর রহমানকে নির্যাতন : সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের লঙ্ঘন



দৈনিক আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে একের পর এক মামলায় রিমান্ডে নেয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশিষ্ট আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মীরা। তারা বলেন, রিমান্ডের ব্যাপারে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) মামলায় দেশের সর্বোচ্চ আদালতের দেয়া রায়ে বলা হয়েছে, কাউকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে পাঠানোর আগে সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট তার (আসামির) স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে মেডিকেল রিপোর্ট গ্রহণ করবেন। রিমান্ড থেকে ফেরত আসার পর
পুনরায় স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে রিপোর্ট গ্রহণ করবেন। রিমান্ডে আসামির চাহিদা অনুযায়ী চিকিত্সার ব্যবস্থা করতে হবে। আত্মীয়-স্বজনকে দেখা করতে দিতে হবে। একটি মামলায় রিমান্ড শেষ হলে অপর মামলায় রিমান্ডে নেয়ার আগে আসামিকে কারাগারে পাঠিয়ে অবশ্যই মেডিকেল বোর্ডের মাধ্যমে স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। মেডিকেল রিপোর্ট অনুযায়ী তাকে পরবর্তী রিমান্ডে পাঠাতে পারবেন সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট। লাগাতার দুই মামলায় পরপর কাউকে রিমান্ডে পাঠানো যাবে না। মাহমুদুর রহমানের রিমান্ডের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হলে আদালত ব্লাস্ট মামলার এ রায় পুরোপুরি অনুস্মরণ করার জন্য সরকারকে নির্দেশ দেয়। মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের সবাইকে হাইকোর্টের এ আদেশ দেয়ার পরও তারা তা আমলে না নিয়ে আদালত অবমাননা করেছেন বলে মনে করেন আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মীরা। তারা বলেন, রিমান্ডের ব্যাপারে সর্বোচ্চ আদালতের এ গাইডলাইন সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট ও তদন্ত কর্মকর্তা মানতে বাধ্য। তারা এটা না মানলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন ক্ষতিগ্রস্ত আসামি পক্ষ।
সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ও সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বলেন, আসামিদের রিমান্ড মঞ্জুর ও জিজ্ঞাসাবাদের ব্যাপারে সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। এছাড়াও মাহমুদুর রহমানের বিষয়ে ওইসব নির্দেশনা অন্তর্ভুক্ত করে সম্প্রতি হাইকোর্ট আরও একটি নির্দেশনা দিয়েছেন। এ নির্দেশনাগুলো মানতে সরকার ও নিম্ন আদালত বাধ্য। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে মাহমুদুর রহমানের রিমান্ডের ব্যাপারে সর্বোচ্চ আদালতের ওইসব নির্দেশনা সরকার ও নিম্ন আদালত কেউই মানছে না। উচ্চ আদালতে কনটেম্পট পিটিশন ফাইল করলে দেখা যেত নিম্ন আদালতের বিচারকেরা কোথায় এ সাহস পেয়েছেন। তিনি বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অগ্রাহ্য করে রিমান্ডের নামে আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের ওপর যে নির্যাতন করা হচ্ছে তা কোনো সভ্য সমাজে চলতে পারে না। নিম্ন আদালত ও সরকারের এ আচরণ সংবিধান এবং আইনের শাসনকে মারাত্মকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। মাহমুদুর রহমানের অবস্থা যাই হোক, আইন ও উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্য করার দায়ে সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ কর্মকর্তাদের অবশ্যই উচ্চ আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে এবং এর জন্য তাদের জবাবদিহিও করতে হবে। এটা আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, ২০০৩ সালে ব্লাস্ট বনাম বাংলাদেশ মামলায় গ্রেফতার করা ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে হাইকোর্ট যে নির্দেশনা দিয়েছিল, মাহমুদুর রহমানসহ অন্য আসামির ক্ষেত্রে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তা মানা হচ্ছে না। তাছাড়া সংবিধানের ৩৫(৫) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘কোন ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেওয়া যাইবে না কিংবা নিষ্ঠুর, অমানুষিক বা লাঞ্ছনাকর দণ্ড দেওয়া যাইবে না কিংবা কাহারো সহিত অনুরূপ ব্যবহার করা যাইবে না। নির্যাতন বা নিষ্ঠুর অমানবিক বা অবমাননাকর শাস্তি দেয়া বা তার সাথে এ ধরনের আচরণ করা যাবে না।’ আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান রিমান্ডে অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে আদালতে অভিযোগ করেছেন। আইন ও সালিশ কেন্দ্র এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে দেখা গেছে, মাহমুদুর রহমান আদালতে অভিযোগ করেছেন, তার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। আমরা একটি নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে এ ধরনের আচরণ প্রত্যাশা করি না। তিনি বলেন, কোনো আসামিকে নিরাপত্তা হেফাজতে নেয়ার পর তার জীবনের নিরাপত্তা ও মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের দায়িত্ব রাষ্ট্রের। আসামির রিমান্ডের ব্যাপারে সর্বোচ্চ আদালত যে রায় দিয়েছে এটা অনুসরণ করার জন্য আমরা বরাবরই দাবি জানিয়ে আসছি। এ বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্যও আমরা সক্রিয়ভাবে কাজ করছি। রাষ্ট্রের হেফাজতে থাকা অবস্থায় একজন আসামির মৌলিক ও মানবাধিকার লঙ্ঘন হলে এর চেয়ে আর দুঃখের কিছু থাকতে পারে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, পত্রপত্রিকায় আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের রিমান্ডকালীন নির্যাতনের যে করুণ বর্ণনা পড়লাম তা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। এটা আইনের শাসন, সংবিধান ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। একটি সভ্য দেশের জন্য এ ধরনের ঘটনা কলঙ্কজনক। রিমান্ডে নেয়া ও জিজ্ঞাসাবাদের ব্যাপারে দেশের সর্বোচ্চ আদালত যে নির্দেশনা দিয়েছে তা অধস্তন আদালত ও সরকার মানতে বাধ্য। বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক হওয়ার পর বলা হচ্ছে, নিম্ন আদালতগুলো স্বাধীনভাবে কাজ করছে। অথচ দেখা যাচ্ছে সরকারের নির্দেশ উপেক্ষা করে নিম্ন আদালত স্বাধীনভাবে কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারছে না। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা লঙ্ঘন করে যেসব ম্যাজিস্ট্রেট লাগাতারভাবে আসামিদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন তারা হয় সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করছেন আর না হয় উচ্চ আদালতের নির্দেশনাকে তারা তোয়াক্কাই করছেন না।
প্রখ্যাত আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, দুনিয়ার সব দেশে পুলিশ একটি মামলার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত ও অনুসন্ধান শেষে যথেষ্ট পরিমাণ তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও সাক্ষ্য প্রমাণ গ্রহণ শেষে আসামি গ্রেফতার করে। আর আমাদের সমাজে এর সম্পূর্ণ বিপরীত ঘটনা ঘটছে। কাউকে গ্রেফতার করার পর মামলা হয়। এরপর জিজ্ঞাসাবাদের নামে রিমান্ডে নিয়ে নির্মম নির্যাতন করা হয়। আইনে রিমান্ড বিষয়টি একটি ব্যতিক্রমী ব্যবস্থা হিসেবে রাখা হয়েছে। বিরোধী মতের ব্যক্তিদের বেলায় এ ব্যতিক্রমী বিশেষ ব্যবস্থাটিই এখন আমাদের দেশে আইনে পরিণত করা হয়েছে। মাহমুদুর রহমানের ব্যাপারে ব্লাস্ট বনাম বাংলাদেশ মামলায় দেয়া নির্দেশনা অমান্য করে শুধু সরকারই আইন ভঙ্গ করেনি, পাশাপাশি নিম্ন আদালতও আইন ভঙ্গ করেছে।
মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট আদিলুর রহমান খান বলেন, রিমান্ডে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের ব্যাপারে হাইকোর্ট একটি নির্দেশনা দেয়। পরবর্তী সময়ে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ এটা বহাল রেখে সরকারকে তা অনুসরণ করার জন্য নির্দেশ দেয়। আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের ব্যাপারে ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ সর্বোচ্চ আদালতের এ নির্দেশনার একটিও অনুসরণ করেনি। এটা আইনের শাসন ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। একইসঙ্গে সংবিধানের ৩৫(৫) অনুচ্ছেদ ও জাতিসংঘ মানবাধিকার সনদের চরম পরিপন্থী। আইনের শাসনের প্রতি বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধা থাকলেও একজন ম্যাজিস্ট্রেট উচ্চ আদালতের নির্দেশনা লঙ্ঘন করবেন না। নিরাপত্তা হেফাজতে নেয়ার পর আসামির মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের দায়িত্ব রাষ্ট্রের। রাষ্ট্র এ বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার নাসিরউদ্দিন অসীম বলেন, রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের বিরুদ্ধে ব্লাস্টের দায়ের করা রিটের ব্যাপারে হাইকোর্ট একটি ঐতিহাসিক নির্দেশনা দিয়েছে। যা ৫৫ ডিএলআরে উল্লেখ করা হয়েছে। মাহমুদুর রহমানের রিমান্ডে নেয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করা হলে হাইকোর্ট ব্লাস্টের মামলার পুরো নির্দেশনা অনুসরণ করার জন্য মহানগর হাকিম, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, পুলিশ প্রশাসন, জেলা প্রশাসন, স্বরাষ্ট্র সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ জারি করে। হাইকোর্টের এ আদেশের কপি সর্বত্র দেয়া হয়েছে। কিন্তু সরকার ও পুলিশ প্রশাসন সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনার কোনো তোয়াক্কা করছে না। এটা আদালত অবমাননা এবং মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন ছাড়া আর কিছুই নয়। তিনি বলেন, মাহমুদুর রহমান নিজেও একজন মানবাধিকার কর্মী। ওয়ান-ইলেভেনের পর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ রাজনীতিবিদদের গ্রেফতার করা হলে এবং এদের অনেককে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের নামে নির্যাতনের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম যে কয়েকজন সাহসী ব্যক্তি প্রতিবাদ করেছেন তাদের মধ্যে মাহমুদুর রহমান একজন। ওয়ান-ইলেভেনের জরুরি সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে রাজনীতিবিদদের গ্রেফতার ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে টিভির টকশোতে বলেছেন এবং পত্রপত্রিকায় অব্যাহতভাবে লিখেছেন। গোটা দেশবাসী এর সাক্ষী। বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের সময়ে এসে মাহমুদুর রহমান নিজেই সেই নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এটা বড়ই বেদনাদায়ক। এই সরকারকেও মনে রাখা উচিত, তারাই দেশের শেষ সরকার নয়। এরপর আরও সরকার আসবে।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/06/14/35108

