Tuesday 23 March 2010

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম নেতাদের উদ্বেগ

কূটনৈতিক রিপোর্টার
যুক্তরাষ্ট্রের সর্বদলীয় মুসলিম নেতারা বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন অবিলম্বে বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। একইসঙ্গে তারা বিরোধী দলগুলোর ওপর দমন-পীড়ন বন্ধ, ইসলামী সংগঠন নিষিদ্ধের পাঁয়তারা বন্ধ এবং জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে আন্তর্জাতিক আইনে যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবি জানিয়েছেন। গতকাল আমেরিকার সব মুসলিম সংগঠনের প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠান আমেরিকান মুসলিম টাস্কফোর্স অন সিভিল রাইটস অ্যান্ড ইলেকশন (এএমটি) এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানায়। ওয়াশিংটন ডিসির জাতীয় প্রেসক্লাবে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
এএমটি আমেরিকার সর্বদলীয় মুসলিম সংগঠন। এর সদস্য সংগঠন হচ্ছে আমেরিকান মুসলিম অ্যালায়েন্স (এএমএ), আমেরিকান মুসলিমস ফর প্যালেস্টাইন (এএমপি), কাউন্সিল ফর আমেরিকান ইসলামিক রিলেশন্স (সিএআইআর), ইসলামিক সার্কেল অব নর্থ আমেরিকা (ইকনা), মুসলিম অ্যালায়েন্স ইন নর্থ আমেরিকা (মানা), মুসলিম আমেরিকান সোসাইটি-ফ্রিডম ফাউন্ডেশন (মাস-এফএফ), মুসলিম স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন-ন্যাশনাল (এমএসএ-এন), মুসলিম উম্মাহ অব নর্থ আমেরিকা (মুনা) এবং ইউনাইটেড মুসলিমস অব আমেরিকা (উমা)। পর্যবেক্ষক হিসেবে এ সংগঠনের সঙ্গে রয়েছে ইসলামিক সোসাইটি অব নর্থ আমেরিকা (ইসনা), মুসলিম পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কাউন্সিল (এমপ্যাক) এবং ইসলামিক এডুকেশনাল সেন্টার অব অরেঞ্জ কাউন্টি (আইইসি)।
সংবাদ সম্মেলনে আমেরিকার মুসলিম নেতারা বাংলাদেশে অবিলম্বে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ, বহুদলীয় গণতন্ত্র সুনিশ্চিত, বিরোধী দলগুলোর ওপর পুলিশ, প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে অপব্যবহার করে নির্যাতন বন্ধ, আইনের শাসন পুনরুদ্ধার ও অবৈধভাবে আটকে রাখা সব রাজনৈতিক নেতাকর্মীর মুক্তির দাবি জানান।
অনুষ্ঠানে মুসলিম নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিএআইআরের নাহিদ আওয়াদ, মাস-এফএফের ইমাম মাহদী ব্রে, ম্যাক-পাকের ড. সুলাইমান নাইঙ্গ, এএমটির সেলিম আকতার প্রমুখ। বক্তারা বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপকহারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো নিয়ে আলোচনা করেন এবং এর নিন্দা জানান। সম্মেলনে বিরোধী দলের ওপর সরকারি দলের নির্যাতন এবং মামলা-হামলারও নিন্দা জানানো হয়। বক্তারা বাংলাদেশে ইসলামী দলগুলো ও এর নেতাদের ওপর তথাকথিত যুদ্ধাপরাধ ও জঙ্গিবাদের ধুয়া তুলে সরকারি তত্ত্বাবধানে জুলুম, নির্যাতন ও চরিত্র হননের অপচেষ্টায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, শুধু রাজনৈতিক হয়রানির জন্য যুদ্ধাপরাধের মতো একটি মীমাংসিত বিষয় নিয়ে সরকার ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার চেষ্টা চালাচ্ছে এবং এর সূত্র ধরে ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধের পাঁয়তারা করছে। তারা আন্তর্জাতিক বার কাউন্সিলের প্রস্তাবিত সংশোধন ছাড়া ১৯৭৩ সালের বিতর্কিত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্টের অধীনে এ বিচার করলে তা প্রহসনে পরিণত হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। বক্তারা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে আন্তর্জাতিক আইনে যুদ্ধাপরাধের বিচার দাবি করেন। সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের ডেপুটি অ্যাম্বাসেডর ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলন শেষে এএমটি প্রেসিডেন্ট ড. আগা সাইদ স্বাক্ষরিত একটি স্মারকলিপি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের কাছে দেয়া হয়।
শেখ হাসিনার উদ্দেশে লেখা স্মারকলিপিতে বলা হয়, ২০০৮-এর জাতীয় নির্বাচনের পর বাংলাদেশের জনগণ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আশা করেছিল আপনার সরকার বিরোধী দলগুলোর সহযোগিতায় গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাবে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে, সাম্প্রতিক সময়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বিরোধী দলকে দমন-পীড়ন আশঙ্কাজনকহারে বৃদ্ধির সংবাদ আজকে আপনার কাছে লিখতে বাধ্য করছে। আমাদের আশঙ্কা হয়, যদি অবিলম্বে পরিস্থিতি উন্নয়নের ব্যবস্থা নেয়া না হয়, তাহলে দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা হুমকির সম্মুখীন হবে এবং দেশকে বিশৃঙ্খলা ও গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়া হবে।
এতে আরও বলা হয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও অধিকারের মতো মানবাধিকার সংগঠনের রিপোর্টে সাম্প্রতিক সময়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও বিরোধী দলকে দমন-পীড়ন আশঙ্কাজনকহারে বৃদ্ধির যে চিত্র ফুটে উঠেছে, তাতে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আপনার সরকারের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধের সুস্পষ্ট অঙ্গীকার সত্ত্বেও ২০০৯ সালে কমপক্ষে ১৫৪ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে, রাজনৈতিক সংঘর্ষে শত শত লোক নিহত ও হাজার হাজার আহত হয়েছে, যার জন্য মূলত আপনার দল ও এর ছাত্রসংগঠনই দায়ী। আমরা অবিলম্বে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানবাধিকার সুপ্রতিষ্ঠায় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আপনার কাছে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। স্মারকলিপিতে বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের কাছে লেখা চিঠিতেও বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ এবং এ বিষয়ে ওয়াশিংটনের প্রতি দৃষ্টি দেয়ার আহ্বান জানানো হয়।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/03/24/24188

No comments:

Post a Comment