Wednesday, 29 December 2010

পুলিশের কাজে বাধাদান’ : বিরোধী নেতাকর্মীদের ফাঁসানোর নতুন অস্ত্র


নাছির উদ্দিন শোয়েব
তুচ্ছ ঘটনা নিয়েও এখন দেশে মামলা হচ্ছে। পুলিশের দায়িত্ব পালনে বাঁধা দেয়ার অভিযোগ এনে মামলা করে আসামি করা হচ্ছে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের। বিরোধী মতের লোকজনকে এসব মামলায় ফাঁসিয়ে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের নামে নির্যাতন করা হচ্ছে। এমনকি আদালতের পরোয়ানা ছাড়াই পুলিশ হানা দিয়ে যে কাউকে গ্রেফতার করছে। যাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে ওই ব্যক্তি পুলিশের কাজে বাধা তো দূরের কথা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঘটনা সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। এমনকি ঘটনাস্থলেও তিনি উপস্থিত ছিলেন না। অথচ মামলার আসামি হচ্ছেন তিনি। পুলিশের এ ধরনের মামলায় নাজেহাল হচ্ছেন অনেকেই। কিন্তু সরকারি দলের এমপি ও ক্যাডাররা যখন পুলিশের ওপর হামলা চালায়, থানার ওসিকে চড়থাপ্পড় দেয়, থানার ভেতরে ঢুকে পুলিশকে হুমকি দেয়, আসামি ছিনিয়ে নেয় তখন পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার মামলা হয় না। দু’একটি মামলা হলেও কেউ গ্রেফতার হয় না।
এ ব্যাপারে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া জানান, পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার ঘটনায় দায়ের করা অধিকাংশ মামলা আদালতে টেকে না। কারণ এসব মামলার বেশিরভাগই অসত্য। মিথ্যা এজাহার দাখিল করায় আদালতে আসামি খালাস পেয়ে যায়। তিনি বলেন, পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার ঘটনায় দণ্ডবিধির ৩৩২, ৩৩৩ ও ৩৫৩ ধারায় মামলা করা যায়। এ মামলায় সর্বোচ্চ ৩ বছর সাজা দেয়ার বিধান রয়েছে। তবে দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, বর্তমানে আদালত এসব মালায়ও দফায় দফায় রিমান্ড মঞ্জুর করছেন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ডিসি মনিরুল ইসলাম বলেন, মিথ্যা অভিযোগে এখন পর্যন্ত মামলা করার কোনো প্রমাণ আমাদের কাছে নেই। পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার ঘটনা প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক আসামির রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এ ক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নেই। তিনি আরও বলেন, রিমান্ডে এনে গোয়েন্দা কার্যালয়ে কাউকে নির্যাতন করা হয়েছে এ কথা কেউ বলতে পারবে না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার ঘটনায় বিভিন্ন থানায় দায়ের হওয়া এজাহারগুলোর বেশিরভাগই অসত্য। প্রতিপক্ষের লোকজনকে ঘায়েল করতে পুলিশকে দিয়ে ফরমায়েশি মামলা করানো হয়। রাজনৈতিক প্ররোচনায় এর কলকাঠি নাড়ছেন পুলিশের ঊর্ধতন কিছু কর্মকর্তা। পুলিশকে দিয়ে সাজানো মামলা করে প্রতিপক্ষকে সহজেই ঘায়েল করার কৌশল নেয়া হচ্ছে। ফলে অনেক মামলাই তত্ক্ষণাত্ দায়ের করা হয় না। ঊর্ধ্বতন মহলের ইঙ্গিতে মামলাগুলো দায়ের করা হয়। কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতারের সময় তার পক্ষের লোকজন বিক্ষোভ মিছিল করলেও পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে মামলা হয়। এমনকি আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে বিচারকের এজলাসে থাকা অবস্থায় বাইরে বিক্ষোভের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আটক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে এমন নজিরও রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাষ্ট্রের কল্যাণে প্রশাসন বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তাদের নিত্যনৈমিত্তিক কাজ করে থাকে। আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, অপরাধীকে আইনের হাতে সোপর্দ করা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর রুটিন ওয়ার্ক। এ ছাড়াও দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে এ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর ভূমিকা, বিশৃঙ্খলা ও সন্ত্রাস দমন এবং উগ্রবাদ নির্মূলে সরকারের কর্মসূচি বাস্তবায়নে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে কোনো ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠান বাধা দিলেই কেবল পুলিশের কাজে বাধা দেয়া হয়। অন্যথায় নয়। সঠিক তথ্য-প্রমাণ ছাড়া কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে হয়রানি করা নিশ্চয়ই পুলিশের কাজ নয়। আদালতের রায় কিংবা সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই কেবল আইন প্রয়োগকারী সংস্থা অভিযুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের হয়রানি করতে পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার কাল্পনিক কাহিনী ফেঁদে গ্রেফতার করে নির্যাতন করা হচ্ছে এমন বহু অভিযোগ রয়েছে। রিমান্ডে নেয়া হচ্ছে পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার রহস্য উদঘাটনের জন্য।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত জুনে দৈনিক আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগ এনে কাল্পনিক মামলা দায়ের করে তেজগাঁও থানা পুলিশ। মধ্যরাতে পুলিশ আমার দেশ সম্পাদককে গ্রেফতার করতে গেলে কর্মরত সাংবাদিকরা ওয়ারেন্ট দেখতে চান। এ নিয়ে সাংবাদিক ও পুলিশের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয় এবং জোরপূর্বক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করতে চাইলে সাংবাদিকরা প্রতিবাদ করেন। পরে পত্রিকার প্রকাশক হাসমত আলীর অভিযোগ থেকে খালাস পেলেও পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে মাহমুদুর রহমানকে আসামি করা হয় এবং কর্মরত ৫ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ। এ মামলায় মাহমুদুর রহমানকে রিমান্ডে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন চালায় পুলিশ। এরপর মাহমুদুর রহমানকে আদালতে হাজির করার সময় আইনজীবীদের বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ বাধা দিলে সেখানে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এতেও পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে মামলা হয়।
গত ২৯ জুন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এবং দলের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বেআইনি সমাবেশ, পুলিশের কর্তব্য কাজে বাধা দেয়া, পুলিশকে মারধর এবং ভাংচুরের অভিযোগে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এসব মামলা করা হয়। জামায়াতের তিন নেতাকে পল্টন থানায় দায়ের করা তিনটি মামলায় তিন দিন করে রিমান্ড আদেশ দেন আদালত। মামলায় এ তিন নেতার নাম না থাকলেও জামায়াত-শিবিরের সমাবেশে উপস্থিত থেকে এসব ঘটনা ঘটান বলে রিমান্ড আবেদনে উল্লেখ করা হয়। এছাড়াও গত ২৭ জুন হরতালে জামায়াত নেতাকর্মীরা পুলিশের কর্তব্য কাজে বাধা দেন এবং পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে পুলিশ সদস্যদের আহত করার অভিযোগ এনে রমনা থানায় ওইদিনই মামলা করা হয়। মামলায় এ তিন নেতার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে উল্লেখ করে রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ।
২৭ জুন হরতালে দাঙ্গা-হাঙ্গামা, ভাংচুর, সরকারকে অস্থিতিশীল করা এবং হত্যার উদ্দেশ্যে পুলিশকে গলা চেপে ধরার অপরাধে বিএনপি নেতা শমসের মুবিন চৌধুরী, মোস্তফা আহম্মেদ, মো. এলাহী, মো. বাবুল, সুলতান আহম্মেদ, মতিউর রহমান এলাহী এবং মো. মুসা কলিমুল্লাকে আসামি করে গুলশান থানায় মামলা করা হয় এবং তাদের রিমান্ডে নেয়া হয়।
১৬ নভেম্বর রাজধানীর গাবতলী মোড়ে ট্রাফিক কনস্টেবলকে মারধর করে আহত করা, পুলিশের দায়িত্ব পালনে বাধা এবং আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে চলচ্চিত্র অভিনেতা এবং ডিসিসির ৯ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার মনোয়ার হোসেন ডিপজলের বিরুদ্ধে দারুস সালাম থানায় মামলা করে পুলিশ। ২৮ নভেম্বর ডিপজল থানায় আত্মসমর্পণ করেন। এ মামলায় তাকে দুই দফা রিমান্ডে নেয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদে ট্রাফিক পুলিশকে মারধর এবং অস্ত্র দেখানোর বিষয়টি অস্বীকার করে ডিপজল বলেছেন, আলতাব হোসেন নামে ট্রাফিক পুলিশের ওই সদস্যের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়েছে। তিনি কাউকে মারধর করেননি বা অস্ত্র প্রদর্শন করেননি।
গত ২০ ডিসেম্বর বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া চীন যাওয়ার সময় হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে দলের নেতাদের হাতাহাতির ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় একটি মামলা হয়েছে। শনিবার এ ঘটনা ঘটলেও একদিন পর রোববার রাতে মামলা করা হয়। মামলায় বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন আলম ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেলসহ ৬ নেতাকে আসামি করা হয়েছে। সিভিল অ্যাভিয়েশন নিরাপত্তা বিভাগের উপ-পরিচালক তোফাজ্জল হোসেন বাদী হয়ে এ মামলা করেন। এ ঘটনায় বিএনপির মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন বলেন, বিমানবন্দরে বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা অশোভন আচরণ করে উল্টো তারাই আবার মামলা করেছে।
ভিন্ন চিত্র : কিছুদিন আগে যশোরের শার্শা থানার এমপি শেখ আফিল উদ্দিন তার অনুমতি না নিয়ে হত্যা মামলা নেয়ায় থানার ওসিকে ডেকে নিয়ে পিটিয়েছেন বলে জানা গেছে। ওসির জামার কলার ধরে বেধড়ক পিটিয়ে কক্ষের মেঝেতে ফেলে কিল, ঘুষি, লাথি, থাপ্পড় মারে এমপির ক্যাডাররা। এছাড়াও এমপির খেদোক্তি ছিল আজ জানে মারলাম না, আমার কথামত কাজ না করলে মেরেই ফেলব। এ ঘটনার পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওসিকে এলাকা ছেড়ে চলে যেতেও নির্দেশ দেন শেখ আফিল উদ্দিন। বিএনপি কর্মী আবদুল হামিদ খুন হওয়ার ঘটনায় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে মামলা হয়। পুলিশ ওই মামলার এজাহারভুক্ত এক আসামিকে গ্রেফতার করে। আর এতেই ক্ষিপ্ত হন এমপি শেখ আফিল উদ্দিন। ওসি এনামুল হক পরে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, বাসা থেকে ডেকে এনে এমপি আমাকে প্রথমে দু’তিনটি থাপ্পড় মারেন। আর এমপির ক্যাডার ঝিকরগাছার মুছা মাহমুদ আমার ইউনিফর্মের কলার চেপে ধরে তলপেটে দু’তিনটি লাথি মারে। এ সময় আমি দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে মুছা লাথি মারতে মারতে ঘরের বাইরে নিয়ে যায়। গত মে মাসে পুরনো ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কের সামনে মোটরসাইকেলের কাগজপত্র চেক করতে গিয়ে ছাত্রলীগ নেতার তোপের মুখে পড়েন সূত্রাপুর থানার এএসআই সাইফুর রহমান। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ওই নেতার মোটরসাইকেলের কাগজপত্র দেখতে চান তিনি। এ নিয়ে কথা কাটাকাটি হলে সাইফুর রহমানকে টেনেহিঁচড়ে ক্যাম্পাসে নিয়ে একটি রুমে আটকে রেখে নির্যাতন চালায়।
১৭ জুলাই কামরাঙ্গীরচর থানার লোহার ব্রিজের ঢালে চেকপোস্টে দায়িত্ব পালনকালে এসআই এবারত হোসেন কাগজপত্রবিহীন একটি মোটরসাইকেল আটক করে। ওই মোটরসাইকেলটি ছাড়িয়ে নিতে স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা জুম্মন ও মোহাম্মদ আলী পলাশ ঘটনাস্থলে আসে। এর আগে জুম্মন মোটর সাইকেলটি ছেড়ে দিতে পুলিশকে নির্দেশ দেয়। তার নির্দেশ অমান্য করায় ওই দুই নেতাসহ ১০-১৫ সন্ত্রাসী এসআই এবারত হোসেনকে মারধর করে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকা কলেজের সামনে এক সার্জেন্টকে বেদম পেটায় কয়েক ছাত্রলীগ ক্যাডার। সম্প্রতি রাজধানীতে এক এমপির পিএস’র হাতে লাঞ্ছিত হন এক পুলিশ কর্মকর্তা। এর আগেও সংসদ সদস্যের হাতে পুলিশ মার খেয়েছে। ওইসব ঘটনার বিচার তো হয়নি বরং মামলা হওয়ায় পুলিশ কর্মকর্তাদের ক্ষমা চাইতে হয়েছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, পুলিশের ওপর সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের এ নির্যাতন পুলিশের কাজে বাধার মধ্যে পড়ে না। দু’একটি ঘটনায় মামলা হলেও কোনো প্রকার অ্যাকশনে যায়নি পুলিশ প্রশাসন।