মাহমুদুর রহমানকে রিমান্ডে নিয়ে বিবস্ত্র করে নির্যাতন মেনে নেয়া যায় না : মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনের ঘোষণা



দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের প্রতিবাদ, অবিলম্বে তার মুক্তি এবং পত্রিকাটির অব্যাহত প্রকাশনা নিশ্চিতের দাবিতে গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছেন সাংবাদিক ও পেশাজীবীরা। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তায় এ সমাবেশ হয়। এতে বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ সংহতি প্রকাশ করেন। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল হাইকোর্ট মোড় ঘুরে পুরানা পল্টন হয়ে আবার প্রেসক্লাবে এসে শেষ হয়।
সমাবেশে সাংবাদিক ও পেশাজীবী নেতারা বলেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা উপেক্ষা করে আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে রিমান্ডে নিয়ে বিবস্ত্র করে নির্যাতন চালিয়ে তাকে অজ্ঞান করে ফেলা হয়েছে। লোমহর্ষক নির্যাতনের যে বর্ণনা মাহমুদুর রহমান আদালতে দিয়েছেন, সেটা শোনার পর কোনো বিবেকবান মানুষ প্রতিবাদ না করে পারেন না। একজন সম্পাদককে বিবস্ত্র করা মানে পুরো সাংবাদিক সমাজকে বিবস্ত্র করা।
সম্পাদকদের অপমানিত করা। এটা কোনো সম্পাদক ও সাংবাদিক মেনে নিতে পারেন না। যারা এটা করেছে, তাদের আইনের হাতে তুলে দিতে হবে। একদিন না একদিন তাদের বিচার হবেই। একই দাবিতে আজ সোমবার বিকাল ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে পেশাজীবীদের সমাবেশ হবে।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী। সমাবেশে বক্তৃতা করেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি শওকত মাহমুদ, বিএফইউজের মহাসচিব এমএ আজিজ, ডিইউজে সভাপতি আবদুস শহিদ, সাধারণ সম্পাদক বাকের হোসাইন, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের মহাসচিব অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের (এ্যাব) নেতা রিয়াজুল ইসলাম রিজু, জাতীয় পেশাজীবী ফোরামের মহাসচিব ডা. এএনএম কামরুল হাসান, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মীর আহমেদ মীরু, কাদের গণি চৌধুরী, আমার দেশ-এর ইউনিট চিফ বাছির জামাল প্রমুখ। সমাবেশে আরও সংহতি জানান, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা টিএইচ আইয়ুব, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের সহকারী মহাসচিব জাকির হোসেন, জাতীয়তাবাদী গবেষণা সংস্থার নির্বাহী পরিচালক শাহাদত হোসেন, জিয়া ব্রিগেডের আহ্বায়ক জাহিদ ইকবাল, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুর রহিম, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সিনিয়র সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলাম বাবুল, সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান খোকন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ওবায়দুল হক নাসির, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি কামাল আহমেদ, দক্ষিণের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ইছহাক সরকার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক মোহসীন বিশ্বাস, মামুন হোসেন প্রমুখ।
সমাবেশে রুহুল আমিন গাজী বলেন, সরকার আমার দেশ পত্রিকা বন্ধ করে দিয়ে ৪ হাজার মানুষের রুটি-রুজি অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। স্বৈরাচারী কায়দায় আমার দেশ বন্ধ ও আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করে সম্পাদককে গ্রেফতার করে বুঝিয়ে দিয়েছে তারা অবাধ তথ্যপ্রবাহে বিশ্বাস করে না।
শওকত মাহমুদ বলেন, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসী কায়দায় আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদককে গ্রেফতার করে মিথ্যা ও সাজানো মামলায় সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। এটা প্রমাণ করে সরকার অতীতের মতো বাকশালী কায়দায় দেশ চালাতে চাইছে। সংবিধান, আইন ও মানবাধিকার আজ ভূলুণ্ঠিত। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের কাছে সবকিছু আজ অসহায়। এটা চলতে পারে না। গণতন্ত্রমনা মানুষকে ঐক্যবদ্ধভাবে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ ও পত্রিকা বন্ধ একসূত্রে গাঁথা। হাজার হাজার পরিবারকে অনিশ্চয়তায় ফেলে দিয়ে স্বৈরাচারী স্টাইলে আমার দেশ বন্ধ করে দেয়ার প্রতিবাদ জানানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আমার দেশ বন্ধ ঘোষণা দেশের সব গণমাধ্যমের জন্য হুমকি উল্লেখ করে অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া বলেন, দেশের প্রতিটি মিডিয়া এখন সরকারি খড়গের আশঙ্কায় অনিশ্চয়তার মধ্যে চলছে।
বিক্ষোভ সমাবেশে নেতারা অবিলম্বে আমার দেশের বিরুদ্ধে সরকারের বৈরী আচরণ বন্ধ করা এবং সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তির দাবি জানান।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/06/14/35106

মাহমুদুরকে সরকার হত্যা করতে চায়: অভিযোগ খালেদার



দৈনিক ‘আমার দেশ’ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে সরকার হত্যা করতে বদ্ধপরিকর বলে মন্তব্য করেছেন বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বলেছেন, তাকে হত্যা করতে রিমান্ডের নামে নিষ্ঠুর ও পৈশাচিক কায়দায় নির্যাতন করা হয়েছে।

রবিবার গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসন এ অভিযোগ করেন।

খালেদা বলেন, আদালতে দেয়া বক্তব্য প্রমাণ করে সরকার মাহমুদুর রহমানকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য বদ্ধপরিকর। অথচ এ লোমহর্ষক ঘটনার পরেও তাকে আবার নির্যাতনের জন্য রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে।

এ সময় দেশের জনগণকে এ প্রতিহিংসা ও ঘৃণ্য রাজনীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, নাগরিকদের প্রতি সংবিধানের অঙ্গীকার এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মৌলিক মানবাধিকার পদদলিত করে সরকার আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদককে অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার ও নির্যাতন করছে।

আদালতে দেয়া মাহমুদুর রহমানে বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, রিমান্ডের নামে মাহমুদুর রহমানকে চোখ বেঁধে বিবস্ত্র করে পিটিয়ে অজ্ঞান করে ফেলা হয়।

মাহমুদুর রহমানের ওপর নির্যাতনের সংবাদ প্রকাশে বিরত থাকার জন্য সরকার গণমাধ্যমকে হুমকি দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

খালেদা বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনা অমান্য করে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই গোয়েন্দা পুলিশ মাহমুদুর রহমানকে আবারো ৪ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে।

তিনি বলেন, গুণ্ডামি ও সহিংসতা বর্তমান সরকারের নীতি এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নিশ্চিহ্ন করাই এদের রাজনীতি।

বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, বর্বর ও লুটপাটের সাম্রাজ্য কায়েম করা সরকারের একমাত্র উদ্দেশ্য। নির্যাতন, গুপ্তহত্যা এবং গোয়েন্দা দিয়ে মামলা সাজানো ও নির্যাতনের সবক তারা মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দীন সরকার থেকে পেয়েছে।

বাকশালী ঘোড়া জনগণের ওপর সওয়ার হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সরকার ইতিমধ্যে একাধিক বেসরকারি টিভি চ্যানেল বন্ধ করেছে। অপছন্দের টকশোগুলো বন্ধ করে দিয়ে সংবাদ ও মতামত প্রকাশ ফ্যাসিবাদী কায়দায় নিয়ন্ত্রণ করছে।

ফ্যাসিবাদ নির্মূলে গণআন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, অন্যথায় মাহমুদুর রহমানের মতো আগামীতে নির্যাতনের তলোয়ারে যে কারো মাথা কাটা পড়তে পারে।

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, ‘সংবিধান ও আইনের বাইরে কাজ করবেন না। এর পরিণাম ভালো হবে না।’

ফ্যাসিস্টদের মদদ দেয়া থেকে কর্মকর্তাদের বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, ‘আইন ভঙ্গ করবেন না। মনে রাখবেন, কোনো সরকারই শেষ সরকার নয়।’

