Sunday 18 July 2010

সংবাদ সম্মেলনে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি : ৬ মাসে ৮৪ জন গুপ্তহত্যার শিকার : দেশে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা বিরাজ করছে




স্টাফ রিপোর্টার
সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির কর্মকর্তারা সরকারের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গুপ্তহত্যার পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেছেন, গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৬ মাসে সারাদেশে ৮৪ জন গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছেন। সরকার মানুষের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক জনপ্রিয় ওয়ার্ড কমিশনার চৌধুরী আলমের সন্ধান এখনও পাওয়া যাচ্ছে না।
গতকাল আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে সমিতির কর্মকর্তারা আরও বলেন, গুপ্ত হত্যা, দিনের পর দিন রিমান্ডে নিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের নির্যাতন, আদালতের আশ্রয় নেয়ার পরও গ্রেফতার করে মিথ্যা মামলা দায়ের কোনো গণতান্ত্রিক সভ্য সমাজে চলতে পারে না। এগুলো করে সরকার দেশকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে দলীয় কর্মীর মতো ব্যবহার করে বিরোধী রাজনৈতিক দলকে নির্মূলের চেষ্টার এক খারাপ নজির স্থাপন করেছে এ সরকার। সরকারের এ হীন কর্মকাণ্ড গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। সব মিলিয়ে দেশে এক শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা বিরাজ করছে।
সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক, সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা, সমিতির কর্মকর্তা অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জিয়াউল হক, অ্যাডভোকেট নাসরিন আকতার প্রমুখ। অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, সরকারের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বিরোধী রাজনৈতিক মতের নেতাকর্মীদের অটক করে নিচ্ছে। পরে তাদের হত্যা করে লাশ গুম করা হচ্ছে। ঢাকা সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কমিশনার চৌধুরী আলম এখনও নিখোঁজ। দেশে এখন সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় গুপ্ত হত্যা চলছে। গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ৮৪ জন গুপ্ত হত্যার শিকার হয়েছে। অথচ সরকার এ দায়দায়িত্ব স্বীকার করছে না। সুপ্রিমকোর্ট হলো মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল। সরকারের মিথ্যা মামলার শিকার হয়ে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতারা এখানে আইনের আশ্রয় চাইতে এসেছেন। আদালত তাদের গ্রেফতার ও হয়রানি না করার জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু সরকারের নির্দেশে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের গ্রেফতার করে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে যাচ্ছে।
অ্যাডভোকেট মাহবুব হোসেন আরও বলেন, জামায়াতে ইসলামীর আমির, নায়েবে আমির ও সেক্রেটারি জেনারেলসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াই মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও হাস্যকর অভিযোগ এনে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের নামে নির্যাতন করা হচ্ছে। রিমান্ডের ব্যাপারে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। অথচ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এসব নির্দেশনাকে তোয়াক্কাই করছে না। তিনি বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা সত্ত্বেও জামায়াতের দুই নেতাকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে সরকার আদালতের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করেছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশের মানুষ বিচার বিভাগের ওপর থেকে আস্থা হারাবে। মানুষ অন্যায়ের শিকার হয়ে আদালতে আসতেও ভয় পাবে। সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে মানুষের নিরাপত্তা বিধান করা। অথচ সরকারের হাতেই মানুষের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। মানুষের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ, এমন সরকার আইনজীবীরা দেখতে চান না। মানুষের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার যা করছে, এটা কোনো অবস্থায়ই আইনের শাসন বলা যায় না। দেশের সর্বপর্যায়ে সর্বক্ষেত্রে এক শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা বিরাজ করছে। জনগণ নিজেদের প্রয়োজনেই সরকারের অগণতান্ত্রিক ও অমানবিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবে।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/07/19/35298

No comments:

Post a Comment