Tuesday, 26 April 2011

সেমিনারে ব্যারিস্টার রফিক-উল হক : সর্বোচ্চ আদালতের বিচার প্রক্রিয়ায় মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে











কূটনৈতিক রিপোর্টার
বিশিষ্ট আইনজ্ঞ ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বলেছেন, বর্তমানে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের বিচারকাজে অনেক ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। বিচারকরা যে রায় দিচ্ছেন, তা বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে রায়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে হিউম্যান রাইটস অ্যাডভোকেসি কাউন্সিল আয়োজিত ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এই মন্তব্য করেন। দৈনিক আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল মান্নান, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব শওকত মাহমুদ, হিউম্যান রাইটস অ্যাডভোকেসি কাউন্সিলের সভাপতি ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম, সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
সেমিনারে বাংলাদেশে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
ব্যারিস্টার রফিক-উল হক তার বক্তৃতায় বলেন, দেশের সর্বোচ্চ আদালতের বিচারকরা তাদের ইচ্ছেমত সুয়োমোটো রুল দিচ্ছেন তথাকথিত জনস্বার্থের কথা বলে। তাদের রায়গুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, সেখানে অনেক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে।
আদালত অবমাননার প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, মাহমুদুর রহমানকে ৬ মাসের জেল এবং ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল অথচ রায়ে বিচারকরা বলতে পারেননি কীভাবে আদালত অবমাননা হয়েছে। রায়ে বলা হয়েছে, মাহমুদুর রহমানের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ বা দেহভঙ্গি ভালো ছিল না। আবার একই ধরনের অন্য মামলায় একশ’ টাকা জরিমানা অনাদায়ে একদিনের জেল। এই হলো আদালতের অবস্থা। তিনি আরও বলেন, এখন সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে বিচারকরা খুব বলছেন। আবার সামরিক শাসন যদি এসে যায়, প্রথমেই এই বিচারকরা বঙ্গভবনে হাজির হবেন শপথ পড়ানোর জন্য। তিনি দুই নেত্রীসহ সবার প্রতি সহনশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, একে অন্যকে কথার মাধ্যমে অপমান করাও মানবাধিকারের লঙ্ঘন। সবার উচিত সহনশীল হওয়া। কখন কাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে তা কেউ জানেন না।
নতুন প্রজন্মের মধ্যে মানবাধিকার বিষয়ে সচেতনতা বাড়ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, এই সমাজে এখন কেউ নিরাপদ নয়। সরকার সংবিধান তছনছ করে মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করেছে। দলীয় লোক এবং পুলিশ দিয়ে চরমভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। এখন সময় এসেছে প্রতিরোধের। তিনি বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা না হলে মানবাধিকার রক্ষা হবে না। বাংলাদেশে সরকার যেভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে, তা কোনো সভ্য সমাজে চলতে পারে না।
সভাপতির বক্তৃতায় মাহমুদুর রহমান বলেন, বর্তমান সরকার মানবাধিকারে বিশ্বাস করে না। তারা মানবাধিকারে বিশ্বাস করে না বলেই নিজেরা মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে এবং পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র যখন এদেশের নিরীহ মানুষদের গুলি করে হত্যা করছে, তখন তার প্রতিবাদ করে না। তিনি বলেন, ১/১১-এর সরকারের সময় যাদের আত্মীয়-পরিজনদের ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের চেম্বারে পড়ে পড়ে কাঁদতে দেখেছি, আজ তারাই মানবাধিকার লঙ্ঘনে লিপ্ত হয়েছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক। আজ যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করছেন, তাদের মানবাধিকার রক্ষার জন্য সেই কঠিন দিনগুলোতে ব্যারিস্টার রফিক-উল হক আইনের মাধ্যমে আর আমি কলমের মাধ্যমে লড়াই করেছি। তিনি বিএনপির উদ্দেশে বলেন, আপনারা যদি ভবিষ্যতে ক্ষমতায় যান, তখন মানবাধিকার রক্ষার বিষয়টিকে একটি আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করবেন—এটাই আমাদের প্রত্যাশা। ক্ষমতায় এসে প্রতিশোধ গ্রহণ করব—এই চিন্তা যেন না থাকে। তিনি নিজের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, আমি প্রতিহিংসায় বিশ্বাস করি না। আগামী দিনগুলোতে যদি মানবাধিকার লঙ্ঘনমুক্ত একটি দেশ আমরা পাই, তা হলে আমার ওপর যে নির্যাতন হয়েছে সেই নির্যাতনের কষ্ট ভুলে যাব। মানবাধিকারের প্রশ্নে আমরা সবাই যদি দল-মত নির্বিশেষে একত্রে দাঁড়াতে পারি, তাহলে সেটাই হবে সবচেয়ে বড় অর্জন।
নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে শওকত মাহমুদ তার বক্তৃতায় বলেন, সরকার যখন উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করে, তখন তার নিরাপত্তা বাহিনীও উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করে। বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় সরকার যেভাবে সমর্থন জোগাচ্ছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। হুমকির মুখে পড়েছে আমাদের জাতিরাষ্ট্রের অস্তিত্ব। তিনি বলেন, দেশে এখন একটি আতঙ্কজনক পরিস্থিতি চলছে। আদালতের দায়িত্ব তার ক্ষমতা প্রয়োগ করে জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষা করা। সেখানে আদালত যদি তার ক্ষমতা ব্যবহার করে সাংবাদিকদের শাস্তি দিতে তত্পর হন, সেক্ষেত্রে আমাদের আতঙ্কিত হতে হয়

No comments:

Post a Comment