Wednesday 23 February 2011

রাষ্ট্র তুমি মানবিক হও : ড. মিজান

স্টাফ রিপোর্টার

রাষ্ট্রকে মানবিক হওয়ার মিনতি জানিয়েছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমি রাষ্ট্রের কাছে মিনতি জানাচ্ছি, রাষ্ট্র তুমি মানবিক হও। হাজার হাজার গ্রামবাসীর নামে-বেনামে মামলা করো না। হুলিয়া জারি করো না।’
গতকাল বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ ছাত্রকল্যাণ ট্রাস্ট আয়োজিত ‘নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় এবং যৌন হয়রানি প্রতিরোধে শিক্ষক-অভিভাবক, সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. মিজান বলেন, ‘আড়িয়ল বিলের হাজার হাজার গ্রামবাসী মামলার ভয়ে বাড়ি ফিরতে পারছে না। অত্যাচারিত হচ্ছে। পলাতক রয়েছে। গ্রেফতার হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘যেখানে রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী সেখানকার মানুষের আহ্বানে সাড়া দিয়ে পদ্মার ওপারে বিমানবন্দর করার ঘোষণা দিয়েছেন, সেখানে রাষ্ট্রযন্ত্র কেন অসংখ্য মানুষের নামে দায়ের করা বেনামি মামলা তুলে নেবে না!’
মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান বলেন, ‘আইনের শাসনের অভাবে আমাদের রাষ্ট্র আজ এক অসীম ক্ষমতাধর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। যেখানে নাগরিক সামান্য এক বিন্দুমাত্র। তাই সেই অসীম ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের কাছে আমরা মিনতি জানাতে পারি—‘রাষ্ট্র তুমি মানবিক হও।’ তিনি বলেন, ‘এটা মানতে খারাপ লাগে, এ অসীম ক্ষমতাধর রাষ্ট্র গুটিকয়েক দুষ্কৃতকারীর হাত থেকে নাগরিকদের বাঁচাতে পারবে না। এটা কোনো চ্যারিটি নয়। এটা তার ডিউটি।’ আমরা একটু সচেতন হলেই আমাদের এ অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
ড. মিজানুর রহমান বলেন, দেশে বর্তমানে সবক্ষেত্রে রাজনীতিকরণ হচ্ছে। চাকরিতে নিয়োগ, সামাজিক ও রাষ্ট্রের সব কার্যক্রম রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করা হচ্ছে।