তিনি বলেন, ‘মাহমুদুর রহমানকে রিমান্ডে নিয়ে পৈশাচিক নির্যাতনের জন্য শুধু হেফাজতে থাকা কর্মকর্তারাই দায়ী নন, সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ দায় এড়াতে পারবেন না।’

http://rtnn.net/details.php?id=25208&p=1&s=1

মাহমুদুর রহমানকে অজ্ঞাত জায়গায় রাখা হয়েছে

দৈনিক আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে রিমান্ডের নামে নির্যাতনের জন্য অজ্ঞাত স্থানে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তাঁর আইনজীবীরা। তাঁরা আরও অভিযোগ করেন, ম্যাজিস্ট্রেট বেআইনিভাবে মাহমুদুর রহমানের রিমান্ড মঞ্জুর করে রিমান্ডসংক্রান্ত হাইকোর্টের নির্দেশনা লঙ্ঘন করেছেন।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে আমার দেশ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করা হয়। এ সময় জানানো হয়, হাইকোর্টের আদেশসংক্রান্ত আইনজীবীর সনদ অগ্রহণযোগ্য বলে তা প্রত্যাখ্যান করার অভিযোগে তেজগাঁও থানায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করা হবে। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন তিন আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার ও নাছির উদ্দিন অসীম।
সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, মাহমুুদুর রহমানকে কোতোয়ালি থানার মামলায় রিমান্ডে নিয়ে মাদকাসক্ত, খুনি ও দুর্বৃত্তদের সঙ্গে একটি কক্ষে রাখা হয়।
নাছির উদ্দিন অসীম অভিযোগ করেন, আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে কোতোয়ালি থানায় দায়ের করা মামলায় মাহমুদুর রহমানের রিমান্ড মঞ্জুর করা বেআইনি। কারণ তখন মাহমুদুর রহমান পুলিশ হেফাজতে প্রিজন ভ্যানে ছিলেন, ঘটনার ওপর তাঁর কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না; রিমান্ড মঞ্জুরের আগে ম্যাজিস্ট্রেটের সেটা বিবেচনা করা উচিত ছিল।
আইনজীবীরা বলেন, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে নয়টায় আইনজীবীরা এবং বিএনপির দুই সাংসদ শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি ও আবুল খায়ের ভূঁইয়া তেজগাঁও থানায় গেলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও তদন্ত কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান সম্পর্কে তথ্য দিতে পারেননি। পরে আইনজীবীরা জানতে পারেন, মাহমুদুর রহমানকে ক্যান্টনমেন্ট থানায় রাখা হয়েছে। রাত ১২টার দিকে ওই দুই সাংসদ ও আইনজীবীরা ক্যান্টনমেন্ট থানায় গিয়ে তাঁর দেখা পাননি।
জানতে চাইলে তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘এসব অভিযোগ সত্য নয়। মাহমুদুর রহমান তেজগাঁও থানার হেফাজতে সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন। তাঁকে আইন অনুযায়ী খাবার দেওয়া হচ্ছে। শনিবার (আজ) তাঁকে আদালতে হাজির করা হবে।’

http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-06-12/news/70335

র‌্যাবের হেফাজতে থাকা যুবকের মৃত্যু

র‌্যাবের হেফাজতে থাকা এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর উত্তরায় র‌্যাব-১-এর কার্যালয়ের হাজতে বিপ্লব নামের ওই যুবক গলায় ফাঁস লাগান। দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিত্সক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, গতকাল বিকেল পৌনে চারটার দিকে র‌্যাব-১-এর কার্যালয়ের হাজত থেকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় বিপ্লবকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, বিপ্লবকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে। তাঁর গলায় কালো আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
র‌্যাব সূত্র জানায়, গতকাল দুপুরে র‌্যাবের হাজতে বিপ্লব পরনের লুঙ্গি খুলে তা দিয়ে ভেন্টিলেটরের সঙ্গে গলায় ফাঁস লাগান। এ সময় র‌্যাবের কর্তব্যরত এক সদস্য দেখে ফেলেন এবং বিপ্লবকে ভেন্টিলেটর থেকে দ্রুত নামিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। র‌্যাবের কর্মকর্তারা জানান, মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে বিপ্লব দীর্ঘদিন ধরে মিরপুরের পাইকপাড়ার বাসিন্দাদের কাছ থেকে টাকা আত্মসাৎ করছিলেন। এতদিন ডিবির ভুয়া কর্মকর্তা পরিচয়ে প্রতারণা করে আসছিলেন তিনি। তাঁর সহযোগীদের গ্রেপ্তারে দুপুরের পর তাঁকে নিয়ে র‌্যাবের একটি দলের অভিযানে বের হওয়ার কথা ছিল।
বিপ্লবের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের সদর উপজেলার গোপীনাথপুরে। তাঁর বাবার নাম মোহাম্মদ আলী।

http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-06-12/news/70393

অভিযোগ জানাতে গিয়ে মার খেতে হলো!

সাংসদকে ছেলে হত্যার অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার দক্ষিণ আলিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা প্রবাসী রশিদ আলম। কিন্তু কুমিল্লা-১০ (নাঙ্গলকোট ও সদর দক্ষিণের একাংশ) আসনের সাংসদ আ হ ম মুস্তফা কামালের সামনেই মার খেতে হলো রশিদ আলমকে। গত শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে নাঙ্গলকোট উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আবদুল মালেক ও তাঁর সহযোগীরা রশিদ আলমকে মারধর করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ মার্চ রশিদের একমাত্র ছেলে সালাহউদ্দিন ভূঁইয়াকে (৫) শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় রশিদ আলম নাঙ্গলকোট থানায় ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। গত শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে স্থানীয় সাংসদ আ হ ম মুস্তফা কামালের কাছে ছেলে হত্যার অভিযোগ জানাতে যান রশিদ। তখন আসামির পক্ষে অবস্থান নেওয়া উপজেলা যুবলীগের নেতা আবদুল মালেক, তাঁর ভাই আবদুল মতিন, রেজাউর রহমান ও খোরশেদ আলম সাংসদের সামনেই রশিদকে মারধর করেন। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের লোকজনের মধ্যে হাতাহাতি ও ধাক্কাধাক্কি হয়। পরে পুলিশ এসে লাঠিপেটা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় রশিদ আলম ও তাঁর ভাই খোরশেদ আলমকে নাঙ্গলকোট থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। সারা রাত থানায় রাখার পর গতকাল শনিবার সকাল ১০টার দিকে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
ধাক্কাধাক্কির সময় যুবলীগের নেতা আবদুল মালেক, রশিদ আলম, খোরশেদ আলম, বক্সগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য মকবুল আহমেদসহ অন্তত পাঁচজন আহত হন।
এ ব্যাপারে যুবলীগের নেতা আবদুল মালেক বলেন, ‘সেখানে ধাক্কাধাক্কি হয়েছে। আমি মাথায় আঘাত পেয়েছি।’ রশিদ আলমকে মারধরের বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
রশিদ আলম বলেন, ‘আবদুল মালেক সবার সামনে আমাকে ঘুষি মেরেছেন। তাঁর লোকজনের মারধরে আমার ভাইসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।
আমি এমপি সাহেবের কাছে ছেলে হত্যার বিচার চাইতে গিয়েছিলাম। উল্টো মার খেলাম এবং এক রাত থানায়ও থাকলাম।’
নাঙ্গলকোট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সেখানে ধাক্কাধাক্কি হয়েছে। বড় ধরনের কোনো গণ্ডগোল হয়নি।’ রশিদ ও তাঁর ভাইকে থানায় রাখার ব্যাপারে ওসি বলেন, ‘তাঁদের ওপর যাতে কেউ আঘাত করতে না পারে, সে জন্য থানা হেফাজতে রাখা হয়েছিল। আটক করা হয়নি।’
এ ব্যাপারে গতকাল বিকেলে দুবার এবং রাতে একবার সাংসদ মুস্তফা কামালের মুঠোফোনে চেষ্টা করেও তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-06-13/news/70581

Thursday 10 June 2010

সংখ্যালঘু পরিবারের ওপর হামলা ॥ বাড়ি ভাংচুর লুট

কুমিলস্না, ১০ জুন ॥ বরুড়া উপজেলার আড্ডা গ্রামে বুধবার রাতে জমি সংক্রানত্ম বিরোধের জের ধরে এক সংখ্যালঘু পরিবারের ওপর সন্ত্রাসী হামলা, বাড়ি ঘর ভাংচুর, লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে ।
জানা গেছে দক্ষিণ আড্ডা গ্রামের নারায়ণ চন্দ্র দাস গংয়ের সঙ্গে গৌরাঙ্গ চন্দ্র দাস গংয়ের বাড়ির জমি নিয়ে দীর্ঘদিন বিরোধ চলছে। এই ঘটনায় বুধবার দুপুরে নারায়ণ চন্দ্র গংয়ের পক্ষ নিয়ে পাশের বাড়ির ওহাব মিয়া গৌরাঙ্গ চন্দ্রের স্ত্রী কল্পনার সঙ্গে বাকবিত-ার এক পর্যায়ে হাতাহাতি ঘটে। এ সময় কল্পনার চিৎকার শুনে তার দুই দেবর নিতাই চন্দ্র দাস ও মনু চন্দ্র দাস ঘটনাস্থলে এসে ওহাব মিয়ার ওপর চড়াও হলে সে আহত হয়। পরে ওহাবের তিন পুত্র সুমন, মনির ও মুক্তার বহিরাগত সন্ত্রাসী নিয়ে রাতে গৌরাঙ্গের বাড়িতে হামলা চালায়। এতে গৌরাঙ্গ চন্দ্র, নিতাই চন্দ্র, কল্পনা রানী দাস, মনু চন্দ্র দাস, মিনতি রানী দাস, অমিতা রানী দাস, সঞ্জয় চন্দ্র দাস, মানিক চন্দ্র দাস, রিপন চন্দ্র দাস, অঞ্জলী রানী দাস, তরম্ন রানী দাস, লিটন চন্দ্র দাসসহ প্রায় ২০ জন আহত হয়। গুরম্নতর আহতরা বরম্নড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নঙ্ েচিকিৎসাধীন রয়েছে। এ সময় হামলাকারীরা ওই বাড়ির গৌরাঙ্গ চন্দ্র দাস, নিতাই চন্দ্র দাস ও মনু চন্দ্র দাসের বাড়িঘর ও আসবাবপত্র ভাংচুর করে এবং ঘরে থাকা নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ও বিভিন্ন ধরনের মূল্যবান মালামালসহ গোয়ালের গরম্ন লুট করে নিয়ে যায়। এছাড়া ওই পরিবারের ৮ মাসের অনত্মঃসত্ত্বা গৃহবধূ অমিতা রানী দাসের পেটে লাথি মারলে তার মারাত্মক রক্তক্ষরণ হয়। বর্তমানে ভয় ও আতঙ্কে সংখ্যালঘু পরিবারের সদস্যরা বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। এই সময় সন্ত্রাসীরা নিতাই চন্দ্র দাসকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। কল্পনা রানী দাস জানান, ওহাব মিয়া মদ খেয়ে আমাদের গালিগালাজ করলে আমার দেবররা এসে তাকে বাধা দিলে ঘটনার সূত্রপাত ঘটে। এ বিষয়ে বরম্নড়া থানায় মামলা হয়েছে।
ওই পবিারের সদস্য মানিক চন্দ্র দাস জানান, ৪/৫ দিন আগে বিয়ে করেছি, শ্বশুরবাড়িতে থেকে পাওয়া উপহার সামগ্রী সন্ত্রাসীরা নিয়ে যায়। খবর পেয়ে রাতে বরম্নড়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ওহাব মিয়ার বাড়ি থেকে হাত বাঁধা অবস্থায় নিতায়কে এবং লুট হওয়া ৩টি গরম্ন ও ১টি কম্বল আবদুস সাত্তারের ঘর থেকে উদ্ধার করেছেন। এই ঘটনায় পুলিশ রাতে ওহাব মিয়ার পুত্র সুমন মিয়াকে গ্রেফতার করে। বরম্নড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ ফারম্নক হোসেন বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সন্ত্রাসীদের বিরম্নদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আশ্বসত্ম করেন।

http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=14&dd=2010-06-11&ni=21306

