স্টাফ রিপোর্টার
চলতি বছরের গত ৬ মাসে গড়ে প্রতি ৪ দিনে একজন করে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। সীমান্তে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফ ৬ মাসে ১৭ জন বাংলাদেশী নাগরিককে হত্যা করেছে। বিএসএফের আক্রমণে আহত হয়েছেন আরও ৪৯ জন বাংলাদেশী। মানুষ আইন হাতে তুলে নিয়ে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করেছে ৭৫ জনকে। এছাড়া ধর্ষণের শিকার হয়েছে ২৯৭ জন নারী ও শিশু। ধর্ষণের পর হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে ৫৪ জন। মানবাধিকার সংস্থা অধিকার গতকাল এক প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ করেছে। অধিকারের তথ্য অনুযায়ী বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার ৩৭ জন ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে র্যাব ২৪ জনকে, পুলিশ ৮ জনকে, র্যাব-পুলিশেরযৌথ অভিযানে ৩ জন এবং র্যাব ও কোস্টগার্ডের যৌথ অভিযানে ২ জন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। নিহত ৪৯ জনের মধ্যে একজন আওয়ামী লীগ কর্মী, ৩ জন পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির (লাল পতাকা) সদস্য, ২ জন পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য, ৪ জন গণবাহিনীর সদস্য, ২ জন যুবক, একজন ৫২ বছর বয়সী ব্যক্তি, একজন ঢাকার নর্দান কলেজ প্রথম বর্ষের ছাত্র, একজন স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র, একজন ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, একজন ওষুধ ব্যবসায়ী, একজন কাপড়ের দোকান কর্মচারী, একজন পশু ডাক্তার, একজন শ্রমিক, একজন কয়েদি, ২ জন হাজতি এবং ২৬ জন কথিত অপরাধী বলে জানা গেছে।ধর্ষণের শিকার ২৯৭ জনের মধ্যে ১০৩ জন নারী এবং ১৯১ শিশু। ধর্ষণের পর হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে ৩৫ জন নারী এবং ১৯ শিশু। ১৯৯৪ সালে দিনাজপুরে ইয়াসমিনকে ধর্ষণের পর হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে মানবাধিকার সংস্থাগুলো দেশজুড়ে তোলপাড় করলেও রহস্যজনক কারণে এখন নীরব। ৬ মাসে ৫৪ জন ধর্ষণের পর হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেও নারী সংগঠনগুলোর কোনো শব্দ নেই। সবাই এখন নীরবে এটা মেনে নিচ্ছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী ৬ মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত হয়েছে ৬৫ জন নাগরিক। প্রতিবেদনে র্যাব ধরে নিয়ে যাওয়ার পর নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ৬২০, উত্তর শাহজাহানপুর এলাকা থেকে সাদা পোশাক ও ইউনিফর্ম পরা র্যাব সদস্যরা মুদি দোকান কর্মচারী রফিকুল ইসলামকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বলে পরিবার অভিযোগ করেছে। নিখোঁজ রফিকুলের পরিবারের সদস্যরা অধিকারকে জানান, ধরে নিয়ে যাওয়ার পর তারা র্যাব-৩, স্থানীয় থানাসহ বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নিয়েছেন, কিন্তু কোথাও পাওয়া যায়নি। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা অধিকারকে জানান, ঘটনার দিন বিকালে র্যাব-এর ইউনফর্ম পরা এবং সাদা পোশাকের ১৫/২০ জন সদস্য দোকান থেকে রফিকুলকে আটক করে নিয়ে যায়। কী অপরাধে তাকে আটক করা হয়েছে এ ব্যাপারে তারা কিছুই জানায়নি। দিনদুপুরে রফিকুলকে আটক করে নেয়ার এ দৃশ্য আশপাশের অন্যান্য দোকানদার, পথচারী ও সাধারণ মানুষ প্রত্যক্ষ করেছেন। রফিকুলের বাড়ি গাইবান্ধা জেলায়। গত ২২ ফেব্রুয়ারি স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তৌফিক আহমেদ হাসান নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের হিজবুত তাহ্রীর পোস্টারসহ অন্য দু’জনের সঙ্গে ধরা পড়েন। পুলিশের দায়েরকৃত এই মামলায় গত ১৩ মে তিনি জামিন পান। হাসানের বাবা মোহাম্মদ খবির উদ্দিন অভিযোগ করেছেন, পুলিশ ও কারারক্ষীদের সূত্রে তিনি জানতে পেরেছেন, সাদা পোশাকে র্যাব তার ছেলেকে জেল গেট থেকে জামিনে বের হয়ে আসার পর পরই অপহরণ করে।অধিকার এ ধরনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে নিখোঁজ ব্যক্তিদের উদ্ধার এবং এসব ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে।প্রতিবেদনে সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন কর্মসূচি ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতেও পুলিশ বাধা দেয়ায় অধিকার গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে। এছাড়া হরতালের আগে ও হরতাল চলাকালীন পথচারীদের ধরে ভ্রাম্যমাণ আদালতে বিচারের নামে সাজা দেয়াকে অধিকার মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে অভিমত প্রকাশ করেছে।
No comments:
Post a Comment