Friday, 16 July 2010

বেড়াতে গিয়ে আটক পাঁচ যুবক পুলিশের কাছে ‘ভয়ংকর জঙ্গি’!

গোলাম মর্তুজা, ঢাকা ও আসাদুল ইসলাম, জয়পুরহাট | তারিখ: ১৭-০৭-২০১০

‘গভীর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দেশের আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য তারা জেএমবি সদস্য সিরাজুল ইসলামের বাড়িতে সমবেত হয়েছিল।’ জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে গ্রেপ্তার হওয়া ঢাকার পাঁচ যুবকের বিরুদ্ধে পুলিশের দায়ের করা মামলায় এ অভিযোগ করা হয়।
জয়পুরহাট পুলিশের দাবি, ঢাকার এ পাঁচ যুবককে গত সোমবার জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) জঙ্গি সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা হলেন: তানভীর হোসেন আদনান, রিয়াজউদ্দিন, লুৎফর রহমান, গোলাম মাহবুব শাহারিয়ার ওরফে রিয়াল ও আল মামুন স্বপন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পুরান ঢাকার বাসিন্দা এই পাঁচজনের একজন ফ্রিল্যান্স আলোকচিত্রী, একজন ছাত্র এবং অপর তিনজন ভিডিও-অডিও সিডির ব্যবসা করেন। তাঁদের পারিবারিক সূত্র জানায়, জঙ্গি সংগঠন তো দূরের কথা, নামাজ-রোজা বা ধর্মীয় আচারাদি পালনেও তাঁদের কোনো আগ্রহ দেখা যায়নি। যুবকদের পরিবারগুলোর অভিযোগ, পাঁচ বন্ধু মিলে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি থানার কাচপুর গ্রামে পারিবারিকভাবে পরিচিত ইমদাদুল ও আজিজুলদের বাড়িতে বেড়াতে গেলে ওই দিনই পুলিশ সেখান থেকে তাঁদের আটক করে। পরে কোনো প্রকার যাচাই-বাছাই না করে পাঁচ যুবককে ‘ভয়ংকর জঙ্গি’ সাজিয়ে পুলিশ মামলা দিয়েছে। এ ছাড়া ১০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার দেখিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশ আরেকটি মামলা দিয়েছে বিশেষ ক্ষমতা আইনে। জানতে চাইলে জয়পুরহাটের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মাশরেকুর রহমানও প্রথম আলোকে বলছেন, নিছক সন্দেহের বশে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তবে পাঁচবিবি থানার পুলিশ জানায়, ওই বাড়িটি ব্র্যাক অফিসে বোমা হামলার দায়ে সাজাপ্রাপ্ত জেএমবি সদস্য সিরাজুল ইসলামের। ইমদাদুল ও আজিজুল হলেন সিরাজুল ইসলামের ভাই।
গ্রেপ্তার হওয়া তানভীরের বাবা আফজাল হোসেন প্রথম আলোকে জানান, ইমদাদুল ও আজিজুলের এক ভাই যে জেএমবির সঙ্গে জড়িত, তা তাঁরা কেউই জানতেন না। তিনি বলেন, ঢাকার মোহাম্মদপুরে তাঁর শ্যালকদের দীর্ঘদিনের প্রতিবেশীর নিকটাত্মীয় ইমদাদুল ও আজিজুল। সেই পরিচয়ের সূত্রে তাঁদের সঙ্গে তিনি ব্যবসাও শুরু করেন। তিনি সেখানে ৩০০ মণ ধান ও পাঁচটি গরু কিনে রেখেছেন। যেগুলোর দেখাশোনা করছে ওই দুই ভাই। তানভীর বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিল সেখানে।
অবশ্য জয়পুরহাটের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মাশরেকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, একজন জেএমবি সদস্যের বাড়িতে অপরিচিত পাঁচজন লোক। এ ছাড়া তাঁদের কাছ থেকে ১০ বোতল ফেনসিডিল, ক্যামেরা, ল্যাপটপ, কয়েকটি মোবাইল ফোনসেট ও ইরাকযুদ্ধের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্রের সিডি উদ্ধার হয়েছে, যা জেএমবি হিসেবে পুলিশের সন্দেহকে আরও জোরালো করেছে। পুলিশ সুপার বলেন, ‘আমরা তাদের জেএমবি বলছি না, জেএমবি সন্দেহে তাদের ধরা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। তদন্তের পর বলা যাবে, তারা আসলেই কী।’
গ্রেপ্তার হওয়া আলোকচিত্রী গোলাম মাহবুবের চাচা মহসিন সরকার প্রথম আলোকে বলেন, মাহবুব বন্ধুদের সঙ্গে গ্রামে ঘুরতে গিয়েছিল। সঙ্গে ক্যামেরা আর ল্যাপটপও নিয়ে গিয়েছিল। পুলিশ তাদের কাছ থেকে ফেনসিডিলের বোতল পাইছে, সেটা হতে পারে। শহরের ছেলে গ্রামে গিয়ে এ রকম করতে পারে। কিন্তু তাদের জেএমবি সদস্য বানিয়ে মামলায় দিয়েছে। পরদিন সংবাদমাধ্যমে পাঁচ জঙ্গি গ্রেপ্তারের খবর প্রকাশের পর তাঁরা বিষয়টি জানতে পারেন। তাঁর অভিযোগ, পুলিশের ভুল সন্দেহের কারণে পাঁচটি যুবক ছেলে জঙ্গি হিসেবে চিহ্নিত হলো, সামাজিকভাবে তাঁদের পরিবার হেয় প্রতিপন্ন হয়েছে।

http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-07-17/news/79315

No comments:

Post a Comment