পুলিশের কাজে বাধাদান’ : বিরোধী নেতাকর্মীদের ফাঁসানোর নতুন অস্ত্র


নাছির উদ্দিন শোয়েব
তুচ্ছ ঘটনা নিয়েও এখন দেশে মামলা হচ্ছে। পুলিশের দায়িত্ব পালনে বাঁধা দেয়ার অভিযোগ এনে মামলা করে আসামি করা হচ্ছে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের। বিরোধী মতের লোকজনকে এসব মামলায় ফাঁসিয়ে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের নামে নির্যাতন করা হচ্ছে। এমনকি আদালতের পরোয়ানা ছাড়াই পুলিশ হানা দিয়ে যে কাউকে গ্রেফতার করছে। যাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে ওই ব্যক্তি পুলিশের কাজে বাধা তো দূরের কথা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঘটনা সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। এমনকি ঘটনাস্থলেও তিনি উপস্থিত ছিলেন না। অথচ মামলার আসামি হচ্ছেন তিনি। পুলিশের এ ধরনের মামলায় নাজেহাল হচ্ছেন অনেকেই। কিন্তু সরকারি দলের এমপি ও ক্যাডাররা যখন পুলিশের ওপর হামলা চালায়, থানার ওসিকে চড়থাপ্পড় দেয়, থানার ভেতরে ঢুকে পুলিশকে হুমকি দেয়, আসামি ছিনিয়ে নেয় তখন পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার মামলা হয় না। দু’একটি মামলা হলেও কেউ গ্রেফতার হয় না।
এ ব্যাপারে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া জানান, পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার ঘটনায় দায়ের করা অধিকাংশ মামলা আদালতে টেকে না। কারণ এসব মামলার বেশিরভাগই অসত্য। মিথ্যা এজাহার দাখিল করায় আদালতে আসামি খালাস পেয়ে যায়। তিনি বলেন, পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার ঘটনায় দণ্ডবিধির ৩৩২, ৩৩৩ ও ৩৫৩ ধারায় মামলা করা যায়। এ মামলায় সর্বোচ্চ ৩ বছর সাজা দেয়ার বিধান রয়েছে। তবে দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, বর্তমানে আদালত এসব মালায়ও দফায় দফায় রিমান্ড মঞ্জুর করছেন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ডিসি মনিরুল ইসলাম বলেন, মিথ্যা অভিযোগে এখন পর্যন্ত মামলা করার কোনো প্রমাণ আমাদের কাছে নেই। পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার ঘটনা প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক আসামির রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এ ক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নেই। তিনি আরও বলেন, রিমান্ডে এনে গোয়েন্দা কার্যালয়ে কাউকে নির্যাতন করা হয়েছে এ কথা কেউ বলতে পারবে না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার ঘটনায় বিভিন্ন থানায় দায়ের হওয়া এজাহারগুলোর বেশিরভাগই অসত্য। প্রতিপক্ষের লোকজনকে ঘায়েল করতে পুলিশকে দিয়ে ফরমায়েশি মামলা করানো হয়। রাজনৈতিক প্ররোচনায় এর কলকাঠি নাড়ছেন পুলিশের ঊর্ধতন কিছু কর্মকর্তা। পুলিশকে দিয়ে সাজানো মামলা করে প্রতিপক্ষকে সহজেই ঘায়েল করার কৌশল নেয়া হচ্ছে। ফলে অনেক মামলাই তত্ক্ষণাত্ দায়ের করা হয় না। ঊর্ধ্বতন মহলের ইঙ্গিতে মামলাগুলো দায়ের করা হয়। কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতারের সময় তার পক্ষের লোকজন বিক্ষোভ মিছিল করলেও পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে মামলা হয়। এমনকি আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে বিচারকের এজলাসে থাকা অবস্থায় বাইরে বিক্ষোভের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আটক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে এমন নজিরও রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাষ্ট্রের কল্যাণে প্রশাসন বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তাদের নিত্যনৈমিত্তিক কাজ করে থাকে। আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, অপরাধীকে আইনের হাতে সোপর্দ করা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর রুটিন ওয়ার্ক। এ ছাড়াও দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে এ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর ভূমিকা, বিশৃঙ্খলা ও সন্ত্রাস দমন এবং উগ্রবাদ নির্মূলে সরকারের কর্মসূচি বাস্তবায়নে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে কোনো ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠান বাধা দিলেই কেবল পুলিশের কাজে বাধা দেয়া হয়। অন্যথায় নয়। সঠিক তথ্য-প্রমাণ ছাড়া কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে হয়রানি করা নিশ্চয়ই পুলিশের কাজ নয়। আদালতের রায় কিংবা সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই কেবল আইন প্রয়োগকারী সংস্থা অভিযুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের হয়রানি করতে পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার কাল্পনিক কাহিনী ফেঁদে গ্রেফতার করে নির্যাতন করা হচ্ছে এমন বহু অভিযোগ রয়েছে। রিমান্ডে নেয়া হচ্ছে পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার রহস্য উদঘাটনের জন্য।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত জুনে দৈনিক আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগ এনে কাল্পনিক মামলা দায়ের করে তেজগাঁও থানা পুলিশ। মধ্যরাতে পুলিশ আমার দেশ সম্পাদককে গ্রেফতার করতে গেলে কর্মরত সাংবাদিকরা ওয়ারেন্ট দেখতে চান। এ নিয়ে সাংবাদিক ও পুলিশের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয় এবং জোরপূর্বক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করতে চাইলে সাংবাদিকরা প্রতিবাদ করেন। পরে পত্রিকার প্রকাশক হাসমত আলীর অভিযোগ থেকে খালাস পেলেও পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে মাহমুদুর রহমানকে আসামি করা হয় এবং কর্মরত ৫ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ। এ মামলায় মাহমুদুর রহমানকে রিমান্ডে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন চালায় পুলিশ। এরপর মাহমুদুর রহমানকে আদালতে হাজির করার সময় আইনজীবীদের বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ বাধা দিলে সেখানে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এতেও পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে মামলা হয়।
গত ২৯ জুন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এবং দলের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বেআইনি সমাবেশ, পুলিশের কর্তব্য কাজে বাধা দেয়া, পুলিশকে মারধর এবং ভাংচুরের অভিযোগে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এসব মামলা করা হয়। জামায়াতের তিন নেতাকে পল্টন থানায় দায়ের করা তিনটি মামলায় তিন দিন করে রিমান্ড আদেশ দেন আদালত। মামলায় এ তিন নেতার নাম না থাকলেও জামায়াত-শিবিরের সমাবেশে উপস্থিত থেকে এসব ঘটনা ঘটান বলে রিমান্ড আবেদনে উল্লেখ করা হয়। এছাড়াও গত ২৭ জুন হরতালে জামায়াত নেতাকর্মীরা পুলিশের কর্তব্য কাজে বাধা দেন এবং পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে পুলিশ সদস্যদের আহত করার অভিযোগ এনে রমনা থানায় ওইদিনই মামলা করা হয়। মামলায় এ তিন নেতার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে উল্লেখ করে রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ।
২৭ জুন হরতালে দাঙ্গা-হাঙ্গামা, ভাংচুর, সরকারকে অস্থিতিশীল করা এবং হত্যার উদ্দেশ্যে পুলিশকে গলা চেপে ধরার অপরাধে বিএনপি নেতা শমসের মুবিন চৌধুরী, মোস্তফা আহম্মেদ, মো. এলাহী, মো. বাবুল, সুলতান আহম্মেদ, মতিউর রহমান এলাহী এবং মো. মুসা কলিমুল্লাকে আসামি করে গুলশান থানায় মামলা করা হয় এবং তাদের রিমান্ডে নেয়া হয়।
১৬ নভেম্বর রাজধানীর গাবতলী মোড়ে ট্রাফিক কনস্টেবলকে মারধর করে আহত করা, পুলিশের দায়িত্ব পালনে বাধা এবং আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে চলচ্চিত্র অভিনেতা এবং ডিসিসির ৯ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার মনোয়ার হোসেন ডিপজলের বিরুদ্ধে দারুস সালাম থানায় মামলা করে পুলিশ। ২৮ নভেম্বর ডিপজল থানায় আত্মসমর্পণ করেন। এ মামলায় তাকে দুই দফা রিমান্ডে নেয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদে ট্রাফিক পুলিশকে মারধর এবং অস্ত্র দেখানোর বিষয়টি অস্বীকার করে ডিপজল বলেছেন, আলতাব হোসেন নামে ট্রাফিক পুলিশের ওই সদস্যের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়েছে। তিনি কাউকে মারধর করেননি বা অস্ত্র প্রদর্শন করেননি।
গত ২০ ডিসেম্বর বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া চীন যাওয়ার সময় হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে দলের নেতাদের হাতাহাতির ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় একটি মামলা হয়েছে। শনিবার এ ঘটনা ঘটলেও একদিন পর রোববার রাতে মামলা করা হয়। মামলায় বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন আলম ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেলসহ ৬ নেতাকে আসামি করা হয়েছে। সিভিল অ্যাভিয়েশন নিরাপত্তা বিভাগের উপ-পরিচালক তোফাজ্জল হোসেন বাদী হয়ে এ মামলা করেন। এ ঘটনায় বিএনপির মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন বলেন, বিমানবন্দরে বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা অশোভন আচরণ করে উল্টো তারাই আবার মামলা করেছে।
ভিন্ন চিত্র : কিছুদিন আগে যশোরের শার্শা থানার এমপি শেখ আফিল উদ্দিন তার অনুমতি না নিয়ে হত্যা মামলা নেয়ায় থানার ওসিকে ডেকে নিয়ে পিটিয়েছেন বলে জানা গেছে। ওসির জামার কলার ধরে বেধড়ক পিটিয়ে কক্ষের মেঝেতে ফেলে কিল, ঘুষি, লাথি, থাপ্পড় মারে এমপির ক্যাডাররা। এছাড়াও এমপির খেদোক্তি ছিল আজ জানে মারলাম না, আমার কথামত কাজ না করলে মেরেই ফেলব। এ ঘটনার পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওসিকে এলাকা ছেড়ে চলে যেতেও নির্দেশ দেন শেখ আফিল উদ্দিন। বিএনপি কর্মী আবদুল হামিদ খুন হওয়ার ঘটনায় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে মামলা হয়। পুলিশ ওই মামলার এজাহারভুক্ত এক আসামিকে গ্রেফতার করে। আর এতেই ক্ষিপ্ত হন এমপি শেখ আফিল উদ্দিন। ওসি এনামুল হক পরে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, বাসা থেকে ডেকে এনে এমপি আমাকে প্রথমে দু’তিনটি থাপ্পড় মারেন। আর এমপির ক্যাডার ঝিকরগাছার মুছা মাহমুদ আমার ইউনিফর্মের কলার চেপে ধরে তলপেটে দু’তিনটি লাথি মারে। এ সময় আমি দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে মুছা লাথি মারতে মারতে ঘরের বাইরে নিয়ে যায়। গত মে মাসে পুরনো ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কের সামনে মোটরসাইকেলের কাগজপত্র চেক করতে গিয়ে ছাত্রলীগ নেতার তোপের মুখে পড়েন সূত্রাপুর থানার এএসআই সাইফুর রহমান। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ওই নেতার মোটরসাইকেলের কাগজপত্র দেখতে চান তিনি। এ নিয়ে কথা কাটাকাটি হলে সাইফুর রহমানকে টেনেহিঁচড়ে ক্যাম্পাসে নিয়ে একটি রুমে আটকে রেখে নির্যাতন চালায়।
১৭ জুলাই কামরাঙ্গীরচর থানার লোহার ব্রিজের ঢালে চেকপোস্টে দায়িত্ব পালনকালে এসআই এবারত হোসেন কাগজপত্রবিহীন একটি মোটরসাইকেল আটক করে। ওই মোটরসাইকেলটি ছাড়িয়ে নিতে স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা জুম্মন ও মোহাম্মদ আলী পলাশ ঘটনাস্থলে আসে। এর আগে জুম্মন মোটর সাইকেলটি ছেড়ে দিতে পুলিশকে নির্দেশ দেয়। তার নির্দেশ অমান্য করায় ওই দুই নেতাসহ ১০-১৫ সন্ত্রাসী এসআই এবারত হোসেনকে মারধর করে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকা কলেজের সামনে এক সার্জেন্টকে বেদম পেটায় কয়েক ছাত্রলীগ ক্যাডার। সম্প্রতি রাজধানীতে এক এমপির পিএস’র হাতে লাঞ্ছিত হন এক পুলিশ কর্মকর্তা। এর আগেও সংসদ সদস্যের হাতে পুলিশ মার খেয়েছে। ওইসব ঘটনার বিচার তো হয়নি বরং মামলা হওয়ায় পুলিশ কর্মকর্তাদের ক্ষমা চাইতে হয়েছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, পুলিশের ওপর সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের এ নির্যাতন পুলিশের কাজে বাধার মধ্যে পড়ে না। দু’একটি ঘটনায় মামলা হলেও কোনো প্রকার অ্যাকশনে যায়নি পুলিশ প্রশাসন।

রিমান্ডে নির্মম নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন সা. কাদের চৌধুরী

নাছির উদ্দিন শোয়েব

ডিবি কার্যালয়ে রিমান্ডে থাকা অবস্থায় বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে দুটি গোয়েন্দা সংস্থার ৮ সদস্য অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পাঁচ দিনের রিমান্ডে ডিবি কর্মকর্তারা তাকে তেমন কোনো জিজ্ঞাসাবাদ না করলেও গভীর রাতে অন্য সংস্থার লোকজন এসে তার ওপর নির্মম নির্যাতন চালায়। নাকে ঘুষি দিয়ে তাকে রক্তাক্ত করা হয়। বৈদ্যুতিক শক দেয়া হয়। পায়ের নিচে শক্ত লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয়। শরীরে ইনজেকশন পুশ করা হয়। এ ছাড়াও তাকে বিভিন্ন হুমকি দিয়ে মানসিকভাবে দুর্বল করার চেষ্টা করেছে তারা। একপর্যায়ে তাকে এই বলে হুমকি দেয়া হয়েছে, ‘ওয়ার্ড কমিশনার চৌধুরী আলমকে পেটের নাড়িভুঁড়ি বের করে যেভাবে নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে, তোর পরিণতিও ঠিক একই রকম হবে।’ সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী নাকের রক্ত যে টিস্যু দিয়ে মুছেছেন সেই টিস্যুটি তিনি তার পরিবারের কাছে সরবরাহ করেন। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পারিবারিক সূত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
২৬ জুন মগবাজারে গাড়ি পোড়ানো মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে গতকাল সিএমএম আদালতে হাজির করা হয়। আদালতের অনুমতি নিয়ে দুপুরে পরিবারের তিন সদস্য এবং তিন আইনজীবী তার সঙ্গে সাক্ষাত্ করেন। সাক্ষাত্কারীরা হচ্ছেন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী, বড় ছেলে ফাইয়াজ কাদের চৌধুরী, ছোট ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী, আইনজীবী ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম, ব্যারিস্টার ডালিয়া চৌধুরী (বড় ছেলের স্ত্রী) এবং অ্যাডভোকেট আবু জাফর মানিক। চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে তারা আদালতের হাজতখানায় সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাত্ করেন। এসময় সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে তারা কোনো খাবার সরবরাহ করতে পারেননি। ফল, বিস্কুট ও পারিবারিকভাবে কিছু খাবার নিয়ে গেলেও পুলিশ তা সরবরাহ করতে দেয়নি বলে জানা গেছে।
এদিকে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিচারকাজ পর্যবেক্ষণে দুপুরে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের দুই কূটনীতিক আদালতে যান। দুপুর ১টায় মার্কিন দূতাবাসের রাজনৈতিক কর্মকর্তা পোলিয়ার ফরেস্ট গ্রাহাম ও সহকারী রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ লুবেন চৌধুরী মাসুম আদালতে পৌঁছান। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনজীবীর মাধ্যমে তারা আদালতের অনুমতি চাইলেও তাদের হাজতখানায় বিএনপি নেতার সঙ্গে দেখা করতে দেয়া হয়নি। সূত্র জানায়, ওই দুই মার্কিন কূটনৈতিক স্বেচ্ছায় বিচারকাজ পর্যবেক্ষণ করতে গিয়েছিলেন। সাক্ষাতের অনুমতি না পেয়ে পরিবারের কাছ থেকে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রিমান্ড, নির্যাতন এবং তার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। এর প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট দফতরে উপস্থাপন করা হবে বলে তারা পরিবারকে জানিয়েছেন।
পারিবারিক সূত্র জানায়, গত ১৬ ডিসেম্বর রাজধানীর বনানী থেকে গ্রেফতার হওয়ার পর গতকালই প্রথম পরিবারের লোকজনের সাক্ষাত্ পেলেন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী। বেলা আড়াইটার দিকে আদালতের হাজতখানায় পরিবারের সদস্যদের কাছে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি। এসময় এক আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়। গ্রেফতারের পর ৬ দিনে তার জীবনের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া দুঃসহ দিনগুলোর কথা তুলে ধরেন তিনি। ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মানসিক অবস্থা এখনও আগের মতোই আছে। তিনি ভেঙে পড়েননি। তিনি স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে এবং পরিবারের উদ্দেশে বলেছেন, তার মনোবল অটুট আছে, থাকবে। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে তাদের বলেছেন, ‘আমাকে সাফ করে দেয়া এতটা সহজ নয়। দল যদি পাশে থাকে ওরা আমার কিছুই করতে পারবে না।’ এসময় পরিবারের সদস্যরা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, ম্যাডামের কাছে (বিরোধীদলীয় নেতা) আপনার সব খবর আছে। আপনাকে গ্রেফতার এবং নির্যাতনের বিষয় নিয়ে দলীয় পক্ষ থেকে কর্মসূচি চলছে। সাধারণ মানুষ সরকারের এসব বিষয় ভালোভাবে নেয়নি বলেও তাকে অবহিত করা হয়েছে। পরিবারের কাছ থেকে এসব কথা শুনে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মনোবল আরও দৃঢ় হয়েছে বলে জানা যায়।
পারিবারিক সূত্র জানায়, হাজতখানায় ৩০ মিনিটের সাক্ষাতে বেশিরভাগ সময়েই তিনি তার ওপর নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন। এসময় তার পা ফোলা এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। তিনি বলেছেন, গ্রেফতারের পরপরই আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কিছু সদস্য তার ওপর নির্যাতন শুরু করে। এরপর ক্যান্টনমেন্ট থানায় নিয়ে পায়ের এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত করা হয়। শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্লেড দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। এরপর ডিবি কার্যালয়ে রিমান্ডে নিয়েও তার ওপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। তিনি বলেন, ৫ দিনের রিমান্ডে থাকাকালে ডিবির কর্মকর্তারা তার ওপর নির্যাতন চালায়নি। তদন্ত কর্মকর্তা তার কাছে তেমন কোনো বিষয় জানতেও চায়নি। তবে রাতে দুটি গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন মাঝেমধ্যেই ডিবি কার্যালয়ে এসে তার ওপর নির্যাতন করেছে। কখনও চোখ বেঁধে, আবার চোখ খোলা রেখে নির্যাতন করেছে। তাদের সংখ্যা হবে ৭-৮ জন। তারা বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে আমাকে মানসিকভাবে দুর্বল করার চেষ্টা করে। শরীরে বৈদ্যুতিক শক দেয়া হয়েছে। ইনজেকশন পুশ করা হয়েছে। নির্যাতনে আমার চোখ দিয়ে পানি বের না হওয়ায় তারা অবাক হয়ে বলে, তুই তো কঠিন মানুষ। চোখে এক ফোঁটা পানিও নেই? এরপর তারা হুমকি দিয়ে বলেছে, তোর পরিণতি কী হবে জানি না। ওয়ার্ড কমিশনার চৌধুরী আলমকে যেভাবে পেট কেটে নাড়িভুঁড়ি বের করে নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে তোর পরিণতিও হবে সেরকম। এসব কথা শুনে মাঝেমধ্যে ঘাবড়ে গেলেও মানসিকভাবে তাকে দুর্বল করতে পারেনি। এভাবে প্রতিরাতেই বাইরে থেকে লোকজন এসে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে নির্যাতন চালিয়েছে। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী পরিবারের কাছে আরও বলেন, বাইরে থেকে ওই লোকজন যখনই আসত ডিবির কর্মকর্তারা তখন ওই কক্ষ থেকে চলে যেতেন।

