Sunday 1 August 2010

অধিকারের জুলাই ২০১০-এর রিপোর্ট : র্যাব-পুলিশের হাতে ১০ বিএসএফের গুলিতে ৯ বাংলাদেশী নিহত

স্টাফ রিপোর্টার
গত জুলাই মাসে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হেফাজতে ১০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। মানবাধিকার সংস্থা অধিকার গতকাল জুলাই মাসের রিপোর্টে এই তথ্য প্রকাশ করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের পাশাপাশি সীমান্তে বিএসএফ জুলাই মাসে ৯ জন বাংলাদেশী নাগরিক হত্যা করেছে। এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অধিকার। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাদা পোশাকধারী ব্যক্তিদের হাতে আটকের পর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় অধিকার গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। চারটি মামলায় জামিনের পর আমার দেশ সম্পাদককে তড়িঘড়ি করে অপর একটি মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানোর বিষয়টিকে আইনের শাসন ও মানবাধিকার পরিপন্থী উল্লেখ করে অধিকার সরকারের এই আচরণের নিন্দা জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, অধিকারের প্রতিবেদনে বলা হয়, যারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে প্রাণ হারিয়েছেন তাদের মধ্যে পুলিশের হাতে ৪ জন, ১ জন র্যাব-পুলিশের যৌথ অভিযানে এবং ৫ জন নিহত হয়েছেন র্যাব-পুলিশ ও কোস্টগার্ডের যৌথ অভিযানে। এই ১০ জনের মধ্যে ৪ জন পুলিশের হেফাজতে থাকাকালে মারা গেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
নিহত ১০ জনের মধ্যে ১ জন ব্যবসায়ী, ১ জন পরিবহন কর্মী, ১ জন রাজমিস্ত্রি, ১ জন রিকশাচালক, ১ জন কথিত অপরাধী, ২ জন ডাকাত ও ৩ জন জলদস্যু বলে জানা গেছে।
অধিকারের তথ্য অনুযায়ী জুলাই মাসে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বিএসএফের হাতে সীমান্তে বাংলাদেশীদের ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অনেক ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বিএসএফ ৯ জন বাংলাদেশীকে গুলি করে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ সময়কালে বিএসএফ ও খাসিয়াদের হামলায় ১৪ জন আহত হয়, যার মধ্যে ৪ জন শুধু বিএসএফের হামলার শিকার। ওই ৪ জনের মধ্যে ২ জন বিএসএফের নির্যাতন ও ২ জন গুলিতে আহত হয়েছেন। ১২ জন বাংলাদেশী বিএসএফ কর্তৃক অপহৃত, ২ জন এ সময়কালে নিখোঁজ, ১টি লুটের ঘটনা ঘটেছে। ৫ হিন্দি ভাষাভাষী মুসলিম ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশে পুশইনের অভিযোগ রয়েছে। অধিকারের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত ১৩ জুলাই আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে একটি দুর্নীতি মামলায় (মামলা নং ২৮(৬) ২০১০, গুলশান থানা) গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের উপপরিচালক মো. নুর আহম্মদ ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করেন। এর আগে মাহমুদুর রহমান দুদকের এই নোটিশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে জজ কোর্টে আবেদন করেন। কিন্তু জজ কোর্ট আবেদন প্রত্যাখ্যান করলে মাহমুদুর রহমান সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে জজ কোর্টের আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে আবেদন করেন। হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ দুদকের নোটিশের কার্যকারিতা ২৭ এপ্রিল ২০১০-এ স্থগিত করেন। দুদক সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার জজ বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেইনের আদালতে এই আদেশের বিরুদ্ধে দরখাস্ত দাখিল করলে আদালত হাইকোর্ট বিভাগের আদেশ ৫ মে ২০১০ তারিখে দশ দিনের জন্য স্থগিত করেন এবং দুদককে এ সময়ের মধ্যে একটি নিয়মিত লিভ আবেদন দায়েরের জন্য আদেশ দেন। এরপর দুদক লিভ আবেদন দায়ের করেন।
অধিকার মনে করে, সেনা সমর্থিত জরুরি অবস্থার সরকার দুদককে ব্যবহার করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতার এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের চেষ্টা করে। কিন্তু নির্বাচিত সরকারের সময়ও দুদকের একই ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
জুলাই মাসে মোট ৫১ জন নারী ও মেয়েশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে ২০ জন নারী এবং ৩১ জন মেয়েশিশু। ২০ জন নারীর মধ্যে ৫ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে এবং ৬ জন গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ৩১ জন মেয়েশিশুর মধ্যে ৪ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে এবং ৫ জন গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন।
এছাড়াও পোশাক শিল্পে অস্থিরতার জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অধিকার। অধিকারের প্রতিবেদনে বলা হয়, শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি পাওনা আদায়ের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পোশাক শিল্পে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। অবিলম্বে শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরির দাবি পূরণ করে পোশাক শিল্পের অস্থিরতা দূর করার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছে অধিকার।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/08/02/36987

No comments:

Post a Comment