সত্যের লড়াইয়ে আমার দেশ জয়ী : হাইকোর্টের রায়ে প্রকাশনা বাতিলের সরকারি সিদ্ধান্ত তিন মাস স্থগিত



অগণিত পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীর রুদ্ধশ্বাস প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে দেশপ্রেমিক জনতার বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর দৈনিক আমার দেশ আবার প্রকাশিত হলো। দীর্ঘ ৯ দিনের ঘোর অমানিশা কাটিয়ে আলোর প্রস্ফুটন ঘটলো উচ্চ আদালতের এক ঐতিহাসিক আদেশে। দৈনিক আমার দেশ-এর প্রকাশনা (ডিক্লারেশন) বাতিলে সরকারি সিদ্ধান্ত তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি প্রকাশক হিসেবে পত্রিকাটির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের করা আবেদন খারিজের আদেশও স্থগিত করেছেন আদালত। এছাড়া প্রকাশনা বাতিলের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে সরকারকে তার কারণ জানাতে বলা হয়েছে। মহামান্য হাইকোর্টের এ আদেশের মধ্য দিয়ে সত্যের জয় হলো। এখন দেশবাসী অধীর অপেক্ষায় রয়েছে আমার দেশ-এর সাহসী সম্পাদক, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের পক্ষের অকুতোভয় সৈনিক মাহমুদুর রহমানের মুক্তির। লাখো-কোটি প্রতিবাদী জনতা দেশে-বিদেশে সংগ্রাম করছে মাহমুদুর রহমানের মুক্তির দাবিতে।
আমার দেশ পত্রিকার প্রকাশনা বাতিলের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা ও বিচারপতি শেখ হাসান আরিফের বেঞ্চ এ আদেশ দেন। পত্রিকাটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আনোয়ার-উন-নবী গত সোমবার হাইকোর্টের এ বেঞ্চে আবেদনটি দায়ের করেন। বুধবার শুনানি শেষে আদেশের এ তারিখ ধার্য হয়েছিল। আদেশের আগে বৃহস্পতিবারও শুনানি হয়। রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক। সরকার পক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান।
আদেশের পর আবদুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেন, এ আদেশের ফলে আমার দেশ প্রকাশে আর বাধা নেই। ইচ্ছা করলে এখনই পত্রিকাটি প্রকাশ করা যেতে পারে। তিনি বলেন, এ রায় একটি ঐতিহাসিক রায়। হাইকোর্টের এ রায়ের ফলে আইনের শাসনের বিজয় হয়েছে। হাইকোর্ট সংবাদ মাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে সমুন্নত রেখেছে। এ আদেশ আইনের শাসন ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক। রাষ্ট্রযন্ত্রের অবৈধ হস্তক্ষেপ ও কর্মকাণ্ডের যথাযথ জবাব দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এদিকে আমার দেশ-এর প্রকাশনা বতিল সংক্রান্ত সরকারি কালো আদেশ হাইকোর্টে স্থগিত হওয়ার খবর দ্রুত ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ার পর পত্রিকার অগণিত পাঠক, শুভাকাঙ্ক্ষী ও শুভানুধ্যায়ীরা ফোনে জানতে চান, আগামীকাল পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে কিনা? পত্রিকা যথারীতি প্রকাশিত হচ্ছে জেনে তারা কিছুটা স্বস্তি প্রকাশ করেন। পাঠকরা উদ্বেগাকুল কণ্ঠে মাহমুদুর রহমানের অবস্থা জানতে চান। রিমান্ডের নামে তার উওর শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের খবর জেনে অনেক পাঠক উত্কণ্ঠা প্রকাশ করেন। এদিকে হাইকোর্টের আদেশের পরই দৈনিক আমার দেশ কার্যালয় আগের মতোই কর্মচঞ্চল হয়ে ওঠে। সাংবাদিক ও কর্মীরা তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। দুপুরেই আমার দেশও-এর অনলাইন সংস্করণ প্রকাশ করা হয়।
এর আগে বুধবার শুনানিতে আবদুর রাজ্জাক বলেন, সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাকস্বাধীনতা সম্পর্কিত মৌলিক অধিকারের কথা বলা হয়েছে। এ অনুচ্ছেদে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। আমার দেশের প্রকাশনা বাতিল করে সংবিধানের এ অনুচ্ছেদে বর্ণিত মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন করেছে সরকার।
সরকার পক্ষে এম কে রহমান বলেন, আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এবং কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েই পত্রিকাটির প্রকাশনা বাতিল করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রকাশক আলহাজ হাসমত আলী অনেক আগেই পদত্যাগ করেছেন। পত্রিকাটির ডিক্লারেশন তার নামে। পদত্যাগ করার পরও বেআইনিভাবে তার নামে পত্রিকাটি প্রকাশ করা হতো। এসব কারণে যথাযথভাবেই প্রকাশনা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
হাসমত আলীকে প্রকাশক করে ২০০৪ সালের সেপ্টেম্বরে পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়। এরপর ২০০৮ সালে সাবেক জ্বালানি উপদেষ্টা মাহমুদুর রহমান আমার দেশ পত্রিকাটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেন। সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা ১ জুন পত্রিকার প্রকাশক হাসমত আলীকে তার বাসা থেকে তুলে নিয়ে মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করায় ও ডিসি বরাবর একটি দরখাস্ত দেয়। রাতে কোনো ধরনের কাগজপত্র প্রদর্শন ছাড়াই ডিক্লারেশন বাতিল করা হয়েছে বলে পত্রিকার প্রেসে পত্রিকার কিছু কপি ছাপা হওয়ার পরই এর ছাপা ও বিতরণ পুলিশ দিয়ে জোর করে বন্ধ করে দেয়া হয়। রাত পৌনে ১১টার দিকে কয়েকশ’ পুলিশ আমার দেশ অফিস ঘেরাও করে। কিন্তু কোনো বৈধ ওয়ারেন্ট ছাড়া পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করতে চাইলে সাংবাদিক-কর্মচারীরা আপত্তি জানায়। একপর্যায়ে রাত ৪টার দিকে পুলিশ জোর করে আমার দেশ অফিসে ঢুকে সাংবাদিকদের বেধড়ক লাঠিচার্জ করে সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে তার রুম থেকে ধরে নিয়ে যায়। গ্রেফতারের আগে প্রকাশক হাসমত আলীকে দিয়ে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় দায়ের করা মামলার কথা বলা হলেও ২ জুন ভোরে মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে অফিসে তাকে গ্রেফতার করতে বাধা দেয়ায় আরেকটি মামলা দেয়া হয়। প্রথম মামলায় মাহমুদুর রহমানকে আদালত জামিন দিলেও দ্বিতীয় মামলায় তাকে জেলে পাঠানো হয়। ৩ জুন মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে ২ জুন কোর্টে সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করা হয়। একই দিনে হিযবুত তাহরীরের অপর একটি মামলায় মাহমুদুর রহমানকেও আসামি করা হয়। ৪ জুন মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে ২০০৬ সালে উত্তরায় সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দেয়া হয়। একই দিনে মাহমুদুর রহমানকে পুলিশের কাজে অফিসে ও কোর্টে বাধা দেয়ার দুটি মামলায় ৪ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। পরদিন হিযবুত তাহরীরের মামলা ও রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় তাকে আরও ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে নিম্নআদালত। ৮ জুন রাতে মাহমুদুর রহমানকে একদিনের রিমান্ডে নেয় কোতোয়ালি থানা পুলিশ। বর্তমানে তাকে দ্বিতীয় দফায় তিন দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। প্রথম দিনের রিমান্ডে নিয়েই তার ওপর নির্যাতন করা হয়েছে বলে মাহমুদুর রহমানের ২ জন আইনজীবী বুধবার তার সঙ্গে সাক্ষাত্ শেষে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেছেন। এছাড়া জেলখানায়ও মাহমুদুর রহমানের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হয়েছে বলে মাহমুদুর রহমান নিজেই আদালতে অভিযোগ করেছেন। এছাড়া তিনি দুদিন আদালতে কথা বলার সুযোগ পেয়েছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, সরকারের দুর্নীতি-অনিয়ম তুলে ধরা ও ভারতের আগ্রাসী তত্পরতার বিরুদ্ধে কথা বলার কারণেই তাকে গ্রেফতার ও পত্রিকা বন্ধ এবং তার ওপর নির্যাতন করা হয়েছে। আমার দেশ পত্রিকার বৈধ প্রকাশক না থাকার অভিযোগে আমার দেশের প্রকাশনা বন্ধ করে দেয়।
আমার দেশ বন্ধ ও সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানান সর্বস্তরের মানুষ, মানবাধিকার কর্মী, সম্পাদক, বিশিষ্ট ব্যক্তি ও পেশাজীবী নেতারা। সব জাতীয় দৈনিকের ২৮ জন সম্পাদক এক যুক্ত বিবৃতিতে আমার দেশ পত্রিকার প্রকাশনা অব্যাহত রাখার ও সম্পাদককে মুক্তি দেয়ার দাবি জানান। আমার দেশ-এর সাংবাদিক-কর্মচারীসহ সর্বস্তরের সাংবাদিকরা জাতীয় প্রেসক্লাবে গত ৯ দিন ধরে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করে আসছেন। পাশাপাশি আমার দেশ-এর ডিক্লারেশন বাতিলের সরকারি আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। তিন দিন শুনানি শেষে গতকাল আদালত আমার দেশ-এর প্রকাশনা অব্যাহত রাখার পক্ষে রায় দেন। এর ফলে সত্যের লড়াইয়ে আমার দেশ জয়ী হয়।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/06/10/34720

