Thursday 18 March 2010

ছাত্রীনিগ্রহের প্রতিবাদে ঢাবি শিক্ষকরা : নারীর সম্ভ্রম নিয়ে যা ঘটছে তা কলঙ্কজনক




বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার
ইডেনের ছাত্রীদের সম্ভ্রমহানির প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচিতে ঢাবি শিক্ষকরা বলেছেন, ইডেন ও বদরুন্নেসা কলেজের ঘটনা দেখে মনে হচ্ছে আমরা আইয়ামে জাহিলিয়াতের চেয়েও খারাপ যুগে বাস করছি। নারীদের সম্ভ্রম নিয়ে যা ঘটেছে, তা একটি সভ্য জাতির জন্য কলঙ্কজনক। এসব ঘটনা নারী শিক্ষার অগ্রগতিকে ব্যাহত করবে বলেও শিক্ষকরা মন্তব্য করেন। রাজধানীর সরকারি ইডেন ও বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ ছাত্রী নিপীড়ন-নির্যাতনসহ দেশব্যাপী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নির্যাতন ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের শিক্ষকরা অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে মানববন্ধন কর্মসূচি পালনকালে এসব কথা বলেন। একই ইস্যুতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলও পৃথক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নেতারা আরও বলেন, ছাত্রলীগের হত্যা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
এদিকে ছাত্রদলের পৃথক মানববন্ধন কর্মসূচিতে বিএনপি নেতারা বলেছেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই দেশের শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রী নির্যাতন ও অশান্তি বেড়ে যায়। মহাজোট সরকারের ১৪ মাসে দেশের প্রত্যেকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চরম অশান্তি ও কারাগারে পরিণত হয়েছে। সর্বশেষ অনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে ১২ মার্চ ইডেন মহিলা কলেজ এবং আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ঢাকা কলেজে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষ এর প্রমাণ। বিএনপি নেতারা বলেন, স্পিকার নিরপেক্ষ নন। আওয়ামী লীগের অঙ্গুলি নির্দেশে সংসদ চলছে। এসব বিষয়ে কথা বলতে সংসদে ফ্লোর চাইলে স্পিকার সংসদ সদস্যদের ধমক দিয়ে বসিয়ে দেন। এভাবে সংসদে এবং সংসদের বাইরে দাবিয়ে রেখে গণআন্দোলন বন্ধ করা যাবে না।
গতকাল সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২ পর্যন্ত জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে ছাত্রদল। ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সভাপতিত্বে কর্মসূচিতে অংশ নেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, বিরোধী দলের চিফ হুইপ জয়নাল আবদিন ফারুক, বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি এমপি, ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলিম, সিনিয়র সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলাম বাবুল, আমিরুজ্জামন শিমুল, আনিসুর রহমান খোকনসহ কয়েকশ’ নেতাকর্মী।
মানববন্ধন-উত্তর সংক্ষিপ্ত সমাবেশে আমানউল্লাহ আমান বলেন, যখনই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে তখনই দেশের শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রী নির্যাতন বেড়ে যায়। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় ছিল তখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছিল। এ ঘটনায় যারা জড়িত ছিল প্রধানমন্ত্রী তাদের বিচার না করে পুরস্কৃত করেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় আজ ইডেন কলেজে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। তিনি এর সঙ্গে জড়িত আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রীদের নাম প্রকাশ ও প্রকাশ্যে শাস্তির দাবি জানান। তিনি বলেন, শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হলে শিক্ষাঙ্গন থেকেই সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হবে।
জয়নাল আবদিন ফারুক বলেন, এ সরকার ১৪ মাসে দেশের প্রত্যেকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যে অশান্তি সৃষ্টি করেছে তার প্রমাণ ১২ মার্চ সংঘটিত ইডেন মহিলা কলেজের ঘটনা। আমরা যখন এ বিষয়ে কথা বলার জন্য সংসদে ফ্লোর চেয়েছি তখন স্পিকার আমাদের ধমক দিয়ে বসিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, এই স্পিকার নিরপেক্ষ নন। তিনি আওয়ামী লীগের অঙ্গুলি নির্দেশে সংসদ চালাচ্ছেন। জিয়ার লাশ নিয়ে যখন কথা বলা হয় তখন স্পিকার মুখে হাত দিয়ে বসে বসে শোনেন। আর আমরা যখন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে জনগণের স্বার্থে কথা বলতে চাই তখন মাইক বন্ধ করে দেয়া হয়। এভাবে সংসদে এবং সংসদের বাইরে আমাদের দাবিয়ে রেখে গণআন্দোলন বন্ধ করা যাবে না।
শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের মাধ্যমে ছাত্রলীগের নেত্রীদের যে লজ্জাজনক ঘটনা বেরিয়ে এসেছে তা নিয়ে গোটা জাতি আজ শঙ্কিত। অভিভাবকরা মেয়েদের বিয়ে-শাদী নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। ইডেন ছাত্রীদের চরিত্র হননের সঙ্গে জড়িত আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রীদের শাস্তি দাবি করে এ্যানি বলেন, ছাত্রলীগ আজ সারাদেশের ছাত্র রাজনীতিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আর এর মদত দিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ এমপি-মন্ত্রীরা। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
এদিকে গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে একটা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী সাদা দলের শিক্ষকরা মানববন্ধন করেন।
কর্মসূচিতে অংশ নেন সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক সদরুল আমিন, সাবেক প্রো-ভিসি অধ্যাপক আফম ইউসুফ হায়দার, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক তাজমেরী এসএ ইসলাম, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক আবুল হাসনাত, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন অধ্যাপক শাহিদা রফিক, ফার্মাসি অনুষদের ডিন অধ্যাপক আবদুর রশিদ, রোকেয়া হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক লায়লা নূর ইসলাম, ফজলুল হক মুসলিম হলের সাবেক প্রভোস্ট অধ্যাপক মোজাম্মেল হক, অধ্যাপক খলিলুর রহমান, সমাজকল্যাণ গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক তাহমিনা আখতার, শিক্ষক সমিতির সদস্য সহযোগী অধ্যাপক লুত্ফুর রহমান, অধ্যাপক হোসনে আরা বেগম, অধ্যাপক মামুন আহমেদ, অধ্যাপক খলিলুর রহমান, অধ্যাপক আশরাফুল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক দেবাশীষ পাল, অধ্যাপক আলী আহমেদ, অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান নিজামী, সাবেক সহকারী প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান, সহযোগী অধ্যাপক আতাউর রহমান বিশ্বাস, সহকারী অধ্যাপক নুরুল আমিনসহ শতাধিক শিক্ষক।
মানববন্ধন শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে অধ্যাপক সদরুল আমিন বলেন, সরকারি ইডেন, বদরুন্নেসা ও ঢাকা কলেজসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অরাজকতা চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও লাঞ্ছিত হচ্ছেন। কয়েক দিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের দু’জন শিক্ষক লাঞ্ছিত হয়েছেন। দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্থিতিশীল পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে আমরা এসব ঘটনার প্রতিকার চাই। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের কোথাও ছাত্রদের সহাবস্থান নেই। পরীক্ষার হল থেকে ধরে নিয়েও ছাত্রদের নির্যাতন করা হচ্ছে। সরকারি ইডেন কলেজে যা ঘটেছে তা একটি সভ্য জাতির জন্য কলঙ্ক। জাতি এটা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারে না। এর চেয়ে জঘন্যতম ঘটনা হতে পারে না। যেখানে ছাত্রীদের নিরাপত্তা নেই, সেখানে কীভাবে নারীরা উচ্চশিক্ষা নেবে।
অধ্যাপক আফম ইউসুফ হায়দার বলেন, দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাস, নারী নির্যাতন ভয়াবহ আকারে বেড়ে গেছে। মহান একুশে ফেব্রুয়ারিতে শহীদ মিনার থেকে ফুল দেয়ার পর একজন ছাত্রীকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। তিনি আরও বলেন, গত এক বছরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ওয়ার্ল্ড র্যাংকিংয়ে ৬৯৯ ধাপ পিছিয়েছে। এরকম দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে একই অবস্থা। দেশ কীভাবে চলছে, কারা চালাচ্ছে তা জাতি জানে না। এসব ঘটনার অবসান না হলে দেশ কোথায় যাবে একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন। তিনি বলেন, দেশের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে প্রায়ই বিএসএফ দেশের সাধারণ মানুষকে গুলি করে হত্যা করছে। এ ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য রীতিমতো জাতিকে হতাশ করেছে।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/03/19/23472

No comments:

Post a Comment