সমাজ পরিবর্তনের জন্য এ সেমিনারে তিনি তিনটি প্রস্তাবও উত্থাপন করেন। এগুলো হলো, শিক্ষার্থী দেশের যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে বিষয়েই পড়ুক না কেন, ওই প্রতিষ্ঠানকে তার সব শিক্ষার্থীকে বছরে এক মাস গ্রামে গিয়ে আসল বাংলাদেশ দেখে আসা বাধ্যতামূলক করতে হবে। তিনি বলেন, ‘দেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিরুদ্ধে হরতাল না দিয়ে আমরা ঘোষণা করতে পারি, আসুন আমরা দেশের জন্য একটি দিন কাজ করে সবাই ওই দিনের উপার্জন দুস্থদের জন্য ব্যয় করি।’ আসুন আমরা বছরের একটি দিন আমাদের চারপাশ নিজ হাতে পরিষ্কারের দায়িত্ব নিয়ে খোকাবাবুর কাজের চাপ কমিয়ে দেই।
তিনি আরও বলেন, ‘এ দেশে কেউ ভিআইপি নয়। সবাই সাধারণ নাগরিক। যে দেশে রাষ্ট্রের সব নাগরিককে বিশ্বকাপের টিকিটের জন্য শীত উপেক্ষা করে সারারাত অপেক্ষা করতে হয়, সেখানে সবাই সাধারণ।’
অধ্যাপক এম এম খানের সভাপতিত্বে সেমিনারে মুক্তিযুদ্ধে আট নম্বর সেক্টর কমান্ডার লে. কর্নেল আবু উসমান চৌধুরী, অধ্যাপক মোস্তফা কামাল, বাংলাদেশ ছাত্রকল্যাণ ট্রাস্টের পরিচালক নুরে আলম তালুকদার বক্তৃতা করেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক নুরুল করিম নাসিম।
ড. মিজান ইভটিজিং বা যৌন হয়রানি সম্পর্কে বলেন, ‘যারা এ অপরাধ করছে তারা ভিন গ্রহের কেউ নয়। তারা আমাদের সমাজের অংশ, আমাদেরই আপনজন। তারা আমাদের প্রতিপক্ষ নয়। তাই শত্রুতা করে এ ধরনের ভয়ানক সামাজিক ব্যাধি দূর করা যায় না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা এমন একটি সমাজ গড়ে তুলেছি, যেখানে নারীকে বাজারের পণ্য হিসেবে গণ্য করা হয়।’
বেকারত্ব এ সমস্যার প্রধান কারণ নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তাহলে আমাদের দেশে যে সংখ্যক ভুখা-নাঙ্গা, আশ্রয়হীন আছে তাতে ঢাকার রাস্তায় নির্বিঘ্নে এত গাড়ি চলার কথা নয়। এসব বঞ্চিতরা কখনও এই গাড়িগুলোতে ইট মারে না। অথচ গাড়িতে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে আমাদের মতো শিক্ষিতজনেরা।’ ড. মিজান এ ধরনের ঘটনাকে সমাজের অবক্ষয় বলে উল্লেখ করেন। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হওয়ায় এবং আইন ভাঙার বলয় গড়ে তোলাকে তিনি এর জন্য দায়ী করেন। এ ঘটনা সমাজে প্রতিষ্ঠা করে—‘এ সমাজে অন্যায় করলে বিচার হয় না’। তিনি বলেন, ‘এ অবক্ষয়ের আরও একটি বড় কারণ হলো সবকিছুকে সরল ও সহজীকরণ।’
তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘যে শিক্ষক রাজনৈতিক পরিচয়ে শিক্ষক হন, তিনি ছাত্রদের কী শেখাবেন? যার নিজের স্বাধীন স্বপ্ন দেখার যোগ্যতা নেই, তিনি নতুন প্রজন্মকে কী স্বপ্ন দেখাবেন? আমাদের যে নৈতিক স্খলন ঘটেছে, তাতে কে আমাদের কাছে ভালো কিছু আশা করবে?’