মাদারীপুরে সংখ্যালঘুর বাড়ি লুট করেছেআ'লীগ নেতার ছেলে

মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ি ইউনিয়নের নটাখোলা গ্রামের হরিচাঁদ মণ্ডল নামে এক সংখ্যালঘুর আসবাবপত্র, ফসলসহ ৭ লাখ টাকার মালপত্র লুট করেছে আওয়ামী লীগ নেতা খালিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরাজুল হক মোল্লার ছেলে রুবেল মোল্লা। বর্তমানে ওই সংখ্যালঘুর জমি দখলের ষড়যন্ত্র চলছে বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় হরিচাঁদ মণ্ডলের পরিবার প্রাণনাশের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
সূত্র জানায়, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি হরিপদ মণ্ডলের বসতভিটা দখলের জন্য রুবেল ও তার বাহিনী হামলা চালায়। এতে বাধা দিলে হরিপদ মণ্ডল ও তার পরিবারের লোকজনকে মারধর করা হয়। পরে ২১ মে আসবাবপত্র ও ফসল লুট করে রুবেল মোল্লার বাহিনী। এ ব্যাপারে দুটি মামলা হলেও রাজৈর থানা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।

http://www.samakal.com.bd/details.php?news=17&action=main&option=single&news_id=71362&pub_no=362

১৬ মামলায় দুই শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মী এলাকাছাড়া

ভোলায় নির্বাচনী সহিংসতা

ভোলা-৩ আসনের (লালমোহন-তজুমদ্দিন) উপনির্বাচনে বিভিন্ন সহিংসতার ঘটনায় দায়ের হওয়া ১৬টি মামলার আসামি দুই শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মী এলাকার বাইরে অবস্থান করছেন। গ্রেফতার আতঙ্কে তারা এলাকায় ফিরতে পারছেন না। উপজেলার শীর্ষ ৩০ নেতা হাইকোর্ট থেকে জামিন নিলেও অন্য আসামিরা গ্রেফতার এড়াতে বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপন করে আছেন। বিএনপি নেতাদের দাবি, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার তারা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে লালমোহন উপজেলায় ১১টি মামলা দায়ের হয়। চাঁদাবাজি, লুটপাট, মারধরসহ বিভিন্ন ঘটনায় এসব মামলা দায়ের হয়। আওয়ামী লীগের সুকুমার কর্মকার বাদী হয়ে ২৯ বিএনপি নেতাকর্মীকে আসামি করে ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রথম মামলা করেন। এতে উপজেলা বিএনপি আহ্বায়ক, যুগ্ম আহ্বায়কসহ শীর্ষ নেতাদের আসামি করা হয়। ২৮ ফেব্রুয়ারি লর্ড হার্ডিঞ্জ প্যায়ারীমোহনের আফসার উদ্দিন বাদী হয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতাদেরসহ ৪৬ জনকে আসামি করে আরেকটি মামলা করেন।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে ২৭ মার্চ বিএনপির ১৩ জনকে আসামি করে মামলা করেন। আবদুস সাত্তার বাদী হয়ে বিএনপির আরও ২০ জনকে আসামি করে আরেকটি মামলা করেন। এ মামলায় বিএনপি নেতা মোঃ মোস্তফাকে পুলিশ গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠায়। খোকন বকশী বাদী হয়ে বিএনপির ২৩ জনকে আসামি করে ২০ এপ্রিল আরেকটি মামলা করেন। এ মামলায় স্বেচ্ছাসেবক দলনেতা জহিরুল হক সুমন ও মৎস্য ব্যবসায়ী বাবুল ফরাজীকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯ এপ্রিল পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের রুহুল আমিন বাদী হয়ে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আক্তারুজ্জামান টিটবসহ বিএনপির ২৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। আওয়ামী লীগ কর্মী জসিম উদ্দিন বাদী হয়ে বিএনপির ৫১ জনকে আসামি করে ২০ এপ্রিল আরও একটি মামলা করেন। মামলায় নয়ানী গ্রামের মোঃ কামাল নামে আরেক ছাত্রনেতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ৭ মে বিএনপির ৫০ নেতাকর্মীকে আসামি করে ফরাশগঞ্জ ইউনিয়নের আসুলী গ্রামের আনিচুল হক মামলা করেন। ১০ মে বিএনপির ১৮ নেতাকর্মীকে আসামি করে মামলা করেন লালমোহন ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের শেখ সোহেল। দেওয়ালকান্দির জামাল হোসেন একটি মামলায় লালমোহন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল হাই হাওলাদার, পৌর কাউন্সিলর ইমাম হোসেনসহ বিএনপির বিভিন্ন এলাকার ২৩ জনকে আসামি করেন। কালমা ইউনিয়নের আমির হোসেন মীর বাদী হয়ে ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন বাহাদুরকে প্রধান আসামি করে মামলা করেন।
অন্যদিকে তজুমদ্দিন উপজেলায় বিএনপির কর্মীদের বিরুদ্ধে ৫টি মামলা দায়ের হয়। এসব মামলার বাদীরা সবাই আওয়ামী লীগের। আসামির তালিকায় উপজেলা বিএনপি সভাপতি-সম্পাদক না থাকলেও পার্টি ও তার অঙ্গসংগঠনের শতাধিক কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও পৌর মেয়র এনায়েত কবীরের বিরুদ্ধে দুটি, যুগ্ম আহ্বায়ক ও চরভুতা ইউপি চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান টিটবের ৪টি, যুগ্ম আহ্বায়ক বাবুল পঞ্চায়েতের ২টি, পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও যুবদল সভাপতি মার্শাল হিমরু ৪টি, পৌর যুবদল সভাপতি ও কাউন্সিলর ইমাম হোসেনের সর্বাধিক ৭টি, কালমা ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন বাহাদুরের ৩টি, উপজেলা যুবদল সম্পাদক হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে ৩টি, পৌর ছাত্রদল সভাপতি সামছুদ্দিন জসীমের বিরুদ্ধে ৫টি মামলা রয়েছে।
তজুমদ্দিন উপজেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ মোস্তাফিজুর রহমান, লালমোহন উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আখতারুজ্জামান টিটবসহ আসামিরা জানান, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তাদের আসামি করা হয়েছে। আর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দায়ের করা মামলায় পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানি করছে।

http://www.samakal.com.bd/details.php?news=17&action=main&option=single&news_id=71351&pub_no=362

মেহেরপুরে আ'লীগ-বিএনপি সংঘর্ষে আহত ৩০

মেহেরপুর সদর উপজেলার নুরপুর গ্রামে খাসজমি দখল নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ৩০ জন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে ১৫ জনকে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা হলো মুজাম (৪০), হাসমত (১০), জাহাঙ্গীর (৪০), আব্বাস (৩০), ফেরদৌস (২৫), আইজেল (৩৭), এনামুল (১৪), হাসিবুল (১২), রিপন (১৮), ইয়ার আলী (২৭) ও সাবদারসহ (২৪) আরও কয়েকজন। গতকাল বিকেলে এ সংঘর্ষ হয়। ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে খাসজমিটি ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা দখলে নেয়। তার জের ধরে ওই সংঘর্ষের সূত্রপাত। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

http://www.samakal.com.bd/details.php?news=17&action=main&option=single&news_id=71350&pub_no=362

মাহমুদুর রহমানকে রিমান্ডে নিয়েছে তেজগাঁও পুলিশ

সম্প্রতি বন্ধ করে দেওয়া আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গতকাল মঙ্গলবার তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছে তেজগাঁও থানার পুলিশ। তেজগাঁও থানার পক্ষ থেকে গতকাল রিমান্ডের আবেদন জানালে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম এ কে এম এনামুল হক তা মঞ্জুর করেন।
পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে করা কোতোয়ালি থানার মামলায় এক দিন এবং তেজগাঁও থানার মামলায় গত সোমবার মাহমুদুর রহমানকে তিন দিন রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেন আদালত।
গতকাল কোতোয়ালি থানার পুলিশ এক দিনের রিমান্ড শেষে তাঁকে আদালতে হাজির করেন। এ মামলায় মাহমুদুর রহমানের আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার জামিনের আবেদন করেন। আদালত তা নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে তেজগাঁও থানা পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মাহমুদুর রহমানকে রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেন।
এর আগে মাহমুদুর রহমানকে চারটি মামলায় মোট ১২ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেন আদালত। গত মঙ্গলবার উত্তরা মডেল থানায় হিযবুত তাহ্রীরের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে করা মামলায় মাহমুদুর রহমানকে চার দিন এবং রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চার দিন করে আরও আট দিন রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ রয়েছে। পর্যায়ক্রমে এসব মামলায় তাঁকে রিমান্ডে নেওয়া হবে।
আমার দেশ রিটের আজ আদেশ: দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার প্রকাশনা বাতিলের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিটের ওপর শুনানি শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে আদেশ দেওয়া হতে পারে। গতকাল বুধবার দ্বিতীয় দিনে উভয় পক্ষের শুনানি গ্রহণের পর বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা ও বিচারপতি শেখ হাসান আরিফের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আদেশের এ সময় নির্ধারণ করেন।

http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-06-10/news/69886

Tuesday 8 June 2010

Mahmudur Rahman at Court

ফের দুটি মামলায় মাহমুদুরের ৮ দিনের রিমান্ড



ঢাকা, ০৮ জুন (আরটিএনএন ডটনেট)-- ‘দৈনিক আমার দেশ’ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও সাবেক জ্বালানি উপদেষ্টা মাহমুদুর রহমানকে ফের দুটি মামলায় আজ মঙ্গলবার আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।

