Tuesday, 26 April 2011

র্যাব-পুলিশের নতুন কৌশল আটকের পর হাঁটুতে গুলি

নাছির উদ্দন শোয়েব

বুকে গুলিবিদ্ধ হলে নির্ঘাত মৃত্যু, আর হাঁটুতে কিংবা পায়ে গুলি লাগলে বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। প্রাণে বেঁচে গেলেও ক্ষতচিহ্ন নিয়ে কাটাতে হয় সারাটি জীবন। অনেকে পঙ্গুও হয়ে যায় চিরতরে। র্যাব ও পুলিশের ক্রসফায়ার নিয়ে আদালত ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো সোচ্চার হওয়ায় ভিন্ন কৌশল নিয়েছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা। অভিযানের নামে সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আটকের পর হাঁটুর নিচে অথবা পায়ে গুলি চালিয়ে তাকে অপরাধী বলে প্রচার করা হয়। এই নতুন কৌশলে অপরাধ কমবে বলে র্যাব ও পুলিশের ধারণা। গত দু’বছরে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের গুলিতে আহত ও পঙ্গু হয়েছে প্রায় অর্ধশতাধিক ব্যক্তি। এসব গুলিবিদ্ধের বেশিরভাগই বয়সে কিশোর-তরুণ। তবে আটক বা গুলিবিদ্ধ ভিকটিম পরিবারের দাবি, অভিযানের নামে নিরপরাধ ব্যক্তিকে অপরাধী সন্দেহে তাদের চোখ বেঁধে নির্জন স্থানে নিয়ে গুলি করা হয়েছে। বিভিন্ন সময় আহতদের আত্মীয়-স্বজন ও পরিবারের সদস্যরা এ ধরনের অভিযোগ করেছেন, যার প্রমাণ রয়েছে।
এ ব্যাপারে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার এম সোহায়েল জানান, র্যাব সদস্যদের প্রতি আটক করে কাউকে গুলি করার যে অভিযোগ তা একেবারেই ভিত্তিহীন। অপরাধী গ্রেফতার করতে গিয়ে র্যাব সদস্যদের সঙ্গে দুষ্কৃতকারীদের বিভিন্ন সময়ে গোলাগুলি হয়। এ ধরনের অভিযানের সময় কখনও গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনাও ঘটে। র্যাব সদস্যরাও সন্ত্রাসীদের গুলিতে আহত হয়। অভিযানের সময় সন্ত্রাসীরা গুলি চালালে জীবন রক্ষার্থে র্যাব সদস্যদেরও পাল্টা গুলি চালানোর অধিকার রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সন্ত্রাসীদের দমনে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে। বেপরোয়া অপরাধীদের গ্রেফতারে অভিযানে নেমে গোলাগুলি এবং গুলিবিদ্ধ হওয়ার অহরহ ঘটনা ঘটছে। তবে অভিযোগ রয়েছে, সন্দেহ হলেই রাস্তা থেকে কোনো ব্যক্তিকে আটক করে পায়ে গুলি করে আহত করা হয়। সম্প্রতি এ ধরনের অনেক অভিযোগ আসছে। সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের গুলি করে ছিনতাইকারী ও চাঁদাবাজ বলেও চালিয়ে দেয়া হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে। তবে গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিদের স্বজনরা আটক হওয়া ব্যক্তিকে নিরপরাধ বলে দাবি করেন। অনেক সময় পুলিশের হেফাজতে থাকাকালে ভিকটিম নিজেকে নিরপরাধ প্রমাণ করারও সুযোগ পায় না। তবে কয়েকটি ঘটনায় জানা গেছে, পুলিশ যাদের আটক করে ছিনতাইকারী বলে গুলি করেছে এর মধ্যে নিরপরাধ লোকের সংখ্যাই বেশি।
পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত দু’বছরে র্যাব-পুলিশের গুলিতে প্রায় অর্ধশতাধিক ব্যক্তি পঙ্গু হয়েছে। রাতে টহল দেয়ার সময় সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আটক করার পর ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত রয়েছে কিনা, এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আবার কখনও কিছুই জানতে না চেয়ে, এমনকি সঠিক তথ্য না নিয়ে সোর্সনির্ভর হয়ে গভীর রাতে চোখ বেঁধে নির্জন স্থানে নিয়ে পায়ে গুলি চালিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়। এরপর হাসপাতালে নিয়ে চিকিত্সাও দেয়া হয় তাদের পাহারায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাহারায় থাকা গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিকে বিভিন্ন কৌশলে অপরাধী বলে