Tuesday, 29 May 2012
এবার প্রকাশ্যে তরুণীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা পুলিশের
বাধা দেওয়ায় সাংবাদিক-আইনজীবীদের মারধর, লাঠিপেটা
এবার পুলিশ প্রকাশ্য দিবালোকে ঢাকার নিম্ন আদালত চত্বরের পাশে পুলিশ ক্লাবের ভেতরে নিয়ে এক তরুণীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করল। আজ মঙ্গলবার দুপুরের দিকে এ ঘটনা ঘটে।
ওই তরুণীকে পুলিশ আদালত চত্বর থেকে জোর করে থানায় নিতে চাইলে আইনজীবী ও সাংবাদিকেরা এতে বাধা দেন। এ সময় পুলিশ তাঁদের লাঠিপেটা ও মারধর করে। এতে দৈনিক কালের কণ্ঠের আদালত প্রতিবেদক এম এ জলিল ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের আদালত প্রতিবেদক তুহিন হাওলাদারসহ ১০-১২ জন আইনজীবী আহত হয়েছেন। এ সময় প্রথম আলোর আদালত প্রতিবেদক প্রশান্ত কর্মকারকে মারধর করে তাঁর কোট ছিনিয়ে নিয়ে যায় পুলিশ।
তেজগাঁও কলেজ ছাত্রদল সভাপতি রাজের দুই পা ভেঙে দিয়েছে পুলিশ
বিশেষ প্রতিনিধি
তেজগাঁও কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি মিজানুর রহমান রাজকে পিটিয়ে দুই পা ভেঙে দেয়ার পরও পুলিশ আবার রিমান্ডে নিতে চাইছে। হরতালের গাড়ি পোড়ানোর অভিযোগে দায়ের করা একটি মামলায় গত ২১ মে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারের পরই তার ওপর চালানো হয় নির্মম নির্যাতন। তেজগাঁও থানা ভবনে দোতলায় একটি কক্ষে ঝুলিয়ে লোহার পাইপ দিয়ে তাকে পিটায় পুলিশ। ভেঙে দেয়া হয় তার দুই পা। থানা থেকে তাকে নেয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে তার দুই পা ক্ষত স্থানে প্লাস্টার করা হয়। পা প্লাস্টারের পর ২২ মে হাজির করা হয় সিএমএম আদালতে। চাওয়া হয় রিমান্ড। তার পক্ষের আইনজীবীরা জানান, এরই মধ্যে তার দুই পা ভেঙে দিয়েছে পুলিশ। রিমান্ডে দিলে জীবনও বিপন্ন হতে পারে। সেদিন রিমান্ড না দিয়ে তাকে জেল হেফাজতে চিকিত্সার নির্দেশ দেয় ম্যাজিস্ট্রেট। একই সঙ্গে ২৭ মে রিমান্ড শুনানির জন্য দিন ধার্য করা হয়। রিমান্ড শুনানির ধার্য তারিখে গতকালও তাকে কারাগার থেকে আনা হয় সিএমএম আদালতে। দুই পা এখন প্লাস্টার করা অবস্থায়ই রয়েছে। গত রোববার রিমান্ড শুনানির সময় তার অবস্থা আবারও তুলে ধরেন আইনজীবী মো. নিহার হোসেন ফারুক। ম্যাজিস্ট্রেট এরফান উল্লাহ আসামি মিজানুর রহমান রাজকে নিজের খাস কামরায় নিয়ে যান। সেখানে তার দুই পা প্লাস্টার খুলে দেখেন ম্যাজিস্ট্রেট। তার শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রিমান্ডের আবেদন নামঞ্জুর করে আবারও জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে নাকচ করে দেয়া হয় তার পক্ষে দায়ের করা জামিন আবেদন। উল্লেখ্য, ১৬ মে দুপুরে ঢাকার কারওয়ানবাজার এলাকায় মিরপুরগামী বিহঙ্গ পরিবহনের একটি বাস ভাংচুর ও আগুন দেয়া হয়। এই ঘটনায় দায়ের করা একটি মামলায় গ্রেফতার করা হয় তেজগাঁও থানা ছাত্রদলের সভাপতি মিজানুর রহমান রাজকে। বিহঙ্গ পরিবহনের কন্ডাকটর মো. নাদিম বাদী হয়ে সেদিনই মামলাটি দায়ের করে তেজগাঁও থানায়। আইনজীবী নিহার হোসেন ফারুক জানান, রাজের অবস্থা খুবই খারাপ। দুই পা ভেঙে দেয়ায় হাঁটতে পারছেন না। তারপরও রিমান্ডে নেয়ার জন্য পুলিশ মরিয়া। তিনি বলেন, সময়মত সুচিকিত্সা না হলে তার পা সহজে ভালো হবে না। তিনি বলেন, পুলিশ শুধু পা ভাঙেনি নির্যাতন করেছে পুরো শরীরে। তার পুরো শরীরে রয়েছে নির্যাতনের চিহ্ন। http://www.amardeshonline.com/pages/details/2012/05/29/147277
তেজগাঁও কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি মিজানুর রহমান রাজকে পিটিয়ে দুই পা ভেঙে দেয়ার পরও পুলিশ আবার রিমান্ডে নিতে চাইছে। হরতালের গাড়ি পোড়ানোর অভিযোগে দায়ের করা একটি মামলায় গত ২১ মে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারের পরই তার ওপর চালানো হয় নির্মম নির্যাতন। তেজগাঁও থানা ভবনে দোতলায় একটি কক্ষে ঝুলিয়ে লোহার পাইপ দিয়ে তাকে পিটায় পুলিশ। ভেঙে দেয়া হয় তার দুই পা। থানা থেকে তাকে নেয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে তার দুই পা ক্ষত স্থানে প্লাস্টার করা হয়। পা প্লাস্টারের পর ২২ মে হাজির করা হয় সিএমএম আদালতে। চাওয়া হয় রিমান্ড। তার পক্ষের আইনজীবীরা জানান, এরই মধ্যে তার দুই পা ভেঙে দিয়েছে পুলিশ। রিমান্ডে দিলে জীবনও বিপন্ন হতে পারে। সেদিন রিমান্ড না দিয়ে তাকে জেল হেফাজতে চিকিত্সার নির্দেশ দেয় ম্যাজিস্ট্রেট। একই সঙ্গে ২৭ মে রিমান্ড শুনানির জন্য দিন ধার্য করা হয়। রিমান্ড শুনানির ধার্য তারিখে গতকালও তাকে কারাগার থেকে আনা হয় সিএমএম আদালতে। দুই পা এখন প্লাস্টার করা অবস্থায়ই রয়েছে। গত রোববার রিমান্ড শুনানির সময় তার অবস্থা আবারও তুলে ধরেন আইনজীবী মো. নিহার হোসেন ফারুক। ম্যাজিস্ট্রেট এরফান উল্লাহ আসামি মিজানুর রহমান রাজকে নিজের খাস কামরায় নিয়ে যান। সেখানে তার দুই পা প্লাস্টার খুলে দেখেন ম্যাজিস্ট্রেট। তার শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রিমান্ডের আবেদন নামঞ্জুর করে আবারও জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে নাকচ করে দেয়া হয় তার পক্ষে দায়ের করা জামিন আবেদন। উল্লেখ্য, ১৬ মে দুপুরে ঢাকার কারওয়ানবাজার এলাকায় মিরপুরগামী বিহঙ্গ পরিবহনের একটি বাস ভাংচুর ও আগুন দেয়া হয়। এই ঘটনায় দায়ের করা একটি মামলায় গ্রেফতার করা হয় তেজগাঁও থানা ছাত্রদলের সভাপতি মিজানুর রহমান রাজকে। বিহঙ্গ পরিবহনের কন্ডাকটর মো. নাদিম বাদী হয়ে সেদিনই মামলাটি দায়ের করে তেজগাঁও থানায়। আইনজীবী নিহার হোসেন ফারুক জানান, রাজের অবস্থা খুবই খারাপ। দুই পা ভেঙে দেয়ায় হাঁটতে পারছেন না। তারপরও রিমান্ডে নেয়ার জন্য পুলিশ মরিয়া। তিনি বলেন, সময়মত সুচিকিত্সা না হলে তার পা সহজে ভালো হবে না। তিনি বলেন, পুলিশ শুধু পা ভাঙেনি নির্যাতন করেছে পুরো শরীরে। তার পুরো শরীরে রয়েছে নির্যাতনের চিহ্ন। http://www.amardeshonline.com/pages/details/2012/05/29/147277