অধিকারের মাসিক প্রতিবেদন : গত মাসে ৭ জন বিচারবহির্ভূত হত্যা বিএসএফ হত্যা করে চারজনকে

স্টাফ রিপোর্টার

গত জানুয়ারি মাসে সাতজন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। ৯ নারী ও এক শিশুকন্যা ধর্ষণের পর হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফ ৪ বাংলাদেশীকে হত্যা করেছে। এর মধ্যে ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রাম সীমান্তে ফেলানী নামে এক কিশোরীকে গুলি করে হত্যার পর কাঁটাতারে ঝুলিয়ে রাখার ঘটনা দেশ-বিদেশে ঝড় তুলেছে। গতকাল অধিকারের মাসিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
অধিকারের প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, জানুয়ারি মাসে ২৬ নারী ও মেয়েশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে ১৪ নারী এবং ১২ মেয়েশিশু। ওই ১৪ নারীর মধ্যে ৯ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে এবং ১০ জন গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ১২ মেয়েশিশুর মধ্যে ১ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা এবং ৪ জন গণধর্ষণ হয়েছে। ধর্ষণের কারণে ১ নারী আত্মহত্যা করেছেন।
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশী নাগরিক হত্যা ও ধর্ষণের পর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অধিকার।
অধিকারের প্রতিবেদনে বলা হয়, জানুয়ারি মাসে ৪ জন জেল হেফাজতে মৃত্যুবরণ করেছে বলে
অভিযোগ রয়েছে। এদের মধ্যে একটি দেড় বছরের শিশুকে তার মায়ের সঙ্গে জেলে রাখা হয়। সেখানে যত্নের অভাবে শিশুটি জেলে আসার ১২ দিনের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
ডবচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ফলে নিহত ৭ জনই ‘ক্রসফায়ার/এনকাউন্টার/বন্দুকযুদ্ধে’ মারা গেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এদের মধ্যে র্যাব কর্তৃক ৫ জন, পুলিশ কর্তৃক ২ জন নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ পর্যন্ত ২৮৬ ব্যক্তি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। এসময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আইন ভঙ্গ করে সন্দেহভাজন ব্যক্তি, আত্মগোপনে থাকা বিপ্লবী বামপন্থী এবং নিরীহ ব্যক্তিদের বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করেছে।
গত ২৬ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন বলেন, ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে যে যাই বলুক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের কাজ করে যাবে। আত্মরক্ষায় তাদের ছোড়া গুলিতে সন্ত্রাসীদের মরাই স্বাভাবিক।’
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে অধিকার। অধিকার এ ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে, কারণ এই বক্তব্যের মাধ্যমে সরকার বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধের প্রশ্নে সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থান নিয়েছে।
গত ১১ জানুয়ারি ঢাকার পল্লবীতে পুলিশের গুলিতে ইমতিয়াজ হোসেন আবীর (১৯) নামে নর্দান ইউনিভার্সিটি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর এক ছাত্র নিহত হয়েছে। নিহত পরিবারের অভিযোগ, আবীরকে ফোনে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে পল্লবী থানার এএসআই ইসমাইলের নের্তৃত্বে পুলিশ গুলি করে হত্যা করে তাকে ডাকাত দলের সদস্য বলে পরিচয় দিচ্ছে। আবীরের নামে থানায় কোনো মামলা বা জিডি নেই।
জানুয়ারি মাসে ৭ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডগুলো র্যাব এবং পুলিশ কর্তৃক সংঘটিত হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্ট : জানুয়ারি মাসে ২০৬ খুন

স্টাফ রিপোর্টার

জানুয়ারি মাসে সারাদেশে ২০৬ জন খুন হয়েছে। বেসরকারি সংস্থা বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের ডকুমেন্টশন বিভাগের এক জরিপে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এ ধরনের হত্যাকাণ্ডে অবশ্যই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক নয় বলে মনে করা হয়। কমিশন ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে এই ব্যাপক হত্যাকাণ্ডে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সামাজিক সহিংসতায় ১৫৭, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে ৮, রাজনৈতিক হত্যা ১২, সাংবাদিক খুন ১, এসিডদগ্ধ করে হত্যা ২, যৌন হয়রানির শিকার হয়ে মৃত্যু ৫, গণপিটুনিতে নিহত ৫, চিকিত্সা অবহেলায় মৃত্যু ২, যৌতুকের কারণে নিহত ৬, বিএসএফের গুলিতে নিহত ৪ এবং গৃহপরিচারিকা নিহত ১ জন। এ সময় ১৪ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ধর্ষণের পর ৩ জনকে হত্যা করা হয়।

