Friday, 9 December 2011

হায়রে মানবাধিকার!!

শওকত মাহমুদ

দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর দীর্ঘ মুসাবিদায় ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর বিশ্বজনীন মানবাধিকার সনদ গৃহীত হয়। ৬৩ বছর পেরিয়ে গেল। আজ বিশ্ব মানবাধিকার দিবসে দাঁড়িয়ে, কোনো এক ধরনের জীবনবৃত্তে দৃষ্টি না ফেলেই হতাশা এবং আতঙ্কে শুধু এটুকুই বলতে পারি, দু’টি ভৌগোলিক ও রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতার পরেও বাংলাদেশের মানুষ মানবাধিকারের সিকিভাগ স্বাদ পায়নি। এ মুহূর্তের বাংলাদেশ যে প্রায় মানবাধিকার-শূন্য এবং সে জন্য এক বদ্ধজলাশয়ে আমরা একে অপরকে ফাঁকি দিয়ে গিলে-খেয়ে-বাড়তে-চাওয়া ব্যাঙাচিদের মতো টিকে থাকার সংগ্রামে প্রবৃত্ত। সে কথা তো আন্তর্জাতিক সমাজই বলছে। শাসকদের ফ্যাসিবাদী আচরণের জন্য অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতো শীর্ষ মানবাধিকার-সুরক্ষা সংগঠন এই আন্তর্জাতিক আহ্বান জানিয়েছে, যেন বাংলাদেশের কাছে কেউ অস্ত্র বিক্রি না করে। তাদের মতে, এসব অস্ত্র বাংলাদেশের মানুষের মানবাধিকার লঙ্ঘনে ব্যবহৃত হয়। ক্রসফায়ার, গুপ্ত হত্যা, পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু, সীমান্তে নির্বিচারে বাংলাদেশী হত্যা, আদালতে ন্যায্য বিচারের সঙ্কট, মত প্রকাশের স্বাধীনতায় আঘাত, বিরোধী দল ও মতের প্রতি হিংসাত্মক আচরণ, সাংবাদিক-নির্যাতন মানবাধিকারের সব সূচকই সংখ্যা ও আতঙ্কের মাত্রায় রেকর্ডভঙ্গকারী।
ব্রিটেনের সাবেক লর্ড চিফ জাস্টিস এবং বিচারপতি হিসেবে অসম্ভব স্বাধীন এবং মানবাধিকার-বান্ধব বলে পরিচিত ছিলেন এবং ঐতিহাসিক রায়ে সরকারকে নাস্তানাবুদ করেছেন, সেই লর্ড বিংহামের (দি রুল অব ল খ্যাত) একটি কথা উদ্ধৃত না করে পারছি না। তিনি বলছেন, ‘A state which savagely represses or persecutes sections of its people cannot in my view he regarded as observing the rule of law, even if the transport of the persecuted minority to the concentration camp or the compulsory exposure of female children on the mountainside is the subject of detailed laws duly enacted and scrupulously observed.” [P-67, The Rule of Law). অর্থাত্ জনগণের নানা অংশকে যদি একটি রাষ্ট্র নির্মমভাবে নির্যাতিত ও খুন করে, তাকে আইনের শাসন মান্যকারী সরকার বলা যাবে না। যদি সংসদে সব নিয়ম মেনে এমন আইন পাস করা হয়, যার দায়ে কাউকে নিগ্রহের শিকার বানিয়ে পূতিগন্ধময় আতঙ্কজনক বন্দি শিবিরে পাঠানো হয় অথবা বাচ্চা মেয়েদের পাহাড়ে থাকতে বাধ্য করা হয়, তাহলেও সে রাষ্ট্র মানবাধিকারের পরিপন্থী। অর্থটা পরিষ্কার। আইন যদি মানবাধিকার খর্বকারী হয়, তা হলেও চলবে না। আইনকে আইনের মতো হতে হবে। বিখ্যাত দার্শনিক স্পিনোয়ার স্মরণীয় উক্তি হচ্ছে খধ িরং ঃযব সধঃযবসধঃরপং ড়ভ ভত্ববফড়স (আইন হচ্ছে স্বাধিকারের অংক). নািস জার্মানিতে বলা হতো, আইন হচ্ছে জার্মান জাতির অভিপ্রায়ের বহিঃপ্রকাশ এবং জার্মান জাতির অভিপ্রায় হিটলারের মধ্যে বিলীন। ধরা যাক, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক দুটি আইনের কথা। পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধন আইনটি পাস হলো স্রেফ প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তে। ওই সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির গরিষ্ঠরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা রাখার পক্ষে মত দিয়েছিলেন। যেসব গুণী ব্যক্তি, আইনবিদ ও সুশীল ব্যক্তি সংসদে মত দিতে গিয়েছিলেন, তারাও এর পক্ষে। কিন্তু সব নাকচ করলেন প্রধানমন্ত্রী। আর বিরোধী দল বা জনগণের মতামত নেয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা বাদই দিলাম। যেই সংবিধান সংশোধনীর প্রতি জাতির সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সমর্থন নেই, সংসদে পাস হয়ে গেলেই তা মেনে নিতে হবে? আবার ওই সংশোধনীর সমালোচনা করলেই রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ—এও কি এই সভ্য দুনিয়ায় সম্ভব? ঢাকা শহরকে ভাগ করার আরেকটি আইন পাস হলো মাত্র চার মিনিটে। প্রধানমন্ত্রী এবং হাতে গোনা কয়েক মন্ত্রী ও এমপি এর পক্ষে কথা বলেন। বাকিরা কেউ না। এই আইনও মানতে হবে? আজকের দুনিয়ায় বিশেষ করে ১৯৫০ সালে গৃহীত ইউরোপীয় মানবাধিকার সনদের রক্ষক ইউরোপীয় ইউনিয়ন অব্যাহতভাবে বলে আসছে যে গণতন্ত্রায়ণ, আইনের শাসন, মানবাধিকারের প্রতি সম্মান এবং সুশাসন পরস্পর অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।
মানবাধিকারের ধারণা : দুঃখজনক হলেও সত্য, মানবাধিকার সম্পর্কে আমাদের ধারণা স্পষ্ট নয়। এর উত্পত্তি এবং বিকাশ সম্পর্কেও যথেষ্ট ওয়াকিবহাল নই। মৌলিক অধিকারকে মানবাধিকার মনে করি অথচ মানবাধিকারের ব্যাপ্তি মৌলিক অধিকারের চেয়ে বেশি। যেমন—ভোটের অধিকার নাগরিকের মৌলিক অধিকার। কিন্তু একজন ব্যক্তির চিকিত্সা লাভের অধিকার মানবাধিকার, তিনি যে দেশের হাসপাতালেই যান না কেন। মানবাধিকারের ধারণাটি অনেক খোলামুখ। নতুন নতুন বিষয়সংক্রান্ত অধিকার, এমনকি জন্তুরও অধিকার, ক্রমে ক্রমে মানবাধিকারের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
মানবাধিকার বিষয়ে আমাদের ভাবনার দিগন্ত সময়ে সময়ে দুই দিকেই প্রসারিত হয়েছে—কাদের জন্য অধিকার এবং কোন্ কোন্ বিষয়ে অধিকার। দুই দিন আগে আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন সমকামীদের অধিকারকে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃতি দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, তাদের বৈদেশিক সাহায্যনির্ভর করবে সাহায্যগ্রহীতার সমকামী নাগরিকদের অধিকার-অনধিকারের ওপর। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থানের সঙ্গে অনেকেই সহমত নন।
মূলত ন্যাচারাল ল’ বা স্বাভাবিক আইনের ধারণা থেকে মানবাধিকারের যাত্রা শুরু। ফরাসিদের অষ্টাদশ শতাব্দীর সেই বিখ্যাত এনসাইক্লোপিডিয়াতে ‘ন্যাচারাল ল’ প্রবন্ধটির রচয়িতা ছিলেন অগ্রণী দার্শনিক দেনিস দিদেরো। তাঁর ব্যাখ্যা মতে, স্বাভাবিক অধিকার হচ্ছে এক ধরনের সর্বজনীন অভিপ্রায়, যা অন্তরালে থেকে আমাদের সামাজিক ভালো-মন্দ, উচিত-অনুচিত প্রভৃতির নির্দেশনা দিচ্ছে সতত। এই সর্বজনীকের নিরিখে আমাদের শিখে নিতে হবে আমি কীভাবে মানুষের মতো হয়ে উঠব, কীভাবে আমি নাগরিক হিসেবে, পিতা হিসেবে, মাতা হিসেবে, ঠিকঠাকভাবে আমার যাপন সাব্যস্ত করব। আমার স্বাভাবিক অধিকারে প্রতিবেশীর বিরূপ হওয়ার অথবা প্রতিবেশীর স্বাভাবিক অধিকারে আমারও বিপন্ন হওয়ার কিছু নেই। এই যে অন্য কারও ক্ষতি না হওয়া, এটাই স্বাভাবিক অধিকারের সীমা। দিদেরোর উপসংহার হচ্ছে এমন : ১. শুধু ব্যক্তি অভিপ্রায়ের দিকে মগ্ন ব্যক্তি মানবজাতির শত্রু, ২. প্রত্যেক ব্যক্তির জন্যই সর্বজনীন অভিপ্রায় এমন এক মানদণ্ড, যার সাহায্যে অন্যের কাছে আমার প্রত্যাশা এবং আমার কাছে অন্যের আকাঙ্ক্ষা সহজে নির্ণয় করা যায়, ৩. ওই অভিপ্রায়ের আলোকে নিজের সমাজের কাছে একজন ব্যক্তির দায় যেমন নির্ধারণ করা যায়, তেমনি অন্য সমাজের কাছেও নিজের সমাজের দায় নির্ণয় করা সম্ভব, ৪. সর্বজনীন অভিপ্রায়কে মেনে চলাই সব সমাজের মূল ভিত্তি এবং ৫. আইন সবার জন্য, কোনো একক ব্যক্তির জন্য নয়। এর পর সামাজিক চুক্তির চিন্তা প্রসঙ্গে জন লকের মতো দার্শনিকরা মানবাধিকার নিয়ে ভেবেছিলেন। তিনিও স্বাভাবিক আইনের ভিত্তিতে স্বাভাবিক অধিকারের ধারণা দাঁড় করাতে চেয়েছিলেন। আত্মরক্ষার অধিকার, সম্পত্তি রক্ষার অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষার অধিকার—এই তিন অধিকার ছিল লকের চিন্তায় মূল অধিকার। এই চিন্তাধারায় জ্যঁ জ্যাক রুশো মানবাধিকারকে সর্বজনীন করার ক্ষেত্রে আরও এগিয়ে যান। অধিকারসংক্রান্ত চিন্তার বিবর্তনে আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধও এক জরুরি পর্ব। ১৭৭৬ সালে টমাস জেফারসনের ঘোষণা মোতাবেক সব মানুষের সমানাধিকারের কথাটা খুব স্পষ্ট করে উচ্চারিত হয়েছিল। তাতে বলা হয়, ‘এই সত্য স্বতঃপ্রকাশ বলে আমরা গ্রহণ করি যে, সব মানুষই সৃষ্টিলগ্নে সমান এবং সৃষ্টিকর্তার হাত থেকেই তারা কিছু অপরিত্যাজ্য অধিকার অর্জন করেছে, এসব অধিকারের মধ্যে আছে জীবন, স্বাধীনতা ও সুখের সন্ধানের অধিকার।’ সম্পত্তির অধিকারের জায়গায় এলো সুখের সন্ধানের অধিকার। ১৭৮৯ সালে ফরাসিদের মানবাধিকার ও নাগরিক অধিকারের ঘোষণা মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার পক্ষে বিরাট অগ্রগতি। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের বিভীষিকার পর ১৯৪৮ সালের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বিশ্বজনীন মানবাধিকার সনদ গৃহীত হলো।
তথ্য অধিকার : তথ্যের অধিকার কি মানবাধিকারের পর্যায়ে পড়ে কি না, শুরুতে এ নিয়ে অস্পষ্টতা থাকলেও ফরাসি ঘোষণার পর সে বিভ্রান্তি কেটে যায়। এই ঘোষণার ১৭টি অনুচ্ছেদের ১১-তে বলা হয়েছে, ‘চিন্তা ও মতামতের অবাধ প্রবাহ মানুষের এক মহার্ঘ অধিকার। অতএব প্রত্যেক নাগরিকের বলা, লেখা ও ছাপানোর অবাধ স্বাধীনতা রয়েছে, তবে প্রচলিত আইন অনুসারে এ স্বাধীনতার অপব্যবহারের জন্য দায়িত্বও সেই নাগরিককে বহন করতে হবে।’ জাতিসংঘ সনদের ১৯ ধারায় আরও একটু এগিয়ে বলা হলো : ‘প্রত্যেকেরই মতামতের ও প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার আছে; এই অধিকারের মধ্যে আছে বিনা বাধায় মতামত পোষণ করা এবং কোনো সীমানা নিরপেক্ষভাবে যেকোনো মাধ্যমে তথ্য ও চিন্তা সন্ধান করা, পাওয়া এবং অন্যের কাছে পৌঁছে দেয়ার অধিকার।’ বাংলাদেশের সব সরকার অল্পবিস্তর এ সনদ এর আগে লঙ্ঘন করেছে। অথচ এসব সনদে স্বাক্ষরকারী প্রতিটি দেশের আইনের সমান শক্তি সনদেরও। বর্তমান মহাজোট সরকার সরাসরি মিডিয়া বন্ধ করে দিয়ে, অসাংবিধানিক নীতিমালা চাপিয়ে, সাংবাদিকদের মেরে ও জেলে পুরে, টিভির টকশো ও সরকারি বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণ করে যে মাত্রায় মিডিয়া ও লেখক সমাজকে আপদমস্তকে চেপে ধরেছে, তার নিষ্কৃতি কোথায়? মানবাধিকার ও সেই প্রসঙ্গে তথ্যের অধিকার এ জন্যই জরুরি যে আমরা নির্বাচিতের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর ভেবেছিলাম এসব দিয়ে আমরা এক সমৃদ্ধ মানবিক জীবনযাপনের অনুকূল সমাজ ব্যবস্থায় যাব। উন্নয়ন হবে অধিকারভিত্তিক বা ভত্ববফড়স ড়ত্রবহঃবফ. হয়েছে উল্টোটা। তথ্য বা অতথ্যের আড়ালে জ্ঞানই হারিয়ে যাচ্ছে।
মানবাধিকারের স্তম্ভ : সাংবাদিক হিসেবে শুধু আত্ম-অধিকারের ঘাটতি নিয়ে কথা বলা শোভনীয় নয়। বড়দাগে মানবাধিকারের স্তম্ভ হচ্ছে— জীবনের প্রতি অধিকার, নির্যাতন নিষিদ্ধকরণ, ব্যক্তিস্বাধীনতা ও নিরাপত্তার অধিকার, ন্যায্য বিচার প্রাপ্তির অধিকার, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও পারিবারিক জীবনযাপনের অধিকার, চিন্তা, বিবেক ও ধর্মীয় স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং সমাবেশ ও সংঘের অধিকার।
ক্রসফায়ার বা গুপ্ত হত্যায় যে প্রায়ই লোক মরছে, তাদের কি জীবনের প্রতি অধিকার ছিল না? সেসবের তদন্ত করতে গিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক নারী কর্মকর্তাকে এই আমলে বিপদে পড়তে হয়েছিল। হাইকোর্টের যে বেঞ্চ ক্রসফায়ারের জন্য রুলনিশি জারি করেছিল, সেই বেঞ্চকেই ভেঙে দেয়া হয়। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি উপরোল্লিখিত প্রতিটি বিষয়ের জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সনদগুলোয় অনুস্বাক্ষর দিয়েছে। সেসব মানতে রাষ্ট্র বাধ্য। অথচ আমরা এ নিয়ে সোচ্চার হই না। জাতিসংঘের দ্বারস্থ হই না। ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতে এক ফিলিপিনি-ইউরোপীয় নাগরিক ফিলিপিনো সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকেছিল। সে সময় ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্টের হল্যান্ড সফরের কথা। আদালত ওই অতিথির জন্য আপস সমন জারি করে বললেন, ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট বেড়াতে এলে যেন আদালতে ঘুরে যান। ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট তার ইউরোপ সফরই বাতিল করে দিলেন। বাংলাদেশের ভেতরে ও বাইরে আন্তর্জাতিকমনা ব্যক্তিত্ব বা মেধা আছে, যারা একটু সোচ্ছার হলেই বাংলাদেশ-পরিচালকদের ঘাম ছুটে যেতে পারে। মানবাধিকারের স্তম্ভগুলো যে প্রতিদিন এই দেশে ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে, সে ব্যাপারে আমরা সোচ্চার হই না। শুধু বিরোধী দলের দায়িত্ব এসব নিয়ে বলা। কারণ তারা ভুক্তভোগী। তাদের কথা শুনতে অভিজন সমাজের বেসুরো লাগে। আবার বিরোধী দলটি কে, সে প্রশ্নও ওঠে। আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকলে দেশীয় মানবাধিকার সংগঠনগুলো কী চিত্কারই না করে। গণগ্রেফতারের ঘটনায় সুশীল সমাজ ‘রে রে’ করে তেড়ে ওঠে। কিন্তু বিএনপির ক্ষেত্রে তার সিকি ভাগও ঘটে না। বিএনপি নেতা তারেক রহমানের প্রতি নিরাপত্তাবাহিনীর অমানুষিক নির্যাতনকে আজকের প্রধানমন্ত্রী সংসদীয় বক্তৃতায় হাস্যরসের সঙ্গে উল্লেখ করেন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যে তাঁর বাড়ির মামলায় আপিল বিভাগে ন্যায্য বিচার (একতরফা শুনানির জন্য পাননি, সে সম্পর্কে সুশীল সমাজ বা মানবাধিকারপ্রেমীরা মুখ খোলেন না), যুদ্ধাপরাধ তথা মানবতাবিরোধী ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তোলা হলেই আক্রমণ শুরু হয়ে যায়। সুপ্রিমকোর্টের অ্যাডভোকেট এম ইউ আহমেদকে বিনা অভিযোগে ডিবি পুলিশ ধরে নিয়ে চার ঘণ্টার নির্যাতনে মেরে ফেলেছে বলে যে অভিযোগটি জাতির সামনে উলঙ্গ হয়েছিল, সে সম্পর্কে তো কোনো বিচারপতি সুয়োমোটো রুল জারি করে ডিবি পুলিশকে কাঠগড়ায় দাঁড় করায়নি। অথচ হাসপাতালে মৃত্যু বা চিকিত্সাহীনতার জন্য কোম্পানির পরিচালকমণ্ডলীকে আদালতে তলব করা হয়েছে। মানবাধিকার কমিশনকেও দেখিনি স্বইচ্ছায় তদন্ত করতে। আসলে রাজনীতির পক্ষ-বিপক্ষের তাড়না থেকে মানবাধিকারের প্রয়োগ দানবাধিকারকেই বোঝায়। তাই আসুন সবাই মিলে রাষ্ট্রের নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হই, মানুষের অধিকারকে সম্মান করতে শিখি এবং এই ভাবনায় জেগে উঠি যে কোনো নিরপরাধ মানুষ যেন শাস্তি না পায়। বিনা বিচারে কেউ যেন কারাভোগ না করে, আদালতগুলো সাহসের সঙ্গে নিরপেক্ষ বিচার করুক, ভিন্নমতের জন্য কারও শাস্তি না হয়, প্রত্যেক মানুষ, সংঘ বা দল সমাবেশের অধিকার ভোগ করে, মিডিয়া সরকারের আঁচড়মুক্ত থাকবে এবং কোনো আইন যেন মানুষের অধিকারকে সামান্যতমও খর্ব করতে না পারে। আমি আশাবাদী যে বাংলাদেশ একদিন মানবিক রাষ্ট্র হবেই, তবে মহাজোট সরকার আমাদের অনেকখানি পিছিয়ে নিয়ে গেছে। ইউরোপের আলোক বর্ষের পেছনে আমরা এখনও। তাদের অতীতটা আমাদের বর্তমান। অথচ গণতান্ত্রিকতায় এক সময় আমরা ছিলাম এগিয়ে। ইউরোপের মানুষ যখন পাথরের বাসনে চাকু দিয়ে গোশত কেটে খেত, তখন আমরা কলাপাতা ছেড়ে বাসনে খাওয়া শিখে ফেলেছি।