Sunday, 1 January 2012
আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি : নিষ্পেষিত মানবাধিকার
নাছির উদ্দিন শোয়েব
ক্রসফায়ার, গুপ্তহত্যা, নৃশংস খুন ও গুমসহ সহিংস ঘটনায় মহাজোট সরকারের তিন বছরে আইনশৃঙ্খলা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি ছিল চরম উদ্বেগজনক। র্যাব ও পুলিশের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপক অভিযোগ ওঠে। এর মধ্যে কয়েকটি ঘটনার ওপর বিচার বিভাগীয় তদন্ত চলছে। নির্যাতিত এবং ভুক্তভোগী পরিবারগুলো আদালত এবং প্রশাসনের কাছে গিয়েও ন্যায়বিচার পায়নি—এমন বহু অভিযোগ রয়েছে। পেশাদার খুনি, দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও বহু দাগি অপরাধীকে দলীয় বিবেচনায় আইনের আওতায় আনা হয়নি। বরং মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ২২ আসামিকে কারাগার থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, জনপ্রতিনিধিদের প্রকাশ্যে হত্যা, বিরোধী মতের ব্যক্তিদের নামে মিথ্যা মামলা, আটকের পর রিমান্ড এবং সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে। ভঙ্গুর আইনশৃঙ্খলার তেমন কোনো উন্নতি হয়নি।
মহাজোট সরকারের তিন বছরের প্রথম আড়াই বছর র্যাবের ক্রসফায়ার ও এনকাউন্টার চলে ফ্রিস্টাইলে। এতে স্থানীয় গণমাধ্যম ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তীব্র সমালোচনার মুখে চলতি বছরের শেষার্ধে নাম বদল করে নতুন কায়দায় শুরু হয় গুম-গুপ্তহত্যা। বিভিন্ন স্থান থেকে সাদা পোশাকধারীদের হাতে আটক প্রায় ১শ’ জনের খোঁজ মেলেনি। রাজধানী ঢাকাতেই চলতি বছর গুম হয়েছেন ৩০ জন। এ পর্যন্ত ১৬ জনের লাশ নদী, হাওর ও জঙ্গল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। বিএনপি নেতা ও ৫৬ নং ওয়ার্ড কমিশনার চৌধুরী আলমের কোনো হদিস নেই দু’বছরেও। ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর অভিযোগের আঙুল র্যাবের বিরুদ্ধেই।
আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকাকালে ক্রসফায়ারের কঠোর বিরোধিতা করলেও ক্ষমতায় এসে এর সমর্থন করে। চলতি বছরের ২৩ মার্চ ঝালকাঠির রাজাপুরে তালিকাভুক্ত এক সন্ত্রাসীকে ধরতে গিয়ে র্যাবের গুলিতে নিরীহ কলেজছাত্র লিমন হোসেন আহত ও পঙ্গু হয়। এ ঘটনায় র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বক্তব্য এবং গঠিত চারটি তদন্ত রিপোর্টে স্ববিরোধী তথ্য পাওয়া যায়। এখনও ইমনের মামলা নিষ্পত্তি হয়নি। পঙ্গু অবস্থায় তাকে র্যাবের মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে।
ক্রসফায়ারের ঘটনায় উদ্বেগ সৃষ্টি হওয়া এবং কয়েকটি ঘটনায় আদালতে রিট করার পর র্যাব সদর দফতর থেকে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে ক্রসফায়ারকে ‘এনকাউন্টার’ বলে প্রচার চালানো হয়। কিন্তু নাম ভিন্ন হলেও র্যাব সদস্যরা নানা কায়দায় বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড অব্যাহত রাখলে মানবাধিকার সংগঠনগুলো এর কঠোরভাবে বিরোধিতা করে। ফলে ক্রসফায়ারের পাশাপাশি ২০০৯ সালের দিকে কৌশল বদলে র্যাব ও পুলিশ সন্দেহজনক ব্যক্তিকে আটকের পর হাঁটুতে গুলি করে আহত করার রীতি চালু করে। এ ঘটনায়ও ব্যাপক অভিযোগ ওঠে। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে যে, সন্দেহজনক ব্যক্তিকে আটক করে নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে চোখ বেঁধে হাঁটুতে গুলি করে আহত করে অপরাধী বলে প্রচার করা হয়। পর্যবেক্ষক মহল বলছে, ক্রসফায়ার, এনকাউন্টার, গুপ্তহত্যা, সামারি বাণিজ্য ও বন্দুকযুদ্ধের নাটক সাজিয়ে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মতো বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে র্যাবের প্রশ্নবিদ্ধ ইমেজ আরও ম্লান হয়ে পড়ছে। র্যাবের বহু সদস্যও জড়িয়ে পড়েছে নানা অপরাধে। র্যাবের দেয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১০ সালেই নানা অপরাধে জড়িত ৭৫৬ জন র্যাব সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় বিভিন্ন পদমর্যাদার কমপক্ষে ৩১৪ সদস্যকে গুরুদণ্ড, ৩১০ জন লঘুদণ্ড ও স্ব-স্ব্ব বাহিনীতে ফেরত পাঠানো হয়েছে ১৩২ জনকে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তথ্য অনুযায়ী ২০০৯, ২০১০ ও চলতি বছরের (২০১১) নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় তিন বছরে (৩৫ মাসে) ৩৫৯ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে নিহত হন। এর মধ্যে রয়েছেন ২০০৯ সালে ১৫৪ জন, ২০১০ সালে ১২৭ জন ও ২০১১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে ৭৮ জন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০০৪ সালে র্যাবের যাত্রা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত র্যাবের বিরুদ্ধে ৭০০ লোককে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। অতীতে এসব হত্যার ব্যাপারে র্যাব অথবা সরকার গঠিত বিচার বিভাগীয় কমিটি তদন্ত করেছে। তবে সেসব তদন্তের তথ্য এখনও প্রকাশ করা হয়নি বা গোপনই থেকে গেছে।