ইমেজ সঙ্কটে দেশ



বশীর আহমেদ

মানবাধিকার লঙ্ঘন, মিডিয়া দলন, শিশু নির্যাতন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেপরোয়া আচরণসহ সরকারের বিভিন্ন অগণতান্ত্রিক কার্যক্রমে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা এখন মলিন। অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় এখন সবচেয়ে বেশি ইমেজ সঙ্কটে আছে বাংলাদেশ।
নেতিবাচক খবর হিসেবেই বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় স্থান পাচ্ছে। এমনকি ব্যর্থরাষ্ট্র হওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ যে ৩৭টি রাষ্ট্রের তালিকা তৈরি হয়েছে, সেই তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশের নাম।
দ্য গার্ডিয়ান, নিউইয়র্ক টাইমস, বিবিসিসহ বিশ্বের প্রধান গণমাধ্যম এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের ওয়েবসাইটে বাংলাদেশের কলুষিত চিত্র ফুটে উঠেছে। শিশুদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে পুলিশ, করুণভাবে তাকিয়ে আছেন নির্যাতিত সাংবাদিক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জোর করে বন্ধ করে দিচ্ছে ছবি প্রদর্শনী, বড় বড় হরফে লেখা বাংলাদেশ সরকার ফেসবুক বন্ধ করে দিয়েছে—এমন অসংখ্য নেতিবাচক খবর বাংলাদেশকে নিয়ে। এছাড়া দারিদ্র্য বৃদ্ধি এবং গার্মেন্ট শ্রমিকদের করুণ কাহিনীর খবর তো আছেই।
মানবাধিকার সংগঠন জাস্টিস কনসার্নের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করলে প্রথমেই চোখে পড়বে বাংলাদেশের একটি ছবি। এক শিশুকে নির্মমভাবে পেটাচ্ছে পুলিশ। ছবির ওপরে শিরোনামে লেখা হয়েছে পোশাক শ্রমিকদের হরতালে যোগ দেয়ায় বাংলাদেশের পুলিশ শিশুদের পেটাচ্ছে। ওয়েবসাইটটির দ্বিতীয় খবরটিও বাংলাদেশের। দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিমর্ষ ছবিসহ শিরোনাম করা হয়েছে—অমানবিক নির্যাতনের শিকার বাংলাদেশের এক সম্পাদক। এ ব্যাপারে বিবিসি মনিটরিং বিভাগ থেকে নেয়া তথ্য তুলে ধরে ওয়েবসাইটে বলা হয়, পুলিশ হেফাজতে নির্মম নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষার জন্য পদক্ষেপ নিতে আদালতের কাছে আবেদন জানান মাহমুদুর রহমান। তিন দিনের রিমান্ড শেষে যখন তাকে আদালতে হাজির করা হয় তখন তিনি দাঁড়াতে পারছিলেন না। আদালত তাকে বসার অনুমতি দেন। মাহমুদুর রহমান আদালতে প্রশ্ন তোলেন, যেখানে মানবাধিকার সমুন্নত রাখার কথা বলা হচ্ছে সেখানে একজন ব্যক্তির ওপর এমন নির্মম নির্যাতন করা যায় কিনা।
প্রসঙ্গত আমার দেশ পত্রিকা বন্ধ এবং ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার ও নির্যাতনের খবর ব্যাপকভাবে প্রচার হয় আন্তর্জাতিক মিডিয়ায়। সৃষ্টি হয় তীব্র প্রতিক্রিয়া। এ ইস্যুতেই সবচেয়ে বেশি ক্ষুণ্ন হয়েছে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা। এ প্রসঙ্গে দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার দেশটির তৃতীয় সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছে। পুলিশ পত্রিকার প্রধান কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করে। মাহমুদুর রহমান শেখ হাসিনা সরকারের দুর্নীতি এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সম্পাদকীয় এবং নিবন্ধ লিখেছিলেন।হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, ফ্রন্ট লাইন, সিপিজে, রিপোর্টার্স উইথআউট বর্ডারসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে আমার দেশ পত্রিকা বন্ধ এবং ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের গ্রেফতারে বাংলাদেশ সরকারের কঠোর সমালোচনা করা হয়।
