Sunday 13 June 2010

মানবাধিকার ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিক্রিয়া : রিমান্ডে মাহমুদুর রহমানের ওপর নির্যাতন সংবিধান ও হাইকোর্টের রায় পরিপন্থী

আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে রিমান্ডে নিয়ে বর্বরোচিত কায়দায় অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে। এ সংবাদে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক এবং মানবাধিকার সংগঠন। সংগঠনগুলো এ নির্মম নির্যাতনের ঘটনার তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছে, রিমান্ডের নামে নির্যাতন বিদ্যমান সংবিধানের ৩৫(৫) অনুচ্ছেদের পরিপন্থী। এছাড়াও রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের ব্যাপারে হাইকোর্ট যে নির্দেশনা দিয়েছিলেন, মাহমুদুর রহমানের ক্ষেত্রে তা মানা হচ্ছে না। সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, বর্তমান সরকার আইনের শাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে পদদলিত করে সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে হরণ করতে চায়। যাতে আর কেউ সোচ্চার কণ্ঠে তাদের দুর্নীতি, দুঃশাসন, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এবং রাষ্ট্র ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী তত্পরতার সমালোচনা করতে না পারে। এজন্যই মাহমুদুর রহমানের ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হচ্ছে। আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের এ আচরণ বিগত অসাংবিধানিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও বাকশাল আমলের নির্যাতনের মাত্রাকেও ছাড়িয়ে গেছে। এর আগে কখনও কোনো পত্রিকার সম্পাদককে এ ধরনের নিষ্ঠুর নির্যাতন করা হয়নি। বর্তমান সরকার মাহমুদুর রহমানের ওপর এহেন নির্যাতন চালিয়ে মধ্যযুগের অন্ধকার শাসন কায়েম করেছে। একটি নির্বাচিত সরকারের কাছে এ ধরনের আচরণ প্রত্যাশিত নয়। গতকাল পৃথক পৃথক বিবৃতিতে এ মন্তব্য করা হয়। একইসঙ্গে তারা রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করার ঘটনা প্রতিরোধ করতে দেশের গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল শক্তির প্রতি আহ্বান জানান।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান রিমান্ডে অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে আদালতে অভিযোগ করেছেন। আইন ও সালিশ কেন্দ্র এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে দেখা গেছে, মাহমুদুর রহমান আদালতে অভিযোগ করেছেন যে, তার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে দেখছি যে, ২০০৩ সালে ব্লাস্ট বনাম বাংলাদেশ মামলায় (আইন ও সালিশ কেন্দ্র ওই মামলায় অন্যতম পিটিশনার ছিল) গ্রেফতার করা ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে হাইকোর্ট যে নির্দেশনা দিয়েছিলেন, মাহমুদুর রহমানসহ অন্যদের এক্ষেত্রে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তা মানা হচ্ছে না। তাছাড়া সংবিধানের ৩৫(৫) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘কোন ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেওয়া যাইবে না কিংবা নিষ্ঠুর, অমানুষিক বা লাঞ্ছনাকর দণ্ড দেওয়া যাইবে না কিংবা কাহারো সহিত অনুরূপ ব্যবহার করা যাইবে না। নির্যাতন বা নিষ্ঠুর, অমানবিক বা অবমাননাকর শাস্তি দেওয়া বা তার সাথে এ ধরনের আচরণ করা যাইবে না।’ আমরা একটি নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে এ ধরনের আচরণ প্রত্যাশা করি না।
জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল সভাপতি বদরুদ্দীন উমর ও সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম এক বিবৃতিতে আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে রিমান্ডের নামে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা কর্তৃক বর্বরোচিত নির্যাতনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন, রিমান্ডের নামে এই অপরাধ জনগণ চলতে দিতে পারে না। তারা আরও বলেন, রিমান্ডের নামে ধরে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন একটি অপরাধ। রাষ্ট্রীয় হেফাজতে এ অপরাধ ব্যাপকভাবে সংঘটিত হয় বিগত সেনা নিয়ন্ত্রিত ফখরুদ্দীন সরকারের আমলে। একথা আজ অজানা নয়, সরকারের নির্দেশে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। বিবৃতিতে তারা রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করার ঘটনা প্রতিরোধ করতে দেশের গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল শক্তির প্রতি আহ্বান জানান।
এদিকে বাংলাদেশী-আমেরিকান জাতীয়তাবাদী ফোরামের নেতারা আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে পুলিশি রিমান্ডে নিয়ে নির্মম নির্যাতনকে বর্তমান সরকারের ফ্যাসিবাদী চরিত্রের চরম বহিঃপ্রকাশ বলে মন্তব্য করেছেন। গতকাল এক বিবৃতিতে তারা বলেন, বর্তমান সরকার বাকশালী কায়দায় বাংলাদেশে আইনের শাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে পদদলিত করে সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে হরণ করতে চায়, যাতে আর কেউ সোচ্চার কণ্ঠে সরকারের সমালোচনা করতে না পারে। এজন্যই আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে। ফোরাম নেতারা অবিলম্বে মাহমুদুর রহমানের ওপর নির্যাতন বন্ধ করে তার সুচিকিত্সার ব্যবস্থা করা এবং তাকে মুক্তি দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান। আওয়ামী-বাকশালী অত্যাচারী এই ফ্যাসিস্ট সরকার রাজনৈতিকভাবে বিরোধী দলকে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে দমন-পীড়ন, জুলুম-নির্যাতনের পথ বেছে নিয়েছে। সরকার পুলিশ নিয়ে জনগণের কণ্ঠ রোধ করতে চায়। কিন্তু জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে গণআন্দোলন বন্ধ করা যাবে না। কোনো সরকারই সংবাদপত্র এবং সাংবাদিকদের ওপর জুলুম করে বেশিদিন ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেনি—এ সরকারও পারবে না।
বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গনি এবং মহাসচিব এ গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক ও দেশের বিশিষ্ট কলামিস্ট মাহমুদুর রহমানকে পুলিশি রিমান্ডে নির্যাতন বর্তমান ক্ষমতালিপ্সু আওয়ামী লীগ সরকারের ফ্যাসিবাদী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। তারা আইনের শাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে পদদলিত করে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করে আবারও ’৭৫-এর মতো বাকশাল প্রতিষ্ঠার চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে। সরকারের বাকশাল প্রতিষ্ঠার বড় বাধা হচ্ছে স্বাধীন ও সাহসী সংবাদপত্র। এ কারণেই আর কোনো সংবাদপত্র যাতে সাহসী ভূমিকা পালন করতে না পারে, সেজন্য মাহমুদুর রহমানের ওপর বর্বরোচিত নির্যাতন চালানো হচ্ছে। নেতারা মাহমুদুর রহমানের ওপর নির্যাতন বন্ধ এবং তার নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/06/14/35127

No comments:

Post a Comment