তবে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার এম সোহায়েল বলেছেন, র্যাব কাউকে আটক করে নিয়ে নিখোঁজ বা গুম করেছে কেউ এ ধরনের অভিযোগ প্রমাণ করতে পারবে না। দুষ্কৃতকারীরা র্যাবের নাম ভাঙিয়ে এ কাজ করতে পারে। তবে এ ধরনের অপরাধীদের আটকের জন্য র্যাব গোয়েন্দারা জোরালো চেষ্টা চালাচ্ছেন বলেও জানান কমান্ডার সোহায়েল। তিনি বলেন, র্যাব অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য অক্লান্ত চেষ্টা চালাচ্ছে। একটি এলিট ফোর্সের নামে এ ধরনের অপপ্রচার হলে অপরাধীরা সুযোগ নিতে পারে বলেও মন্তব্য করেন র্যাবের এ প্রভাবশালী কর্মকর্তা। র্যাবের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, র্যাব প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫৩৪টি অভিযানের মাধ্যমে ৬৫১ অপহৃতকে উদ্ধার এবং ৯৪২ অপহরণকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসব ঘটনায় ৪২৯টি মামলা হয়েছে।
একই সময় পুলিশের বিরুদ্ধেও ছিল বিস্তর অভিযোগ। হরতাল চলাকালে জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকের ওপর পুলিশের নির্মম নির্যাতন, গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে আটক হয়ে বিশিষ্ট আইনজীবী এমইউ আহমেদের মর্মান্তিক মৃত্যু, বিএনপি নেতা ও ডিসিসির সদ্য বিদায়ী মেয়র সাদেক হোসেন খোকাকে পুলিশের সামনে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাত, দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে আটক করে অন্ধকার প্রকোষ্ঠে রেখে নির্মম নির্যাতন ও বস্ত্রহীন করার ঘটনা ছিল সবচেয়ে ন্যক্কারজনক। যা এদেশের গণমাধ্যমের জন্য চরম উদ্বেগজনক ঘটনা। এছাড়াও রাজনৈতিক নেতাদের আটকের পর রিমান্ডে নিয়ে নির্মম নির্যাতনের ঘটনাও ছিল আলোচিত।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের বহু ঘটনা দেশজুড়ে আলোচিত হয়। চলতি বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবদুল কাদেরকে ধরে নিয়ে খিলগাঁও থানায় আটক রেখে অপরাধী বলে নির্যাতন করে পুলিশ। এ ঘটনায় বিচার বিভাগীয় ও পুলিশি তদন্তে খিলগাঁও থানার ওসিসহ তিনজনকে দোষী সাব্যস্ত এবং আদালতের নির্দেশে তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে সাসপেন্ড করা হয়। অপরদিকে গত শবেবরাতের রাতে সাভারের আমিনবাজারে পুলিশের মদতে ৬ ছাত্রকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তে সাভার থানার ওসি মাহবুবুর রহমানকে প্রত্যাহার ও এসআই হারেস শিকদার এবং আনোয়ারকে সাসপেন্ড করা হয়। চলতি বছর নোয়াখালীতে এক যুবককে আটক করে পুলিশ বিক্ষুব্ধ জনতার মাঝে ছেড়ে দিয়ে গণপিটুনি দিয়ে হত্যায় মদত দেয়। অন্যদিকে চট্টগ্রামে এক কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা থানার ওসি মিজানুর রহমান। এপ্রিল মাসে রাজশাহী আদালতে আসামির হাত ভেঙে দেয় পুলিশ কনস্টেবল নজরুল। রাজধানীর চৌধুরীপাড়ায় একটি আবাসিক হোটেলে তরুণীকে আটকে রেখে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা ভিন্নদিকে নেয়ার চেষ্টার অভিযোগে রামপুরা থানার ওসি এবং দুই সাব-ইন্সপেক্টরসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়।
এদিকে নরসিংদীর নির্বাচিত জনপ্রিয় মেয়র লোকমান হোসেনকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার অভিযোগ ওঠে খোদ সরকারেরই ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদের প্রতি। নিহত লোকমানের স্বজনদের দাবি, মন্ত্রীর নির্দেশেই তার ভাই সালাহউদ্দিন আহমেদ বাচ্চু ও আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা মেয়র লোকমানকে হত্যা করে। এ ঘটনায় মামলার প্রধান আসামি মন্ত্রীর ভাইকে এখন পর্যন্ত পুলিশ গ্রেফতার করেনি। ‘সময়ের অভাবে আসামি ধরা যায়নি’ উল্লেখ করে আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকারের দেয়া বক্তব্যে আত্মীয়স্বজনরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এদিকে রাষ্ট্রপতির সাংবিধানিক এখতিয়ারকে ব্যবহার করে নাটোরের চাঞ্চল্যকর গামা হত্যা মামলায় ২০ ফাঁসির আসামিকে ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে লক্ষ্মীপুরে অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম হত্যা মামলার ফাঁসির আসামি বিপ্লবকে। জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক হত্যা মামলার ফাঁসির আসামি উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আহসান হাবীব ওরফে টিটুকেও ক্ষমা করে দেয়া হয়।
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর তিন বছরে দেশে ১২ হাজারেরও বেশি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। সে অনুযায়ী প্রতিদিন প্রায় ১১ জন করে খুন হয়েছেন। রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ৫৯২ জন এবং আহত হয়েছেন ৪০ হাজার ১৯০ জন। চলতি বছর ইউপি নির্বাচনী সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ৮৩ জন। তবে পুলিশ সদর দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ১০ হাজার ৬শ’ উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০০৯ সালে ৪২১৯ জন ও ২০১০ সালে ৪৩১৫ জন। খুনসহ ডাকাতি, দুর্ধর্ষ চুরি, অপহরণ, নারী নির্যাতন, শিশু নির্যাতন, মাদক কেনাবেচাসহ ৫ লাখেরও বেশি অপরাধের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ২০০৯ সালে ১ লাখ ৫৭ হাজার ১০৮টি, ২০১০ সালে ২ লাখ ৪৩ হাজার ৫৩৪টি ও চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে ১ লাখ ৩৭ হাজার অপরাধের ঘটনা ঘটে। গত তিন বছরে শুধু রাজধানী ঢাকায় ৫ হাজার ৫৭৬টি বেওয়ারিশ লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
