Friday, 7 January 2011

আসকের ২০১০ সালের প্রতিবেদন : আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নিহত ১৩৩ নির্যাতিত ২৯৮ সাংবাদিক

স্টাফ রিপোর্টার

বিদায়ী ২০১০ সালে সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বিচারবহির্ভূতভাবে ১৩৩ জন নিহত হয়েছেন। সাংবাদিক নির্যাতিত হয়েছেন ২৯৮ জন। ৬২৫ নারী ধর্ষিত হয়েছেন। বিএসএফ গুলি করে ১০০ বাংলাদেশীকে গত এক বছরে হত্যা করেছে। ২০১০ সালের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আইন ও সালিশ কেন্দ্র গতকাল এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে মানবাধিকার প্রতিবেদন-২০১০-এর সারসংক্ষেপ প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের পরিচয়ে মানুষকে ধরে নেয়ার ঘটনা বেড়েছে। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বর্তমান সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা। কিন্তু সরকার তা বন্ধ না করে বরং বন্দুকযুদ্ধ, এনকাউন্টার ইত্যাদি নামে অব্যাহতভাবে এ হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। গত বছরজুড়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ছিল নাজুক।
র্যাবের কার্যকলাপের কথা উল্লেখ করে অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, র্যাবের হাতে নিরীহ মানুষ বন্দি হওয়ার পর তারা হয়তো গুম হচ্ছেন, না হয় ক্রসফায়ারের নামে নিহত হচ্ছেন। উইকিলিকসের ফাঁস করা নথিতেও র্যাবের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের কথা উঠে এসেছে। ক্রসফায়ার নিয়ে ব্যাপক বিতর্কের মধ্যেই নতুন প্রবণতা হিসেবে যুক্ত হয়েছে মানুষ নিখোঁজ হওয়া বা গুপ্তহত্যার ঘটনা। দেশবাসীর জন্য এটাই বড় আতঙ্কের বিষয়। এ বিষয়ে সরকার বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে কোনো গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি। এমনকি কার্যকর কোনো তদন্তের উদ্যোগও নেয়া হয়নি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি গত বছর নাজুক ছিল বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এ সময় ৬২৫ নারী ধর্ষিত হন। এসব ঘটনায় ৩২৩টি মামলা হয়েছে। ধর্ষণের পর ৭৮ জনকে হত্যা করা হয়, ধর্ষণের পর সাতজন আত্মহত্যা করেছেন। গত বছর বখাটেদের উত্পাতে ৩১ নারী আত্মহত্যা করেছে। অপমান সইতে না পেরে একজন বাবাও আত্মহত্যা করেন। যৌতুকের জন্য ৩৯৪ নারী নির্যাতিত হয়েছেন। এ ঘটনায় ৫১টি মামলা হয়েছে। একই কারণে ২২৩ জনকে হত্যা করা হয় এবং ১৮ জন নির্যাতিত নারী আত্মহত্যা করেন।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, গত বছর ৯৩ নারী এসিড নিক্ষেপের শিকার হন। কারা হেফাজতে মারা গেছেন ৭৪ জন। ২৯৮ সংবাদকর্মী হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ১০০ বাংলাদেশী গত বছর ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে নিহত হন। এ ছাড়া গত বছর ৪৩৬টি রাজনৈতিক সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। এতে ৭ হাজার ১০৩ জন আহত ও ৭৫ জন নিহত হন। গত বছর ২ হাজার ২৭৯ প্রবাসী শ্রমিক লাশ হয়ে দেশে ফেরত এসেছেন। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর গত বছর সেপ্টেম্বরের হিসাব অনুযায়ী, জনশক্তি রফতানি প্রায় ২০ শতাংশ কমেছে। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, রাজনৈতিক হয়রানিমূলক হিসাবে চিহ্নিত করে সরকার দুর্নীতি, খুন, ডাকাতি, ধর্ষণের অনেক মামলা প্রত্যাহার করছে। সংবাদ সম্মেলনে অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, পূর্ণাঙ্গ মানবাধিকার কমিশন গঠন করা হলেও কমিশনের জন্য বিধিমালা ও সাংগঠনিক কাঠামো অনুমোদন না হওয়ায় কমিশনের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
এ সময় আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিচালক নূর খান এবং মিডিয়া অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডভোকেসি ইউনিটের জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক সাঈদ আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

No comments:

Post a Comment