প্রচার করা হয়। কখনও শীর্ষ সন্ত্রাসীর সহযোগী, কখনো দাগি অপরাধীর সেকেন্ড ইন কমান্ড, কিলার, চাঁদাবাজ ও ছিনতাইকারী বলে প্রমাণ করার চেষ্টায় থানায় একাধিক কারণ দেখিয়ে মামলা করা হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রতিটি ঘটনায়ই র্যাব ও পুলিশের পক্ষ থেকে সেই একই ধরনের গল্প প্রচার করা হয়। পুলিশের একটি সূত্র জানায়, কোনো পথচারী ছিনতাইকারীর কবলে পড়লে পুলিশের টহল দল তাদের ধাওয়া করলে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় সন্ত্রাসীরা। এসময় পুলিশও পাল্টা গুলি চালালে ছিনতাইকারী আহত বা নিহত হয়। তবে অনুসন্ধান করে আরও জানা গেছে, অধিকাংশ ঘটনায়ই আহত ব্যক্তির পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়। শরীরের অন্য কোথাও গুলি না লাগায় মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া যায় যে গোলাগুলির ঘটনাটি ছিল রহস্যজনক। একতরফা গুলিতেই আহত হয়েছে ওই ব্যক্তি। অপরদিকে গুলিবিনিময়ের সময় ছিনতাইকারী সন্দেহের ব্যক্তি আটক হলেও তার কাছে কোনো আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়া যায় না। দু-একজনের কাছ থেকে ছোরা উদ্ধার করা হয়েছে বলে পুলিশের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
একটি নির্মম ঘটনা : গত ২৩ মার্চ বিকালে ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার সাতুরিয়া গ্রামের দিনমজুর তোফাজ্জল হোসেনের ছোট ছেলে লিমন মাঠে গরু আনতে গিয়ে র্যাবের হাতে আটক হয়। কাঁঠালিয়া পিজিএস কারিগরি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী সে। পথে স্থানীয় শহীদ জমাদ্দারের বাড়ির সামনে র্যাব-৮-এর একটি দল তাকে সামনে পেয়ে শার্টের কলার ধরে নাম জিজ্ঞেস করে। লিমন নিজেকে ছাত্র বলে পরিচয় দিলেও র্যাবের এক সদস্য কথাবার্তা ছাড়াই তার বাঁ পায়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে। গুরুতর আহত অবস্থায় বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে পঙ্গু হাসপাতালে আনলে চিকিত্সকরা তার পা কেটে ফেলেন। এই নির্মমতার খবর পত্রিকায় প্রকাশিত হলে লিমনের খবর জানতে গত বুধবার সকালে পঙ্গু হাসপাতালে ছুটে যান গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সংস্থার কর্মীরা। কিন্তু হাসপাতালে ঢুকেই তারা হতবাক—যে ওয়ার্ডে লিমন চিকিত্সাধীন সে ওয়ার্ডের দরজা তালাবদ্ধ। দুপুর পর্যন্ত কেউ সেখানে ঢুকতে পারেননি। পরে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানও লিমনকে দেখতে হাসপাতালে গেলে লিমনের আত্মীয়-স্বজনরা বিভিন্ন অভিযোগ করেন। বর্তমানে পুলিশ পাহারায় ওই নিরপরাধ কিশোর ছেলেটি হাসপাতালের বেডে যন্ত্রণায় ছটফট করছে। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছে লিমন তার ওপর র্যাবের নির্মমতার পুরো বিবরণ দিয়েছে। সে চেয়ারম্যানকে বলেছে, স্যার, আমি জীবনে পিস্তল দেখিনি, আর এখন আমি অস্ত্র মামলার আসামি। আমার কপালে কালির দাগ লেগে গেল। বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়ে ওই তরুণ। নিজেকে সামলে রাখতে পারছিলেন না চেয়ারম্যান নিজেও।
এদিকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু সচিবালয়ে নিজ দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, লিমনের ঘটনায় প্রয়োজন হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তদন্ত কমিটি করা হবে। তবে র্যাবের নিজস্ব বিভাগীয় তদন্ত দল রয়েছে, তারাও তদন্ত করতে পারে। এদিকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন লিমন হোসেনের ঘটনা দ্রুত তদন্তের জন্য অনুরোধ জানিয়ে বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে।