Wednesday, 23 November 2011

অধিকার-এর সম্মেলনে মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান : এখন গুম করে বিচার বহির্ভূত হত্যা চলছে : অবশ্যই পোশাক পরে গ্রেফতার করতে হবে


বিশেষ প্রতিনিধি

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যার ক্ষেত্রে এখন কৌশল বদলানো হয়েছে। আগে ক্রসফায়ার বলা হতো, এখন নাগরিকদের তুলে নিয়ে গুম করা হচ্ছে। যাকে গুম করা হয়, তার হদিস পাওয়া যায় না। এমনকি পরিবার লাশের খোঁজও পায় না।
মানবাধিকার সংগঠন অধিকার-এর উদ্যোগে মানবাধিকার কর্মীদের দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
অধিকার-এর সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট আদিলুর রহমান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সফররত সিনিয়র গবেষক আব্বাস ফয়েজ, আয়ারল্যান্ডভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ফ্রন্টলাইন ডিফেন্ডারের সফররত এশিয়াবিষয়ক কো-অর্ডিনেটর পকপং লাওয়াসিরি। উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট কবি ও বুদ্ধিজীবী অধিকার-এর উপদেষ্টা ফরহাদ মজহার।
ড. মিজানুর রহমান বলেন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে অনেক লোক এসে নালিশ করেন—কারও স্বামী, কারও ভাই, কারও বাবা, কারও ছেলেকে সাদা পোশাকধারী লোকেরা ধরে নিয়ে যাওয়ার পর গুম করা হয়েছে, কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তখন মানবাধিকার কমিশন র্যাব-পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও শুধু বলা হয়, দেখছি স্যার। এর বেশি কিছু করারও থাকে না। তিনি পুলিশের ইউনিফরম ছাড়া গ্রেফতার বা আটক অভিযান বন্ধের জন্য সরকারের কাছে মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে দাবি জানান। তিনি বলেন, গ্রেফতার অভিযান কখনও সাদা পোশাকে হওয়া উচিত নয়। ইউনিফরম লাগিয়ে পুলিশের পোশাকে আটক বা গ্রেফতার অভিযান চালাতে হবে।
ড. মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের ক্রিমিনাল জাস্টিসের ব্যর্থতার কারণেই সাধারণত প্রথম দিকে ক্রসফায়ারকে মানুষ সমর্থন দিত এবং কারও ক্রসফায়ার হলে অনেকেই খুশি হতো। অপরাধীরা জামিনে বের হয়ে এসে অথবা বিচারে খালাস পেয়ে দ্বিগুণ উদ্যোগে অপরাধ করত। প্রথম দিকে ক্রসফায়ারকে অনেকেই ভালো বলে মন্তব্য করেছে। কিন্তু বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কখনও ভালো হতে পারে না। এটা সবারই মনে রাখতে হবে, অন্যের ঘরে আগুন লাগলে চুপ করে বসে থাকা উচিত নয়, সে আগুন নিজের ঘরেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। ক্রসফায়ারও এখন সেই রূপ ধারণ করেছে। তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় বর্তমান সরকারের প্রতিশ্রুতি ছিল ক্রসফায়ারের বিষয়ে জিরো টলারেন্স দেখানো হবে। নির্বাচনের পরও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ওয়াদা করেছিলেন, ক্রসফায়ারে জিরো টলারেন্স দেখানো হবে; কিন্তু সেই ওয়াদা সরকার রক্ষা করেনি। তিনি বলেন, একসময় অপরাধীদের ধরে এনে ডিটেনশন দেয়া হতো। এখন আর ডিটেনশন দেয়া হয় না, একেবারে পরপারে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, শুধু সরকারি পর্যায়ে নয়—বেসরকারি পর্যায়ে এমনকি ব্যক্তিগত পর্যায়েও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোনো না কোনো ব্যবসায়ী গ্রুপের উদ্যোগে সাধারণ মানুষের ভূমি দখল করে বা বিক্রি করতে বাধ্য করে আবাসিক প্রকল্প গড়ে তোলা হচ্ছে। এটাও মানবাধিকারের লঙ্ঘন। এই সংঘবদ্ধ চক্রটি হচ্ছে কালোটাকার মালিক। তারা টাকার বিনিময়ে সমাজের প্রভাবশালীদের কিনে নেয়। রাষ্ট্র যদি প্রশ্রয় না দিত, তারা এত সুচারুভাবে মানুষের জমি দখল বা বিক্রিতে বাধ্য করে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সুযোগ পেত না।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের আব্বাস ফয়েজ বলেন, বাংলাদেশে সরকারি বিভিন্ন এজেন্সি ও পুলিশ মানুষের অধিকার রক্ষায় কাজ করে না। সরকার নাগরিকদের অধিকার রক্ষায় সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে। পুলিশ ও র্যাবের মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রসঙ্গে তিনি লিমনের ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, প্রথম দিকে বলা হলো ক্রসফায়ারে লিমনের পায়ে গুলি আঘাত করেছে। পরে আবার বলা হলো লিমন একজন চিহ্নিত অপরাধী। তার বিরুদ্ধে একপর্যায়ে অস্ত্র মামলা দেয়া হলো। সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের সদস্য হিসেবে আরেকটি মামলা দেয়া হয় লিমনের বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, এ বিষয়ে তদন্তের জন্য সরকার একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল। এই কমিটির রিপোর্ট আজও কেউ দেখতে পায়নি। তিনি বলেন, লিমনের বিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আমাদের দেখানো হোক। সরকারের ভাষ্য সঠিক হয়ে থাকলে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির রিপোর্ট গোপন করা হলো কেন?
উদ্বোধনী বক্তব্যে ফরহাদ মজহার বলেন, আমাদের আগে ব্যক্তির মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ব্যক্তির মানবাধিকার নিশ্চিত হলেই সমাজে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার কথা চিন্তা করা যায়।

মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় সরকার চরম ব্যর্থ : অ্যামনেস্টি


