Tuesday 26 April 2011

সংবাদ সম্মেলনে রবার্ট ব্লেকের হুশিয়ারি : ইউনূসের বিষয়ে সমঝোতা না হলে সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে














কূটনৈতিক রিপোর্টার

ড. মুহম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সমঝোতা না হলে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপন্থীয় সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সফররত দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী রবার্ট ব্লেক গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে এই হুশিয়ারি দেন।
প্রভাবশালী এই মার্কিন কূটনীতিক বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন।
আমেরিকান ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ড. ইউনূস প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে রবার্ট ব্লেক বলেন, ড. মুহম্মাদ ইউনূসকে অহেতুক গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে বিতাড়ন করা হয়েছে। এটা আমাদের জন্য চরম অস্বস্তির। আমরা চাই ড. ইউনূস ইস্যুতে সন্তোষজনক সমঝোতা, যেখানে গ্রামীণ ব্যাংকের স্বাধীন কার্যকারিতা নিশ্চিত হবে। আমরা মনে করি, সমঝোতার সুযোগ এখনও রয়েছে। আর যদি ড. ইউনূসের সঙ্গে সরকারের সমঝোতা না হয়, তা হলে দু’দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ড. ইউনূসের সঙ্গে সরকারের সমঝোতার উপায় কী হতে পারে সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের জবাবে রবার্ট ব্লেক বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এখানে কোনো ফর্মুলা দেবে না। এটা ড. ইউনূস, গ্রামীণ ব্যাংক এবং সরকারের ব্যাপার। আমরা চাই দুই পক্ষ আলোচনার বসুক। ড. ইউনূসের সঙ্গে সরকার আলোচনার মাধ্যমে সন্তোষজনক সমাধান বের করতে পারবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
ড. ইউনূস ইস্যু বাংলাদেশের একটি অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের এত আগ্রহ কেন সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের জবাবে ব্লেক বলেন, ড. ইউনূস আন্তর্জাতিকভাবে একজন সম্মানিত ব্যক্তি। নোবেল বিজয়ী এই ব্যক্তিত্ব লাক লাখ মানুষকে দারিদ্র্যের হাত থেকে মুক্ত করেছেন। মার্কিন জনগণ, মার্কিন সুশীল সমাজ, মার্কিন কংগ্রেস সদস্য, কংগ্রেসের বাংলাদেশ ককাসের সদস্য, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন এবং প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ড. ইউনূসকে গভীরভাবে ভালোবাসেন এবং শ্রদ্ধা করেন। ড. ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট গোল্ড মেডেন অব ফ্রিডম-এ ভূষিত হয়েছেন। কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেনের জন্য তিনি এখন মনোনীত। এসব কারণেই ড. মুহম্মাদ ইউনূসকে নিয়ে আমাদের এই আগ্রহ। রবার্ট ব্লেক আরও বলেন, আমরা বাংলাদেশে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছিলাম। যাতে বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় এবং স্বাধীন সুশীল সমাজ বিকাশ লাভ করে। ড. ইউনূসকে যেভাবে সরানো হয়েছে তাতে সুশীল সমাজকে হেয় করা হযেছে। এটা আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন যুক্তরাষ্ট্র সফরে প্রেসিডেন্ট ওবামার সঙ্গে সাক্ষাত্ এবং হিলারি ক্লিনটনের বাংলাদেশ সফর বাতিল প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রবার্ট ব্লেক বলেন, ড. ইউনূস ইস্যুতে আগামীতে কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হবে, সে ব্যাপারে এখন কোনো মন্তব্য করতে চাই না। ড. ইউনূসের সঙ্গে সরকারের সমঝোতা হলেই কেবল আমি হিলারি ক্লিনটনের বাংলাদেশ সফরের বিষয়টি উপস্থাপন করতে পারব।
যুক্তরাষ্ট্র ড. ইউনূস ইস্যুতে ব্যাপক সোচ্চার হলেও বাংলাদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় নীরব কেন এই প্রশ্নের জবাবে মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মানবাধিকার আমাদের কাছে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। এই ইস্যু নিয়ে আমরা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে অনেকবার আলোচনা করেছি। এ ব্যাপারে আমরা আমাদের উদ্বেগের কথাও জানিয়েছি। বিশেষ করে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নের ওপর বিশেষ জোর দেয়া হয়েছিল। বিষয়গুলো কী সঠিক পথে এগুচ্ছে এই প্রশ্নের জবাবে রবার্ট ব্লেক বলেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে উন্নতি হয়েছে। তবে আরও অনেক কিছু করার রয়েছে। দুর্নীতি দমন এখানে উল্লেখ করার মতো বিষয়।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে ঢাকায় তার বৈঠক সম্পর্কে জানতে চাইলে রবার্ট ব্লেক বলেন, এই অঞ্চলে সন্ত্রাস দমনে মার্কিন কৌশল নিয়ে মূলত আলোচনা হয়েছে। সন্ত্রাস দমনে কী কী করা যায় তা নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি।
মানব পাচার রোধে বাংলাদেশকে সহায়তা দেয়াসহ মার্কিন বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশধিকারের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিবাচক মনোভাবের কথা জানান রবার্ট ব্লেক। ড. ইউনূস ইস্যু নিয়ে আলোচনার জন্য ১৯ মার্চ রবার্ট ব্লেক ৫ দিনের সফরে ঢাকা আসেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া, অর্থমন্ত্রী ড. আবুল মাল আবদুল মুহিত, ড. মুহম্মাদ ইউনূস এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আজ সকালে রবার্ট ব্লেক ঢাকা ছেড়ে যাবেন

No comments:

Post a Comment