এর মধ্যে হিযবুত তাহরিরের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগের অভিযোগে একটি মামলা এবং সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে উত্তরায় গোপন বৈঠকের অভিযোগে দায়ের করা অপর মামলায় মাহমুদুর রহমানকে চার দিন করে মোট আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।

হিযবুত তাহরিরের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে উত্তরা মডেল থানায় দায়ের করা একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে তার শুনানি শেষে আদালত চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।

প্রসঙ্গত, উত্তরা মডেল থানার উপ-পরিদর্শক আরমান আলী গত ১৯ এপ্রিল হিজবুত তাহরিরের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন। মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি না হলেও অন্য একটি মামলায় মাহমুদুর রহমানকে সম্প্রতি গ্রেপ্তারের পর হিজবুত তাহরিরের বিরুদ্ধে দায়ের ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

এছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে উত্তরায় গোপন বৈঠকের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় একই আদালত মাহমুদুর রহমানের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। এ মামলায় বিমানবন্দর থানা পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালাত চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।

প্রসঙ্গত, গতকাল সোমবার রাতে মাহমুদুর রহমানসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দায়ের করা হয়। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় উত্তরায় সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে গোপন বৈঠকের অভিযোগে বিমানবন্দর থানার ওসি বাদী হয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলাটি দায়ের করেন।

গত ১ জুন প্রকাশনা বন্ধ ঘোষণা করে ‘দৈনিক আমার দেশ’ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে একটি প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়।

পরে আরো কয়েকটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। সোমবার দু’টি মামলায় তাকে চার দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ।

Monday 7 June 2010

দুটি মামলায় মাহমুদুরের ৪ দিনের রিমান্ড

ঢাকা, জুন ০৭ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- সম্প্রতি বন্ধ করে দেওয়া আমার দেশ পত্রিকার ভারপাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে দুটি মামলায় চারদিনের রিমাণ্ড মঞ্জুর করেছেন দুটি আদালত।

সোমবার দুটি আদালতে পুলিশের পৃথক আবেদনের ওপর শুনানি শেষে পৃথকভাবে এ রিমাণ্ড মঞ্জুর হয়।

কোতয়ালি থানা পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার মামলায় রোববার মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে এই থানার উপপরিদর্শক মোখলেসুর রহমান সাতদিনের রিমাণ্ডে নেওয়ার আবেদন জানান।

সেই আবেদনের ওপর সোমবার আদালতে শুনানি হয়। শুনানি শেষে আদালতের বিচারক প্রথম অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম হাবিবুর রহমান ভুঁইয়া মাহমুদুর রহমানের একদিনের রিমাণ্ড মঞ্জুর করেন।

অপর দিকে তেজগাঁও থানায় দায়ের করা অপর একটি মামলায় বুধবার হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন নাকচ করে দিয়ে মাহমুদুর রহমানকে কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেয় আদালত।

পরদিন তেজগাঁও থানার উপ-পরিদর্শক রেজাউল করিম ওই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচদিন হেফাজতে নেওয়ার অনুমতি চেয়ে আবারও আবেদন করেন।

এই আবেদনের ওপর সোমবার কয়েক দফায় শুনানি অনুষ্ঠিত হয় মহানগর হাকিম মেহেদি হাসান তালুকদারের এজলাসে। বিচারক এ শুনানিতে বিব্রত বোধ করে এজলাস থেকে নেমে যান।

পরে ৩ নম্বর অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মো. আলী হোসাইনের আদালতে এ আবেদনের ওপর শুনানি হয়। শুনানি শেষে আদালত তিন দিনের রিমাণ্ড মঞ্জুর করেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/পিবি/এমইউএস/কেএমএস/১৮২০ ঘ

http://bdnews24.com/bangla/details.php?id=128365&cid=2

মুন্সীগঞ্জে সাংবাদিককে পেটালো সন্ত্রাসীরা

এনএসআই সদস্যের সামনে ঢাকা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিকের স্টাফ রিপোর্টার মোস্তফা সারোয়ার বিপ্লবকে মারধর করে সন্ত্রাসীরা। রবিবার দুপুরে গজারিয়া উপজেলার নতুন চাষি এলাকায় গাড়ি থামিয়ে মারধর করে সন্ত্রাসীরা তাঁর মোবাইল ফোনসেট ছিনিয়ে নেয়। তাঁকে ভবেরচর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে।
সাংবাদিক বিপ্লব জানান, গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইর সদস্য মো. ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে একটি বেবিটেক্সিতে করে তিনি ভবেরচর বাজারে যাচ্ছিলেন। কাজী ফার্মের সামনে আসলে সন্ত্রাসী জমু মেম্বার, ওমর আলী, রফিক ও মিন্টুসহ একদল সন্ত্রাসী বেবিটেক্সিটি থামিয়ে তাঁর ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। বিপ্লব আরো জানান, ২০০৯ সালের ২৯ অক্টোবর স্থানীয় এমপির এপিএস শরীফের দাপট নিয়ে সাপ্তাহিকে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এর তদন্তের জন্য এনএসআই সদস্য মো. ইসমাইল হোসেন তাঁকে মোবাইলে ফোন করে ঘটনাস্থলে আসতে বলেন। ওই এনএসআই সদস্যের সঙ্গে ভবেরচর বাসস্ট্যান্ড থেকে বেবিটেক্সিতে করে কাজী ফার্মে যাওয়ার সময় সন্ত্রাসীরা তাঁর ওপর হামলা চালায়।

http://dailykalerkantho.com accessed on 07/06/2010

ফরিদপুরে জামায়াতের মিছিলে পুলিশের লাঠিপেটা

রবিবার সকালে ফরিদপুর শহরে জামায়াতের মিছিলে পুলিশ লাঠিপেটা করলে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এতে ১০ নেতা-কর্মী আহত হন।
পৌর জামায়াতের আমির মো. বদরউদ্দিন জানান, রবিবার সকাল ৯টায় পৌর জামায়াতের উদ্যোগে শহরে বিক্ষোভমিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শহরের জনতা ব্যাংকের মোড় থেকে শুরু হয়ে মুজিব সড়ক ধরে আরোগ্য সদন প্রাইভেট হাসপাতালের সামনে পেঁৗছলে পুলিশ অতর্কিতে মিছিলে অংশ নেওয়া নেতা-কর্র্মীর ওপর লাঠিপেটা করে। এতে ১০ জন নেতা-কর্মী আহত হন। ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ওসি নূরে আলম সিদ্দিকী জানান, ২৫ থেকে ৩০ জন জামায়াত নেতা-কর্মী মিছিল বের করলে পুলিশ তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

http://dailykalerkantho.com/ 07/06/2010

Saturday 5 June 2010

আমার দেশ বন্ধ করা হলো যেভাবে : একজন প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ননা

খোমেনী ইহসান

সপ্তাহে আমার ছুটির-দিন হল মঙ্গলবার। সাধারণত বাইরে যাই না, সপ্তাহে একটা দিন ছুটি, একটু অলস সময় কাটাই। ফলে জুনের এক তারিখেও বাসা থেকে বার হওয়ার কথা ছিলো না। দুপুরের খাবার খেয়ে শুয়েছিলাম। পৌনে তিনটার দিকে বন্ধু রাকিব--দৈনিক ডেসটিনির কূটনৈতিক প্রতিবেদক বন্ধু রাকিব-উন-নবী ফোন দিয়া বললো, কী রে তোদের পত্রিকা নাকি বন্ধ হয়ে গেছে? তারপর ও নিশ্চিত করেই বললো যে, এটা হবে আজই। ওকে কী আর বলবো? বিস্ময়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। কই এমন আভাস ইঙ্গিতও তো পাই নাই, গতকালও!

মানিক ভাইকে ফোন দিলাম--আহমদ হোসেন মানিক, আমার দেশ পাবলিকেশন্স লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার। তিনি বললেন--ফোনে কথা বলা যাবে না। তার কথায় বুঝলাম--ঘটনা তাহলে ঘটে যাচ্ছেই। বাসা থেকে দৌড়ে বের হলাম। বাসে চেপে কাওরান বাজার, অফিসে।

ঘড়িতে তখন বিকাল সাড়ে চারটা। অফিসে ঢুকেই জানলাম, পত্রিকার প্রকাশক হাসমত আলীকে সকাল ৯টায় জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা-এনএসআই-এর সদস্যরা ধরে নিয়ে গেছে। তার কাছ থেকে দুইটা সাদা কাগজে সই রেখে দুপুর দুইটার দিকে ছেড়ে দিছে। কিন্তু তাকে বাসায়ও পাওয়া যাচ্ছে না। অফিসে বিষাদ ও ক্ষোভের ছায়া। ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বিকাল ৫টায় সংবাদ সম্মেলন করবেন বলে জানালেন। সহকর্মীরা সবাই প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেলেন যে, আজই দৈনিক আমার দেশ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। মাহমুদ ভাইও গ্রেফতার হচ্ছেন।

সংবাদ সম্মেলনের খবর জোগাড় করতে নানা সংবাদমাধ্যমের প্রচুর সাংবাদিকরা আসলেন। অনেক পরিচিত মুখ। বন্ধু কিম্বা বড় ভাই, ছোটো ভাই। বিশ্ববিদ্যালয়ে একই বিভাগের আমার সিনিয়র জুবেরী ভাই--ইংরেজি দৈনিক নিউ এজের সিনিয়র রিপোর্টার, তিনিও এসেছেন। তার চোখে-মুখে স্পষ্ট বিরক্তি ও ক্ষোভের ছাপ। সংবাদকর্মী হিশাবে অন্য একটা সংবাদপত্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবর জোগাড় করতে আসা নিশ্চয় কোনো সুখের ব্যাপার না। বিষণ্ণ সবাই। কেউ কেউ আমাদের সান্ত্বনা দিলেন। গায়ের জোরের ওপর এই সরকারের নির্ভরতার কথা বললেন, যাচ্ছেতাই করে যাওয়ার মানসিকতার কথা বললেন। টের পেয়েছি, শিড়দাঁড়া বেয়ে একটি গোপন দীর্ঘশ্বাস নামছে। নীচে, অনেক নীচে, অনিশ্চিত গন্তব্যের পথে।