রিমান্ড শেষে আদালতে না তুলেই সা. কাদেরকে জেলে প্রেরণ : শুনানিতে হট্টগোল, বিচার দেখলেন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা



স্টাফ রিপোর্টার
টানা ৫ দিন রিমান্ড শেষে বিএনপি নেতা ও বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে গতকাল কারাগারে পাঠানো হয়েছে। শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য তাকে আদালতে হাজির করা নিয়ে উভয় পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে তুমুল হট্টগোল, বাকবিতণ্ডা ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। শেষ পর্যন্ত তাকে আদালতে হাজির না করেই জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়া হয়। একই সঙ্গে আদালত তাকে উন্নত চিকিত্সা এবং কারাগারে প্রথম শ্রেণীর কয়েদির মর্যাদা দেয়ার জন্য সরকারকে নির্দেশ দেন। আদালতে উপস্থিত থেকে আইনজীবীদের শুনানি ও বিচার কাজ পর্যবেক্ষণ করেন মার্কিন দূতাবাসসহ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মকর্তারা। তবে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সঙ্গে আইনজীবীসহ পর্যবেক্ষকদের কাউকেই দেখা করতে দেয়া হয়নি। শুনানিকালে তার মুক্তির দাবিতে আদালত চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল করার সময় ছাত্রদল ও যুবদল নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশ এবং ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। মিছিল থেকে পুলিশ ছাত্রদলের ১০ নেতাকে আটক করে কোতোয়ালি থানায় নিয়ে গেছে।
রিমান্ডে নিয়ে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ওপর বর্বর নির্যাতন ও অমানবিক আচরণ করা হয়েছে বলে তার আইনজীবীরা সাংবাদিক ও বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে অভিযোগ করেছেন। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমদ তালুকদার বলেন, নির্যাতন করে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর জীবন বিপন্ন করে দেয়া হয়েছে। এ কারণেই তাকে কোর্ট হাজত থেকে আদালতে তুলতে দেয়নি সরকার পক্ষ। কোর্ট হাজতে রেখেই পরে তাকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে গত ১৬ ডিসেম্বর ভোররাতে র্যাব ও পুলিশ আটক করার পর ওইদিনই তাকে মগবাজারে একটি গাড়িতে আগুন দেয়ার কথিত অভিযোগে দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ড নেয় ডিবি পুলিশ।
আদালতে তুমুল হট্টগোল : সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে গতকাল একটি প্রিজন ভ্যানে করে ডিবি কার্যালয় থেকে কড়া পুলিশি প্রহরায় কোর্ট হাজতে নেয়া হয় বেলা আড়াইটার দিকে। বেলা পৌনে তিনটার দিকে মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তফা শাহরিয়ার খানের আদালতে শুনানি শুরু হলে অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমদ তালুকদার সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে কোর্ট হাজত থেকে আদালতে উঠানোর জন্য আবেদন করে বলেন, ৫ দিন রিমান্ডে রেখে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ওপর অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে। গ্রেফতারের দিন থেকে তার সঙ্গে পরিবারের সদস্য তো দূরের কথা, কোনো আইনজীবীকেও দেখা করতে দেয়া হয়নি। ডিবি কার্যালয় থেকে তাকে কোর্ট হাজতে এনে রাখা হয়েছে। তাকে আদালতে তোলা হলে তার ওপর কি নির্মম নির্যাতন করা হয়েছে তা আদালত পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। রিমান্ড ফেরত আসামিদের আদালতে উপস্থাপন করে বিচারক তার শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণের বিষয়ে উচ্চ আদালতেরও নির্দেশনা রয়েছে। তার ওপর নির্যাতনে পরিবারের সদস্যরা উদ্বিগ্ন। আমরাও তার জীবন নিয়ে শঙ্কিত। আমরা চাই আইনের বিধান মেনেই তাকে আদালতে তোলা হোক। অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমদের এ আবেদনের বিরোধিতা করে সরকার পক্ষ ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা একযোগে চিত্কার করে বলতে থাকেন, আসামিকে আদালতে না তুলেও শুনানি করা যায়। আসামির ব্যাপারে নতুন করে রিমান্ড চাওয়া হয়নি। এমনকি তাকে নতুন কোনো মামলায় শ্যোন অ্যারেস্টও করা হয়নি। কাজেই তাকে আদালতে তুলে সময় নষ্ট করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। সরকার পক্ষের আইনজীবীদের এ বক্তব্যে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনজীবীরা একযোগে প্রতিবাদ করতে থাকেন। অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমদ তালুকদার বলেন, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদ। গত ৩২ বছর ধরে তিনি জাতীয় সংসদের সদস্য। তার মতো একজন জাতীয় ব্যক্তিত্বকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। অথচ এখন সরকার পক্ষ তাকে আদালতে তুলতে বাধা দিচ্ছে। এটা আইনের লঙ্ঘন ও ন্যায়বিচার পরিপন্থী। এ সময় সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম বক্তব্য দিতে চাইলে সরকার পক্ষের ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা একযোগে চিত্কার ও চেঁচামেচি শুরু করে দেন। তারা ফখরুল ইসলামকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনি কথা বলতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে আসতে হবে। আপনি মুক্তিযুদ্ধ ও ভারতীয় বাহিনী নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য দিয়েছেন। আপনি তো বাংলাদেশের নাগরিকই নন। এ নিয়ে দ্বিতীয় দফা হইচই শুরু হলে বিচারক এজলাস ত্যাগ করে খাস কামরায় চলে যান। উভয় পক্ষের সিনিয়র আইনজীবীরা পরামর্শ করে পেশকারের মাধ্যমে ম্যাজিস্ট্রেটকে আবার এজলাসে আসার অনুরোধ জানান। হট্টগোল থামলে ম্যাজিস্ট্রেট ১০ মিনিট পর আবার এজলাসে এসে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে আদালতে না তুলেই শুনানি করার পরামর্শ দেন আইনজীবীদের।
জামিনের শুনানি : জামিন আবেদন পেশ করে অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমদ তালুকদার আদালতে বলেন, মগবাজারে গাড়ি পোড়ানোর অভিযোগে দায়ের করা মামলাটি রাজনৈতিক। এ মামলার ভবিষ্যত্ও রাজনীতির ওপর নির্ভরশীল। ঘটনার তিনদিন আগে থেকেই সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ঢাকায় ছিলেন না। তিনি ছিলেন চট্টগ্রামে। সেখান থেকে একটা মানুষের পক্ষে ঢাকার মগবাজারে নিজে সশরীরে হাজির হয়ে গাড়িতে আগুন দেয়ার ঘটনা বিশ্বের কোনো পাগলও বিশ্বাস করবে না। অথচ সরকারের সংশ্লিষ্টরা এটা বিশ্বাসযোগ্য করার চেষ্টা করছেন। এ মামলায় আমরা তার জামিন মঞ্জুরের আবেদন করছি। এ পর্যায়ে আদালত আর কোনো আবেদন আছে কিনা জানতে চান। জবাবে মাসুদ আহমদ তালুকদার বলেন, যদি জামিন নামঞ্জুর হয়, তাহলে কারাগারে তাকে ডিভিশন প্রদান ও উন্নত চিকিত্সা সংক্রান্ত আমাদের আরও দুটি আবেদন রয়েছে।
জামিন আবেদনের বিরোধিতা করে পিপি আবদুল্লাহ আবু আদালতে বলেন, এ মামলায় জামিন মঞ্জুরের কোনো সুযোগ নেই। তার বিরুদ্ধে এরই মধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন। এ মামলায় তাকে জামিনে মুক্তি দিলে তিনি পালিয়েও যেতে পারেন। কাজেই তাকে জামিন দেয়া যাবে না। জবাবে মাসুদ আহমদ তালুকদার বলেন, আমরা শুনানি করছি গাড়িতে আগুন দেয়ার মামলা নিয়ে। এখানে অন্য কোনো মামলা বা ইস্যু নিয়ে আসা আইনসম্মত নয়। মূলত বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের রাজনৈতিকভাবে হয়রানির জন্য সরকার প্রহসনের মামলা ও ফরমায়েশি বিচারের আয়োজন করেছে। এ মামলা তারই নিকৃষ্ট প্রমাণ। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে সালাহউদ্দীন কাদের চৌধুরীকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে আদালত কারাগারে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে প্রথম শ্রেণীর কয়েদির মর্যাদা দেয়ার নির্দেশ দেন।
কূটনীতিকদের পর্যবেক্ষণ : সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ওপর অমানবিক নির্যাতনের বিষয়টি দেখা এবং তার বিচার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করার জন্য ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের দুইজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ অপর একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার একজন প্রতিনিধি গতকাল বেলা ১টায় আদালতে যান। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে কোর্ট হাজত থেকে আদালতে না উঠানোর কারণে তার ওপর কি ধরনের নির্যাতন হয়েছে তা দেখতে পারেননি। আদালতে সরকার পক্ষের বিরোধিতা এবং ছাত্রদল ও আইনজীবীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ, গ্রেফতার ও টানাহেঁচড়ার দৃশ্য তারা প্রত্যক্ষ করেন। গত ১৬ ডিসেম্বর সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে গ্রেফতারের পর ক্যান্টনমেন্ট ও ডিবি কার্যালয়ে তার ওপর প্রচণ্ড নির্যাতন করা হয়েছে বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় মার্কিন দূতাবাসসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে দেখা এবং তার বিচার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে আদালতে যান।
১০ নেতাকর্মী গ্রেফতার : সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে আদালতে হাজির করা হবে জেনে দুপুর থেকেই বিএনপি, ছাত্রদল ও যুবদলের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী পুরান ঢাকার কোর্ট এলাকায় সমবেত হন। তারা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মুক্তি দাবি করে স্লোগান দেন। একই সঙ্গে ছাত্রলীগ ও যুবলীগেরও বেশ কিছুসংখ্যক নেতাকর্মী জড়ো হয়ে তার শাস্তি দাবিতে মিছিল করে। পুলিশ ছাত্রদল ও যুবদলের মিছিলে লাঠিচার্জ করে আদালত চত্বর থেকে সরিয়ে দিয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের জায়গা করে দেয়। এ নিয়ে ত্রিমুখী সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। পুলিশের সঙ্গে যোগ দিয়ে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরাও বিএনপির মিছিলে হামলা করে। এখান থেকে ছাত্রদল ঢাকা মহানগর (দ.) সভাপতি মোহাম্মদ ইসহাক ও কোতোয়ালি থানা সভাপতি মোস্তাক আহমদসহ ১০ জনকে আটক করা হয়। ছাত্রদলের আটককৃত অপর নেতাকর্মীরা হচ্ছেন মানিক হোসেন, মিন্টু, জাহাঙ্গীর হোসেন, শাহ কামাল, মো. জাহাঙ্গীর, জিটু ও ফরিদ। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তাদের কোতোয়ালি থানায় আটক রাখা হয়েছে। কোতোয়ালি থানার ডিউটি অফিসার আমার দেশকে জানান, ওসি সাহেব থানায় এলে আটককৃতদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তাদের কোনো মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট করা হবে, নাকি নতুন মামলা দিয়ে চালান দেয়া হবে তার সিদ্ধান্ত হয়নি।
আদালতে সরকার পক্ষে শুনানি করেন পিপি আবদুল্লাহ আবু, অ্যাডভোকেট আবদুর রহমান হাওলাদার, মুখলেছুর রহমান প্রমুখ। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমদ তালুকদার, মহসিন মিয়া, ওমর ফারুক ফারুকী, মোসলেহউদ্দিন জসিম, খোরশেদ আলম তালুকদার, জয়নাল আবেদীন মেজবাহ প্রমুখ। শুনানির সময় আদালতে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েরা উপস্থিত ছিলেন। পরে আদালতের অনুমতি নিয়ে তারা কোর্ট হাজতে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করেন