মানবাধিকার সংস্থা অধিকার-এর তথ্য অনুযায়ী, সরকারের ২ বছর ১১ মাসে ৪ সাংবাদিক নিহত, ২৮০ সাংবাদিক আহত, ৮৮ জন লাঞ্ছিত ও ৯৫ জন হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন। পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে ৪০ সাংবাদিকের ওপর হামলা, দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানসহ ৩ জনকে গ্রেফতার, ১ জন অপহৃত ও ২৬ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
আলোচিত আরও খুন : আলোচিত হত্যাকাণ্ডের মধ্যে ঢাকায় সংসদ ভবন এলাকায় যুবলীগ নেতা ইব্রাহীম হত্যা, যাত্রাবাড়ীতে ব্যবসায়ী দম্পতিসহ ট্রিপল মার্ডার, গুলশানে বাসায় ঢুকে মা ও মেয়েকে গুলি করে হত্যা, মগবাজারে যুবলীগ নেতা ইউসুফ আলী সরদার হত্যা, খিলগাঁওয়ে প্রকৌশলী হত্যা, মহাখালীতে কর্মচারী নেতা সিদ্দিকুর রহমান ও খিলগাঁওয়ে গৃহবধূ কণিকা হত্যা, মিরপুরে ইডেন কলেজের ছাত্রী মেনকা ও স্বর্ণ ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান হত্যাকাণ্ড নগরবাসীর মাঝে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। যুবদলের ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) সভাপতি ও ৭০ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার হাজী আহমেদ হোসেন, ক্যান্টনমেন্টের মানিকদি এলাকায় ছাত্রলীগ নেতা ফারুক, কারওয়ানবাজারে দিনদুপুরে গুলি করে ৩ ব্যবসায়ী, মোহাম্মদপুরে অপহরণের পর গুলি করে বিএনপি নেতা শিপু, ধনিয়া কলেজের ছাত্র আমজাদ হোসেন, সবুজবাগে ওসমান গণি ও গৃহবধূ শাহিনুর বেগম, পুরনো ঢাকায় ৪০ লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে দুর্বৃত্তদের গুলিতে জুয়েলারি ব্যবসায়ী প্রেমকৃষ্ণ রায়, গুলশানের কালাচাঁদপুরে নিজ বাড়িতে নার্সারি ব্যবসায়ী সাদেকুর রহমান ও তার স্ত্রী রোমানা নার্গিস, পুরনো ঢাকার কোতোয়ালি থানার সাব ইন্সপেক্টর গৌতম, মগবাজারে টেন্ডার বিরোধে ছাত্রলীগ ক্যাডারদের হামলায় যুবলীগ নেতা ইউসুফ আলী সরদার, বনানীতে ছিনতাইকারীদের গুলিতে পুলিশের এসআই, গুলশানে মানিচেঞ্জ ব্যবসায়ী ফারুক আহম্মদ এবং তেজতুরীবাজারে স্কুলছাত্র রুবেল আহমেদকে হত্যা করা হয়। পুরনো ঢাকায় ডিশ ব্যবসায়ী আজগরকে হত্যা করে লাশ ১৫ টুকরা করে সন্ত্রাসীরা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সন্ত্রাসীদের হামলায় সাবেক ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান ও হোসেন মিয়া মারা যান। এছাড়াও লালমনিরহাটে বিএনপি নেতা ও ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম, বড়াইগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বাবু, নাটোরে কলেজশিক্ষক মিজানুর রহমান, রূপগঞ্জে জামাল উদ্দিন, কুষ্টিয়া-১ আসনের আওয়ামী লীগদলীয় এমপি আফাজউদ্দিন আহম্মেদের বাড়িতে বোমা বিস্ফোরণে ৩ জন নিহত হয়।
অন্যদিকে ২০০৯ সালের উল্লেখযোগ্য খুনের মধ্যে যাত্রাবাড়ীতে মা ও তার ২ মেয়ে, ফকিরাপুলবাজারের সামনে ৩২নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সালাউদ্দিন সুমন, মতিঝিলে মুক্তিযোদ্ধা ও ব্যবসায়ী আবদুর রাজ্জাক, সিভিল এভিয়েশনের নিরাপত্তা কর্মী আসাদুজ্জামান, মিরপুরে একটি পেট্রল পাম্পের হিসাবরক্ষককে গুলি করে পৌনে ৮ লাখ টাকা ছিনতাই, বাড্ডায় ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেনের শ্বশুর মোবারক আলী, খিলগাঁও আইডিয়াল সিটি কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল চন্দন চক্রবর্তী ওরফে সাজ্জাদ হোসেন এবং ধলপুরে অ্যাডভোকেট শামসুল হক রিন্টুকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়।
ইভটিজিং ও নারীর প্রতি সহিংসতা : পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, গত তিন বছরে ইভটিজিংয়ের ঘটনায় আত্মহত্যা করেছে ১৫০ জন। ২০১০ সালে ইভটিজিংয়ের শিকার হয়ে ২৮ নারী আত্মহত্যা করেছে। প্রতিবাদ করতে গিয়ে ৮ অভিভাবক খুন হয়েছেন এবং বখাটেদের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন ১৮ তরুণী। র্যাবের হিসাবমতে, গত এক বছরেই ইভটিজিংয়ের শিকার হয়েছে ১৩৮ কিশোরী ও তরুণী এবং গ্রেফতার হয়েছে ১২৬ জন। ২০১০ সালে দেশে ইভটিজিংয়ের ঘটনায় খুন-খারাবি, অভিভাবকের ওপর হামলা ও তরুণীদের হাত-পা কেটে নেয়ার মতো লোমহর্ষক ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যায়। প্রতিবাদকারীরাও রোষানলে পড়েন। বখাটেদের হামলায় নাটোরের কলেজশিক্ষক মিজানুর রহমান এবং ফরিদপুরে এক কিশোরীর মা চাঁপা রানী ভৌমিকের মৃত্যু তোলপাড় সৃষ্টি করে। অপরাধ দমনে র্যাব-পুলিশ ও গোয়েন্দাদের মাঠে নামানো হয়। পরে হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী ভ্রাম্যমাণ আদালত গঠন করে সারাদেশে এ অপরাধ প্রতিরোধ করার কার্যক্রম চালু করা হয়।
সহিংসতা : ২০১০ সালের ১১ অক্টোবর সিরাজগঞ্জে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সভাস্থলে ট্রেনে কাটা পড়ে পাঁচজনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। যমুনা সেতুর পশ্চিম সংযোগ সড়কের মুলিবাড়ী রেলওয়ে ক্রসিং-সংলগ্ন এলাকায় এ দুর্ঘটনায় আহত হয় প্রায় অর্ধশতাধিক। নিহতরা বিএনপির কর্মী ও সমর্থক। এ ঘটনায় পুলিশ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষও হয়। পুলিশ মিছিলে গুলি ছোড়ে। বিক্ষুব্ধ জনতা ট্রেনটিতে অগ্নিসংযোগ করে। এ ঘটনাকে বিএনপি পরিকল্পিত বলে অভিযোগ করেছে। এছাড়া নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সেনা আবাসন প্রকল্পের নাম করে কম দামে জমি কেনা ও জমি দখল নিয়ে গ্রামবাসীর সঙ্গে সেনা ও পুলিশের সংঘর্ষের সময় মোস্তফা জামাল উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। বছরের প্রথম দিকে ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র আবু বকর খুন হয়। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে উভয়পক্ষ রামদা, চাপাতি, লাঠি, হকিস্টিক নিয়ে একে অপরের ওপর হামলা চালায়।
