কূটনৈতিক রিপোর্টার
যুদ্ধাপরাধবিষয়ক মার্কিন অ্যাম্বাসাডর অ্যাট লার্জ স্টিফেন জে র্যাপ বলেন, বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচারে মার্কিন সহায়তা পেতে হলে বিদ্যমান আইন সংশোধন করতে হবে।
তিন দিনের সফর শেষে ঢাকা ছাড়ার আগে গতকাল রাজধানীর আমেরিকান ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মার্কিন এই বিশেষ দূত বলেন, গত জানুয়ারিতে ঢাকা সফরের সময়ে বাংলাদেশের যুদ্ধা-পরাধের বিচার প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করতে আমি বেশকিছু সুপারিশ সরকারকে দিয়েছিলাম। এবারের সফরে এসে সেসব বিষয়ে আইনমন্ত্রী এবং ট্রাইব্যুনালের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তাদের এ ব্যাপারে আন্তরিক বলেই মনে হয়েছে। তারা আমাকে আশ্বস্ত করেছেন, বিদ্যমান বিধিতে প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হবে। তিনি বলেন, আমি তাদের জানিয়েছি, এই বিধি সংশোধনের জন্য সংসদের প্রয়োজন নেই। সরকার এবং বিচারকরা রুলস অব বিজনেস পরিবর্তন করে তা করতে পারেন। পরিবর্তিত বিধি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের আইসিসি আইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে, যাতে আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করা যায়।
যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়ায় মার্কিন সহায়তার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্টিফেন র্যাপ বলেন, আমাদের সুপারিশ অনুযায়ী আগে বিদ্যমান বিধির সংশোধন করতে হবে। এই সংশোধনের মাধ্যমে বিদ্যমান বিধি যদি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে উন্নীত হয়, তাহলেই কেবল আমি বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধের বিচারে সহায়তার জন্য কংগ্রেসকে অনুরোধ জানাতে পারব। তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ট্রাইব্যুনালের বিচারক, তদন্ত কর্মকর্তা এবং আইনজীবীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে সহায়তা করতে পারে।
যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগপত্র দাখিল না করে মাসের পর মাস আটকে রাখা হচ্ছে—এ ব্যাপারে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে র্যাপ বলেন, তাদের জামিনের বিষয়টি ট্রাইব্যুনাল বিবেচনা করতে পারে। তবে জামিন দেয়া-না দেয়ার বিষয়টি তাদের এখতিয়ার। বিচারকরা এ ব্যাপারে মাসে মাসে পর্যালোচনা করতে পারেন। সাক্ষীদের নিরাপত্তার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসামি এবং বাদী উভয়পক্ষের সাক্ষীদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। প্রাথমিকভাবে নিরাপত্তার জন্য সাক্ষীদের নাম-ঠিকানা গোপন রাখা যেতে পারে। তবে একটি পর্যায়ে এসে তা অবশ্যই জনসাধারণকে জানাতে হবে। কারণ তা না হলে বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। সাংবাদিকদের অন্য এক প্রশ্নের জবাবে মার্কিন দূত বলেন, এই বিচার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসময় লাগতে পারে। তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করা, অভিযোগ দায়ের করা, সাক্ষ্য গ্রহণ, আইনজীবীদের যুক্তি-পাল্টা যুক্তি উপস্থাপনসহ রায়ের পর সুপ্রিমকোর্টে আপিল—সব মিলিয়ে এটা একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। তাই এই বিচার প্রক্রিয়া শেষ করতে যদি কোনো পলিটিক্যাল ক্যালেন্ডার শেষ হয়ে যায় তাহলেও যেন বিচার প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে।
সংবাদ সম্মেলনে স্টিফেন জে র্যাপ আরও বলেন, মানুষের নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সংরক্ষণবিষয়ক আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। তাই এই বিচার প্রক্রিয়ায় যাতে কারও নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার লঙ্ঘন না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
No comments:
Post a Comment