Tuesday, 28 December 2010

মানবাধিকার লঙ্ঘনের বছর




আলাউদ্দিন আরিফ

২০১০ সালের পুরোটাই ছিল মানবাধিকার লঙ্ঘনের বছর। রাজধানী ঢাকাসহ দেশজুড়ে ঘটেছে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অসংখ্য ঘটনা। হত্যা, অপহরণ ও ক্রসফায়ারসহ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুপ্তহত্যা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পরিচয়ে অপহরণের পর নিখোঁজ, গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার, মামলা দিয়ে হয়রানি, শ্যোন অ্যারেস্ট, রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন, নারী নির্যাতন, ইভটিজিং, সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর দখল, বিডিআর বিদ্রোহে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে মৃত্যু এবং সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের দলন চলেছে বছরজুড়ে। হত্যা বন্ধের জন্য বিএসএফ প্রধানের একের পর এক প্রতিশ্রুতির পরও সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়েছেন একের পর এক বাংলাদেশী নাগরিক।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দেশজুড়ে অব্যাহতভাবে চলছে ক্রসফায়ারের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। যেসব এলাকায় লোকজন ক্রসফায়ারের শিকার হয়েছেন তার কোথাও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি, বরং অবনতি হয়েছে। এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কেন এসব ক্রসফায়ার ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড।
মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) জানায়, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ—বরাবর এই ঘোষণা দেয়া হলেও তা অব্যাহতভাবেই চলেছে। আত্মরক্ষার্থে গুলিবর্ষণের দোহাই দিয়ে বিচারবহির্ভূত হত্যকাণ্ডকে সমর্থন দেয়া হয়েছে। আসকের হিসেব অনুযায়ী চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত ১১৭ জন ক্রসফায়ারের শিকার হয়েছে। এই সরকারের সময়ে গুপ্তহত্যা নামে এক ভয়ঙ্কর শব্দ শুনেছে মানুষ। অপহরণের শিকার অনেকের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার হয়েছে। আসক আরও জানায়, বছরজুড়েই নাজুক ছিল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সহিংসতায় একের পর এক মেধাবী ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। বখাটেদের উত্পাতে কলেজশিক্ষক ও মা-বাবাসহ অনেকে খুন হয়েছেন। হরতালের সময় গ্রেফতারের নামে বিরোধী দলের প্রতিবাদ জানানোর অধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে। হাইকোর্টে বিচারক নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। সাংবাদিকরা সরকারদলীয় নেতাদের হুমকি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমিবিরোধ নিরসন নিয়ে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। এছাড়া গার্মেন্ট শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন নিয়ে দীর্ঘসূত্রতা, রূপগঞ্জে সেনা হাউজিং প্রকল্প নিয়ে সৃষ্ট সহিংসতা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় আসকের রিপোর্টে।
মানবাধিকার সংস্থা অধিকার বলেছে, চলতি বছর প্রতি তিন দিনে একজন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। প্রতি চার দিনে একজন বাংলাদেশী নাগরিক নিহত হয়েছেন বিএসএফের গুলিতে। আমার দেশ পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ করা, আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার ও কারাদণ্ড, বিশেষ প্রতিনিধি অলিউল্লাহ নোমানের কারাদণ্ড, চ্যানেল ওয়ান বন্ধ করে দেয়া, সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ফেস বুক বন্ধ করা, ক্রসফায়ারসংক্রান্ত আলোকচিত্র বন্ধ করে দেয়া, গণমাধ্যমের স্বাধীনতাহরণ, সন্ত্রাস দমন আইন ২০০৯-এ নির্যাতন ও হয়রানি, হিযবুত তাহ্রীর নিষিদ্ধ ঘোষণা, রাজনৈতিক সহিংসতার ভয়াবহতা, সভা-সমাবেশে পুলিশি বাধা, ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের সংগ্রামে নিয়োজিত নেতাদের আটক করে ভারতের হাতে তুলে দেয়া, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু নির্যাতন, নারী নির্যাতন, যৌতুকের সহিংসতা ও ইভটিজিং, তৈরি পোশাক খাতে অস্থিরতা, গার্মেন্টে অগ্নিকাণ্ড ও ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহতদের লাশ গায়েব, অধিকারের নির্যাতন প্রতিরোধবিষয়ক কার্যক্রমের মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন নাকচ—মানবাধিকার লঙ্ঘনের এসব বিষয়ে কঠোর সমালোচনা করেছে অধিকার।
চলতি বছর বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী, আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, বিএনপি নেতা লুত্ফুজ্জামান বাবর, এহসানুল হক মিলনসহ বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার এবং নির্যাতন চালানো হয়েছে। রিমান্ডে নিয়ে তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। এক কারাগার থেকে অন্য কারাগারে চালান করে হয়রানি ও নির্যাতন চালানো হয়েছে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের অ্যারেস্ট দেখিয়ে ও মামলা দিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে।
গত ১৬ ডিসেম্বর বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার করেই তাকে বেদম মারধর করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বলেন, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে কোনো ধরনের নির্যাতন করা হয়নি। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেন, তিনি নির্যাতিত হলে তার পোশাকে রক্তের দাগ থাকত। তার জামায় রক্তের দাগ নেই। তিনি আরও বলেন, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রক্ত আর সাদা নয় যে দাগ থাকবে না। নিম্ন আদালতে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্ত্রী রক্তমাখা টিস্যু উপস্থাপন করেন। সবাইকে অবাক করে দিয়ে সরকারপক্ষের পিপি বলেন, লাল রং মেখে ওই টিস্যু আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে। এর আগে চট্টগ্রামে লুত্ফুজ্জামান বাবরের নাক দিয়ে রক্ত পড়া অবস্থায় এবং তার পাঞ্জাবি রক্তাক্ত অবস্থায় রিমান্ডে নেয়ার ছবি পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছিলেন ৫ জন। ফেব্রুয়ারিতে র্যাব-পুলিশের হাতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হন ১২ জন। জেলহাজতে মারা যান ৬ জন। মার্চ মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হন ৭ জন। এপ্রিলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ক্রসফায়ারে ৯ নিহত হয়েছেন। এপ্রিলে ৫ জন জেল হেফাজতে অসুস্থতাজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেছেন বলে জানা গেছে। গত ২৭ এপ্রিল মিজানুর রহমান সুমন নামের এক ব্যবসায়ীকে সাদা পোশাকধারী র্যাব সদস্যরা গাইবান্ধার মহিমগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করে ঢাকায় নিয়ে আসে। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ রয়েছেন।
মে মাসে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে ১৭ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ৪ জনের নির্যাতনের ফলে মৃত্যু হয়েছে। গত ১১ মে চট্টগ্রামের রেয়াজউদ্দিন বাজারের আঞ্জুমান আবাসিক হোটেলের নৈশপ্রহরী মানিক মারা যান। ১৩ মে নোয়াখালী জেলার চাটখিল থানা হেফাজতে রবিউল ইসলাম খোকন নামে এক ব্যক্তি মারা গেছেন। ঢাকায় র্যাব-১ হেফাজতে আবুল কালাম আজাদ নামে এক ব্যবসায়ী মারা গেছেন।
জুনে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হন ১১ জন। গত ৩০ জুন রাতে মিজানুর রহমান নামে এক ব্যবসায়ী গুলশান থানা হেফাজতে মারা গেছেন। মিজানের স্ত্রী তাসলিমা বেগম অভিযোগ করেন, তার স্বামীকে বারিধারার নয়ানগর থেকে গত ২৯ জুন পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। এরপর তার কাছে পুলিশ ১ লাখ টাকা চায়। টাকা না পেয়ে পুলিশ তার স্বামীকে গুলি করে হত্যা করে। যে রাতে তার স্বামীকে গুলি করে হত্যা করা হয় সে রাতেই গুলশান থানা হাজতে তিনি তার স্বামীর জন্য খাবার দিয়ে আসেন। ৩০ জুন রাতে পুলিশ মিজানকে হাত-পা বেঁধে হাজত থেকে বাইরে নিয়ে যায় এবং মাটিতে শুইয়ে পায়ে পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করে। এ ঘটনাটির তদন্ত করে অধিকার। তাদের তদন্তে প্রমাণিত হয় মিজানকে গুলি করে হত্যা করার। মিজানকে হত্যার পর তার পরিবারের অসহায় অবস্থা। তার স্ত্রী ও সন্তানদের অর্ধাহার-অনাহারে দিন কাটে। এরপরও তাদের ওপর নানা ধরনের হুমকি দিয়ে ওই ঘটনা নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার জন্য বলা হয়।
২৯ জুন রমনা থানা হেফাজতে মারা যান বাবুল গাজী নামে এক ব্যক্তি। গত ২৫ জুন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পরিচয়ে অপহরণ করা হয় জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগরীর ৫৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর চৌধুরী আলমকে। আজও চৌধুরী আলমের প্রতীক্ষায় দিন কাটাচ্ছে তার পরিবার। স্বামীর শোকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন চৌধুরী আলমের স্ত্রী হাসিনা চৌধুরী (৫৫)। দুই ছেলে ও দুই মেয়ে বাবার পথ চেয়ে দিন কাটায়। হাসিনা চৌধুরী ১৪ বছর ধরে ডায়াবেটিসের রোগী। স্বামীর শোকে তিনিও এখন মৃতপ্রায়। তিনি কোথায় কী অবস্থায় আছেন কোনো খবরই পাচ্ছেন না। অসুস্থ অবস্থায় স্বামীকে খুঁজতে গিয়ে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। হাসিনা চৌধুরী বলেন, একজন অসুস্থ মানুষকে কারা আটক করে নিয়ে কী অবস্থায়, কোথায় রাখা হয়েছে কিছুই জানি না। মনে হয় মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আর স্বামীর মুখ দেখতে পারব না। চৌধুরী আলমের ছোট ভাই খোরশেদ আলম মিন্টু বলেন, আমার ভাই যদি কোনো অপরাধ করে থাকে তার আইন অনুযায়ী বিচার হোক। তিনি নিখোঁজ হওয়ার ছয় মাস হয়েছে; কিন্তু তার নিখোঁজ হওয়া নিয়ে কেউ মুখ খুলছেন না।
জুলাই মাসে ১০ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এদের মধ্যে ৬ জনই ক্রসফায়ারে মারা গেছে। ৩ জন মারা গেছে পুলিশের নির্যাতনে। গত ৩ জুলাই মজিবর নামে এক ব্যক্তিকে মিরপুরের দারুস সালাম থানার সাদা পোশাকধারী পুলিশ ধরে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে। গত ৪ জুলাই তার লাশ তুরাগ নদী থেকে উদ্ধার করা হয়। মজিবরকে যখন পুলিশ ধরে নিয়ে যায় তখন তার সঙ্গে সাত বছরের ছেলে ইকবাল ছিল। পুলিশ তার ছেলের সামনেই তাকে মারধর করে এবং পানিতে ডুবায়।
আগস্ট মাসে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে ৮ জন নিহত হয়েছেন। অভিযোগ পাওয়া গেছে, এদের মধ্যে র্যাবের হাতে ৬ জন এবং পুলিশ হাতে ১ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে দু’জনের নির্যাতনের ফলে মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘন থেকে রেহাই পায়নি পুলিশ সদস্যরাও। গত ১৪ আগস্ট যশোর জেলার শার্শা উপজেলায় অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা হামিদ নামে এক বিএনপি কর্মীকে পায়ের রগ কেটে খুন করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এরই জের ধরে ১৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ এমপি শেখ আফিল উদ্দিন শার্শা থানার ওসি এনামুল হককে তার অফিসে ডেকে পাঠান। এনামুল হক এমপির অফিসে গেলে তাকে মারধর করেন আপিল উদ্দিন এমপি ও তার ক্যাডাররা।
সেপ্টেম্বর মাসে নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান সানাউল্লা নূর বাবুকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা, সিরাজগঞ্জে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার সমাবেশে ৭ জনকে হত্যা করা হয়।
অক্টোবর মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ফলে নিহতদের মধ্যে ১১ জনই ক্রসফায়ারে মারা গেছে। গত ২৩ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জে ‘আর্মি হাউজিং স্কিম’ নামে সেনাবাহিনীর আবাসন প্রকল্পের জন্য জমি গ্রহণের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসে স্থানীয় জনগণ। এ সময় উত্তেজিত জনতার ওপর গুলি চালানো হয়। এরপর জনতা হামলা চালিয়ে সেনাবাহিনীর একটি জিপ, দুটি গাড়িসহ সেনা টিনশেড ব্যারাক পুড়িয়ে দেয়। এ সময় সেনাসদস্য, র্যাব ও পুলিশের গুলিতে ১৪ জন গুলিবিদ্ধ হয়। এরপর রূপগঞ্জ থেকে ৪টি সেনাক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়। ওইসব ক্যাম্পে থাকা সেনা সদস্যদের হেলিকপ্টারে ঢাকায় নেয়া হয়। গত ২৪ অক্টোবর গুলিবিদ্ধ মোস্তফা জামাল হায়দার হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় মারা যান।
তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বর মাসে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে ১৪ জন নিহত হয়েছেন। পুলিশি নির্যাতনে মারা যান ৪ জন ও জেল হেফাজতে মারা গেছেন আরও ৪ জন। গত ১৪ নভেম্বর নরসিংদী সদর মডেল থানা পুলিশের হেফাজতে শরীফ মিয়া নামে এক ব্যক্তি মারা গেছেন। শরীফ মিয়ার মা বলেন, তার ছেলে ছিল সম্পূর্ণ নির্দোষ। সে ছিল তাঁত শ্রমিক। থানা হেফাজতে নির্যাতন করে শরীফকে হত্যা করা হয়েছে। ২২ নভেম্বর যশোরের কোতোয়ালি থানা হেফাজতে ইমরান হোসেন বাপ্পী নামে এক যুবক মারা গেছেন।
ডিসেম্বর মাসজুড়েও অব্যাহত ছিল মানবাধিকার লঙ্ঘন। এই মাসে একই দিনে ডাবল ক্রসফায়ার, ত্রিপল ক্রসফায়ারের খবর প্রকাশ হয়েছে পত্রিকায়। এই মাসে কমপক্ষে ১২ জন ক্রসফায়ারের শিকার হয়েছেন। অভিযোগ ওঠে অগ্নিকাণ্ড ও ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহতদের লাশ গায়েবের। গত ৩ ডিসেম্বর ঢাকা, বরিশাল ও মেহেরপুরে ক্রসফায়ারে মারা যান ৩ জন। ৪ ডিসেম্বর বরিশালের বরগুনায় ছাত্রীর পা কেটে নেয় বখাটেরা। ৯ ডিসেম্বর নরসিংদীতে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত অনেকের লাশ গায়েবের অভিযোগ ওঠে। একইভাবে ১৪ ডিসেম্বর সাভারের হামীম গ্রুপের কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে নিহত অনেক শ্রমিকের লাশ গায়েব করার অভিযোগও করেন তাদের স্বজনরা। এর আগে ১৩ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম ইপিজেডে বেতনভাতার দাবিতে বিক্ষোভরত গার্মেন্ট শ্রমিকদের ওপর পুলিশের গুলিতে ৩ শ্রমিক নিহত হয়েছেন। ১৬ ডিসেম্বর গ্রেফতার করা হয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে। ২০ ডিসেম্বর ঢাকা ও টাঙ্গাইলে ক্রসফায়ারে নিহত হন দু’জন। ২১ ডিসেম্বর ক্রসফায়ারে মারা যান আরও দু’জন

Friday, 1 October 2010

মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের রিপোর্ট : নয় মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার ৯০ জন

স্টাফ রিপোর্টার
গত ৯ মাসে দেশের ৯০ নাগরিক বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ৭১ জনের প্রাণ গেছে ক্রসফায়ারে। পুলিশ তথা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হেফাজতে মারা গেছেন ৮৭ জন। হাজতে এ সময় নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৩৫ জন। উল্লিখিত সময়ে জাতির বিবেক হিসেবে পরিচিত সাংবাদিকরাও বিভিন্নভাবে নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ৩ সাংবাদিক নিহত, ৬৬ জন আহত, ৪২ জন হমুকির সম্মুখীন এবং ৩৩ জন লাঞ্ছিত হয়েছেন। নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনাও এ সময় ব্যাপক হারে ঘটেছে।
মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের ৯ মাসের রিপোর্টে এ তথ্য পাওয়া গেছে। গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে এ রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। রিপোর্টে নাটোরে গামা হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ড পাওয়া ২২ আসামিকে খালাস করে দেয়ার কথা উল্লেখ করে বলা হয়, রাষ্ট্রপতির এই ক্ষমা বিচারব্যবস্থার সঙ্গে সাংঘর্ষিক অবস্থার সৃষ্টি করেছে। অধিকার গুম করে হত্যার ব্যাপারে সরকারের ব্যাখ্যা দাবি করেছে।
প্রতি ৩ দিনে গড়ে ১টি বিচারবহির্ভূত হত্যা



