Tuesday 6 April 2010

দ্রুত বিচার আইনের মেয়াদ ২ বছর বাড়ল

সমকাল প্রতিবেদক | মঙ্গলবার | ৬ এপ্রিল ২০১০ | ২৩ চৈত্র ১৪১৬ | ২০ রবিউস সানি ১৪৩১

চাঞ্চল্যকর ও স্পর্শকাতর মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য বিগত বিএনপি জোট সরকারের আমলে প্রণীত দ্রুত বিচার আইনের মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। গতকাল সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এই আইনের মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। তবে এখন এটা অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হবে। জাতীয় সংসদের আগামী অধিবেশনে এ অধ্যাদেশটি আইনে রূপান্তরের জন্য উত্থাপন করা হবে।
আইনটির সর্বশেষ মেয়াদ ছিল আগামী ৯ এপ্রিল পর্যন্ত। কিন্তু বর্তমানে এই আইনের অধীনে বিচারাধীন ২ হাজার ৫৯৮টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে বিচারাধীন ১৭৪১ এবং তদন্তাধীন ৮৫৭টি। সরকার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আইনটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে মামলাগুলোর বিচারকার্য নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেবে। এই দিক বিবেচনা করে সরকার আইনটির মেয়াদ বাড়িয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিরোধী দল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ সমকালকে বলেন, মূলত রাজনৈতিক অসৎ উদ্দেশ্যে এই আইনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। বিরোধী দলকে নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবে এই আইনটি ব্যবহার করা হবে বলে তিনি আশঙ্কা ব্যক্ত করেন। তিনি আরও বলেন, বিগত জোট সরকারের আমলে যখন এই আইনটি করা হয়, তখন আওয়ামী লীগ এটিকে
কালো আইন বলে প্রত্যাখ্যান করেছিল। তবে বিরোধী দলের এ অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে সরকার। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল
ইসলাম গতকাল সমকালকে বলেন, এ রকম আশঙ্কার কোনো কারণ নেই। বিরোধী দলকে আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, এই আইনের কোনো অপপ্রয়োগ হবে না। মূলত অনিষ্পন্ন মামলাগুলো নিষ্পত্তির জন্যই মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। তাছাড়া স্পর্শকাতর ও চাঞ্চল্যকর মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া জরুরি। এতে করে অপরাধীরা শিক্ষা নিতে পারবে। অপরাধের পরিমাণ কমে আসবে।
গত ২০০২ সালে বিএনপি জামায়াত জোট সরকার চাঞ্চল্যকর মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্য নিয়ে দ্রুত বিচার আইন প্রণয়ন করে। সেই সময় থেকে বিশেষ করে চাঁদাবাজি, রাহাজানি, ভয়ভীতি ও ত্রাস সৃষ্টিকারী, টেন্ডারে বাধাদানের চাঞ্চল্যকর ও স্পর্শকাতর ঘটনাগুলোর বিচার এই আইনে করা হয়। আইন অনুযায়ী সরকার গেজেটের মাধ্যমে প্রত্যেক জেলায় এবং মেট্রোপলিটন এলাকায় এক বা একাধিক দ্রুত বিচার আদালত গঠন করে এসব অপরাধের বিচার করে। আইনানুযায়ী এসব অপরাধ তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় সাব-ইন্সপেক্টর পদের একজন কর্মকর্তাকে। এসব অপরাধ থানায় অভিযোগ আকারে দায়েরের পর তিনি সর্বোচ্চ ৭ দিনের মধ্যে চার্জশিট দাখিল করেন। পরে দ্রুত বিচার আদালতের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৪৫ দিনের মধ্যে এসব অপরাধের বিচারকার্য সম্পন্ন করা হয়।
এই আইন মোতাবেক কোনো ব্যক্তি আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ করলে নূ্যনতম ২ বছর ও সর্বোচ্চ ৫ বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং তদুপরি অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হন। এমনকি কেউ আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নে কাউকে সহযোগিতা করলে তিনিও একই সাজা ভোগ করেন। প্রথমে এই আইন ২ বছর মেয়াদে করা হয়। অর্থাৎ এই আইনের মেয়াদ ছিল ২০০৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত। পরে গত ২০০৪ সালে আবার ২ বছরের জন্য আইনটির মেয়াদ বৃদ্ধি করে। এভাবে তিন দফা ২ বছর করে মেয়াদ বৃদ্ধি করে আইনটির সর্বশেষ মেয়াদ ছিল আগামী ৯ এপ্রিল পর্যন্ত। কিন্তু বর্তমানে এই আইনের অধীনে বিচারাধীন ২ হাজার ৫৯৮টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে বিচারাধীন মামলা ১ হাজার ৭৪১ এবং তদন্তাধীন মামলা রয়েছে ৮৫৭টি। আইনটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে মামলাগুলোর বিচারকার্য নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেবে। এই দিক বিবেচনা করে আইনটির মেয়াদ বাড়ানো হলো বলে জানিয়েছে সরকার পক্ষ।
মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব জানান, বৈঠকে বঙ্গবন্ধু ক্রীড়াসেবী কল্যাণ ফাউন্ডেশন আইন-২০১০ অনুমোদন করা হয়েছে। ১৯৭৫ সালে এ আইনটি প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ওই বছরের ২৮ জুলাই একটি খসড়া আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তা অনুমোদন দেন। পাশাপাশি ৭ লাখ টাকাও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর ওই আইনটি আর চূড়ান্ত হয়নি। তিনি জানান, ১৯৮৪ সালে গঠিত ক্রীড়াবিদ কল্যাণ ট্রাস্টের সব সম্পত্তি বঙ্গবন্ধু ক্রীড়াসেবী কল্যাণ ফাউন্ডেশনে আত্মীকরণ করা হবে। এছাড়া বৈঠকে বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইন-২০১০ অনুমোদন এবং বাংলাদেশ পর্যটন সংরক্ষিত এলাকা ও বিশেষ পর্যটন অঞ্চল আইন-২০১০-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

No comments:

Post a Comment