স্টাফ রিপোর্টার

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কর্মসূচির দক্ষিণ এশিয়া প্রধান আব্বাস ফয়েজ বলেছেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার রক্ষায় বাংলাদেশ সরকার চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। পরিস্থিতি এত ভয়াবহ যে, এখানে আজ মানবাধিকার কর্মীদেরও মানবাধিকার রক্ষা হচ্ছে না।
সাতক্ষীরায় সন্ত্রাসীদের হাতে শম্পা গোস্বামী নামের এক মানবাধিকার কর্মী লাঞ্ছনার ঘটনা তদন্তে বাংলাদেশে এসে গতকাল সাংবাদিকদের কাছে তিনি এমনই মন্তব্য করেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবে অধিকার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি শম্পা লাঞ্ছনার ঘটনায় দায়ের করা মামলা তদন্তে পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, একজন মানবাধিকার কর্মী সন্ত্রাসীদের হাতে লাঞ্ছিত হলেও স্থানীয় প্রশাসন প্রথমে মামলাটি নিতে রাজি হয়নি। পরে মামলাটি রেকর্ড করলেও এ মামলার আসামিরা শম্পা গোস্বামীকে হুমকি দিচ্ছে। এমনকি তিনি যে স্কুলে চাকরি করেন সেখানেও তাকে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। তাকে চাকরিচ্যুত করার চেষ্টা হচ্ছে। চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তিনি।
আব্বাস ফয়েজ বলেন, শম্পা লাঞ্ছনার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে সরকার কী ব্যবস্থা নিচ্ছে, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও অধিকার তা মনিটরিং করবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সরকারগুলো মানবাধিকার রক্ষার কথা মুখে বললেও বাস্তবায়ন করে না। সাতক্ষীরা, খুলনা ও যশোর অঞ্চলে সাংবাদিক শামছুর রহমান, হুমায়ুন কবীর বালু, মানিক সাহা, স ম আলাউদ্দিন, হারুন-অর-রশিদসহ বেশ কয়েকজন সাংবাদিক খুন হয়েছেন। অসংখ্য সাংবাদিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। সন্ত্রাসী-গডফাদাররা এসব সাংবাদিক নির্যাতন ও হত্যার সঙ্গে জড়িত। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো সরকারই সাংবাদিক হত্যার বিচার করেনি। মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করতে গিয়ে আজ সাতক্ষীরার শম্পা গোস্বামীকে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে অধিকারের প্রেসিডেন্ট প্রফেসর সি আর আবরার, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কর্মসূচির সহকারী টিম মলি নিয়াকস, অধিকারের প্রোগ্রাম অফিসার রুমানা আমান বক্তব্য রাখেন।
ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন তুলে ধরে রুমানা আমান সাংবাদিকদের জানান, খুলনা জেলার পাইকগাছায় গণধর্ষণের শিকার এক মহিলার ঘটনা তদন্তে গিয়ে শম্পা গোস্বামীর সঙ্গে সুশান্ত করের পরিচয় হয়। সুশান্ত নিজেকে একজন বন্ধকি ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দেন। ধর্ষণের ভিকটিম প্রথমে এ ব্যাপারে কথা বলতে অস্বস্তিবোধ করেন। সুশান্তও এ বিষয়টি চেপে যেতে চাপ সৃষ্টি করেন। শম্পা গোস্বামী কারও কথায় কান না দিয়ে আইনের আশ্রয় নেয়ার জন্য ভিকটিমকে পরামর্শ দেন। ভিকটিম শম্পা গোস্বামীর মোবাইল নম্বরটি চেয়ে নেন। এ সময় সুশান্ত করও নম্বরটি টুকে নেন। শম্পা পরে জানতে পারেন, ভিকটিম ধর্ষকদের বিরুদ্ধে পাইকগাছা থানায় মামলা করেছেন। ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত সুশান্ত করের কয়েকজন আত্মীয়কেও আসামি করা হয়। এতে ক্ষিপ্ত হন সুশান্ত। তিনি মামলাটি তুলে নেয়ার জন্য শম্পা গোস্বামীকে চাপ দেন। শম্পা এ বিষয়ে তার কিছুই করার নেই বলে জানান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সুশান্ত তাকে দেখে নেয়ার হুমকি দেন। গত ২৩ অক্টোবর দুপুরে অধিকার থেকে পাঠানো কিছু কাগজপত্র ডিসি অফিসে জমা দিতে যাওয়ার পথে সূচনা বেকারির সামনে প্রথমে ৪-৫ যুবক এসে শম্পা গোস্বামীকে উদ্দেশ করে কুরুচিপূর্ণ কথা বলতে থাকে। এর কয়েক মিনিট পর তাদের সঙ্গে যোগ দেয় সুশান্ত ও সমীর দে। একপর্যায়ে পুলিশি সহায়তা নিতে শম্পা মোবাইল হাতে নিলে এক যুবক এসে ফোনটি ছিনিয়ে নেয় এবং তাকে একটি দোকানের ছাদে নিয়ে যায়। পরে একজন সাংবাদিক এসে তাকে উদ্ধার করেন। বিষয়টি থানাকে অবহিত করা হয়। ২৫ অক্টোবর সাতক্ষীরা সদর থানায় একটি মামলা করেন শম্পা। মামলার অন্যতম আসামি সমীর দে’কে ২৮ অক্টোবর পুলিশ গ্রেফতার করে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সুশান্ত কর ৩০ অক্টোবর শম্পা গোস্বামীকে মোবাইলে ফোন করে জানায়, সমীরের জামিনের ব্যবস্থা না করলে তাকে দেখে নেবে। সে সময় সে ভারত থেকে ফোন করেছে বলে জানায় ।
এ ঘটনার পর শম্পা গোস্বামী যে স্কুলে শিক্ষকতা করেন ওই স্কুল কর্তৃপক্ষ তার পাশে না দাঁড়িয়ে উল্টো চাকরিচ্যুতির হুমকি দেয়। ৩ নভেম্বর স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শাহাদাত হোসেন সভা ডাকেন। সভায় শম্পাকে ডেকে নিয়ে তিরস্কার করেন এবং কেন অধিকারের কাজে শহরে গেলেন, সেজন্য কৈফিয়ত তলব করেন। থানায় মামলা করায় বকাবকি করে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বলেন, সমীর আমার প্রতিবেশী ও রাজনৈতিক দলের কর্মী। আপনি কোন সাহসে তার বিরুদ্ধে মামলা করলেন। তিনি ঘটনা তদন্তে নিজেই একটি কমিটি গঠন করে বলেন, তদন্ত টিম আপনার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পেলে আপনাকে চাকরিচ্যুত করা হবে। এরপর তাকে তিরস্কার করে মিটিং থেকে বের করে দেন। ওইদিনই সমীর দে জামিনে মুক্তি পেয়ে এলাকার বখাটেদের সঙ্গে নিয়ে শম্পার বিরুদ্ধে কুত্সা রটাতে থাকে এবং বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের শম্পার ক্লাস বর্জন করার জন্য উদ্বুদ্ধ করে। ১১ নভেম্বর সমীর দে তার এক বন্ধুর মাধ্যমে মামলা তুলে না নিলে উচিত শিক্ষা দেবে বলে হুমকি দেয়।
প্রফেসর সি আর আবরার সাংবাদিকদের জানান, বর্তমানে শম্পা চরম নিরাপত্তাহীনতার পাশাপাশি চাকরি থেকে বরখাস্তের আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। আবরার শম্পা গোস্বামীর নিরাপত্তা ও লাঞ্ছনাকারীদের বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানান।

Monday, 31 October 2011

বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এখন সঙ্কুচিত



বশীর আহমেদ
বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এখন সঙ্কুচিত। গণমাধ্যম কর্মীরা সরকার ও রাজনৈতিক দলের আক্রমণ এবং বিচার বিভাগের হয়রানির শিকার হচ্ছেন। দুর্নীতির খবর প্রকাশ করায় আমার দেশ পত্রিকা বন্ধ এবং এর সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করে নির্যাতন করা হয়েছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ নানা ধরনের নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে দেশটিতে।
এফআইডিএইচ-ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটসের ২০১১ সালের বার্ষিক রিপোর্টে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির এই ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। রিপোর্টে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে রিমান্ডের নামে চলছে নির্যাতন। শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে।
মানুষের মতপ্রকাশ এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সম্পর্কে রিপোর্টে বলা হয়, বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এখন আরও সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। দুর্নীতি এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ে খবর প্রকাশের জন্য সাংবাদিকদের চরম মূল্য দিতে হচ্ছে। রাজনৈতিক দল ও এর নেতাকর্মীদের আক্রমণ এবং বিচার বিভাগের হয়রানির শিকার হচ্ছেন সাংবাদিকরা। অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হচ্ছে টিভি চ্যানেলগুলোর ওপর।
আমার দেশ পত্রিকা বন্ধ এবং এর সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করে তার ওপর চালানো নির্যাতনের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে রিপোর্টে।
রিপোর্টে বলা হয়, সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সমালোচনা এবং দুর্নীতির বিষয় প্রকাশ করায় আমার দেশ পত্রিকা পুলিশ এবং বিচার বিভাগের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। সরকারের শীর্ষ কর্তাব্যক্তিদের দুর্নীতির খবর প্রকাশ এবং বিডিআর বিদ্রোহের একটি গোপন তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশের কারণে পুলিশ আমার দেশ কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে পত্রিকাটি বন্ধ করে দেয় এবং এর সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে আটক করে। মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ আনে পুলিশ। মাহমুদুর রহমানসহ পত্রিকার ডেপুটি এডিটর সৈয়দ আবদাল আহমদসহ মোট পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগ এনে আরও একটি মামলা করে পুলিশ। এরপর মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র এবং জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ এনে একের পর এক মামলা দেয়া হয়। ১২ দিনের জন্য রিমান্ডে নেয়া হয় মাহমুদুর রহমানকে। এ সময় তার ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়। তাকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন চালানো হয় এবং নির্যাতনের ফলে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।
রিপোর্টে বলা হয়, ২০১০ সালের ১০ জুন রাতে ৫-৬ অজ্ঞাত ব্যক্তি তার সেলে ঢুকে নির্মম নির্যাতন চালায়।
রিপোর্টে বলা হয়, পুলিশ এখন পর্যন্ত মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগের ব্যাপারে কোনো তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে পারেনি। বিচার বিভাগের হয়রানির প্রসঙ্গ তুলে ধরে রিপোর্টে বলা হয়, একই দিনে ঢাকা ও গোপালগঞ্জে হাজিরার দিন ছিল মাহমুদুর রহমানের। একই সময়ে দুই জেলায় হাজিরা দেয়া সম্ভব নয়। এ পরিস্থিতিতে মাহমুদুর রহমানের আইনজীবী গোপালগঞ্জের আদালতে হাজিরার দিন পুনর্নির্ধারণের আবেদন জানান। আদালত ওই আবেদন গ্রহণ না করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
রিপোর্টে আরও বলা হয়, অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসের জালিয়াতির সমালোচনা করে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় সুপ্রিমকোর্ট আদালত অবমাননার অভিযোগে মাহমুদুর রহমানকে সর্বোচ্চ শাস্তি ৬ মাসের কারাদণ্ড এবং ১ লাখ টাকা জরিমানা করেন। এছাড়া রিপোর্টার অলিউল্লাহ নোমানকে এক মাসের কারাদণ্ড দেন। আমার দেশ পত্রিকা বন্ধ এবং সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানিয়ে বিরোধী দল সংসদ থেকে ওয়াকআউট করে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে রিপোর্টে বলা হয়, পুলিশ এবং র্যাব সদস্যরা ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছেন। তাদের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন সাধারণ মানুষ এবং রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। অব্যাহত রয়েছে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। ২০১০ সালে ১২৭ জনকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে। ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে ৩৩ জনকে। এসব বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অধিকাংশই ঘটিয়েছেন র্যাব সদস্যরা। প্রতি তিনদিনে ১টি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটছে বাংলাদেশে।
কোনো ধরনের জবাবদিহি করতে হবে না—এই নিশ্চয়তা পেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে চলেছেন বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
সীমান্তে মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রসঙ্গে রিপোর্টে বলা হয়, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। তারা নিরীহ বাংলাদেশীদের হত্যা এবং অপহরণ করছে, চালাচ্ছে নির্মম নির্যাতন। বিএসএফের এই মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারে উদ্বেগের বিষয়টি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দিল্লি সফরের সময়ে উত্থাপন করেননি বলে রিপোর্টে বলা হয়েছে।
শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশও বাংলাদেশে এখন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে মন্তব্য করে রিপোর্টে বলা হয়, পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন নিশ্চিত করার দাবিতে সভা-সমাবেশ পর্যন্ত ভণ্ডুল করে দিয়েছে পুলিশ। নির্যাতন এবং গ্রেফতার করা হয়েছে পোশাক শ্রমিকদের।
এছাড়া মানবাধিকার কর্মী এবং এনজিও সংগঠকরাও নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নির্যাতিত হচ্ছেন বলে রিপোর্টে বলা হয়েছে। মানবাধিকারসংক্রান্ত অনেক প্রকল্প অনুমোদন করছে না সরকার। মানবাধিকার সংগঠন অধিকার-এর গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প আটকে দিয়েছে সরকার।