অধিকারের রিপোর্টে বলা হয়েছে, জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন দেশের ৯০ নাগরিক। এর মধ্যে ৪০ জন র্যাব, ৩৩ জন পুলিশ, ১১ জন র্যাব ও পুলিশের যৌথ অভিযানে, ৫ জন র্যাব-পুলিশ-কোস্টগার্ডের যৌথ অভিযানে নিহত হন। এ সময় বিডিআরের হাতেও ১ জন নিহত হন। এদিকে ৯ মাসে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নির্যাতনে নিহত হয়েছেন ১৭ জন। এর মধ্যে ৩ জন র্যাব, ১৩ জন পুলিশ ও ১ জন বিডিআরের হাতে নিহত হয়েছেন। এ বছরে ৮৭ জন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হেফাজতে মারা গেছেন। এর মধ্যে ৫ জন ক্রসফায়ারে, ১৬ জন নির্যাতনে এবং ১ জন গুলিতে মারা গেছেন। এই সময়ে ৪৭ ব্যক্তি জেলহেফাজতে ‘অসুস্থতাজনিত’ কারণে মারা গেছেন। এছাড়া এ সময়ে ২ ব্যক্তি কোর্ট হেফাজতে, ১ জন থানায় এবং ১ জন র্যাব হেফাজতে মারা গেছেন।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সরকারি আচরণ
জাতীয় সংসদ এবং সংসদের বাইরে স্পিকারসহ সরকারের একাধিক মন্ত্রী-এমপি সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন উল্লেখ করে অধিকারের রিপোর্টে ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য ও সরকারি উপদেষ্টার এ ধরনের বক্তব্যে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়, এ ধরনের পরিস্থিতি সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের কাজের ক্ষেত্রে আরও কঠোর পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে। যার ফলে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি বাধাগ্রস্ত হবে।
সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা
নয় মাসে সাংবাদিকরা বিভিন্নভাবে নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। এ সময়ে ৩ সাংবাদিক নিহত, ৬৬ জন আহত, ৪২ জন হুমকির সম্মুখীন এবং ৩৩ জন লাঞ্ছিত হয়েছেন। এই সময়ে ১৭ সাংবাদিকের ওপর হামলা, ২ জন গ্রেফতার, ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এ সময় সরকার দৈনিক আমার দেশ, চ্যানেল ওয়ান ও ফেসবুক বন্ধ করায় অধিকারের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
সন্ত্রাস দমন আইন ২০০৯ এ গ্রেফতার-নির্যাতন
অধিকার মনে করে, সন্ত্রাস দমন আইন ২০০৯ বলবত্ থাকলে দেশে ব্যাপক হারে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হবে এবং সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মীসহ ভিন্ন মতাবলম্বীরা নির্যাতনের শিকার হবেন।
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তদের ক্ষমা
নাটোরের আলোচিত সাব্বির আহাম্মেদ গামা হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ড পাওয়া ২০ জনের সাজা রাষ্ট্রপতি মওকুফ করে দেয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে অধিকার মনে করে, রাষ্ট্রপতির এ ধরনের ক্ষমা বিচারব্যবস্থার সঙ্গে একটি সাংঘর্ষিক অবস্থার সৃষ্টি করবে। বিচার শেষ হওয়ার আগেই ক্ষমা করে দিলে বিচার ব্যবস্থা বিঘ্নিত হবে এবং বিচার ব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা কমে যাবে।
রাজনৈতিক সহিংসতা
পাবনা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অফিস সহকারী পদে নিয়োগ পরীক্ষায় স্থানীয় যুবলীগ ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হামলার পাশাপাশি সারাদেশে সরকার সমর্থিত লোকদের সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে অধিকারের রিপোর্টে বলা হয়, এতে প্রশাসনের কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে আসবে। অধিকারের তথ্য অনুযায়ী, ৯ মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় ১৬৫ জন নিহত এবং ১১ হাজার ৩০২ জন আহত হয়েছেন।
বিএসএফের মানবাধিকার লঙ্ঘন
অধিকারের মতে, ৯ মাসে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে বিস্তর। এ সময়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ৪৯ বাংলাদেশীকে হত্যা করে। তাদের ১৪ জনকে নির্যাতন এবং ৩৫ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এই সময়ে ৬১ জন বিএসএফের হাতে ও ১০ জন ভারতীয় অবৈধ অনুপ্রবেশকারীর হাতে আহত হয়েছেন। বিএসএফের হাতে আহত এই ৬১ জনের মধ্যে ২৯ জন নির্যাতিত এবং ৩২ জন গুলিতে আহত হয়েছেন। এই সময়কালে ২৫ বাংলাদেশী বিএসএফের হাতে অপহৃত হয়েছেন। এছাড়া সীমান্ত এলাকায় ২ ব্যক্তি নিখোঁজ, ১টি লুটের ঘটনা এবং ৫ জন হিন্দিভাষী ভারতীয় মুসলিম নাগরিককে বাংলাদেশে পুশইন করা হয়েছে।
নারীর প্রতি সহিংসতা
সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে অধিকার বলেছে, জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত দেশে ১ হাজার ৫৮৬টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ধর্ষণের ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় রিপোর্টে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। রিপোর্ট মতে, জুলাই-সেপ্টেম্বর তিন মাসে ধর্ষণের ব্যাপক ঘটনা ঘটেছে। জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর ৯ মাসে ২৯৭ নারী যৌতুক সহিংসতার শিকার হয়েছেন।
নিখোঁজ ও গুম হত্যা
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটকের পর নিখোঁজ ও গুম হওয়ার ঘটনায় অধিকার উদ্বিগ্ন। ৯ মাসে নয় ব্যক্তি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নিখোঁজ হয়েছেন। নিখোঁজ ব্যক্তিদের দ্রুত উদ্ধার এবং গুম হওয়ার ব্যাপারে সরকারের ব্যাখ্যা দাবি করেছে অধিকার।
অধিকারের সুপারিশ
অধিকার ১৮ দফা সুপারিশ দিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে— বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করে নিরপেক্ষ তদন্ত, রিমান্ড ও অন্তরীণ অবস্থায় জিজ্ঞাসাবাদকালে নির্যাতন বন্ধ করা, সংবাদ মাধ্যমের হস্তক্ষেপ ও সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধ করা, সন্ত্রাস দমন আইন ২০০৯ বাতিল করা, রাজনৈতিক সহিংসতায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের লোকদের ওপর দমননীতি পরিহার, বিএসএফের অবৈধ অনুপ্রবেশ এবং গুলি ও হত্যা ্বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া, নারী নির্যাতন বন্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ, সংখ্যালঘুদের অধিকার নিশ্চিত করা, বিডিআর জওয়ানদের বিচারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা ইত্যাদি।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/10/02/46640

Tuesday, 17 August 2010

ট্রাইব্যুনালের বৈধতা নিয়ে রিটের শুনানি : ট্রাইব্যুনাল আইন সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর পরিপন্থী

স্টাফ রিপোর্টার
যুদ্ধাপরাধের বিচারে সংবিধানের প্রথম সংশোধনী এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট আবেদনের শুনানি রোববার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর কারাবন্দি দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান এবং আবদুল কাদের মোল্লার এ সংক্রান্ত রিট আবেদনের আংশিক শুনানি শেষে হাইকোর্ট গতকাল এ আদেশ দেন। বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহাব মিঞা এবং বিচারপতি কাজী রেজা-উল-হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চে গতকাল এ শনানি শুরু হয়।
শুনানিতে রিটকারীর পক্ষে ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য আইন প্রণয়নের আগে ১৯৭৩ সালে বিল উত্থাপন করা হলে সংসদে বিতর্ক হয়। সংসদের আলোচনায় বলা হয়, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চিহ্নিত ১৯৫ সদস্যের যুদ্ধাপরাধের বিচার করা হবে। ওই সময় সরকার যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্দেশ্যে কমিশন গঠন করে ১৯৫ পাকিস্তানি সেনাসদস্যকে হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মতো চারটি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় চিহ্নিত করে। তাদের বিচারের জন্যই ওই বছরের ১৫ জুলাই সংবিধানের প্রথম সংশোধনী আনা হয়। সংশোধনীর পাঁচ দিন পর প্রণীত হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন। এর একটাই উদ্দেশ্য ছিল, ১৯৫ জন চিহ্নিত পাকিস্তানি সেনাসদস্যের বিচার করা। যেহেতু তারা বাংলাদেশের নয়, পাকিস্তানের নাগরিক তাদের এজন্য মৌলিক অধিকার বঞ্চিত করা হয়। কিন্তু চিহ্নিত ওই ১৯৫ পাকিস্তানি সেনাসদস্যের বিচার বাদ দিয়ে ২০০৯ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে কিছু সংশোধন করে যে কোনো ব্যক্তির বিচার এবং শাস্তির বিধান জুড়ে দেয়া হয়েছে, যা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর পরিপন্থী।
তিনি বলেন, ১৯৭৩ সালের ১৫ জুলাইয়ের প্রথম সংশোধনীর ৪৭ ও ৪৭(ক) ৩ অনুচ্ছেদে গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য সশস্ত্র বাহিনী, সহায়ক বাহিনী বা যুদ্ধবন্দিকে দণ্ড দেয়ার কোনো আইন সংবিধানের সঙ্গে অসামঞ্জস্য হলেও বাতিল হবে না বলে উল্লেখ রয়েছে। এসব অপরাধের ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তির সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার প্রযোজ্য হবে না বলেও উল্লেখ রয়েছে। এটা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর পরিপন্থী। সংবিধানের মৌলিক কাঠামো পরিবর্তন করা যায় না বলেও সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর রায়ে বলেছেন সুপ্রিমকোর্ট। অন্যদিকে ট্রাইব্যুনালের বিষয়ে কোনো আদালতে চ্যালেঞ্জ না করতে পারার বিধানের মাধ্যমে হাইকোর্টের এখতিয়ারকে খর্ব করা হয়েছে। ২০০৯ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন-১৯৭৩ সংশোধন করা হয়। কিন্তু এ সংশোধনীর আলোকে ১৯৭১ সালের অপরাধের বিচার করা হচ্ছে। সংবিধান অনুযায়ী বলবত্ আইনে অপরাধের বিচার করতে হবে। কোনো আইনের ভূতাপেক্ষ কার্যকারিতা দেয়া যাবে না। কিন্তু এক্ষেত্রে সংশোধনের পরও আইনের ভূতাপেক্ষতা দিয়ে আগের ঘটনার বিচার করা হচ্ছে। এ আইনের ৩(১) ধারায় প্রতিরক্ষা বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী, সহযোগী বাহিনী বা যুদ্ধবন্দি এবং যে কোনো ব্যক্তির বিচারের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সংবিধানে যে কোনো ব্যক্তির বিচারের কথা বলা হয়নি। ৬(২) ধারা অনুযায়ী সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতি বা বিচারপতি হওয়ার যোগ্য ব্যক্তি ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হবেন। ৬(৮) ধারা অনুযায়ী এ ট্রাইব্যুনাল গঠন এবং ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বা সদস্যদের নিয়োগ চ্যালেঞ্জ করা যাবে না। এর মাধ্যমে হাইকোর্টের জুডিশিয়াল রিভিউর ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে। ১৯(১) ধারা অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে সাক্ষ্য আইন প্রযোজ্য হবে না। বই, ম্যাগাজিন, প্রকাশিত সংবাদ ইত্যাদি সাক্ষ্য হিসেবে আদালত গ্রহণ করতে পারবেন। ১৯(৩) ধারা অনুযায়ী কোনো প্রমাণ ছাড়া ট্রাইব্যুনাল প্রচলিত বা সাধারণভাবে জানা তথ্য গ্রহণ করতে পারবে। এর মাধ্যমে অভিযুক্তদের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার খর্ব করা হয়েছে। ২০(২) ধারায় মৃত্যুদণ্ডের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু মৃত্যুদণ্ড দেয়ার জন্য অপরাধের মাত্রার বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। ফলে কোন অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ড দেয়া যাবে তা নিশ্চিত নয়। এছাড়া ২৩ ধারায় বলা হয়েছে, এ বিচারের ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধি প্রযোজ্য হবে না। অথচ ট্রাইব্যুনাল একটি ফৌজদারি আদালত। রিট আবেদনে এ বিধানগুলোকে সংবিধানের ৯৪, ৯৯ ও ১৪৭(৩) অনুচ্ছেদের পরিপন্থী দাবি করা হয় এবং বিধানগুলোকে অবৈধ ও সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণার আবেদন জানানো হয়।
ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক আরও বলেন, রিট আবেদনকারীদের যুদ্ধাপরাধের মামলার অভিযোগে নয়, অন্য আইনে গ্রেফতারের পর দুটি মামলায় আটক রাখা হয়েছে। ’৭৩ সালের আইনটি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর চিহ্নিত ১৯৫ সদস্যের জন্য প্রণয়ন করা হলেও রিট আবেদনকারীদের ওই আইনে আটক রাখায় তারা সংক্ষুব্ধ হয়ে সংবিধানের প্রথম সংশোধনী ও ট্রাইব্যুনালের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেছেন।
শুনানির সময় রিট আবেদনকারীর পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, বারের সম্পাদক ব্যারিস্টার মো. বদরুদ্দোজা বাদল, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম ও অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন এমপি, ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার, অ্যাডভোকেট ফরিদ উদ্দিন খান, অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম, ব্যারিস্টার বেলায়েত হোসেন, ব্যারিস্টার মাসুদ আহমেদ সাঈদ, ব্যারিস্টার এহসান এ সিদ্দিক, ব্যারিস্টার ইমরান এ সিদ্দিক, ব্যারিস্টার মীর আহমাদ বিন কাশেম প্রমুখ। সরকার পক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এমকে রহমান।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/08/18/39745

অপহৃত শিবির নেতা গোলাম মোর্তজাকে র্যাব অফিসে দেখেছে সাবিত ও রাজু



অলিউল্লাহ নোমান

রিমান্ডে শিবির নেতাদের ঝুলিয়ে রেখে নির্যাতনের সময় আল্লাহ বলে চিত্কার করলে মুখে লাঠি ঢুকিয়ে বলা হয়, তোদের আল্লাহ এসে এখন বাঁচাক। র্যাব অফিসে নির্যাতনের সময় শিবির নেতা সাবিত ও রাজু এর আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে অপহৃত শিবির নেতা গোলাম মোর্তজাকে সেখানে দেখেছেন। গোলাম মোর্তজা অপহৃত হওয়ার পর সন্ধান চেয়ে হাইকোর্ট বিভাগে দায়ের করা রিট আবেদনের সম্পূরক পিটিশনে এ তথ্যগুলো উল্লেখ করা হয়। আগামী বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চে এ সম্পূরক পিটিশনের বিষয়ে শুনানির কথা রয়েছে। গোলাম মোর্তজার সন্ধান চেয়ে হাইকোর্ট বিভাগে দায়ের করা ৫৬৬০/২০১০ রিট আবেদনটির পরিপ্রেক্ষিতে এ সম্পূরক পিটিশন দেয়া হয়।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সম্প্রতি ইসলামী ছাত্রশিবিরের চার নেতাকে আটক দেখায় র্যাব। তারা হলেন ইমরান ওরফে মাসুম, জায়েদ বিন সাবিত, সুলতান মাহমুদ রিপন ও আলমগীর হাসান রাজু। তাদেরকে গত ৪ আগস্ট মিডিয়ার সামনে হাজির করে র্যাব। মোহাম্মদপুর থানার তিনটি মামলায় (৮, ৯ ও ১০, তারিখ ৪ আগস্ট) তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়। সম্পূরক রিট আবেদনটিতে জানানো হয়, মিডিয়ার সামনে হাজির করার চারদিন আগে রাজুকে এবং তিনদিন আগে সাবিতকে অপহরণ করে র্যাব। পরবর্তী সময়ে তাদের নামে মোহাম্মদপুর থানায় অস্ত্র আইনে একটি, বিস্ফোরক আইনে একটি ও সন্ত্রাস দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করে গ্রেফতার দেখানো হয়। এ মামলায় রিমান্ডে নিয়ে র্যাব অফিসে নির্যাতনের একপর্যায়ে জায়েদ বিন সাবিত ও রাজু অসুস্থ হয়ে পড়েন। উল্টো করে ঝুলিয়ে রেখে নির্যাতনের সময় তারা আল্লাহ বলে চিত্কার করলে মুখে লাঠি ঢুকিয়ে বলা হয়—তোদের আল্লাহ এসে এখন বাঁচাক। রিমান্ডে র্যাব অফিসে থাকার সময় তারা অপর শিবির নেতা গোলাম মোর্তজাকে সেখানে দেখেছেন বলে উল্লেখ করা হয় সম্পূরক আবেদনে। সাবিত ও রাজুকে হাইকোর্ট বিভাগে হাজির করে গোলাম মোর্তজার বিষয়ে সাক্ষ্য নেয়ার জন্য সম্পূরক আবেদনে অনুরোধ করা হয়েছে। গোলাম মোর্তজা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গত ২ জুলাই ধানমন্ডি থেকে অপহৃত হয় বলে তার পরিবার দাবি করে আসছে।
সম্পূরক আবেদনে আরও জানানো হয়, সাবিত ও রাজুকে ঝুলিয়ে রেখে নির্যাতনের একপর্যায়ে তারা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে দ্রুত তাদের জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে ভর্তির জন্য ফরোয়ার্ডিং দিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, তাদের অবস্থা গুরুতর। এতে রিমান্ড শেষ হওয়ার আগেই গত ৭ আগস্ট তাদের জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট। সম্পূরক আবেদনটিতে আরও জানানো হয়, তারা যেহেতু অপহৃত গোলাম মোর্তজাকে র্যাব অফিসে দেখেছে, তাই তাদের ফের রিমান্ডে দেয়া হলে মেরে ফেলা হবে। এজন্য পুলিশ যাতে তাদের ফের রিমান্ডে নিতে না পারে সেজন্যও হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/08/18/39734

Sunday, 8 August 2010

The PHRG wishes a fair trial of the 1971 war criminals

Barrister Muhammad Molla and Md Nazrul Islam, British supporters of the Jamaat Islami in Bangladesh, mainly to discuss the war crimes trials in Bangladesh. So far, five leaders of the JI have been arrested on blasphemy charges, and then charged under the War Crimes Act while they were in custody. The Parliamentary Human Rights Group had asked the International Bar Association to comment on the compatibility of the Act of 1973 with modern internationally accepted standards of war crimes legislation and they had recommended a number of amendments. The PHRG had drawn this to the attention of the Bangladesh government, asking them to consider these recommendations, and although they did so, no changes were made to the 1973 Act. Our discussion concerned mainly the possibility of getting international observers - and the IBA would be an obvious choice if they were willing - to observe the trials, and comment not only on the effects of sticking to the 1973 legislation, but also the rules of procedure and evidence which have been developed uniquely for these trials, and the conditions under which the defendants have been remanded for much longer than the three days stipulated by the law.