চাঁদাবাজি : গত তিন বছরে দেশজুড়ে ছিল চাঁদাবাজির মহোত্সব। চাঁদাবাজি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে ব্যবসায়ী, পেশাজীবী, শিক্ষক, চাকরিজীবী, শ্রমজীবী, খেটে খাওয়া মানুষ কেউই নিস্তার পায়নি। সমাজের শীর্ষ ব্যক্তি থেকে শুরু করে পেটের দায়ে রাস্তায় দাঁড়ানো ভাসমান পতিতা পর্যন্ত সবাইকে চাঁদা দিতে হচ্ছে। চাঁদাবাজির অভিযোগে চলতি বছর নভেম্বর মাসে রাজধানীর সোবহানবাগ এলাকা থেকে মদ্যপ অবস্থায় আওয়ামী লীগ নেতা হারুনুর রশিদ ওরফে তৈমুরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তৈমুর রাজধানীর ৫১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ প্রচার সম্পাদক ছিলেন। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির ৫টি মামলা রয়েছে।
টেন্ডারবাজি : মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ছাত্রলীগের টেন্ডারবাজি ও ভর্তিবাণিজ্য নিয়ে হানাহানিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অশান্ত হয়ে পড়ে। ছাত্রলীগের সশস্ত্র মহড়া, অস্ত্রবাজির ঘটনা বলতে গেলে ওপেন সিক্রেট। ছাত্রলীগের একশ্রেণীর নেতা ও ক্যাডার ব্যাপক টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজির দায়ে অভিযুক্ত হয়। একপর্যায়ে এদের কর্মকাণ্ড এতটাই মাত্রা ছাড়িয়ে যায় যে, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বিরক্ত হয়ে ছাত্রলীগের সঙ্গে সাংগঠনিক সম্পর্ক ছিন্ন করার মৌখিক ঘোষণা দেন।
পুলিশ সদর দফতরে সংবাদ সম্মেলন করে হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছিলেন, যেসব এলাকায় টেন্ডারবাজি ঘটছে, সেসব স্থানে পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট এসপি ও ওসির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। টেন্ডারবাজিতে জড়িতদের ছাড় দেয়া হবে না বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনের এমন হুঙ্কারেও সরকারি দলের ক্যাডারদের বেপরোয়া টেন্ডারবাজি ঠেকাতে প্রশাসনও ব্যর্থ হয়।
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুপ্তহত্যা প্রসঙ্গে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, দেশ এভাবে চলতে পারে না। গুপ্তহত্যা ও গুম র্যাব-পুলিশ না করে থাকলে তবে কারা করছে, তাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর স্পষ্ট করা উচিত। তিনি বলেন, পুলিশকে সরকারের লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে পরিচালিত হতে দেয়া যায় না। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে সরকারকেই জবাবদিহি করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। আইনশৃঙ্খলার অবনতি প্রসঙ্গে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকার দাবি করেন, পুলিশ বা র্যাব গুমের সঙ্গে জড়িত নয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে মানুষের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।
Wednesday, 21 December 2011
বাংলাদেশ সরকার চরমভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে : কানাডীয় এমপি স্কট মেকাই
মন্ট্রিয়ল (কানাডা) থেকে প্রতিনিধি
৪০তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল কানাডা শাখা আয়োজিত এক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কানাডার পার্লামেন্ট সদস্য স্কট মেকাই বলেছেন, বাংলাদেশ সরকার চরমভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জনকারী বাংলাদেশ পৃথিবীর বুকে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে বলে আমরা আশা করি। কিন্তু বর্তমান সরকারের সময়ে যেভাবে গুপ্ত হত্যা বেড়েছে, বিশেষ করে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন ও তাদের গুম করার খবর সত্যিই উদ্বেগজনক।
মন্ট্রিয়লে ১৮ ডিসেম্বর এ আলোচনা সভায় কানাডা বিএনপির সভাপতি ফয়সল আহমেদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে বক্তৃতা করেন, কানাডার মানবাধিকার নেতা ও সাংবাদিক ডানিয়ান ব্রত, শিক্ষাবিদ ড. আবিদ বাহার, ড. হেদায়েত উল্ল্যা, জাসাস কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা এজাজ আখতার তৌফিক, কানাডা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আরমান মিঞা মাস্টার, সহ-সভাপতি বহলুল হোসেন, কুইবেক বিএনপির সহ-সভাপতি শাহজাহান শামীম ও আখলাকুর রহমান আলমগীর, সাংগাঠনিক সম্পাদক নাসিম উদ্দিন, কানাডা বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক জয়নাল আবেদীন জামিল, বিএনপি নেতা সেলিম রেজা, মন্ট্রিয়ল মহানগর শাখার যুগ্ম সম্পাদক শাহেদ শরীফ সনেট, সাবেক ছাত্রনেতা মামুন আহমেদ, কানাডা বিএনপির মহিলা সম্পাদিকা সাথী মহিউদ্দিন, বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান, রিপন মোল্লা প্রমুখ। কানাডা বিএনপির সহ-সাধারণ সম্পাদক মুহিম আহমেদের পরিচালনায় বিশিষ্ট সাংবাদিক ডানিয়েল ব্রত বলেন, ভারত যদি টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ বন্ধ না করে তাহলে বাংলাদেশের উচিত ভারতের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করা।
সভাপতির বক্তব্যে ফয়সল আহমেদ চৌধুরী বলেন, প্রিয় জন্মভূমির এই দুঃসময়ে দলমতের ঊর্ধ্বে ওঠে এই ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে সারাবিশ্বে জনমত গড়ে তুলতে হবে। এর জন্য ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই।