মানবাধিকারের বাণী নিভৃতে কাঁদছে



আলাউদ্দিন আরিফ
দেশে মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে বেপরোয়াভাবে। এক্ষেত্রে ভেঙে গেছে অতীতের সব রেকর্ড। মানবিকতা নির্বাসনে। হরহামেশা চলছে নিষ্ঠুরতা আর বর্বরতা। শাসকগোষ্ঠীর আস্কারায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা পদদলিত করছে মানবিক অধিকারকে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের নজির অজস্র। পুলিশ সদর দফতরের রেকর্ড বলছে, দেশে প্রতিদিন গড়ে খুন ১২টি। মানুষের হাতেই লাঞ্ছিত হচ্ছে বনি আদম। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে বাড়ছে উদ্বেগ, আতঙ্ক। হত্যা, অপহরণ, গুম, ক্রসফায়ার, হেফাজতে মৃত্যু, পিটিয়ে হত্যা, নির্যাতন, রাজনৈতিক অধিকার হরণ, পুলিশের বর্বর নির্যাতন, রিমান্ডে নির্যাতন, রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে সরকারবিরোধী নেতাকর্মীদের মামলায় ফাঁসানো আর নিজেদের মামলা প্রত্যাহার, নারীর প্রতি চরম সহিংসতা, ইভটিজিং, সভা-সমাবেশ ও মিছিলে হামলা-গ্রেফতার, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন, দখল, পত্রপত্রিকার কণ্ঠরোধ, পত্রিকা ও টেলিভিশন চ্যানেল বন্ধ করে দেয়া, সম্পাদক ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেফতারসহ মানবাধিকার
লঙ্ঘনের হেন অপরাধ নেই, যা এখন ঘটছে না।
বর্তমান সরকার ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে সংবেদনশীল মামলায় বিরোধী রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতাদের জড়াচ্ছে যথেচ্ছভাবে। রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে হাজির করা হচ্ছে আদালতে। ঠুনকো অজুহাতে গ্রেফতার করে বানোয়াট মামলায় রিমান্ডে নেয়া হচ্ছে। ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, নারী নির্যাতন মামলা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। নাগরিক দুর্ভোগ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এমনই যে, ঘরে বসেও নিরাপদ বোধ করছে না মানুষ।
মানবাধিকার কর্মী ও বিশিষ্টজনদের মতে, ‘মানবাধিকার’ এমন একটি সর্বজনীন বিষয়, যা কোনো দেশের ভৌগোলিক সীমারেখায় আবদ্ধ করা যায় না। মানবাধিকার জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে সব দেশে, সব সমাজে, সবার জন্য সমভাবে প্রযোজ্য। এটি জাত মানে না, ধর্ম চেনে না, দেশ-কাল-পাত্রও চেনে না। এটা বিশ্বের সবার সর্বজনীন একটি সম্পদ।
পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ডের জন্মের পর থেকে প্রায় সব সরকারের সময়েই মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। বর্তমান আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গেই দেশজুড়ে শুরু হয় দখল, চাঁদাবাজি আর রাজনৈতিক সহিংসতা। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম ১৫ দিনেই রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত হয়েছিল ১৫ জন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে তাণ্ডব চালায় ছাত্রলীগ। শুরু হয় হাটবাজার, মাঠঘাট, বিল-বাঁওড় দখলের প্রতিযোগিতা। দখলবাজদের গ্রাসে পড়ে নিরীহ মানুষের জমি, বালিমহাল, কবরস্থান এবং পাবলিক টয়লেটও। পাল্লা দিয়ে চলে টেন্ডারবাজি। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর টেন্ডার নিয়ে রক্তাক্ত লড়াই চলে সরকার সমর্থকদের মধ্যে। এসব লড়াই ছিল ছাত্রলীগের নানা গ্রুপ; ছাত্রলীগ বনাম যুবলীগ অথবা যুবলীগ বনাম স্বেচ্ছাসেবক লীগের মধ্যে।
এই সরকারের অভিষেকের দু’মাসের মাথায় ৫৭ দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারসহ ৭৪ জনকে হত্যার মধ্য দিয়ে ঘটে ‘পিলখানা ট্র্যাজেডি’। বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) জওয়ানদের রিমান্ডে নিয়ে চলে নির্যাতন, প্রকৃত অপরাধীদের অনেকেই থেকে গেছে আড়ালে। জিজ্ঞাসাবাদকালে ২০০৯ সালেই নিহত হয় ৫১ জওয়ান। মহাজোটের শাসনের মাত্র দু’মাসের মাথায় এমন বিভীষিকা দেখে রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহল মন্তব্য করেছিল, ‘আগামী পাঁচ বছর দেশে শনির দশা বিরাজ করবে। কারণ শুরুটাই বলে দেয়, দিনটি কেমন যাবে।’ বাস্তবে ঘটছেও তাই।
২০০৯ সালে ইউনিভার্সাল পিরিওডিক রিভিউয়ের (ইউপিআর) শুনানিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ দেখানোর কথা বলেন। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধের জন্য প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের ডজনখানেক মন্ত্রী, পুলিশের আইজি, র্যাবের ডিজিসহ অনেকেই ঘোষণা দেন। বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। ক্রসফায়ার, এনকাউন্টার, গুলিবিনিময়সহ বিভিন্ন নামে বিচারবহির্ভূত হত্যা চলছেই। মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের রেকর্ডে দেখা গেছে, ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ৩৪৭টি। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার হেফাজতে মারা গেছে ১৭২ জন। চলতি বছরের ৯ মাসে হেফাজতে নিহত হয়েছে ১১৫ জন। এই সময় গুম ও গুপ্তহত্যার শিকার শতাধিক ব্যক্তি। চলতি বছরই ১৭ ব্যক্তিকে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা তুলে নেয়ার পর এখন পর্যন্ত তারা নিখোঁজ।
২০০৯ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত ৫৬৬ জন। আহত হয়েছেন ৪০ হাজার। পুলিশ সদর দফতরের রেকর্ড বলছে, ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত দেশে খুন হয়েছে ১০ হাজার ৭০টি, অর্থাত্ প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১২টি। এর বাইরে রয়েছে ক্রসফায়ার, গুপ্তহত্যা, অপহরণ ও গুম। একই সময়ে দেশে ফৌজদারি অপরাধে মামলা হয়েছে ৩ লাখ ৯৯ হাজার ৯৬১টি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পুলিশ ও সরকারি দল এসব মামলা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও বিরোধী দলকে দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
রাজনৈতিক সহিংসতা, মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের আরেকটি উদাহরণ বিরোধীদের দমন। আন্দোলনে রাস্তায় নামলেই পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার, মোবাইল কোর্ট বসিয়ে তাত্ক্ষণিক শাস্তি, বেধড়ক লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল, ধরে নিয়ে নির্যাতন এবং ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডারদের লেলিয়ে দিয়ে হামলা চালানো হচ্ছে। হরতালে মিছিল করায় গত ৭ জুলাই বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকের ওপর বর্বর হামলা করে পুলিশ। গত ১২ জুনসহ বিভিন্ন সময়ের হরতালে মহিলা নেত্রী নূরে আলম সাফাসহ বয়োজ্যেষ্ঠ কর্মীদের ওপরও হামলা চালানো হয়। ২০১০ সালের ২৭ জুন বিরোধী দলের ডাকা প্রথম হরতালের দিনই মির্জা আব্বাসের বাড়িতে হামলা চালায় র্যাব। ওলামা-মাশায়েখদের হরতালে কাঁচপুর সানারপাড়সহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ও সরকারি দলের ক্যাডারদের নৃশংস হামলা ও তাণ্ডব চলেছে। গত ২২ সেপ্টেম্বর চারদলীয় জোটের ডাকা হরতালের দিন পিকেটার ও ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের কর্মচারী ইউসুফ আলীর বুকে পুলিশ বুটজুতা দিয়ে নির্যাতন চালায়। এই দৃশ্য দেশ-বিদেশে তোলপাড় সৃষ্টি করে।