The PHRG is not against the trial of the 1971 war criminals, but wishes to ensure that the process should not be open to criticism.

http://ericavebury.blogspot.com/2010/08/third-barrister-muhammad-molla-and-md.html

Sunday, 1 August 2010

অধিকারের জুলাই ২০১০-এর রিপোর্ট : র্যাব-পুলিশের হাতে ১০ বিএসএফের গুলিতে ৯ বাংলাদেশী নিহত

স্টাফ রিপোর্টার
গত জুলাই মাসে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হেফাজতে ১০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। মানবাধিকার সংস্থা অধিকার গতকাল জুলাই মাসের রিপোর্টে এই তথ্য প্রকাশ করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের পাশাপাশি সীমান্তে বিএসএফ জুলাই মাসে ৯ জন বাংলাদেশী নাগরিক হত্যা করেছে। এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অধিকার। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাদা পোশাকধারী ব্যক্তিদের হাতে আটকের পর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় অধিকার গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। চারটি মামলায় জামিনের পর আমার দেশ সম্পাদককে তড়িঘড়ি করে অপর একটি মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানোর বিষয়টিকে আইনের শাসন ও মানবাধিকার পরিপন্থী উল্লেখ করে অধিকার সরকারের এই আচরণের নিন্দা জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, অধিকারের প্রতিবেদনে বলা হয়, যারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে প্রাণ হারিয়েছেন তাদের মধ্যে পুলিশের হাতে ৪ জন, ১ জন র্যাব-পুলিশের যৌথ অভিযানে এবং ৫ জন নিহত হয়েছেন র্যাব-পুলিশ ও কোস্টগার্ডের যৌথ অভিযানে। এই ১০ জনের মধ্যে ৪ জন পুলিশের হেফাজতে থাকাকালে মারা গেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
নিহত ১০ জনের মধ্যে ১ জন ব্যবসায়ী, ১ জন পরিবহন কর্মী, ১ জন রাজমিস্ত্রি, ১ জন রিকশাচালক, ১ জন কথিত অপরাধী, ২ জন ডাকাত ও ৩ জন জলদস্যু বলে জানা গেছে।
অধিকারের তথ্য অনুযায়ী জুলাই মাসে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বিএসএফের হাতে সীমান্তে বাংলাদেশীদের ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অনেক ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বিএসএফ ৯ জন বাংলাদেশীকে গুলি করে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ সময়কালে বিএসএফ ও খাসিয়াদের হামলায় ১৪ জন আহত হয়, যার মধ্যে ৪ জন শুধু বিএসএফের হামলার শিকার। ওই ৪ জনের মধ্যে ২ জন বিএসএফের নির্যাতন ও ২ জন গুলিতে আহত হয়েছেন। ১২ জন বাংলাদেশী বিএসএফ কর্তৃক অপহৃত, ২ জন এ সময়কালে নিখোঁজ, ১টি লুটের ঘটনা ঘটেছে। ৫ হিন্দি ভাষাভাষী মুসলিম ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশে পুশইনের অভিযোগ রয়েছে। অধিকারের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত ১৩ জুলাই আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে একটি দুর্নীতি মামলায় (মামলা নং ২৮(৬) ২০১০, গুলশান থানা) গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের উপপরিচালক মো. নুর আহম্মদ ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করেন। এর আগে মাহমুদুর রহমান দুদকের এই নোটিশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে জজ কোর্টে আবেদন করেন। কিন্তু জজ কোর্ট আবেদন প্রত্যাখ্যান করলে মাহমুদুর রহমান সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে জজ কোর্টের আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে আবেদন করেন। হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ দুদকের নোটিশের কার্যকারিতা ২৭ এপ্রিল ২০১০-এ স্থগিত করেন। দুদক সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার জজ বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেইনের আদালতে এই আদেশের বিরুদ্ধে দরখাস্ত দাখিল করলে আদালত হাইকোর্ট বিভাগের আদেশ ৫ মে ২০১০ তারিখে দশ দিনের জন্য স্থগিত করেন এবং দুদককে এ সময়ের মধ্যে একটি নিয়মিত লিভ আবেদন দায়েরের জন্য আদেশ দেন। এরপর দুদক লিভ আবেদন দায়ের করেন।
অধিকার মনে করে, সেনা সমর্থিত জরুরি অবস্থার সরকার দুদককে ব্যবহার করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতার এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের চেষ্টা করে। কিন্তু নির্বাচিত সরকারের সময়ও দুদকের একই ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
জুলাই মাসে মোট ৫১ জন নারী ও মেয়েশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে ২০ জন নারী এবং ৩১ জন মেয়েশিশু। ২০ জন নারীর মধ্যে ৫ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে এবং ৬ জন গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ৩১ জন মেয়েশিশুর মধ্যে ৪ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে এবং ৫ জন গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন।
এছাড়াও পোশাক শিল্পে অস্থিরতার জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অধিকার। অধিকারের প্রতিবেদনে বলা হয়, শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি পাওনা আদায়ের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পোশাক শিল্পে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। অবিলম্বে শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরির দাবি পূরণ করে পোশাক শিল্পের অস্থিরতা দূর করার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছে অধিকার।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/08/02/36987

Monday, 26 July 2010

রিমান্ড ক্রসফায়ারসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ১৪৮ অভিযোগ কমিশনে

স্টাফ রিপোর্টার
গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ১৪৮টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে। পুলিশ ও র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এখতিয়ারবহির্ভূত কাজ ও বাড়াবাড়ি নিয়েই বেশিরভাগ অভিযোগ। এর মধ্যে রয়েছে ক্রসফায়ারে হত্যা, পুলিশ-র্যাব কর্তৃক রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন, আদালতের ওয়ারেন্ট ছাড়া অবৈধ আটক, বিচারবহির্ভূত হত্যা, পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু ও নির্যাতন, অমানবিক শাস্তি, জীবনের নিরাপত্তা না থাকা ইত্যাদি। মানবাধিকার লঙ্ঘন সম্পর্কিত এসব অভিযোগ সম্পর্কে কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান উদ্বেগ প্রকাশ করে আমার দেশকে বলেন, কোনো সভ্য সমাজে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটা উচিত নয় এবং এটা চলতে দেয়া যায় না। আইন অনুযায়ী মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোনো ঘটনাই সমর্থযোগ্য নয়। একটি গণতান্ত্রিক দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা উদ্বেগজনক। কোনো নাগরিক অপরাধী হলেও তার বিচারের দায়িত্ব নির্বাহী বিভাগ কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিতে পারে না। বিচারের দায়িত্ব হচ্ছে বিচার বিভাগের। দায়েরকৃত অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে তদন্ত ও অনুসন্ধান শেষে আইন অনুযায়ী কমিশনের নিজস্ব এখতিয়ার অনুযায়ী অভিযুক্তদের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।
জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থা ও বিভিন্ন দাতা সংস্থার চাপে ২০০৮ সালে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন গঠন করা হয়। সুপ্রিমকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আমিরুল কবির চৌধুরীকে এ কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। প্রয়োজনীয়সংখ্যক লোকবলের অভাবে এ কমিশনের কার্যক্রম বিস্তৃত হয়নি। বিচারপতি আমিরুল কবির চৌধুরীর অবসর গ্রহণের পর কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমানকে নিয়োগ দেয়া হয়। একইসঙ্গে কমিশনকেও পুনর্গঠন করা হয়।
কমিশন সূত্র জানিয়েছে, এ পর্যন্ত দায়ের করা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ১৪৮টি অভিযোগের মধ্যে পুলিশ ও র্যাব কর্তৃক নির্যাতনের অভিযোগ ১৫টি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে অবৈধভাবে আটকের অভিযোগ ৮টি, নিখোঁজ সম্পর্কিত অভিযোগ ৬টি, জীবনের নিরাপত্তা সম্পর্কিত অভিযোগ ২৬টি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক অবস্থায় বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সম্পর্কিত অভিযোগ ৬টি, অমানবিক শাস্তি সম্পর্কিত অভিযোগ ৪টি। এছাড়া চাকরি সম্পর্কি অভিযোগ ২১টি, সম্পত্তির অধিকার সম্পর্কিত অভিযোগ রয়েছে ১৬টি, শিশু অধিকার সম্পর্কিত অভিযোগ রয়েছে ৩টি এবং বিবিধ ২৩টি অভিযোগ। খ্রিস্টিয়ান ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভের (সিডিএ) নির্বাহী পরিচালক উইলিয়াম নিকলাস গমেজ স্বাক্ষরিত কমিশনে দায়ের করা একটি অভিযোগপত্রে বিচারবহির্ভূত একটি হত্যাকাণ্ডের বিবরণে উল্লেখ করা হয়েছে, রাজশাহী কলেজের ছাত্র হাফিজুর রহমান শাহীন চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ থানার চৈতন্যপুর গ্রামে মফিজুল ইসলামের বাড়িতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন। বিচারবহির্ভূত এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিচারের দাবি জানানো হয়েছে আবেদনে। আবেদনে আরও বলা হয়েছে, পুলিশের মাধ্যমে এ ঘটনার তদন্ত হলে তদন্ত সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে না। এ ধরনের অভিযোগ অন্য আবেদনগুলোতেও। আবেদনকারীরা মানবাধিকার কমিশনের কাছে এ ব্যাপারে প্রতিকার চেয়েছেন। তারা র্যাব-পুলিশের হাতে নির্যাতনের বিবরণ নিয়ে বেশকিছু অভিযোগও করেছেন। উল্লেখ্য, মানবাধিকার কমিশনে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে প্রকৃত ঘটনার সংখ্যা এর চেয়েও অনেক বেশি। ছোটখাটো ঘটনায়ও অনেক রাজনীতিবিদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী সমিতি সংবাদ সম্মেলনে পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেছে, গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৬ মাসে সারাদেশে ৮৪ জন গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছেন। মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের রিপোর্ট অনুযায়ী গত ৬ মাসে ৬১ জন ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন। একই সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে থাকা অবস্থায় ৯ আসামির মৃত্যু হয়েছে। ২ জন সাংবাদিক নিহত, ৫২ জন আহত ও ৩৫ জন হুমকির শিকার হয়েছেন।
কমিশনের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, পরামর্শকের তৈরি করা অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী এ কমিশনের লোকবল প্রয়োজন ১২৮ জন। অর্থ মন্ত্রণালয় তা কাটছাঁট করে ২৮ জনের নিয়োগ অনুমোদন করেছে। বর্তমানে তদন্ত ও অনুসন্ধান করার মতো কমিশনে লোকবল ৪/৫ জনের বেশি নেই। কাজেই অভিযোগগুলোর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী আমরা কিছু তদন্ত করছি। বাকিগুলো কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী বিভিন্ন সংস্থা তদন্ত ও অনুসন্ধান করছে। অনুসন্ধান শেষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সুপারিশ করা হবে। প্রয়োজনে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ দায়ের করা হবে। কমিশনের আইনেই কমিশনকে এ ক্ষমতা দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। এ বিষয়ে কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেন, বর্তমানে আমাদের লোকবলের সঙ্কট রয়েছে। এছাড়াও বাজেটও একটি বড় বিষয়। আমাদের এগুলোর দিকে তাকালে চলবে না। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন একটি শক্তিশালী আইন। এ আইনে কমিশনকে অনেক ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। আমরা আইন অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে কমিশনের দায়দায়িত্বও অনেক।
দেশের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে ড. মিজানুর রহমান বলেন, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নির্ভর করে মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, রিমান্ডে আসামির ওপর নির্যাতন, আসামিকে গ্রেফতারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির না করা ও গুপ্তহত্যাসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোনো ঘটনাই সমর্থনযোগ্য নয়। এগুলো দেশকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়। আমরা জেনেশুনে দেশকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যেতে দিতে পারি না। কমিশনের পক্ষ থেকে আমরা এসব বিষয় নিয়ে র্যাবের মহাপরিচালক ও পুলিশের ঢাকা মহানগর কমিশনারের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আমাদের উদ্বেগের কথা তাদের জানিয়েছি। তিনি বলেন, মামলার প্রয়োজনে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কোনো আসামিকে পুলিশ রিমান্ডে নেবে। আইন মেনে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আবার তাকে আদালতের কাছে সোপর্দ করবে। বিচারের দায়িত্ব হচ্ছে বিচার বিভাগের। কোনো আসামির বিচারের দায়িত্ব নির্বাহী বিভাগ কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নয়। বাংলাদেশ নির্যাতনবিরোধী আন্তর্জাতিক চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে সব নাগরিকের মৌলিক ও মানবাধিকার সংরক্ষণ করবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ হচ্ছে আইনের প্রয়োগ করা। তাদের হাতেই যদি আইনের লঙ্ঘন হয় কিংবা কোনো নাগরিকের অধিকার খর্ব হয়, তাহলে সেটা হবে বড়ই দুর্ভাগ্যজনক। একজন নাগরিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হচ্ছেন। এটা দেখে তার বিপরীত মতের অন্য নাগরিকের খুশি হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা এর শিকার তিনিও একদিন হতে পারেন। কাজেই প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার সংরক্ষণে সবারই সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট আদিলুর রহমান খান আমার দেশকে বলেন, মানবাধিকার কমিশনে যে অভিযোগগুলো এসেছে, তার বাইরেও প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। নারী নির্যাতনের ঘটনা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটকের পর হত্যা, গুপ্তহত্যা, রিমান্ডে নির্যাতনের ঘটনা অনেক বেড়েছে। কোনো গণতান্ত্রিক দেশের জন্য এ ধরনের ঘটনা বিপজ্জনক। এ ধরনের ঘটনা থেকে নাগরিকদের মুক্ত রাখার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। রাষ্ট্র সঠিক দায়িত্ব পালন করলে সর্বক্ষেত্রে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক পরিবেশ সৃষ্টি হবে।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/07/27/36375

যুদ্ধাপরাধ বিচারে নিরপেক্ষতা ও আন্তর্জাতিক মান চায় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য

কূটনৈতিক প্রতিবেদক | Prothom Alo ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৭ জুলাই ২০১০, ১২ শ্রাবণ ১৪১৭, ১৪ শাবান ১৪৩১

আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে যুদ্ধাপরাধের বিচারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। এই বিচার-প্রক্রিয়ার সঙ্গে রাজনীতিকে না জড়াতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
গতকাল সোমবার ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর চার শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর ওই দুই দূতাবাসের পক্ষ থেকে ওই মন্তব্য করা হয়েছে।
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে বলেন, যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা যাতে ন্যায়বিচার ও আইনি সুরক্ষা পান, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি বিচার-প্রক্রিয়া যাতে আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও যথাযথ প্রক্রিয়ায় হয়, সেটাও দেখতে হবে।
মার্কিন মুখপাত্র আরও বলেন, ‘বিচার-প্রক্রিয়াকে কোনোভাবেই রাজনীতির সঙ্গে জড়ানো উচিত হবে না। যুদ্ধাপরাধের বিচারের প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার বিষয়টি খুব জরুরি। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার কী পদক্ষেপ নিচ্ছে সেটা আমরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।’
এ ব্যাপারে যুক্তরাজ্য তাদের প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, যুদ্ধাপরাধের বিচারে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত হচ্ছে কি না সেটা খুব জরুরি।
‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ছিল, তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে বাংলাদেশ সরকার এবং এ দেশের জনগণের যে প্রত্যয় রয়েছে, সেটা আমরা বুঝতে পারি’—মন্তব্য করেছেন ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনের এক মুখপাত্র।
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই (যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে) যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে তাদের আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।’

http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-07-27/news/82011


যুদ্ধাপরাধ বিচারে নিরপেক্ষতা ও আন্তর্জাতিক মান চায় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য
কূটনৈতিক রিপোর্টার
যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। একইসঙ্গে তারা এ বিচারে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখা এবং এটাকে রাজনীতিকরণ না করার তাগিদ দিয়েছে।
গতকাল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার কাজ শুরু হওয়ার পর ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস ও ব্রিটিশ হাইকমিশন তাদের সরকারের এ মনোভাবের কথা জানায়।
ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের একজন মুখপাত্র জানান, অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ও গ্রেফতার হওয়া যে কোনো ব্যক্তির সঙ্গে ভালো আচরণ করার পাশাপাশি তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া উচিত। এছাড়া এ বিচার রাজনৈতিকভাবে না হয়ে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী স্বচ্ছতা ও যথাযথ বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন হওয়া উচিত।
এদিকে ব্রিটিশ হাইকমিশনের একজন মুখপাত্র জানান, যুদ্ধাপরাধের বিচারে বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের মনোভাব সম্পর্কে যুক্তরাজ্য অবগত। তবে ব্রিটিশ সরকার বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার ও বিচার প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক মানের দেখতে চায়।
প্রসঙ্গত, এর আগে ১৪ জুলাই আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রী অ্যালান ডানকান বাংলাদেশ সফরে এসে বলেছিলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধকালে সংঘটিত অপরাধের বিচার করা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তবে এ বিচার রাজনৈতিকভাবে নয়, সুষ্ঠু বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হওয়া উচিত।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/07/27/36388

