Thursday 11 March 2010

যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র বিভাগ : মানবাধিকার প্রতিবেদন ২০০৯বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতা বেড়েছে

কালের কণ্ঠ ঢাকা, শুক্রবার, ২৮ ফাল্গুন ১৪১৬, ২৫ রবিউল আউয়াল ১৪৩১, ১২ মার্চ ২০১০

নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে হত্যাকাণ্ড বেড়েছে ৩ শতাংশ
* সন্ত্রাস নির্মূলে সরকার কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি
* সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন কমেছে
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সহিংসতার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র বিভাগ। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশিত পররাষ্ট্র বিভাগের মানবাধিকার প্রতিবেদন ২০০৯-এ বলা হয়, বর্তমান সরকারের আমলে রাজনৈতিক প্ররোচনায় সহিংসতার হার বেড়েছে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। র‌্যাবের ক্রসফায়ারে আইনবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও বিডিআর বিদ্রোহের পরিপ্রেক্ষিতে আটককৃত বিডিআর জওয়ানদের মৃত্যুর বিষয়ে তদন্তে সরকারের ব্যর্থতার প্রসঙ্গও প্রতিবেদনে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জরুরি সরকারের কবল থেকে মুক্ত হয়ে গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর মানবাধিকার সম্পর্কিত বিষয়গুলোর উন্নতি ঘটে। দুই বছরের সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পর ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে গণতান্ত্রিক সরকার নির্বাচিত হয়। ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে তারা ক্ষমতা গ্রহণ করে।
জরুরি সরকারের দুই বছরে বেসামরিক বিষয়াদিতে সামরিক বাহিনীর কঠোর নিয়ন্ত্রণ ছিল। কিন্তু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় আসার পর তারাও ক্ষমতার অপব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করেছে পররাষ্ট্র বিভাগ। বিশেষ করে জেলহাজতে মৃত্যু, সন্দেহজনকভাবে গ্রেপ্তার ও আটক করা এবং সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে গণতান্ত্রিক সরকারের সময়ে।
প্রতিবেদনের বলা হয়, নিরাপত্তা বাহিনী বিচারবহির্ভূত অনেক হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। পুলিশ, বিডিআর সেনাবাহিনী ও র‌্যাব মাঝেমধ্যেই অমানবিক শক্তি প্রয়োগ করেছে। সরকারের হিসাবেই নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর হাতে হত্যাকাণ্ড অন্তত তিন শতাংশ বেড়েছে। সরকার এসব অপতৎপরতা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারেনি। যদিও সরকারের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা বারবার আশ্বাস দিয়েছেন, এ-জাতীয় ঘটনা আর সহ্য করা হবে না।
বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৯ সালে র‌্যাবের হাতে খুন হয়েছে ৪১ জন। তবে আগের বছর এ সংখ্যা ছিল ৬৮। পুলিশের হেফাজতে নির্যাতনে বেশ কিছু মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। সংবিধানে কোনো ব্যক্তির ওপর নিষ্ঠুর, অমানবিক ও অবমাননাকর আচরণ নিষিদ্ধ থাকলেও সেনবাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশ আটক বা গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে অহরহ এ ধরনের আচরণ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের তুলনায় বর্তমান সরকারের আমলে কারণ ছাড়া আটকের ঘটনা কিছুটা কমেছে। গণগ্রেপ্তারের ঘটনাও তেমন ঘটেনি।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০০৯ সালে সরকার ১৮১৭টি 'উদ্দেশ্যমূলক রাজনৈতিক' মামলা প্রত্যাহার করেছে। এগুলোর বেশির ভাগই ছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে।
সংবিধানে বাকস্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত থাকলেও সরকার কার্যত এসব অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান দেখায়নি বলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র বিভাগ মনে করে। এ সময়ে হিন্দু, খ্রিস্টান ও আহমদিয়াসহ সংখ্যালঘুদের প্রতি সরকারের বৈষম্যমূলক আচরণ তুলনামূলকভাবে কমেছে। তবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার অনেক খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে; যদিও সব ঘটনা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
সরকারির কর্মকর্তাদের দুর্নীতির বিভিন্ন খবর প্রকাশ পেলেও সরকার সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি বলে পররাষ্ট্র বিভাগ মন্তব্য করেছে।

No comments:

Post a Comment