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের আরেকটি উদাহরণ গণপিটুনিতে মৃত্যু। অধিকারের রিপোর্ট থেকে দেখা গেছে, চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে দেশে ১২০ জন গণপিটুনিতে নিহত হয়েছে। গত ২৭ জুলাই নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে ৬ জনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে কিশোর শামসুদ্দীন মিলনকে পুলিশ গাড়ি থেকে নামিয়ে সহিংস জনতার মধ্যে ছেড়ে দেয়। তাদের উপস্থিতিতেই জনতা কিশোরটিকে পিটিয়ে হত্যা করে। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর মিলনের লাশ পুলিশই আবার তাদের গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যায়। গত ১৭ জুলাই রাতে রাজধানীর আমিনবাজারে ডাকাত বানিয়ে গণপিটুনিতে ৬ ছাত্রকে মেরে ফেলা হয়। পুলিশের তদন্তেই তাদের দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ মেলে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এই ভূমিকা আইনের প্রতি মানুষের আস্থাকে দুর্বল করবে। দেশকে ঠেলে দেবে মারাত্মক নৈরাজ্যের দিকে।
এই সরকারের আড়াই বছরে ব্যাপক সহিংসতা হয়েছে নারীর প্রতি। শুধু বোরকা পরার কারণে পিরোজপুর, সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে নিরীহ নারীদের হয়রানি করা হয়েছে। ইভটিজিং এখন এক ভয়াবহ ব্যাধি। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, তথা ক্ষমতাসীনদের আশ্রিতরা যৌন লালসা মেটানের জন্য নারীর প্রতি হামলে পড়ছে। তাদের হাতে ধর্ষণ, শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছে অসংখ্য নারী। অনেকে নিজের ইজ্জত বাঁচাতে আত্মহত্যা করেছে। মেয়ের ইজ্জত বাঁচাতে গিয়ে বাবা, স্ত্রীর ইজ্জত বাঁচাতে গিয়ে স্বামী, নাতনির ইজ্জত বাঁচাতে গিয়ে নানা বা দাদা, ছাত্রীর ইজ্জত রক্ষা করতে গিয়ে শিক্ষক খুন হয়েছেন। পুলিশ সদর দফতরের রেকর্ড বলছে, ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাস থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত নারী নির্যাতনের অভিযোগ রেকর্ড হয়েছে ৩৮ হাজার ৫টি। একই সময়ে শিশু নির্যাতনের ঘটনা ২ হাজার ৫৩৮টি, যা আগের আড়াই বছরের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি।
সীমান্তে প্রতিবেশী বিএসএফের হাতে প্রতিনিয়ত বাংলাদেশীদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। নিরীহ বাংলাদেশী নাগরিকদের পাখির মতো গুলি করে, কিংবা সাপ-কুকুরের মতো পিটিয়ে হত্যা করছে তারা। কুড়িগ্রাম সীমান্তে ফেলানীর ঝুলন্ত লাশ বিএসএফের মানবাধিকার লঙ্ঘনের জ্বলন্ত উদাহরণ। এই সরকারের আমলে কমপক্ষে ২০৩ বাংলাদেশী নাগরিক বিএসএফের হাতে খুন হয়েছে। তাদের গুলি করে, পাথড় ছুড়ে, পানিতে ডুবিয়ে, বর্বর নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। এসবের প্রতিবাদ না করে এই সরকার জনমতকে উপেক্ষা করে ভারতকে ট্রানজিট, ট্রান্সশিপমেন্ট, করিডোরসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে। চন্দননগর গ্রামসহ আমাদের হাজার হাজার একর জমি তুলে দেয়া হয়েছে ভারতের হাতে। অথচ ছিটমহলের মানুষের যে প্রতিনিয়ত মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে সেদিকে সরকার নজর দিচ্ছে না। ভারতের পূর্বাঞ্চলের স্বাধীনতাকামী সংগঠনের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতাসহ অর্ধশতাধিক নেতাকে গোপনে ভারতের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে।
এ সরকারের আমলে রোষানলে পড়ে সংবাদপত্র ও সাংবাদিক। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে চ্যানেল ওয়ান ও শীর্ষ নিউজডটকম। ফেসবুক বন্ধ করে পরে খুলে দিতে বাধ্য হয়। আমার দেশ পত্রিকা বন্ধ করে প্রেস সিলগালা করে হাজার খানেক সশস্ত্র পুলিশ। সারারাত অফিস অবরুদ্ধ করে রেখে সাংবাদিকদের মারধর করে তারা। আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। রিমান্ডে ক্যান্টনমেন্ট থানাসহ বিভিন্ন স্থানে নিয়ে তার ওপর বর্বরোচিত নির্যাতন চালানো হয়েছে। মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে সংগ্রাম সম্পাদক আবুল আসাদের মতো প্রবীণ সাংবাদিককে। প্রকাশ্যে সংবাদ সম্মেলন করে হুমকি দেয়া হয়েছে জাতীয় দৈনিকের সম্পাদককে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাংবাদিকদের ওপর হামলা, মামলা ও নির্যাতন চালানো হয়েছে। ১২ জন সাংবাদিক এ সরকারের আমলে নিহত হয়েছেন।
মানবাধিকার লঙ্ঘন ও রাজনৈতিক অধিকার হরণের হাতিয়ার ১৪৪ ধারা। চলতি বছরে কমপক্ষে ৭৫টি স্থানে ১৪৪ ধারা জারি করে স্থানীয় প্রশাসন। বিরোধী দলের প্রতিবাদ সভা প্রতিহত করতে সরকারি দল পরিকল্পিতভাবে সভা আহ্বান করে। আর প্রশাসন জারি করে ১৪৪ ধারা। অথচ সংবিধানে স্পষ্টভাবে বলা আছে, রাষ্ট্রের যে কোনো নাগরিকের শান্তিপূর্ণ উপায়ে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা ও সরকারের সমালোচনা করার অধিকার রয়েছে।
এই সরকারের আমলে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু অর্থাত্ উপজাতিরাও নিরাপত্তা পাচ্ছেন না। তাদের বাড়িঘর, ফসলের মাঠ দখল, হামলা, খুন, হত্যা, রাহাজানি, শ্লীলতাহানি, প্রতিমা ভাংচুর, বাড়িতে ডাকাতি ও লুটপাটের ঘটনা অসংখ্য। সন্ত্রাস দমন আইন, জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালাসহ বিভিন্ন আইন করে সরকার মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকার ভূলুণ্ঠিত করছে। স্বয়ং রাষ্ট্রপতি খুনের আসামিদের দণ্ড মওকুফ করে দিয়েছেন। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে সরকারি দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রায় ৮ হাজার মামলা।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, স্বাধীনতা-পরবর্তী প্রথম আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে। ’৭২ সাল থেকে ’৭৫ সাল পর্যন্ত রক্ষীবাহিনীসহ বিভিন্ন বাহিনীর নৃশংসতা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানিয়েছিল। নির্যাতনে ২৭ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল বলে বিভিন্ন পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে। এছাড়াও ওই সময় রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয় ১৯ হাজার মানুষ। গুম ও খুন হয় ১ লাখ। পিটিয়ে মারা হয় ৭ হাজার মানুষকে। জেলখানায় হেফাজতে থাকা অবস্থায় মারা গিয়েছিল ৯ হাজার মানুষ। স্বাধীন বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলের প্রধান হিসেবে প্রথম বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নেতা প্রকৌশলী সিরাজ সিকদার। ’৭৫ সালের ২ জানুয়ারি পুলিশের ক্রসফায়ারে নিহত হন তিনি। অনেকের মতে, ওই হত্যাকাণ্ড সরকারের প্রথম ক্রসফায়ার। ’৭৪ সালের দুর্ভিক্ষে দৈনিক গড়ে ১ হাজার থেকে ১২০০ মানুষ মারা গেছে বলে ওই সময়কার রাজনৈতিক নেতাদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।