Saturday, 24 July 2010

১২ দিনেও খোঁজ নেই মুর্তজার : গুম-হত্যার আশঙ্কা বাবা-মার

নাছির উদ্দিন শোয়েব
ওয়ার্ড কমিশনার চৌধুরী আলমের পর এবার ১২ দিন ধরে নিখোঁজ শিবির নেতা গোলাম মুর্তজা (৩০)। দু’জনের নিখোঁজ হওয়ার ধরন প্রায় একই। চৌধুরী আলমকে পুলিশ পরিচয়ে এক মাস আগে আটক করা হয় ইন্দিরা রোড থেকে। এখন পর্যন্ত তার খোঁজ নেই। অন্যদিকে মুর্তজাকেও ডিবি পুলিশ হাতকড়া পরিয়ে আটক করে ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর থেকে। তারও কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। মুর্তজা বেঁচে আছে, নাকি মারা গেছে জানে না পরিবার। ডিবি পুলিশ পরিচয়ে গত ১৪ জুলাই আটক করে মাইক্রোবাসে নিয়ে যায় সাদা পোশাকধারী ব্যক্তিরা। প্রিয় ছেলের সন্ধান না পেয়ে গুম, হত্যার আশঙ্কায় মুর্তজার বাবা-মার ঘুম নেই। তার ফেরার অপেক্ষায় পথ চেয়ে আছে উদ্বিগ্ন পরিবারটি। আত্মীয়স্বজনরা ডিবি, সিআইডি, র্যাব ও ধানমন্ডি থানায় গিয়ে খোঁজ করেছেন। কেউ সন্ধান দিতে পারেনি। কী কারণে তাকে আটক করা হয়েছে? কোথায় রাখা হয়েছে তারা জানতে চান। এ ব্যাপারে আত্মীয়স্বজনরা হাইকোর্টে রিটও করেছেন। আদালত স্বরাষ্ট্র সচিব ও পুলিশকে এক সপ্তাহের মধ্যে মুর্তজাকে আদালতে হাজির করতে নির্দেশ দেন। কিন্তু এখনও কোনো সংস্থা মুর্তজাকে আটক করার কথা স্বীকার করেনি।
মুর্তজার বাবা-মা ছেলের চিন্তায় ব্যাকুল। মুর্তজা বেঁচে আছে কিনা জানেন না। বেঁচে থাকলে কেন তাকে আদালতে হাজির করা হচ্ছে না। ছেলের খোঁজে বাবা আবদুল লতিফ ও মা গুলনাহার রাজশাহী থেকে ঢাকা এসে বিভিন্ন স্থানে খুঁজছেন। উপায়ন্তর না দেখে গত শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তারা বলেন, আমাদের ছেলের বিরুদ্ধে কোথাও কোনো অভিযোগ নেই। কোনো থানায় মামলা নেই। তাকে কী কারণে আটক করা হলো? কারা আটক করছে আমরা কিছুই জানি না। সে কোনো অপরাধ করে থাকলে আইনের হাতে তুলে দেয়া হোক।
যেভাবে আটক হয় : গত ১৪ জুলাই সন্ধ্যায় গোলাম মুর্তজা তার বন্ধু আবদুল্লাহ সাবিতকে নিয়ে পুরানা পল্টন থেকে মোটরসাইকেলে কলাবাগান যাচ্ছিল। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় তারা রবীন্দ্র সরোবরে মাগরিবের নামাজ পড়ে। সেখান থেকে মোটরসাইকেলে ওঠার সময় সাদা পোশাকধারী ৬/৭ জন লোক মুর্তজাকে ঘিরে ধরে। তারা টানাহেঁচড়া করে মুর্তজাকে একটি সাদা রঙের মাইক্রোবাসে তুলে। সাবিত ওই ব্যক্তিদের পরিচয় জানার চেষ্টা করলে তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়া হয়। একপর্যায়ে মাইক্রোবাসটি আবাহনী মাঠের দিকে চলে যায়। প্রত্যক্ষদর্শী সাবিত জানান, মুর্তজাকে তুলে নেয়া মাইক্রোবাসের পেছনে ‘ডিবি’ লেখা ছিল। সে গাড়িটির নম্বর দেখার জন্য মোটরসাইকেলে পিছু নেয়। সাবিত পেছনে ছুটতে থাকলে একপর্যায়ে মাইক্রোবাস থামিয়ে অস্ত্রধারী দু’জন লোক ধাওয়া করে সাবিতকে। সাবিত জানায়, ভয়ে সে আর সামনে এগোয়নি।
থানায় জিডি নেয়নি : মুর্তজার বড় ভাই প্রভাষক আবু কাউছার মোঃ শামসুজ্জামান জানান, ভাইয়ের সন্ধানে পরের দিন তিনি ঢাকায় আসেন। বিকালে ধানমন্ডি থানায় এ বিষয়ে একটি জিডি করতে গেলে ডিউটি অফিসার জিডি নেয়নি। ওসি টেলিফোনে শামসুজ্জামানকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। তিনি বলেন, ওসি হুমকি দিয়ে বলে তোর ভাই কী করে? তুই কী করোস? শালা তোরা সন্ত্রাসী, ক্যাডার। শামসুজ্জামান আরও বলেন, ওসি জিডি গ্রহণ না করে উল্টো তাকে আটক করার হুমকি দেয়। তিনি একঘণ্টা থানার বারান্দায় ঘুরাঘুরি করেন। পরে আটক হওয়ার ভয়ে থানা থেকে চলে আসেন। তিনি বলেন, আমার ভাইকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাকে কারা অপহরণ করে নিল এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ পর্যন্ত দিতে পারলাম না। তিনি বলেন, থানায় এ বিষয়ে কোনো কথাই বলতে দিল না পুলিশ।
সঠিক তথ্য দেয়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী : মুর্তজার আরেক বন্ধু আলমগীর হোসাইন বলেন, ঘটনার পরদিন ১৫ জুলাই তিনি মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ের সামনে মুর্তজাকে খুঁজতে যান। ডিউটি অফিসারের কাছে মুর্তজা নামে কাউকে আটক হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ওই পুলিশ সদস্য ফোনে ডিবির এক কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানান। পরে ডিউটি অফিসার বলেন, আপনি যাকে খুঁজছেন তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আলমগীর দ্রুত আদালতে যান। সেখানে গিয়ে খোঁজাখুঁজির পর জানতে পারেন এই নামে কাউকে সেদিন আদালতে পাঠানো হয়নি। আলমগীর সন্ধ্যায় আবার ডিবি কার্যালয়ে ফিরে গিয়ে বলেন, আদালতে তো মুর্তজাকে পাঠানো হয়নি। ডিবির ডিউটি অফিসার এবার তাকে জানায়, এ নামে কাউকে আটক করা হয়নি এবং ভেতরে এমন কেউ নেই। হতাশ হয়ে ফিরে আসেন তিনি। আলমগীর বলেন, এরপর উত্তরা র্যাব-১, সিআইডি ও এসবিতে গিয়ে খোঁজা হয়। কিন্তু কেউ সন্ধান দিতে পারেনি।
উদ্বিগ্ন স্বজনরা : মুর্তজার বাবা-মা বলেন, ১২ দিন পার হলেও তাকে আদালতে হাজির করা হয়নি। অথচ নিয়ম অনুযায়ী যে কাউকে গ্রেফতার করা হলে কোর্টে হাজির করা হয়। কিন্তু সেটিও করা হয়নি, যা মানবাধিকারের সম্পূর্ণ লঙ্ঘন। আমরা তার বর্তমান অবস্থা নিয়ে খুবই শঙ্কার মধ্যে আছি। তিনি বলেন, মুর্তজা কোনো অপরাধ করেনি। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলাও নেই এবং সাদা পোশাকধারী যারা গ্রেফতার করেছে তারা গ্রেফতারি পরোয়ানা পর্যন্ত দেখায়নি। তাকে রাস্তা থেকে হঠাত্ করে জাপটে ধরে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয় তার সন্ধান চাওয়ার পরও কোনো গোয়েন্দা বাহিনী কিছু জানাতে পারেনি। একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে তাকে কী অবস্থায় রাখা হয়েছে, তার সন্ধান দেয়া সাংবিধানিক নাগরিক অধিকার, যা থেকে তাকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়ার পরও কোর্টে কিংবা জনসম্মুখে এখনও তাকে হাজির করা হয়নি। তাই অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, গোলাম মুর্তজাকে কোথায় কীভাবে রাখা হয়েছে, তার বর্তমান অবস্থা কী সে সম্পর্কে জানানোর জন্য বা তাকে কোর্টে হাজির করার জন্য। তারা আরও বলেন, মুর্তজা একজন মেধাবী ছাত্র। রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে ২০০৭ সালে মাস্টার্স পাস করে গ্রামের বাড়ি বামনদীঘি, চারঘাট, রাজশাহী থেকে ২০০৮ সালে ঢাকায় এসে এলএলবিতে ভর্তি হয়েছিল। ঢাকায় চাকরি খুঁজছিল। পাশাপাশি শিবিরের কার্যকরী পরিষদের সাংস্কৃতিক ও সমাজকল্যাণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছিল। সে থাকত ধানমন্ডির ৯১/এ, বশিরউদ্দিন রোড কলাবাগানে।
প্রশাসনকে আদালতের নির্দেশ : নিখোঁজ গোলাম মুর্তজাকে ৭ দিনের মধ্যে আদালতে হাজির করতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। তাকে কেন আইন অনুযায়ী আটক করা হয়নি এর ব্যাখ্যাও আদালতকে জানাতে বলা হয়েছে। গত ১৮ জুলাই মুর্তজার ভাই শামসুজ্জামান হাইকোর্টে হেবিয়াস কর্পাস রিট দায়ের করলে আদালত এই আদেশ দেয়। একইসঙ্গে স্বরাষ্ট্র সচিব, আইজিপি, ডিএমপি কমিশনার, র্যাব ডিজি, ডিসি ডিবি, ঢাকার ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট ও ঢাকার সিএমএমকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহাব মিঞা ও বিচারপতি কাজী রাজা-উল হক সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ দেন। গতকাল মুর্তজার মা গুলনাহার বলেন, আদালতের নির্দেশের পরও ৫ দিন পার হলো। এখন পর্যন্ত আমরা কিছু জানি না। এ ব্যাপারে ডিবির ডিসি মনিরুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলার জন্য গতকাল সন্ধ্যায় তার মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/07/25/36013

Thursday, 22 July 2010

Democracy Crisis in Bangladesh



WASHINGTON, July 22 /PRNewswire-USNewswire/ -- A coalition of faith leaders and human right activists (The Coalition for Freedom and Democracy in Bangladesh) is calling upon members of congress and the state department to express their disapproval of the series of arrests and political crackdown against the political opposition to the Awami League (AL), the ruling political party in Bangladesh. The AL came to power in December 2008 after two years of military rule. Bangladesh often referred to as a moderate "democratic developing" country is the home of ten percent of the world Muslim population.

This coalition is concerned that the current Awami League government is suppressing free speech and the right of dissent in that nation. Over the last eighteen months, the AL has closed down newspapers and a television station, neutered an independent judiciary, and unjustly arrested many opposition leaders and students. On June 29th, 2010, the Secretary General and Deputy Secretary General of the Bangladesh Jamat Islami (BJI), the largest democratic Islamic party and part of the political opposition, were arrested on what many human rights groups have categorized as frivolous charges.

A member of the coalition, Reverend Grayland Hagler, stated that "our government must not betray the values of democracy and open governance for the people of Bangladesh. The support for autocratic regime betrays our values as Americans and citizens of the world. As people of faith we must be advocates for global justice."

Also, the American Muslim Task Force for Civil Rights and Elections, a national Muslim umbrella organization, expressed concern that these crackdowns both jeopardize the rule of law in Bangladesh and increase the volatility that already exist in the region.

A Bengali dissent living in Washington D.C. area, who asks not to be identified by name for fear of family reprisal, said that "If a great country like America continues to support this government's repressive policies, it will alienate the majority of the Bangladeshi people who embrace pluralism, democracy and political change through peaceful means."

The coalition describes itself as a human rights and democracy advocacy campaign for the people of Bangladesh, and stated that the primary goal of the campaign is to call the American people and government to adopt new policies in support of democracy and human rights in Bangladesh. The group also calls on the United Nations Human Rights Council to launch an investigation into human right abuses in that nation.

SOURCE The Coalition for Freedom and Democracy in Bangladesh

http://www.prnewswire.com/news-releases/democracy-crisis-in-bangladesh-99015424.html

http://news. yahoo.com/ s/usnw/20100722/ pl_usnw/DC38904

http://boston. bizjournals. com/prnewswire/ press_releases/ Bangladesh/ 2010/07/22/ DC38904

http://newsblaze. com/story/ 2010072207020200 001.pnw/topstory .html

http://boston. bizjournals. com/prnewswire/ press_releases/ Bangladesh/ 2010/07/22/ DC38904

http://www.sunheral d.com/2010/ 07/22/2350022/ democracy- crisis-in- bangladesh. html

http://www.forbes. com/feeds/ prnewswire/ 2010/07/22/ prnewswire201007 221001PR_ NEWS_USPR_ ____DC38904. html

http://www.foxbusin ess.com/story/ democracy- crisis-banglades h/

http://americanidol izing.com/ gossip/Democracy -Crisis-in- Bangladesh- 5087527.html

http://www.sacbee. com/2010/ 07/22/2907767/ democracy- crisis-in- bangladesh. html

http://uspolitics. einnews.com/ article.php? nid=895925

http://classic. cnbc.com/ id/38360850

http://www.thestree t.com/story/ 10814263/ 1/democracy- crisis-in- bangladesh. html

http://1click. indiatimes. com/article/ 005g6Y46I88wO? q=Bangladesh

Muslim, Interfaith and Human Right Leaders Concerned About Crisis of Democracy in Bangladesh

July 20, 2010

Filed under: From the Desk of Imam Mahdi Bray — Imam Mahdi Bray @ 4:21 pm

The current crackdown on political opposition, students, journalists and academicians by the ruling party (Awami League) in Bangladesh is receiving very little attention from the media and the United States Government. Yet its potentials for increasing destabilization in an already volatile religion could be devastating. Check out the piece below. Imam Mahdi Bray

Current Crackdown on Opposition Could Further Destabilize the Region

National Muslim organizations, interfaith leaders and human right activists in the United States are concerned that the recent arrest of key leaders of the Islamic Movement in Bangladesh (Jamaat-e-Islami), student activists, journalists and members of the political opposition have created a huge crisis in the nation. These actions by the Bangladesh ruling party coalition (Awami League) might well result in violent confrontations between political dissidents and the government. There is also concern that the current U.S. government support for AL may actually reinforce, and protect, ongoing human rights violations that contradict the stated objectives of American foreign policy in this volatile region.

Many human rights experts also contend that these arrests and human rights violations are often carried out under the pretext of a Bangladesh government response to “terrorism”.

These arrests come at a time when AL is being accused of acts of extrajudicial killings, arrests, rape, and even the torture of the members of the Islamic opposition party which holds some 17 seats in the national legislature, and commands a following of some 12 million people in Bangladesh, according to the Christian Science Monitor, Amnesty International, Human Rights Watch and the US State Department’s Human Rights Report on Bangladesh.