সংবাদ সম্মেলনে মাহমুদ ভাই কী বললেন, প্রচণ্ড ভীড়-ভাট্টায় তার পুরাটা কানে ঢুকল না, অনেক পেছনে ছিলাম আমি। শুধু কানে বাজলো--‘সরকার গতকাল রাতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ১০ দিনের মধ্যে আমার দেশ বন্ধ করে দেবে ও আমাকে গ্রেফতার করবে। তাদের হুকুমে এনএসআই-ডিজিএফআই’র মতো গোয়েন্দাসংস্থাগুলো আজ মাঠে নেমেছে।

সময় গড়াতে থাকলো। পুরা আমার দেশ নিরবতার কুণ্ডলিতে চলে যেতে থাকলো। ধীরে ধীরে ভীড় বাড়তে শুরু করলো শুভাকাঙ্ক্ষীদের। আমাকে অবাক করে দিয়ে রাত ১০ টার দিকে ছোটো ভাই মুনতাসির ও মারুফ আসলো, ব্যাগে করে কাপড়-চোপড় নিয়ে। ওরা শুনেছে আমাকে গ্রেফতার করা হতে পারে। ওদের দেখে মনটা আরো বিষণ্ণ হয়ে গেল। যতোই বলি কিছুই হবে না, ওরা দুশ্চিন্তা ঝেড়ে ফেলতে পারে না। ওদের ধারণা মাহমুদুর রহমানের সঙ্গে আমার দেশ থেকে সব সাংবাদিককেই পুলিশ গ্রেফতার করবে।

১১টা বেজে গেল। শুনলাম পুলিশ ওপররে দিকে আসছে । কিছুক্ষণের মধ্যে এসেই গেল। উর্দি পরা ও সাদা পোষাকধারী। উর্দিপরাদের বেশিরভাগ দাঙ্গা পুলিশ। আর্মড পুলিশ ও ব্যাটালিয়নও আছে। লিফট বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। আমরা দরজায় দাঁড়িয়ে গেলাম। রিপোর্টার মাহাবুবুর রহমান, সহ-সম্পাদক আরীফ মুহাম্মদ, সহ-সম্পাদক এমদাদ, রিসার্চ সেলের শহিদুল, পিয়ন সাইফুল ও রাজা প্রবেশ পথে দাঁড়িয়ে গেল। আমরা সাফ জানিয়ে দিলাম--এভাবে জোর করে মাহমুদুর রহমানকে ধরে নিয়ে যাওয়া যাবে না। সিনিয়র সাংবাদিকরা সহ সবাই দরজার এপাশে দাঁড়িয়ে গেলাম মানব দেয়াল হয়ে। পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধের প্রতিবাদে মুহুর্মুহু শ্লোগান দিতে থাকলাম সবাই, কলম বন্ধ, ভাবছিলাম আবার এই কলমের বাঁধ খুলতে কতো শ্লোগান দিতে হবে রাজপথে কে জানে!
পুলিশ বারবার জোর করে ভেতরে ধেয়ে আসতে চাইলেও আমাদের বাধার কারণে ব্যর্থ হচ্ছিলো। ওদিকে মাঝরাত পার হয়ে যাচ্ছে। ক্যালেন্ডারের হিসাবে ২ জুন রাত ১টা বাজে তখন। ক্ষুধায় সবাই কাহিল। পুলিশ নীচে থেকে কাউকে উঠতে দিচ্ছে না, নামতেও না। খাবার নিয়া আসার কোনো উপায় নাই। পানির লাইন বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। ফিল্টার জার কয়েকটাতে যা পানি ছিলো তা থেকেই একটু একটু করে খাচ্ছিলো সবাই। আমাদের হাউসের লোকজন ছাড়াও অন্যান্য হাউস থেকে নিউজ কাভার করতে আসা প্রায় অর্ধশতের বেশি সাংবাদিকও ছিলেন। সবাই খিদা আর পিপাসায় কাতর।

টিকতে না পেরে তাই একজন পিয়নকে পাঠানো হলো নিচ থেকে খাবার ও পানি আনার জন্য। পিয়ন খাবার ও পানি নিয়ে নিচে অপেক্ষা করতে থাকল। কিন্তু তাকে উপরে ওঠতে দেয়া হচ্ছে না। সে উপরের সবার অবস্থা জেনে বেশ করে কাকুতি-মিনতি করল। কাজের কাজ হল না। উল্টা খাবার কেড়ে নিয়ে তাকে আচ্ছা মতো পেটানো হল। এক সময় আমার দেশ-এর টেলিফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হলো। ওদিকে বারবার তার প্রবেশ পথে হামলে পড়ছে পুলিশ। বুট-হেলমেট ও বন্দুক সমৃদ্ধ পুলিশের শক্তির সামনে যেন আমাদের শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধের দেয়ালটা একটু একুট করে ভেঙ্গে পড়ছে।

রাত গভীর থেকে গভীর হচ্ছে। একদিকে নিরস্ত্র সংবাদকর্মী। আরেক দিকে সশস্ত্র পুলিশ। ফারাকটা যেন শুধু অস্ত্রের, মাঝখানে রাষ্ট্র-সংবিধান-আইন বলে কিছু নাই। সংবাদকর্মীদের রক্ষাকবচ সাংবিধানিক নাগরিক অধিকার ও আইনের দোহাই। পুলিশের হাতে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস সংঘটনের মারণাস্ত্র। উপরের নির্দেশে পুলিশের দল জ্বি স্যার, জ্বি স্যার করতে করতে ভেঙ্গে পড়ছে। কিন্তু তিনটায়, চারঘণ্টায় অসংখ্যবার হামলা করেও তারা প্রতিরোধের দেয়াল টপকাতে পারছে না। একটা পর্যায় পরিস্থিতি এমন হলো মারমুখী পুলিশের চোখে-মুখে হিংস্রতার দাগগুলো গাঢ় হয়ে গেল। আমরা সংবাদকর্মীরাও প্রবেশ পথে আরো গায়ের সঙ্গে গা লাগিয়ে শক্ত পায়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম। শ্লোগান চলছে। শ্লোগান জুড়ে রক্ত দেয়ার, জান দেয়ার ঘোষণা ধ্বনি।

গুজব বাড়ছে। গুঞ্জন বাড়ছে। পুলিশ কর্মকর্তাদের মোবাইল ফোন ও ওয়াকিটকির ব্যস্ততা বাড়ছে। প্রচন্ড আবেগ আমাদের হৃদয়কে দুমড়ে-মুচড়ে দিচ্ছে। আমার দেশ, আমাদের কর্মস্থল না। নিছকই একটা সংবাদপত্র মনে করা যায় না আমার দেশকে। এ যে আমাদের ভালোবাসা। প্রেম। না, আমার বুকের ছাতি ফুলে ওঠলো। ইতিহাসের যতো নিষ্ঠুরতম ঘটনাই ঘটুকনা কেন প্রতিরোধ চলবে। চরম আবেগে আমরা কেঁপে গেলাম। শ্লোগান বন্ধ। সবাই গেয়ে ওঠলাম জাতীয় সংগীত ও রণ সঙ্গীত। আবারো শুরু হলো শ্লোগান। শ্লোগানে আমার দেশ-এর ছাদ কেঁপে কেঁপে ওঠছে। জ্যৈষ্ঠ-কনিষ্ঠ সব সংবাদকর্মীই দৃঢ় অবস্থান গড়ে তুললাম। এই শ্লোগানের তোড়ে একসময় সব পুলিশ আমাদের অভ্যর্থনা চত্বর থেকে বের হয়ে সিঁড়ির কাছে চলে গেল। আমার দেশ যেহেতু আগুনে নিজের প্রাণশক্তিকে বাংলাদেশে মূর্ত করে তুলেছে, সেহেতু আমরা পিশাচের কৌশল ও শঠতার সঙ্গেও পরিচিত ছিলাম। সবাই বুঝে গেল কিছুক্ষণের মধ্যে পুলিশ শক্তি প্রয়োগ করতে শুরু করবে।

সময় ৩ টা ১৭। নিষ্ঠুরতার রাতে চূড়ান্ত আঘাতটি পায়ে পায়ে এগিয়ে আসছে। হঠাৎ করেই শতাধিক দাঙ্গা পুলিশ-আর্মড পুলিশ হামলে পড়লো প্রবেশ পথে। আমরা সবাই প্রাণপণ স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে চেষ্টা করলাম। দরজার এপাশ ধরে আমরা, ওপাশ ধরে ওরা। বড় জোর ৫-৭ মিনিট। এরপর আর আমরা পারি নাই। আমরা ক্ষুধার্ত একদল মানুষ আর কতক্ষণ পারি! সামনে ছিলেন যারা তাদের--মাহবুব ভাই, আরীফ, এমদাদ ও সাইফুলকে টেনে হেচড়ে নিয়ে গেল সশস্ত্র উর্দিওয়ালারা। দরজার ওপাশে নিয়েই লাঠির আঘাত, বুটের লাথি আর অশ্রাব্য গালি। আঘাতে জর্জরিত হয়ে লুটিয়ে পড়লেন ওরা। দেখলাম টেনে হিচড়ে তাদের সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামিয়ে নেয়া হচ্ছে। আর সামনে থেকে লাঠি-বন্দুক উচিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়লো শতাধিক পুলিশ। সামনে যাকেই পেল, তাকেই মারতে মারতে এগোলো--উপ-সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, নগর সম্পাদক জাহেদ চৌধুরী ও আলাউদ্দিন আরিফ ভাই মার খেয়ে মেঝেতে পড়ে গেলেন।