’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের শাসন অবসান হলে ক্ষমতাসীন হন খন্দকার মোশতাক। তার শামনামলে ’৭৫ সালের ৩ নভেম্বর আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, এম মনসুর আলী ও এএইচএম কামরুজ্জামানকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা করা হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, স্বৈরাচার এরশাদ আমলেও দেশে মানবাধিকার বলে কিছু ছিল না। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার পাশাপাশি ওই সময় বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটাতে থাকে সরকারের ছত্রছায়ায় গঠিত গুণ্ডাবাহিনী। আন্দোলন দমনের জন্য ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে ঘটানো হয়েছে বহু হত্যাকাণ্ড। কেড়ে নেয়া হয়েছিল মানুষের অধিকার। আন্দোলন দমনের জন্য ট্রাক তুলে দেয়া হয় মিছিলে। ব্রাশফায়ার করে হত্যা করা হয় জনসভায় যোগ দেয়া মানুষকে। ওইসব হত্যাকাণ্ডের সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। ওই সময় কালীগঞ্জের আজম খান বাহিনী, কেরানীগঞ্জের ইমদু ও ঢাকার গালকাটা কামাল বাহিনীর হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে রাজনৈতিক দলের নেতা ও বিরোধী দলের কর্মীদের হত্যা করা হয়। ‘নতুন বাংলা ছাত্রসমাজ’ প্রতিষ্ঠা করে ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে প্রকাশ্য ও গোপনে অসংখ্য বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়। তাদের হাতে নিহতদের মধ্যে রাউফুন বসুনিয়া, নিমাই, সেলিম, জেহাদ, দেলোয়ার ও ডা. মিলনের নাম উল্লেখযোগ্য।
১৯৯৬ সালের জুন মাসে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। এ সময় বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও মানবাধিকার লঙ্ঘন ফের ভয়াবহ রূপ নেয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে উত্থান হয় ভয়ঙ্কর গডফাদার বাহিনীর। ঢাকার হাজী মকবুল, নারায়ণগঞ্জের শামীম ওসমান, ফেনীর জয়নাল হাজারী, লক্ষ্মীপুরের তাহের, গফরগাঁওয়ের আলতাফ গোলন্দাজ, চট্টগ্রামের তৈয়্যব বাহিনী, বরিশালের হাসনাত বাহিনী, চুয়াডাঙ্গার সেলুন বাহিনী, খুলনার সুজা ও কাজী আমিন বাহিনীসহ নানা সন্ত্রাসীচক্র ও গডফাদারের উত্থান ঘটে। তারা খুন ও রাহাজানির মাধ্যমে দেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের কিছুদিন পরেই যশোরে কারাবিদ্রোহ দেখা দিলে অনেক বন্দি বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার আমলের শেষ দিকে পুলিশের চিরুনি অভিযানে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বিপুলসংখ্যক চরমপন্থী নেতাকর্মী হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়।
২০০১ সালে ক্ষমতায় আসে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার। তখনও দেশে বন্ধ হয়নি মানবাধিকার লঙ্ঘন। ওই সময় ‘অপারেশন ক্লিনহার্ট’ নামক অভিযান চলে। সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে নৌবাহিনী, পুলিশ ও বিডিআরের সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনীর অভিযানে তথাকথিত ‘হার্টঅ্যাটাক’-এ মৃত্যু হয়েছিল অন্তত ৪৪ জনের। প্রশ্নবিদ্ধ ওই অভিযান বন্ধ করে জাতীয় সংসদে বিল পাসের মাধ্যমে অভিযানে অংশ নেয়া সংস্থার সদস্যদের ইনডেমনিটি দেয়া হয়। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ মার্চ গঠন করা হয় র্যাব। তাদের হাতে প্রথম ক্রসফায়ার হয় ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হান্নান। এরপর এযাবত্ র্যাবের হাতে আট শতাধিক এবং বিভিন্ন সময় পুলিশের ক্রসফায়ারে ১১শ’র বেশি লোক নিহত হয়েছে।
বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী ও সমাজচিন্তক ফরহাদ মজহার বলেন, যে মাত্রার বা যে চরিত্রেরই যে কোনো ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন কোনো অবস্থাতে কখনও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। মানবাধিকার রক্ষার কাজ নিছকই কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার আহাজারির বিষয় নয়। এটা ব্যক্তির অধিকার।
সুপ্রিমকোর্টের প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বলেন, মানবাধিকার শুধু কতগুলো লিপিবদ্ধ অধিকার নয়, মানবাধিকার হচ্ছে সব ক্ষেত্রে ন্যায় প্রতিষ্ঠা। কারও সঙ্গে কটু কথা না বলে সদাচরণ করা, হাসিমুখে কথা বলা—এগুলোও মানবাধিকার।
প্রবীণ সাংবাদিক আতাউস সামাদ বলেন, পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু ঘটছে, চলেছে গুম হওয়ার মিছিল। একজন আইনজীবী হাইকোর্ট-ঘটনায় গ্রেফতার হয়ে পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় মারা গেলেও আদালত এ বিষয়ে কোনো তদন্ত করেননি। বিরোধী দলের চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুককে পুলিশ প্রকাশ্য দিবালোকে পিটিয়ে হত্যা করার চেষ্টা করলেও জাতীয় সংসদ কর্তৃপক্ষ এতে কোনো উদ্বেগ প্রকাশ করেননি। এখন শোনা যাচ্ছে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা এদেশের নাগরিক বা এদেশে বসবাসরত লোকদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে এ দেশের আদালতের কোনো নির্দেশ বা অনুমতি ছাড়া। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডও থেমে নেই। আবার নেই দুর্বৃত্তদের হাত থেকে সুরক্ষা পাওয়ার নিশ্চয়তা। আর দুর্নীতিপরায়ণরা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যস্ফীতি অবাধে ঘটিয়ে জনজীবনে নাভিশ্বাস সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশে মানবাধিকার অপসৃয়মাণ বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, দেশের সাধারণ মানুষের জীবন উদ্বেগ ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে কাটছে। বর্তমানে এমন একটি সময় চলছে, মানুষ রাতে ঘুমাতে গেলে সকালে কী হবে তা জানে না। ঘর থেকে বের হলে নিরাপদে আবার ফিরতে পারবে কিনা তাও অনিশ্চিত। মানুষের জীবনের স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নেই। মানবাধিকার বিষয়ে আমাদের অর্জন অনেক হলেও প্রত্যাশা অনুযায়ী এখনও আমরা অনেক দূরে রয়েছি।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনবিদ ও সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, রাষ্ট্র ও ক্ষমতাসীন দলই মানবাধিকার লঙ্ঘনের মূল হোতা হিসেবে কাজ করে। রাষ্ট্রের মদত ছাড়া কারও পক্ষেই আইন ভঙ্গ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের সুযোগ নেই। যে কোনো বিবেচনায় দেশের সর্বজনীন মানবাধিকার পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। নতুন করে এখন গুপ্তহত্যা ও গুম-আতঙ্ক তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে দেশবাসীকে। দেশ বা রাষ্ট্র কিছু লোককে বেআইনিভাবে মানুষ হত্যার জন্য সরকারিভাবে লাইসেন্স দিয়ে দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খুন করে ডাহা মিথ্যা কথা বলছে—এটা সব মানুষের কাছে দিবালোকের মতো স্পষ্ট। একইভাবে অপহরণের পর যাদের কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না—এগুলো নিশ্চয়ই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী করছে।
বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট আদিলুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে দেশের সাধারণ মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা ছিল, সে অনুযায়ী মানবাধিকার পরিস্থিতির কখনও উন্নতি হয়নি; বরং দিন দিন তা খারাপের দিকে যাচ্ছে। তাই বলতে হয়, বর্তমান মানবাধিকার পরিস্থিতি মোটেই ভালো নয়। আমরা দেখছি মানুষের যে প্রত্যাশা, বাস্তব অবস্থা তার সম্পূর্ণ বিপরীত।