The national Muslim umbrella organization, the American Muslim Task Force on Civil Rights and Elections (AMT) under the leadership of Dr. Agha Saeed, has expressed grave concern over the human rights conditions in Bangladesh. American Muslim leaders have also expressed that the current government’s descent into authoritarianism, oppression of religious elements: dismantling freedoms, violating human rights and ending practices that promote transparency could be exploited by extremist movements that, unlike Jamaat-e-Islami, BNP and other opposition groups, do not advocate peaceful means for social change in Bangladesh.

There is also concern that the current crackdown and arrest of Jamaat-e-Islami leaders, including the head of the Jamaat, Hajj Moitur Rahman Nizami, is meant to coincide with the start of a national tribunal investigating war crimes committed in 1971. That was when Bangladesh, formerly known as East Pakistan, broke away from West Pakistan to establish an autonomous, predominantly Bengali republic. While the Awami League indicts the Islamic movement for complicity in the killings of civilians in this period of turmoil, other reliable sources contend that these acts of violence were carried out by other Bengalis who sided with the then-West Pakistan army.

Also, the current crackdown jeopardizes the rule of law, and the social and legal space that nonviolent opponents of the current Bangladeshi government. While the Jamaat-e-Islami functions as a peaceful political opposition force in the country, some observers recognize the potential for mass violence in Bangladesh if the Awami League, and its political allies, continue their attack on Islamic opposition figures, trade unionists, intellectuals, and others dissidents.

An interfaith and human rights coalition is currently preparing to visit U.S. State Department officials and members of Congress to express its concerns about these events, and about current United States foreign policy in the region. We believe that US support for the current regime and its policy will only impede efforts for nonviolent political change in Bangladesh, and potentially isolate America from progressive, nonviolent forces in that nation who now suffer from government repression.

http://mahdibray.net/2010/07/20/muslim-interfaith-and-human-right-leaders-concerned-about-crisis-of-democracy-in-bangladesh/

মুজাহিদ, সাঈদী, কামারুজ্জামান ও কাদের মোল্লা আলাদা মামলায় তিন দিনের রিমান্ডে

আদালত প্রতিবেদক | তারিখ: ১৯-০৭-২০১০

আদালত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ও দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামান ও কাদের মোল্লাকে পৃথক মামলায় তিন দিন করে রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন। আজ সোমবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা রিমান্ড শেষে পৃথক মামলায় এই চার নেতাকে মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন।
আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ: আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদকে হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে গোপন বৈঠকের মামলায় তিন দিন রিমান্ড শেষে মহানগর হাকিম কামরুন নাহার রুমির আদালতে হাজির করা হয়। এ মামলায় নতুন করে রিমান্ড না থাকায় আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে একই আদালতে উত্তরা ষড়যন্ত্রের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে পাঁচ দিন রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (ডিবি)। মুজাহিদের আইনজীবীদের জামিন আবেদন নাকচ করে আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী: দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে লেখক হুমায়ুন আজাদকে হত্যাচেষ্টা মামলায় মহানগর হাকিম তোফায়েল হাসানের আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করে সিআইডি। এ মামলায় জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
কামারুজ্জামান ও কাদের মোল্লা: কামারুজ্জামান ও কাদের মোল্লাকে রাজধানীর পল্লবীতে গণহত্যা মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করে সিআইডি। এ মামলায় নতুন করে রিমান্ড না থাকায় আদালত জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
পরে পল্টন থানার পুলিশ রাষ্ট্রপতির গাড়িবহর ও পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার মামলায় ১০ দিন রিমান্ডের আবেদন করে। মহানগর হাকিম আব্দুল মজিদ তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এ মামলার রিমান্ড বাতিল করে জামিন চেয়ে আসামিদের আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক আদালতকে বলেন, টানা পাঁচ দিন রিমান্ডে থাকায় আসামিরা অসুস্থ। তিনি আসামিদের কারাগারে না পাঠিয়ে চিকিত্সার আবেদন করেন।
কামারুজ্জামান আদালতকে বলেন, রিমান্ডে নিয়ে আমাকে যা করা হয়েছে, তা ভাষায় প্রকাশ করার নয়। আদালতে তিনি অসুস্থ বলে দাবি করেন। আবার রিমান্ডে দিলে তিনি জীবন্ত ফিরবেন কি না, তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-07-19/news/79969

Sunday, 18 July 2010

অধিকার-এর রিপোর্ট : নিরাপত্তা হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছেই

ইলিয়াস খান
দেশের নিরাপত্তা হেফাজতে এখন মৃত্যুর ঘটনা ঘটেই চলেছে। মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, গত ছয় মাসে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে নিহত ৬১ জনের মধ্যে ১৩ জন মারা গেছেন নিরাপত্তা হেফাজতে থাকাকালে। এছাড়া অর্থের জন্য সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি প্রদর্শন, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, ভূমি দখল, লুটপাট, মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ও চাঁদাবাজির ঘটনার সঙ্গে র্যাব-পুলিশের সদস্যরা জড়িয়ে পড়ার ঘটনা ঘটেছে বলে মানবাধিকার সংগঠন প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। এতে সারাদেশে মারাত্মক ইমেজ সঙ্কটে পড়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
মানবাধিকার সংগঠন অধিকার জানিয়েছে, গত ছয় মাসে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে ৬১ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে র্যাবের হাতে ২৯ জন, পুলিশের হাতে ২৫ জন এবং র্যাব-পুলিশের যৌথ অভিযানে ৪ জন মারা যান। এই ৬১ জনের মধ্যে ১৩ জন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হেফাজতে থাকাকালে মারা গেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ সময়ে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ক্রসফায়ারে ৫২ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে র্যাবের হাতে ২৭ জন, পুলিশের হাতে ১৮ জন, র্যাব-পুলিশের যৌথ অভিযানে ৪ জন এবং ৩ জন র্যাব- কোস্টগার্ডের যৌথ অভিযানে নিহত হয়েছেন। এসময় মোট ১২ জন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নির্যাতনে নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এদের মধ্যে র্যাব হেফাজতে ২ জন এবং পুলিশের নির্যাতনে ১০ জন নিহত হয়েছেন। গত ৬ মাসে জেলহাজতেও ৩৮ জন মারা যান। এদের মধ্যে ২ জন মারা যান কোর্ট হাজতে এবং ২ জন র্যাব হেফাজতে। একটি মানবাধিকার সংগঠনের তথ্যানুযায়ী, এ সরকারের গত ৬ মাসে ৬৬ জন এবং গত ১৭ মাসে ১৩৭ জনকে র্যাব-পুলিশ হত্যা করেছে। রাজধানীতেও সম্প্রতি ৩ জনকে ধরে নিয়ে পুলিশ হত্যা করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়ায় দেশের মানুষের জীবন ও সম্পদ বিপন্ন হয়ে পড়েছে। এদিকে গত দেড় বছরে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা দেশব্যাপী সংঘর্ষ ও সহিংসতা ঘটালেও পুলিশ-র্যাব নীরব ভূমিকা পালন করে। উচ্ছৃঙ্খল ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও আটকের খবর তেমন পাওয়া যায় না।
অভিযোগ আছে যে, সম্প্রতি রাজধানীর দারুস সালাম এলাকায় শিশুপুত্রের সামনেই মজিবর রহমান (৪৫) নামের এক ব্যক্তিকে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে আটক করে পুলিশ। পরদিন তার লাশ তুরাগ নদীতে পাওয়া যায়। এর আগে গুলশানের বাসা থেকে ব্যবসায়ী মিজানুর রহমানকে (৪২) আটক করে পুলিশ। পরিবারের অভিযোগ, থানা হেফাজতে দু’দিন রাখার পর ঘুষ না দেয়ায় পুলিশ তাকে হত্যা করেছে। অন্যদিকে ছিনতাইকালে পুলিশের হাতে তিনি নিহত হন বলে দাবি করেছে গুলশান থানা পুলিশ। এছাড়া রমনা থানা হেফাজতে অটোরিকশা চালক বাবুল গাজী (৪০) নিহত হন। তার স্ত্রী সুভা আক্তার অভিযোগ করেন, ঘুষ না পেয়ে থানার এক এসআই তাকে পিটিয়ে মেরেছে। এর আগে গত ৯ মার্চ রমনা থানায় গাড়ি চুরির মামলায় আটক জাকির হোসেন (৪৫) মারা যান।
শুধু হত্যাকাণ্ডই নয়, আরও নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে র্যাব-পুলিশ। গত ১৯ ডিসেম্বর ৩টি চোরাই গাড়িসহ পুলিশের সিলেট ডিআইজি অফিসের হাবিলদার তাজুল ইসলামকে সিলেট থেকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তিনি নজরুল ইসলাম নাম ব্যবহার করে নিজেকে সার্জেন্ট পরিচয় দিয়ে চোরাই গাড়ি বিক্রি করতেন। এর আগে গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর ১৬ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের সময় আদাবর থানার এএসআই মাইনুল হক গ্রেফতার হন। তার সঙ্গে থাকা অন্য দুই পুলিশ সদস্য পালিয়ে যান। পালিয়ে যাওয়া পুলিশ সদস্যরা হলেন রাজধানীর কোতোয়ালি থানার এসআই রওশন জামান ও ঢাকা ডিবির কনস্টেবল সাজু। গত বছরের ৭ ডিসেম্বর মতিঝিলে পুলিশ পরিচয়ে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে পৌনে ১২ লাখ টাকা ছিনতাই হয়। দুপুর ২টার দিকে মতিঝিল টিঅ্যান্ডটি স্কুল অ্যান্ড কলেজের কাছে শত শত পথচারীর সামনে এ ঘটনা ঘটে। বাড্ডা থানার এসআই তানভীর আহম্মদ ও এএসআই মিজান গত ১১ নভেম্বর রাতে গফুর হাওলাদার নামে এক মুক্তিযোদ্ধাকে তার বাসা থেকে ধরে নিয়ে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে পাঁচ হাজার টাকা আদায় করে ছেড়ে দেন। পরে তিনি এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দফতরের সিকিউরিটি সেলে লিখিত অভিযোগ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই পুলিশ মুক্তিযোদ্ধা গফুর হাওলাদারের ছেলে রাসেলকে ধরে থানায় নিয়ে গিয়ে নির্যাতন চালায়। গত ২৩ নভেম্বর রাজধানীর দারুস সালাম থানার এসআই হেকমত আলী স্থানীয় ব্যবসায়ী মেহেদী হাসানকে তার বাসা থেকে ধরে দু’লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা না দেয়ায় তাকে একটি হত্যা মামলায় পরদিন আদালতে হাজির করে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন চালানো হয়। পরে মেহেদির স্ত্রী নার্গিস এসআই হেকমত আলী ও ওসি মোস্তাক আহম্মেদকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা দিয়ে তার স্বামীকে পুলিশের হয়রানি থেকে রক্ষা করেন।
র্যাব-পুলিশ কর্তৃক আটকের পর নিখোঁজ বা গুপ্তহত্যা নিয়ে সারাদেশের সর্বমহলে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয় দিয়ে আটকের পর অনেকের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না এবং পরে কারও কারও লাশ উদ্ধার হচ্ছে। ভিকটিমদের পরিবারগুলো দাবি করেছে যে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাই তাদের আটক করে নিয়ে গেছে। পরে অনেকের লাশও উদ্ধার হয়েছে। বিএনপি নেতা চৌধুরী আলম র্যাব কর্তৃক গত ২৫ জুন আটকের পর হতে নিখোঁজ রয়েছেন। তার পরিবার থেকে সরকারসহ নানা মহলে যোগাযোগ করেও কোনো খবর আজও পাওয়া যায়নি। গত ২৭ এপ্রিল মিজানুর রহমান সুমন নামের এক ব্যবসায়ীকে সাদা পোশাকধারী র্যাব সদস্যরা গাইবান্ধার মহিমাগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করে ঢাকায় নিয়ে আসে। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ রয়েছেন। সুমনের স্ত্রী সুরভী আক্তার গত ৩০ এপ্রিল ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, র্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে র্যাব কার্যালয়সহ বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করেও সুমনের কোনো হদিস পাননি তারা। গত ১৯ মার্চ র্যাব-৫-এর সদস্যরা ঠাকুরগাঁও সালন্দার নওলাপাড়ার কাঠ ব্যবসায়ী মো. আকবর আলী সরদার (২৮) এবং একই গ্রামের বিপিন চন্দ্র সরকারকে (৩৬) সালন্দার বিশ্ব ইসলামী মিশন মসজিদের সামনের রাস্তা থেকে আটক করে নিয়ে যায়। ২০ মার্চ বিপিন সরকারকে র্যাব ছেড়ে দিলেও আকবরের কোনো খোঁজ এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। আকবরের পরিবারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও থানায় জিডি বা মামলা করতে চাইলে থানা পুলিশ এর কোনোটাই গ্রহণ করেনি। পরে আকবরের পরিবার ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপারের মাধ্যমে র্যাব-৫-এর কাছে আকবরের খোঁজ করলে তারা আকবরের আটকের বিষয়টি অস্বীকার করে।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি র্যাব সদস্য পরিচয়ে কতিপয় ব্যক্তি গাজীপুরের কাপাসিয়ার ফল বিক্রেতা মো. সেলিমকে ধরে নিয়ে যায়। তার পরিবারের অভিযোগ, র্যাব-৪-এর একটি দল সেলিমকে তার দু’বন্ধু মইনুল ইসলাম ও মোহাম্মদ আলীসহ গ্রেফতার করে। মইনুল ইসলাম ও মোহাম্মদ আলীকে গ্রেফতারের বিষয়টি র্যাব-৪ স্বীকার করলেও মো. সেলিমের কথা অস্বীকার করে। র্যাব মইনুল ইসলামকে ক্যান্টনমেন্ট থানাধীন মানিকদী এলাকার ছাত্রলীগ নেতা ফারুক হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ক্যান্টনমেন্ট থানায় সোপর্দ করে এবং মোহাম্মদ আলীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেয়। কিন্তু ঘটনার পর থেকে সেলিম নিখোঁজ রয়েছেন।
পুলিশ হেফাজতে অব্যাহতভাবে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছেই। প্রতিটি মৃত্যুর ঘটনায়ই নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পুলিশ তাদের হত্যা করেছে। কিন্তু প্রতিটি ক্ষেত্রেই তা পুলিশ অস্বীকার করে আসছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার একেএম শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, পত্রিকায় যা লেখা হয়, তা বানোয়াটও হতে পারে। আর পুলিশ কাউকে ধরলেই সে ভালো হয়ে যায়। পুলিশ কর্তৃক শেষ ৩টি হত্যার অভিযোগ সম্পর্কে পুলিশ কমিশনার সাংবাদিকদের বলেছেন, এ তিনটি ঘটনাই বিচ্ছিন্ন। তবে এতে পুলিশের কোনো সম্পৃক্ততা আছে কিনা, তা তদন্ত করে দেখা হবে।
এদিকে প্রতিটি ঘটনায় পুলিশ তদন্ত কমিটি গঠন করলেও এ কমিটির ওপর আস্থা নেই নিহতদের স্বজনদের। মৃত মজিবরের ভাই বলেছেন, পুলিশি তদন্তে আস্থা নেই। পুলিশ হেফাজতে হাজতির মৃত্যুর ঘটনায় সুরাহা চেয়ে সম্প্রতি বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চে রিট আবেদন করে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ-এর পক্ষে অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান ও বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এলিনা খান। এ আবেদনের প্রেক্ষিতে পুলিশ হেফাজতে হাজতির মৃত্যুর ঘটনায় সরকারের প্রতি রুল জারি করেন হাইকোর্ট। হাজতির মৃত্যুর ঘটনায় অপরাধীদের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হবে না এবং পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু প্রতিরোধে কেন পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হবে না মর্মে স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের আইজি, ডিএমপি পুলিশ কমিশনারসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে তিন সপ্তাহের রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট এবং এ সমস্যার সমাধান ও সর্বজনীন রায় প্রদানের লক্ষ্যে আদালত ১১ আইনজীবীকে এমিকাস কিউরিও নিয়োগ দিয়েছেন। এরা হলেন : ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ, ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম, ব্যারিস্টার ফিদা এম কামাল, ড. এম জহির, সিনিয়র অ্যাডভোকেট মাহমুদুল ইসলাম, আবদুল বাছেত মজুমদার, আবদুল মতিন খসরু, আনিসুল হক ও ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/07/19/35308