চোখের সামনে দেখলাম, উর্দি ছাড়া ক’জন গুন্ডামতো লোক পিস্তল বাগিয়ে সামনে চলে আসছে। তারা উর্দিওয়ালা পুলিশদের নির্দেশ দিচ্ছে লাঠিচার্জ করতে। ওরা আমাদের বসার চেয়ারগুলো আমাদের গায়ের উপর ছুঁড়ে মারতে লাগলো। সামনে যা কিছু পেল সব চুরমার করেই ওরা ভেতরে ঢুকে ডান দিকে মাহমুদ ভাই’-র রুমের দিকে ধেয়ে গেলো। পেছন থেকে আমরা চিৎকার করে স্লোগান দিতে থাকলাম। ততক্ষণে প্রবেশ পথের লাইট নিভিয়ে দিয়েছে ওরা। পুরো আমার দেশ কার্যালয় জুড়ে ভীতির ছাপ। পুলিশ লাঠি-বন্দুক তাক করে আমাদের ঘেরাও করে রেখেছে। মাহমুদ ভাইয়ের কাছে যেতে দিচ্ছে না। সেখানে তার সঙ্গে পুলিশের কী কথা হলো, না হলো কিছুই জানতে পারছি না।

দীর্ঘক্ষণ পর দেখলাম ভোর চারটার দিকে মাহমুদ ভাইকে ঘিরে নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে সশস্ত্র উর্দিওয়ালারা। মাহমুদ ভাই হাত উচিয়ে আমাদের বিদায় জানাতে জানাতে বেরোলেন হাসিমুখে। স্লোগানের বদলে তখন আমাদের চোখে পানি। ডাকাতের মতো রাতদুপুরে সশস্ত্র পুলিশ আর সাদা পোশাকধারী ভয়ংকর মানুষগুলা আমাদের ওপর হামলে পড়ছিলো সন্ধ্যা থেকে--কিন্তু আমরা তো হতাশ হই নাই তখন! এই কান্না আসলে অপমানের নয়, একজন সম্পাদকের সাহস আর আমাদের সবাইকে বাঁচিয়ে দিয়ে চলে যাওয়া দেখে।
তিনি যেভাবে যাচ্ছিলেন তাতে মনে হতে লাগলো তিনি প্রচন্ড নির্বোধ কোন মানুষকে সততা ও সাহসের মাধ্যমে জব্দ করতে যাচ্ছেন। তিনি আবারও আমাদের মাঝে ফিরবেন। আবারও আমার দেশ প্রকাশিত হবে। পুলিশি রাষ্ট্রের এই ডাকাতের গ্রামে যেই রাত্রি আমাদের ওপর চেপে বসেছিল- সেই রাত্রির আঁধারবিস্তারী অপশাসনের বিরুদ্ধে আবারো লড়বে আমার দেশ।

লেখকঃ সাংবাদিক

‘মাহমুদুর রহমান আইনি অধিকার থেকে বঞ্চিত’

‘সরকার মাহমুদুর রহমানকে আইনি অধিকার থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করছে। তিনি যাতে আইনি সহায়তা না পান, সেজন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির চেষ্টাও চলছে।’ সম্প্রতি প্রকাশনা বন্ধ করে দেওয়া আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের আইনজীবী নাসিরউদ্দিন অসীম এমন অভিযোগ করেছেন। আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব অভিযোগ করেন।
নাসিরউদ্দিন অসীম বলেছেন, কারা কর্তৃপক্ষ মাহমুদুর রহমানকে মামলা পরিচালনার অনুমতিপত্র ও ওকালতনামায় সই করতে দিচ্ছে না। কারাগারে ডিভিশন পাওয়ার কথা থাকলেও তাঁকে তা দেওয়া হয়নি। মাহমুদুর রহমানকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার আবেদন করায় তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তাঁর অভিযোগ, মাহমুদুর রহমানকে কারাগারে ঠিকমতো খাবার দেওয়া হচ্ছে না। প্রথম দিন সকালে তাঁকে নাস্তা হিসেবে কেবল বিস্কুট আর ভাঙা গ্লাসে পানি দেওয়া হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে মাহমুদুর রহমানের আইনজীবী জানান, গতকাল শুক্রবার কারাগারে গিয়ে তাঁর মক্কেলের সঙ্গে কথা বলে তিনি এসব বিষয় জেনেছেন।
নাসিরউদ্দিন বলেন, মাহমুদুর রহমান প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় সরকারের উপদেষ্টা ও বিনিয়োগ বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি একটি দৈনিক পত্রিকারও সম্পাদক। তাই ‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ অনুযায়ী তিনি কারাগারে ভিআইপি মর্যাদার ডিভিশন পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু সরকার ইচ্ছা করে তাঁকে সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে।
নাসিরউদ্দীন বলেন, কারাগারের গেটে পুলিশ মাহমুদুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এরপর আবার তাঁকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন উদ্দেশ্যমূলক।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী ইজাজ কবীর, আমার দেশ পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি অলিউল্লাহ নোমান প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, ২ জুন রাতে আমার দেশ পত্রিকার কার্যালয় থেকে মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রতারণা ও পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়। প্রতারণা মামলায় তাঁর জামিন হলেও পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে মামলায় আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠান।

http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-06-05/news/68626

Friday 4 June 2010

আমার দেশ পত্রিকার প্রকাশনা বাতিল

দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার প্রকাশনা (ডিক্লারেশন) বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার রাত ১০টায় একটি সরকারি সূত্র নিশ্চিত করেছে যে ‘প্রেস অ্যাণ্ড পাবলিকেশন্স অ্যাক্ট’ অনুযায়ী ঢাকার জেলা প্রশাসক পত্রিকার প্রকাশনা বাতিল করেছেন। তবে রাত ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পত্রিকার ছাপার কাজ চলছিল বলে জানা গেছে।
এর আগে আজ বিকেল পাঁচটার দিকে পত্রিকাটির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে পত্রিকাটি বন্ধ করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে বলে অভিযোগ করেন।
এর আগে আজ সকালে পত্রিকাটির প্রকাশক হাসমত আলীকে একটি গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন ধরে নিয়ে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রাখে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কারওয়ান বাজারে আমার দেশ কার্যালয়ে মাহমুদুর রহমান সংবাদ সম্মেলন করেন।
এর পর রাতে হাসমত আলী বাদী হয়ে মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় একটি মামলা করেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, দণ্ডবিধি ৪১৯, ৪২০ ও ৫০০ ধারায় দায়ের করা মামলায় হাসমত আলী অভিযোগ করেন, তিনি গত বছর আমার দেশের সব শেয়ার মাহমুদুর রহমানের কাছে বিক্রি করে দেন। যা জয়েন্ট স্টক কোম্পানির মাধ্যমে হস্তান্তরও করা হয়। এরপর ২০০৯ সালের ১১ অক্টোবর প্রকাশকের পদ থেকে তিনি নির্ধারিত ফরমে আবেদন করে পদত্যাগ করেন। কিন্তু তার পরও মাহমুদুর রহমান পত্রিকায় প্রকাশক হিসেবে হাসমত আলীর নাম ছাপিয়ে আসছেন। এর মধ্যে পত্রিকাটির বিরুদ্ধে ৩০টি মামলা হয়েছে, সবগুলোতে তাঁকেও আসামি করায় তিনি সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হচ্ছেন।
এদিকে আজ বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে মাহমুদুর রহমান বলেন, আমার দেশ বন্ধের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে একটি গোয়েন্দা সংস্থা গতকাল সকালে প্রকাশক হাসমত আলীকে তাঁর শাহজাহানপুরের বাসা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রাখে। তাঁর কাছ থেকে দুটি কাগজে সই নেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘এর মাধ্যমে পত্রিকাটি বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং আমাকে গ্রেপ্তার করা হবে। কিন্তু আমার ভয়-ডর বলে কিছু নেই। আমরা যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করব। আমার বিরুদ্ধে ৩১টি মামলা। এখন গ্রেপ্তারের অপেক্ষা করছি।’
মাহমুদুর রহমানের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে গোয়েন্দা সংস্থার একজন পদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, হাসমত আলীকে তাঁরা ডেকে আনেননি। তিনি নিজেই অভিযোগ দিতে এসেছিলেন। অভিযোগ দেওয়ার পর আবার বাসায় ফিরে গেছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে হাসমত আলীর সঙ্গে কয়েকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনো কথা বলতে চাননি।
মাহমুদুর রহমান বলেন, হাসমত আলীকে ভয় দেখানো হয়েছে। এখন তিনি কারও সঙ্গে কথা বলার সাহস পাচ্ছেন না।
হাসমত আলীর পরিবারের সদস্যরা জানান, জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে মঙ্গলবার সকাল নয়টার দিকে একটি গোয়েন্দা সংস্থার তিন-চারজন সদস্য শাহজাহানপুরের বাসা থেকে তাঁকে নিয়ে যান। এরপর তাঁরা আর কিছু জানেন না। বেলা দুইটার পর তিনি বাসায় ফেরেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মাহমুদুর রহমান বলেন, গণতান্ত্রিক দেশে একটি নির্বাচিত সরকারের আমলে এভাবে গোয়েন্দা সংস্থা কাউকে তুলে নিয়ে যাবে, সেটা চিন্তা করা যায় না।
মাহমুদুর রহমান বলেন, ২০০৮ সালে তিনি আমার দেশ পত্রিকার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেন। এরপর পত্রিকাটির সম্পাদকের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য তিনি জেলা প্রশাসককে চিঠি দেন। ওই সময় থেকেই ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে রয়েছেন তিনি। হাসমত আলীর নাম প্রকাশক থেকে বাদ দেওয়ার অনুমতি মিলেছে কিন্তু এর পরিবর্তে মাহমুদুর রহমানের নাম ব্যবহারের অনুমতি মেলেনি। ওপরের নির্দেশ আছে বলে জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে বারবার ঘোরানো হচ্ছে।
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-06-01/news/67721