Tuesday, 4 October 2011

অধিকার-এর সরেজমিন প্রতিবেদন : রফিকুলকে পাথর ছুড়েই হত্যা করেছে বিএসএফ



স্টাফ রিপোর্টার
সীমান্ত হত্যা বন্ধে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যতই আলোচনা হচ্ছে, ততই বিএসএফ সদস্যরা বাংলাদেশীদের হত্যার কৌশল পরিবর্তন করছে। ভারত সরকার বাংলাদেশকে বারবার সীমান্তে নিরস্ত্র জনগণকে হত্যা না করার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা মোটেও কার্যকর হচ্ছে না। বিএসএফ সদস্যরা এখন সীমান্তে প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার কমিয়ে হত্যার কৌশল পরিবর্তন করেছে বলে প্রতীয়মান হয়। কখনও কাঁটাতারের বেড়ায় বিদ্যুত্ সংযোগ করে, কখনও পাথর ছুড়ে নিরস্ত্র বাংলাদেশীদের হত্যা চলছেই।
মানবাধিকার সংস্থা অধিকার লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক হত্যার শিকার রফিকুলের ঘটনা সরেজমিন তদন্ত করে এ মন্তব্য করেছে। অধিকার সরেজমিন তদন্ত শেষে প্রতিবেদনে বলছে, বিএসএফ নিরস্ত্র বাংলাদেশী রফিকুলকে পাথর ছুড়েই হত্যা করেছে। প্রতিবেদনে অধিকার সীমান্তে মৃত্যুর বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারকে সক্রিয় পদক্ষেপ নিয়ে ভারত সরকারের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের ব্যবস্থা করতে দাবি জানায়। নিহত রফিকুলের বাড়ি লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম থানার উফারমারা গ্রামে। তার স্ত্রীর নাম মোছাম্মত মিনি বেগম। রিয়াদ হোসেন (৮) ও রিফাত হোসেন (৬) নামে তার দুটি সন্তান রয়েছে। রফিকুল কৃষিকাজের পাশাপাশি বুড়িমারী জিরোপয়েন্টে লেবারের কাজ করতেন।
অধিকার সরেজমিনে গিয়ে নিহতের স্ত্রী মোছাম্মত মিনি বেগম (২৮), ভাই নজরুল ইসলাম (৪৫), চাচাতো ভাই আবেদার রহমান (৪৫), ৮নং বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের আনসার ভিডিপি কমান্ডার এনামুল হক, লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুতকারী ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পাটগ্রাম থানার এসআই ক্ষীরোদ চন্দ্র বর্মণ, ময়না তদন্তকারী লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. গৌতম কুমার বিশ্বাস, হাসপাতালের মর্গ-সহকারী মোহাম্মদ আলী, বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের (বিজিবি) ধবলসুতী বিওপি, পাটগ্রামের নায়েব সুবেদার মেজবাহ এবং রফিকুলের লাশের গোসলদানকারীর সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদনটি তৈরি করে।
বিএসএফ সদস্য কর্তৃক পাথর ছুড়ে রফিকুল ইসলামকে হত্যার বিষয়ে পাটগ্রামে সরেজমিনে গিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে অধিকার জানতে পারে, চলতি বছর ২৪ জুলাই ভোর ৫টায় ভারত থেকে গরু নিয়ে সানিয়াজান নদী পার হওয়ার সময়ে ওই নদীর ভারতীয় অংশে নির্মিত ব্রিজের ওপর থেকে বিএসএফ সদস্যরা তাকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ে আঘাত করে। এতে তার মাথা ফেটে যায়। পরে ব্রিজের ওপর তুলে আঘাত করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে। বিএসএফের ছোড়া পাথরে দুটি গরুও মারা যায়। প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহতের আত্মীয়-স্বজনের বরাত দিয়ে অধিকার জানিয়েছে, বিএসএফ শুধু তাকে মেরেই ক্ষান্ত হয়নি, তার লাশ গুম করার লক্ষ্যে নদীতে বাঁশ পুঁতে তাতে বেঁধে রাখে। পরে খবর পেয়ে নিহতের আত্মীয়-স্বজনরা ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে নিয়ে আসে। লাশের সুরতহাল রিপোর্ট ও ময়নাতদন্তে বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়। এছাড়া পাথরের আঘাতে তার মাথা ফেটে মগজ বেরিয়ে গিয়েছিল।
রফিকুলের স্ত্রীর বক্তব্য : মোছাম্মত মিনি বেগম অধিকারকে জানান, তার স্বামী একজন ভূমিহীন কৃষক। দুই সন্তান নিয়ে তার অভাবের সংসার। রফিকুল কৃষিকাজের অবসরে সীমান্তের বুড়িমারীর জিরো পয়েন্টে লেবারের কাজ করতেন। চলতি বছর ২৩ জুলাই ৫টায় তার স্বামী বাজার করতে বুড়িমারীবাজারে যান। রফিকুল রাতে আর বাসায় না ফেরায় তিনি তার চাচাতো ভাশুর মো. আবেদার রহমানকে বিষয়টি জানান। আবেদার রহমান তাকে বলেন, রফিকুল গরু আনতে যেতে পারে। ২৪ জুলাই ভোরে তিনি মোবাইল ফোনে রফিকুলের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে আবারও আবেদার রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আবেদার রহমান তাকে জানান, ভোরের দিকে তিনি বুড়িমারী বাজারে গিয়ে গরু ব্যবসায়ীদের কাছে শুনেছেন, রাতে অনেকেই ভারত থেকে গরু নিয়ে ফিরলেও রফিকুল ফেরেনি। এছাড়া বাজারে অনেককেই বলাবলি করতে শোনেন, বিএসএফ সদস্যরা রাতে নদী পারাপারকারীদের পাথর ছুড়ে আঘাত করেছে। রফিকুলকেও পাথর ছোড়া হয়েছিল বলে বাজারের অনেকেই আলোচনা করছিলেন।
তারপর আবেদার রহমান রফিকুলের ভাই নজরুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে সীমান্তের বামনদল গ্রামে সানিয়াজান নদীর তীরে যান এবং নদী থেকে রফিকুলের লাশ উদ্ধার করে সকাল সাড়ে ৯টায় বাড়ি আনেন। লাশ বাড়ি আনার পরে পাটগ্রাম থানার পুলিশ সদস্যরা লাশ নিয়ে যায়। লাশের ময়নাতদন্ত শেষে ২৫ জুলাই বিকাল সাড়ে ৪টায় লাশ বাসায় নিয়ে আসার পর পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। লাশের কপালে একটি ক্ষত ছিল, মাথার মগজ বেরিয়ে গিয়েছিল, নাক, মুখ ও কান দিয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছিল।
এসআই, পাটগ্রাম থানা : এসআই ক্ষীরোদ চন্দ্র বর্মণ অধিকারকে বলেন, ২৪ জুলাই দুপুর সোয়া ২টায় উফরমারা গ্রামের নজরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি থানায় আসেন এবং বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন (নম্বর-২১, তারিখ-২৪.৭.২০১১; ধারা-৩০২/২০১/৩৪ দণ্ডবিধি)। তিনি নিজেই মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা। তিনি বিকাল ৩টায় রফিকুলের বাড়ি যান এবং লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করেন। পরে পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য লাশ লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে পাঠায়। ২৫ জুলাই ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে রফিকুলের লাশ হস্তান্তর করা হয়।
ডা. গৌতম কুমার বিশ্বাস : লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. গৌতম কুমার বিশ্বাস অধিকারকে বলেন, ২৪ জুলাই সন্ধ্যা ৭টায় পাটগ্রাম থানার পুলিশ সদস্যরা রফিকুল নামে এক ব্যক্তির লাশ হাসপাতালে আনেন। তিনি জানতে পারেন, বিএসএফ সদস্যদের পাথরের আঘাতে রফিকুল মারা গেছেন। ২৫ জুলাই সকাল আনুমানিক ১০টায় ডা. মোতাছিব, ডা. মেহেদী মাসুম ও তাকে নিয়ে গঠিত তিন সদস্যের বোর্ড লাশের ময়নাতদন্ত করেন। তিনি জানান, পাথর বা শক্ত কিছু দিয়ে কপালে আঘাত করায় করোটির হার ফেটে গিয়েছিল, যার ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়েই রফিকুলের মৃত্যু হয়েছে

Thursday, 22 September 2011

মানবাধিকার পরিস্থিতি উদ্বেগজনক : দেশে এখন স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নেই - সুলতানা কামাল



স্টাফ রিপোর্টার
দেশের সাধারণ মানুষের জীবন এখন উদ্বেগ ও নিরাপত্তা-হীনতার মধ্যে কাটছে বলে মন্তব্য করেছেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল। তিনি বলেন, দেশে এখন স্বাভাবিক মৃত্যুর কোনো গ্যারান্টি নেই।
গতকাল সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আসকে’র ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আসকে’র পরিচালক নূর খান মিল্টন ও সিনিয়র উপ-পরিচালক মোতাহার আকন্দ।
সংগঠনটি মনে করছে, বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি এখনও উদ্বেগজনক পর্যায়ে রয়ে গেছে। প্রতিদিনই মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে।
সুলতানা কামাল বলেন, বর্তমানে এমন একটি সময় চলছে যে মানুষ রাতে ঘুমাতে গেলে সকালে কী হবে তা জানে না। ঘর থেকে বের হলে নিরাপদে আবার ফিরতে পারবে কি না, বিষয়টি অনিশ্চিত। মানুষের জীবনের স্বাভাবিক মৃত্যুর কোনো গ্যারান্টি নেই।
তিনি আরও বলেন, মানবাধিকার বিষয়ে আমাদের অর্জন অনেক হলেও প্রত্যাশা অনুযায়ী এখনও আমরা অনেক দূরে রয়েছি।
র্যাবের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এ মুহূর্তে র্যাবের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে হবে। বিশ্বের প্রতিটি দেশের এলিট ফোর্সের নির্দিষ্ট কিছু নিয়মবিধি থাকে; কিন্তু র্যাব কোনো ধরনের নিয়ম-নীতি না মেনে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, দেশে এখনও নারীর সম-অধিকার অর্জিত হয়নি, বন্ধ হয়নি শিশুশ্রম। এসব অনিয়ম বন্ধে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ সন্তোষজনক নয়।
উল্লেখ্য, ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আসক দুদিনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।