র্যাবের বক্তব্য : লিমনের ব্যাপারে জানতে চাইলে র্যাব সদর দফতরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং থেকে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বলা হয়, পত্রিকায় ঘটনাটি যেভাবে এসেছে প্রকৃত ঘটনা তা নয়। এতে বলা হয়, ২৩ মার্চ দিনের বেলায় র্যাবের দুটি বিশেষ অভিযান দল ১৮টি মামলার আসামি এবং ৯০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ-প্রাপ্ত পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী মোরশেদ জমাদ্দারকে গ্রেফতারের উদ্দেশ্যে রাজাপুর উপজেলার সাতুরিয়া গ্রামে তার গোপন আস্তানায় অভিযান চালায়। ওই আস্তানাটি সন্ত্রাসী মোরশেদের বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ধানক্ষেতের মধ্যে একটি কলাবাগান। খালের পাড় ধরে হেঁটে বাঁশের বেড়া টপকিয়ে মোরশেদের আস্তানায় ঢুকতে হয়। ওই দিন র্যাবের অভিযান দলের অগ্রগামী সাদা পোশাকধারী ২ র্যাব সদস্য মোরশেদের আস্তানায় প্রবেশ করলে লিমনসহ কিছু সন্ত্রাসী এগিয়ে এসে র্যাব সদস্যদের গতিরোধ করে আস্তানায় নেয়ার চেষ্টা করে। এ সময় র্যাব সদস্যদের সন্দেহ হলে নিজেদের পরিচয় প্রদান করে। এরই মধ্যে কলাবাগানের পেছনে অবস্থানকারী র্যাব পোশাক পরিহিত অভিযান দলের অপর সদস্যরা এগিয়ে আসে। এরই মাঝে ওই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা গ্রেফতার এড়ানোর লক্ষ্যে র্যাব সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। তত্ক্ষণাত্ র্যাব সদস্যরাও কিছু দূরে অবস্থান নিয়ে পাল্টা গুলি চালায় এবং আহত অবস্থায় লিমনকে আটক এবং ঘটনাস্থল থেকে গুলিভর্তি আগ্নেয়াস্ত্র এবং রামদাসহ দেশীয় ধারাল অস্ত্র উদ্ধার করে। তবে লিমন কার গুলিতে আহত হয় তা তাত্ক্ষণিক জানা যায়নি বলে র্যাবের দাবি। ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, স্থানীয় থানায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লিমন জামিনপ্রাপ্ত একজন চার্জশিটভুক্ত আসামি। তার বিরুদ্ধে রাজাপুর থানার মামলা নম্বর ০৫, তারিখ ৩/১২/২০০৯, ধারা : ১৪৩/৩৪১/৩২৩/৩২৪/৩৭৯/৫০৬ রুজু রয়েছে এবং ওই মামলায় গত ১০ জানুয়ারি সে জামিন পায়। এ ব্যাপারে আমার দেশ-এর রাজাপুর প্রতিনিধি রাজাপুর থানার ওসি তোফাজ্জল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে ওসি জানান, লিমনের নামে এক বছর আগের একটি মারামারি মামলা রয়েছে এবং এ মামলায় শুরু থেকেই সে জামিনে আছে। এমন কোনো গুরুতর অভিযোগ বা মামলা তার নামে নেই।
উল্লেখযোগ্য আরও কয়েকটি ঘটনা : চলতি বছর ২০ জানুয়ারি রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় র্যাব-১-এর গুলিতে মধ্যবাড্ডার জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে শামসুর রহমান শিমু (২২) এবং মেরুল বাড্ডার হাতিরঝিল এলাকার আবুল বাশারের ছেলে ঈসরাফিল আলম (২০) আহত হয়। র্যাব তখন বলেছিল, গুলিবিদ্ধ দুই যুবক পেশাদার ছিনতাইকারী। ২৪ মার্চ কমলাপুর স্টেডিয়ামের কাছে র্যাব-৩-এর গুলিতে আহত হয় দুই কিশোর সানি (১৮) ও আরিফ (১৭)। র্যাবের দাবি, গুলিবিদ্ধ দু’জনই ছিনতাইকারী। ৩০ মার্চ পুরানাপল্টনে র্যাবের গুলিতে রুবেল (১৮) ও সোহেল (২০) নামে দুই কিশোর আহত হয়েছে।
গত বছর ৯ ফেব্রুয়ারি সবুজবাগের মাদারটেক এলাকায় র্যাবের গুলিতে রুবেল হোসেন (২০) নামে এক যুবক আহত হয়। ২৬ নভেম্বর মতিঝিল আইডিয়াল ল্যাবরেটরি হাইস্কুলের সামনে র্যাবের গুলিতে আহত হয় তিন যুবক। এরা হচ্ছে ইসমাইল হোসেন বিল্লাল, ফারুক হোসেন এবং মামুন। র্যাব কর্মকর্তারা আহত তিন যুবককে ছিনতাইকারী দাবি করলেও তাদের পরিবার র্যাবের অভিযোগ অস্বীকার করে। ২৭ সেপ্টেম্বর ছিনতাইকারী সন্দেহে র্যাব ও পুলিশের গুলিতে তিনজন আহত হয়। আগারগাঁও এলাকায় ছিনতাইকারী সন্দেহে গুলি করে সুমন ওরফে পিচ্চি সুমন (২২) এবং জামাল হোসেন (২৪) নামে দুই কিশোরকে আটক করে র্যাব। র্যাবের দাবি তাদের কাছ থেকে ২টি গুলিসহ আমেরিকায় তৈরি একটি পিস্তল, একটি দেশীয় পাইপগান ও একটি ধারাল ছুরি উদ্ধার করা হয়। অন্যদিকে গেণ্ডারিয়া এলাকায় ছিনতাইকারী সন্দেহে ফয়সাল (২৩) নামে এক যুবককে গুলি করে আটক করে পুলিশ।