সভার শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত ও স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানসহ সব মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সভা শেষে কানাডায় বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী শুভ্র সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2011/12/21/123296
৪০তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল কানাডা শাখা আয়োজিত এক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কানাডার পার্লামেন্ট সদস্য স্কট মেকাই বলেছেন, বাংলাদেশ সরকার চরমভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জনকারী বাংলাদেশ পৃথিবীর বুকে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে বলে আমরা আশা করি। কিন্তু বর্তমান সরকারের সময়ে যেভাবে গুপ্ত হত্যা বেড়েছে, বিশেষ করে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন ও তাদের গুম করার খবর সত্যিই উদ্বেগজনক।
মন্ট্রিয়লে ১৮ ডিসেম্বর এ আলোচনা সভায় কানাডা বিএনপির সভাপতি ফয়সল আহমেদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে বক্তৃতা করেন, কানাডার মানবাধিকার নেতা ও সাংবাদিক ডানিয়ান ব্রত, শিক্ষাবিদ ড. আবিদ বাহার, ড. হেদায়েত উল্ল্যা, জাসাস কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা এজাজ আখতার তৌফিক, কানাডা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আরমান মিঞা মাস্টার, সহ-সভাপতি বহলুল হোসেন, কুইবেক বিএনপির সহ-সভাপতি শাহজাহান শামীম ও আখলাকুর রহমান আলমগীর, সাংগাঠনিক সম্পাদক নাসিম উদ্দিন, কানাডা বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক জয়নাল আবেদীন জামিল, বিএনপি নেতা সেলিম রেজা, মন্ট্রিয়ল মহানগর শাখার যুগ্ম সম্পাদক শাহেদ শরীফ সনেট, সাবেক ছাত্রনেতা মামুন আহমেদ, কানাডা বিএনপির মহিলা সম্পাদিকা সাথী মহিউদ্দিন, বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান, রিপন মোল্লা প্রমুখ। কানাডা বিএনপির সহ-সাধারণ সম্পাদক মুহিম আহমেদের পরিচালনায় বিশিষ্ট সাংবাদিক ডানিয়েল ব্রত বলেন, ভারত যদি টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ বন্ধ না করে তাহলে বাংলাদেশের উচিত ভারতের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করা।
সভাপতির বক্তব্যে ফয়সল আহমেদ চৌধুরী বলেন, প্রিয় জন্মভূমির এই দুঃসময়ে দলমতের ঊর্ধ্বে ওঠে এই ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে সারাবিশ্বে জনমত গড়ে তুলতে হবে। এর জন্য ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই।
সভার শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত ও স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানসহ সব মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সভা শেষে কানাডায় বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী শুভ্র সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2011/12/21/123296
Friday, 9 December 2011
বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে অহরহ এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশনের বিবৃতি
সমকাল ডেস্ক
বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির কঠোর সমালোচনা করেছে এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন (এএইচআরসি)। সংস্থাটি বলেছে, বাংলাদেশে বিচার বহির্ভূত হত্যাসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা অহরহ ঘটছে এবং অনেক ভুক্তভোগী বিচার ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে আইনের আশ্রয় নিতে পারছেন না। মানবাধিকারের বিবেচনায় রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের দেউলিয়াপনা প্রকাশ পাচ্ছে। আজ শনিবার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার
দিবসকে সামনে রেখে গতকাল শুক্রবার সংস্থাটি এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেছে। সংস্থার ওয়েবসাইটে এই বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে এ বছরের শেষের দিকে সংস্থাটি চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রকাশ করবে।
এএইচআরসি বলেছে, বাংলাদেশে একটি সংস্থার সদস্যদের দিয়ে অপহরণ, হেফাজতে রেখে নির্যাতন, বিচার বহির্ভূত হত্যা, গোপন হত্যা, অবৈধ গ্রেফতার, ডিটেনশন এবং সাজানো অভিযোগ দায়েরের ঘটনা অব্যাহত আছে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হচ্ছে। বিচার বিভাগীয় প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো নিয়ে ব্যস্ত থাকে। সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় খুব কম ক্ষেত্রেই। অভিযোগ গ্রহণ, দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের মুখোমুখি করা এবং সুষ্ঠু বিচারের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো আদৌ কাজ করছে না।
মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য গণমাধ্যমকর্মীদের লড়াই করতে হচ্ছে। সরকারবিরোধী সমাবেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আক্রমণ চালাচ্ছে। মানবাধিকার রক্ষায় সোচ্চার কর্মীরাও আক্রমণের শিকার হচ্ছেন এবং নিরাপত্তা বাহিনী বিভিন্নভাবে তাদের হয়রানি করছে।
নিরাপত্তা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তাদের সদস্যদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ সাধারণত অস্বীকার করে থাকে এবং যারা অভিযোগ করেন তাদের আরও হয়রানির শিকার হতে হয়। রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য ক্ষমতাসীনরা দায়ী ব্যক্তিদের পক্ষ নেন এবং তাদের দণ্ড মওকুফ করে দেন। বিরোধী দল এসব সমস্যা সমাধানে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে কোনো সুস্পষ্ট অঙ্গীকার করে না, বরং ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগলাভের আশায় সরকারের সমালোচনা করা যায়_ এমন পরিস্থিতি সৃষ্টির অপেক্ষায় থাকে।
