Thursday 1 April 2010

৩ মাসে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে নিহত ২৪, রাজনৈতিক সহিংসতায় ৫২

Manobzamin | Friday, 02 April 2010

স্টাফ রিপোর্টার: জানুয়ারি থেকে মার্চ। এই তিন মাসে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে ২৪ জন নিহত হয়েছেন| নিহতদের মধ্যে র‌্যাব কর্তৃক ১২ জন, পুলিশ কর্তৃক ৯ জন এবং র‌্যাব-পুলিশের যৌথ অভিযানে ৩ জন নিহত হয়েছে বলে মানবাধিকার সংগঠন অধিকার জানিয়েছে। অধিকারের এক প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ৫ জন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হেফাজতে থাকাকালে মারা গেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। নিহত ২৪ জনের মধ্যে ২০ জনই ক্রসফায়ার, এনকাউন্টার বা বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছেন। এক জন র‌্যাব ও তিন জন পুলিশের নির্যাতনে নিহত হয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

নিহত ২৪ জনের মধ্যে দু’জন পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি (লাল পতাকা)-র সদস্য, একজন গণমুক্তিফৌজের সদস্য, এক জন গণবাহিনীর সদস্য, একজন জাসাস নেতা, একজন ইসলামী ছাত্রশিবিরের সদস্য, একজন এ্যাপোলো হাসপাতালের কর্মচারী, দুই জন যুবক, একজন কথিত সন্ত্রাসী, একজন গাড়ি ছিনতাইকারী, ১০ জন কথিত অপরাধী এবং তিনজন কথিত ডাকাত বলে জানা গেছে। অধিকারের ওই প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্ত ও পানি সমস্যা নিয়ে বলা হয়- অন্যান্য বছরের মতোই চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ এই তিন মাসে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। এই তিন মাসে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ২০ জন বাংলাদেশীকে হত্যা করে। এদের মধ্যে ৯ জনকে পিটিয়ে এবং ১১ জনকে গুলি করে হত্যা করে বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া একই সময়ে বিএসএফ-এর হাতে ২৪ জন আহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে ২০ জন গুলিতে আহত এবং ৪ জন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এই সময়কালে ৪ জন বিএসএফ-এর হাতে অপহৃত হয়েছেন। এছাড়া ভারত এর আগে বাংলাদেশের সঙ্গে যে চুক্তি করেছে তা বাস্তবায়ন করেনি। যেমন, ১৯৭৪ সালের মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির ক্ষেত্রে ছিটমহল এবং সীমানা নির্ধারণের প্রশ্নে আজ পর্যন্ত কোন অগ্রগতি অর্জিত হয়নি। ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য প্রাপ্যতার ব্যাপারে বাংলাদেশের অবস্থান এখনও স্বীকৃত হয়নি।

রাজনৈতিক সহিংসতায় মৃত্যু ৫২
অধিকার-এর তথ্য অনুযায়ী জানুয়ারি-মার্চ এই তিন মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় ৫২ জন নিহত এবং ৩৭৪১ জন আহত হয়েছেন। চলতি মাসে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের ১৫৪টি এবং বিএনপি’র ২৭টি ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে ৮ জন নিহত এবং ১৫৮ জন আহত হয়েছেন। অন্যদিকে, বিএনপি’র অভ্যন্তরীণ সংঘাতে ৩২০ জন আহত হয়েছেন।

নারীর প্রতি সহিংসতা
জানুয়ারি-মার্চ এই তিন মাসে নারীর প্রতি সহিংসতা অব্যাহত ছিল। বহু নারী এ সময় ধর্ষণ, যৌতুক, এসিড সন্ত্রাস এবং ইভটিজিংয়ের শিকার হয়েছেন।

চলতি বছরের তিন মাসে মোট ১২২ জন নারী ও মেয়ে শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে ৫৩ জন নারী এবং ৬৯ জন মেয়ে শিশু। ৫৩ জন নারীর মধ্যে ১১ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে এবং ২৬ জন গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ৬৯ জন মেয়ে শিশুর মধ্যে ৫ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে, ২৪ জন গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন এবং ১ জন আত্মহত্যা করেছেন। এদের মধ্যে চুয়াডাঙ্গায় একজন গৃহবধূ এএসআই কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হন, যশোরে এক গৃহবধূ আনসার সদস্য এবং জয়পুরহাটে ৮ বছরের এক শিশু গ্রামপুলিশের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হন।

জানুয়ারি-মার্চ এই তিন মাসে ৬৮ জন নারী যৌতুক সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে ৪৬ জনকে যৌতুকের কারণে হত্যা করা হয়েছে এবং ২০ জন বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ সময়ে ২ জন নারী যৌতুকের কারণে নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন। জানুয়ারি-মার্চ এই তিন মাসে ৪০ জন এসিডদগ্ধ হয়েছেন। এদের মধ্যে ২২ জন নারী, ১৪ জন পুরুষ এবং ৪ জন শিশু। ৪ জন শিশুর মধ্যে ৩ জন মেয়ে শিশু এবং ১ জন ছেলে শিশু।

সাংবাদিকদের ওপর হামলা
জানুয়ারি-মার্চ এই তিন মাসে সাংবাদিকরা বিভিন্ন ভাবে নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। এ সময়ে ৩৮ জন সাংবাদিক আহত, ২৬ জন হুমকির সম্মুখীন এবং ১৭ জন লাঞ্ছিত হয়েছেন। এই সময়ে ৮ জন সাংবাদিকের ওপর এবং একটি সংবাদপত্রের অফিসে হামলা হয়েছে।

জেলহাজতে মৃত্যু
এই সময়কালে ১৮ জন জেলহাজতে এবং ১ জন কোর্ট হেফাজতে মৃত্যুবরণ করেন।

http://www.mzamin.com/index.php?option=com_content&task=view&id=10015&Itemid=83

No comments:

Post a Comment