এর আগে পুরনো ঢাকার কোতোয়ালি এলাকায় পুলিশের গুলিতে আহত হয় কালু মিয়া নামে এক যুবক। পুলিশ জানায়, কালু মিয়া এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী। স্থানীয়রা বলেছিলেন, কালুকে আটকের পর চোখ বেঁধে তাতীবাজার প্রসন্ন পোদ্দার লেনের একটি নির্মাণাধীন বাড়িতে নিয়ে বাঁ পায়ে দু’রাউন্ড গুলি করে পুলিশ। কালুর আত্মীয়-স্বজনরা পুলিশের বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ করেন। একই বছর ১৯ জুলাই মিরপুরে পুলিশের গুলিতে শ্রমিক নেতা রফিকুল ইসলাম রুমীর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় তার সহযোগী জহিরুল আলমও গুলিবিদ্ধ হয়। পুলিশ জানায়, রুমি ডাকাত ছিল। অপরদিকে আত্মীয়-স্বজনের দাবি রুমি ডাকাত কিংবা অপরাধী ছিল না। সেদিন পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিও হয়নি। রুমিকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছে। স্বজনরা আরও জানান, রুমি বিমানবাহিনীর সাবেক সার্জেন্ট ছিল। সায়েদবাদ-ক্যান্টনমেন্ট সড়কের শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ও জিয়া বিমানবন্দর থানা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্লাবের সভাপতি ছিল সে। এর আগে বিয়ের আসর থেকে ফেরার পথে নৃত্য শিল্পীসহ চারজনকে ছিনতাইকারী সন্দেহে গ্রেফতার করে গুলি করে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ। এ ছাড়াও ছিনতাইকারী সন্দেহে পুলিশ, র্যাব ও ডিবি সদস্যদের গুলিতে আরও বহু মানুষ আহত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পল্লবীতে রুবেল, আমিনুল ইসলাম, কাকলীতে মকবুল হোসেন, হাফিজুর রহমান, বনানীতে আনোয়ার হোসেন, আদাবরে মোবারক হোসেন, হীরা, তেজগাঁওয়ে জাহাঙ্গীর হোসেন, উজ্জ্বল, সূত্রাপুরে সেলিম, মোহাম্মদপুরে সবুজ মিয়া ও সেলিম।
মানবাধিকার সংস্থার উদ্বেগ ও প্রতিবাদ : র্যাবের গুলিতে পা হারিয়ে পঙ্গু হাসপাতালে চিকিত্সাধীন ঝালকাঠির কলেজছাত্র লিমনের ঘটনায় আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) গভীর উদ্বেগ এবং প্রতিবাদ জানিয়েছে। এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, লিমনকে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করলেও তার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ তা র্যাব পরিষ্কার করতে পারেনি। এমনকি তাকে গুলি করার পর র্যাব তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা করলেও তদন্তকারী কর্মকর্তা এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগের প্রমাণ পায়নি। লিমনের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে র্যাবের দায়িত্ব ছিল তাকে বিচার প্রক্রিয়ায় সোপর্দ করা। কিন্তু তা না করে প্রকাশ্যে গুলি করে র্যাব বিচার ব্যবস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে, যা আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার শামিল। সেইসঙ্গে র্যাব আইনের রক্ষক থেকে ভক্ষকে পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের (বামাক) চেয়ারম্যান বিচারপতি একেএম সাদেক এবং মহাসচিব দিলদার এক বিজ্ঞপ্তিতে র্যাব কর্তৃক এইচএসসি পরীক্ষার্থী লিমনকে গুলি করা এবং পরে তার পা কেটে ফেলার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এই নিষ্ঠুরতম ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত এবং দায়ী র্যাব সদস্যদের বিরুদ্ধে জরুরি আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।

No comments:

Post a Comment