সরকারের প্রভাবশালীরা সাধারণত লোক দেখানো অঙ্গীকার প্রকাশে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত থাকেন। এমনকি মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের রক্ষায় তারা ভূমিকা নেন।
বাস্তব সত্য হচ্ছে, যারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হন তারা সান্ত্বনা পাওয়ার জন্য যেতে পারেন_ এমন কোনো স্থান নেই। ন্যায়বিচার পাওয়ারও সুযোগ থাকে না তাদের। মানবাধিকার রক্ষার ব্যাপারে ক্ষমতাসীনদের অঙ্গীকার বছরের পর বছর অপূর্ণই থেকে যায়।
২০১১ সালে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে এ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যুর জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে কার্যকর আইন নেই। এ ব্যাপারে একটি বিলের পক্ষে সংসদীয় কমিটি মত দিলেও বিষয়টি দু'বছরের বেশি সময় ধরে ঝুলে আছে।
যারা নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাদের বক্তব্য শোনার জন্য সুশীল সমাজ ও সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে এএইচআরসি। সংস্থাটি বলেছে, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় অকার্যকর প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কারে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।
বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির কঠোর সমালোচনা করেছে এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন (এএইচআরসি)। সংস্থাটি বলেছে, বাংলাদেশে বিচার বহির্ভূত হত্যাসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা অহরহ ঘটছে এবং অনেক ভুক্তভোগী বিচার ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে আইনের আশ্রয় নিতে পারছেন না। মানবাধিকারের বিবেচনায় রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের দেউলিয়াপনা প্রকাশ পাচ্ছে। আজ শনিবার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার
দিবসকে সামনে রেখে গতকাল শুক্রবার সংস্থাটি এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেছে। সংস্থার ওয়েবসাইটে এই বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে এ বছরের শেষের দিকে সংস্থাটি চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রকাশ করবে।
এএইচআরসি বলেছে, বাংলাদেশে একটি সংস্থার সদস্যদের দিয়ে অপহরণ, হেফাজতে রেখে নির্যাতন, বিচার বহির্ভূত হত্যা, গোপন হত্যা, অবৈধ গ্রেফতার, ডিটেনশন এবং সাজানো অভিযোগ দায়েরের ঘটনা অব্যাহত আছে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হচ্ছে। বিচার বিভাগীয় প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো নিয়ে ব্যস্ত থাকে। সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় খুব কম ক্ষেত্রেই। অভিযোগ গ্রহণ, দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের মুখোমুখি করা এবং সুষ্ঠু বিচারের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো আদৌ কাজ করছে না।
মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য গণমাধ্যমকর্মীদের লড়াই করতে হচ্ছে। সরকারবিরোধী সমাবেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আক্রমণ চালাচ্ছে। মানবাধিকার রক্ষায় সোচ্চার কর্মীরাও আক্রমণের শিকার হচ্ছেন এবং নিরাপত্তা বাহিনী বিভিন্নভাবে তাদের হয়রানি করছে।
নিরাপত্তা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তাদের সদস্যদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ সাধারণত অস্বীকার করে থাকে এবং যারা অভিযোগ করেন তাদের আরও হয়রানির শিকার হতে হয়। রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য ক্ষমতাসীনরা দায়ী ব্যক্তিদের পক্ষ নেন এবং তাদের দণ্ড মওকুফ করে দেন। বিরোধী দল এসব সমস্যা সমাধানে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে কোনো সুস্পষ্ট অঙ্গীকার করে না, বরং ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগলাভের আশায় সরকারের সমালোচনা করা যায়_ এমন পরিস্থিতি সৃষ্টির অপেক্ষায় থাকে।
সরকারের প্রভাবশালীরা সাধারণত লোক দেখানো অঙ্গীকার প্রকাশে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত থাকেন। এমনকি মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের রক্ষায় তারা ভূমিকা নেন।
বাস্তব সত্য হচ্ছে, যারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হন তারা সান্ত্বনা পাওয়ার জন্য যেতে পারেন_ এমন কোনো স্থান নেই। ন্যায়বিচার পাওয়ারও সুযোগ থাকে না তাদের। মানবাধিকার রক্ষার ব্যাপারে ক্ষমতাসীনদের অঙ্গীকার বছরের পর বছর অপূর্ণই থেকে যায়।
২০১১ সালে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে এ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যুর জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে কার্যকর আইন নেই। এ ব্যাপারে একটি বিলের পক্ষে সংসদীয় কমিটি মত দিলেও বিষয়টি দু'বছরের বেশি সময় ধরে ঝুলে আছে।
যারা নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাদের বক্তব্য শোনার জন্য সুশীল সমাজ ও সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে এএইচআরসি। সংস্থাটি বলেছে, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় অকার্যকর প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কারে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।
হায়রে মানবাধিকার!!