বিচারবহির্ভূত হত্যার জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে এখন বাংলাদেশ। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছিলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে সরকার।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক শুনানিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি অঙ্গীকার করেছিলেন, বিচারবহির্ভূত কোনো হত্যা মেনে নেবে না সরকার। এতসব প্রতিশ্রুতির পরও অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় বাংলাদেশে এখন অনেক বেশি বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা ঘটছে। বিশ্ব মিডিয়ায় এটা এখন অন্যতম আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে র্যাবের হাতে বিচারবহির্ভূত হত্যার বিষয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে র্যাবকে বাংলাদেশের ডেথ স্কোয়াড হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের এই বাহিনী বিনা বিচারে এক হাজারেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে।
র্যাবের এ বিচারবহির্ভূত হত্যা বা ক্রসফায়ার নিয়ে গত বছর বিখ্যাত আলোকচিত্রী শহিদুল আলম একটি ছবি প্রদর্শনীর আয়োজন করেন ঢাকায়। সরকারের নির্দেশে সেই প্রদর্শনী ভণ্ডুল করে দেয় পুলিশ। ওই ঘটনা ফলাও করে প্রচার করে নিউইয়র্ক টাইমস। প্রদর্শনী বন্ধে পুলিশি আক্রমণের ৭টি ছবি প্রকাশ করে নিউইয়র্ক টাইমস।
গত বছর বাংলাদেশে ফেসবুক বন্ধের ঘটনায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সমালোচনামূলক বক্তব্যের জন্য ফেসবুক বন্ধ করে দেয় সরকার। বিবিসিসহ বিশ্ব মিডিয়ায় গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার করা হয় ওই খবর। খবরে বাংলাদেশকে পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা করে বলা হয়, যেভাবে পাকিস্তানে ফেসবুক বন্ধ করা হয়েছিল ঠিক একইভাবে বাংলাদেশে ফেসবুক বন্ধ করেছে সরকার। বেতন নিয়ে গার্মেন্ট শ্রমিকদের অসন্তোষ, সহিংসতা, শ্রমিকদের ওপর পুলিশি নির্যাতনের খবর হারহামেশাই প্রকাশ হচ্ছে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায়।
বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষের করুণচিত্র অব্যাহতভাবে স্থান পাচ্ছে মিডিয়ায়। বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষের যে চিত্র ইউনিসেফের রিপোর্টে এসেছে তা ভয়াবহ। বাংলাদেশে গ্রামের চেয়ে শহরের গরিব মানুষের অবস্থা বেশি খারাপ বলে রিপোর্টে বলা হয়েছে। এটা একটি অস্বাভাবিক ঘটনা। বাংলাদেশ সম্পর্কে এ খবর ফলাও করে প্রচার করেছে এলার্টনেট নামের ওয়েবসাইট। ব্যাংকক থেকে পাঠানো এলার্টনেটের কনটেম্লট পার্টনার আইআরআইএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, শহরের চেয়ে গ্রামের গরিব হওয়াই ভালো। বাংলাদেশে ইউনিসেফের স্টাডিতে এটাই এখন সত্য। আগে ধারণা ছিল শহরের চেয়ে গ্রামের দরিদ্র মানুষের অবস্থা বেশি খারাপ। এ ধারণা পাল্টে গেছে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে। বাংলাদেশে শহরের বস্তিতে বসবাসকারী দরিদ্র মানুষের মধ্যে শিশুমৃত্যুর হার গ্রামের চেয়ে দ্বিগুণ। শহরের তুলনায় গ্রামের দরিদ্র শিশুদের শিক্ষার হার অন্তত তিনগুণ বেশি।
এভাবেই নেতিবাচক খবর হিসেবেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বারবার আলোচিত হচ্ছে বাংলাদেশ। আর দিন দিন কলুষিত হচ্ছে দেশের ভাবমর্যাদা। এখানেই শেষ নয়, ইউকিপিডিয়া ২০১০ সালের ব্যর্থ রাষ্ট্রের যে ইনডেক্স প্রকাশ করেছে সেখানে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ। অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে ব্যর্থরাষ্ট্র হওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ৩৭টি দেশকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ তালিকার এক নম্বরে রয়েছে সোমালিয়া। ২৪তম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