শওকত মাহমুদ
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর দীর্ঘ মুসাবিদায় ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর বিশ্বজনীন মানবাধিকার সনদ গৃহীত হয়। ৬৩ বছর পেরিয়ে গেল। আজ বিশ্ব মানবাধিকার দিবসে দাঁড়িয়ে, কোনো এক ধরনের জীবনবৃত্তে দৃষ্টি না ফেলেই হতাশা এবং আতঙ্কে শুধু এটুকুই বলতে পারি, দু’টি ভৌগোলিক ও রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতার পরেও বাংলাদেশের মানুষ মানবাধিকারের সিকিভাগ স্বাদ পায়নি। এ মুহূর্তের বাংলাদেশ যে প্রায় মানবাধিকার-শূন্য এবং সে জন্য এক বদ্ধজলাশয়ে আমরা একে অপরকে ফাঁকি দিয়ে গিলে-খেয়ে-বাড়তে-চাওয়া ব্যাঙাচিদের মতো টিকে থাকার সংগ্রামে প্রবৃত্ত। সে কথা তো আন্তর্জাতিক সমাজই বলছে। শাসকদের ফ্যাসিবাদী আচরণের জন্য অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতো শীর্ষ মানবাধিকার-সুরক্ষা সংগঠন এই আন্তর্জাতিক আহ্বান জানিয়েছে, যেন বাংলাদেশের কাছে কেউ অস্ত্র বিক্রি না করে। তাদের মতে, এসব অস্ত্র বাংলাদেশের মানুষের মানবাধিকার লঙ্ঘনে ব্যবহৃত হয়। ক্রসফায়ার, গুপ্ত হত্যা, পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু, সীমান্তে নির্বিচারে বাংলাদেশী হত্যা, আদালতে ন্যায্য বিচারের সঙ্কট, মত প্রকাশের স্বাধীনতায় আঘাত, বিরোধী দল ও মতের প্রতি হিংসাত্মক আচরণ, সাংবাদিক-নির্যাতন মানবাধিকারের সব সূচকই সংখ্যা ও আতঙ্কের মাত্রায় রেকর্ডভঙ্গকারী।
ব্রিটেনের সাবেক লর্ড চিফ জাস্টিস এবং বিচারপতি হিসেবে অসম্ভব স্বাধীন এবং মানবাধিকার-বান্ধব বলে পরিচিত ছিলেন এবং ঐতিহাসিক রায়ে সরকারকে নাস্তানাবুদ করেছেন, সেই লর্ড বিংহামের (দি রুল অব ল খ্যাত) একটি কথা উদ্ধৃত না করে পারছি না। তিনি বলছেন, ‘A state which savagely represses or persecutes sections of its people cannot in my view he regarded as observing the rule of law, even if the transport of the persecuted minority to the concentration camp or the compulsory exposure of female children on the mountainside is the subject of detailed laws duly enacted and scrupulously observed.” [P-67, The Rule of Law). অর্থাত্ জনগণের নানা অংশকে যদি একটি রাষ্ট্র নির্মমভাবে নির্যাতিত ও খুন করে, তাকে আইনের শাসন মান্যকারী সরকার বলা যাবে না। যদি সংসদে সব নিয়ম মেনে এমন আইন পাস করা হয়, যার দায়ে কাউকে নিগ্রহের শিকার বানিয়ে পূতিগন্ধময় আতঙ্কজনক বন্দি শিবিরে পাঠানো হয় অথবা বাচ্চা মেয়েদের পাহাড়ে থাকতে বাধ্য করা হয়, তাহলেও সে রাষ্ট্র মানবাধিকারের পরিপন্থী। অর্থটা পরিষ্কার। আইন যদি মানবাধিকার খর্বকারী হয়, তা হলেও চলবে না। আইনকে আইনের মতো হতে হবে। বিখ্যাত দার্শনিক স্পিনোয়ার স্মরণীয় উক্তি হচ্ছে খধ িরং ঃযব সধঃযবসধঃরপং ড়ভ ভত্ববফড়স (আইন হচ্ছে স্বাধিকারের অংক). নািস জার্মানিতে বলা হতো, আইন হচ্ছে জার্মান জাতির অভিপ্রায়ের বহিঃপ্রকাশ এবং জার্মান জাতির অভিপ্রায় হিটলারের মধ্যে বিলীন। ধরা যাক, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক দুটি আইনের কথা। পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধন আইনটি পাস হলো স্রেফ প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তে। ওই সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির গরিষ্ঠরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা রাখার পক্ষে মত দিয়েছিলেন। যেসব গুণী ব্যক্তি, আইনবিদ ও সুশীল ব্যক্তি সংসদে মত দিতে গিয়েছিলেন, তারাও এর পক্ষে। কিন্তু সব নাকচ করলেন প্রধানমন্ত্রী। আর বিরোধী দল বা জনগণের মতামত নেয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা বাদই দিলাম। যেই সংবিধান সংশোধনীর প্রতি জাতির সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সমর্থন নেই, সংসদে পাস হয়ে গেলেই তা মেনে নিতে হবে? আবার ওই সংশোধনীর সমালোচনা করলেই রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ—এও কি এই সভ্য দুনিয়ায় সম্ভব? ঢাকা শহরকে ভাগ করার আরেকটি আইন পাস হলো মাত্র চার মিনিটে। প্রধানমন্ত্রী এবং হাতে গোনা কয়েক মন্ত্রী ও এমপি এর পক্ষে কথা বলেন। বাকিরা কেউ না। এই আইনও মানতে হবে? আজকের দুনিয়ায় বিশেষ করে ১৯৫০ সালে গৃহীত ইউরোপীয় মানবাধিকার সনদের রক্ষক ইউরোপীয় ইউনিয়ন অব্যাহতভাবে বলে আসছে যে গণতন্ত্রায়ণ, আইনের শাসন, মানবাধিকারের প্রতি সম্মান এবং সুশাসন পরস্পর অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।
মানবাধিকারের ধারণা : দুঃখজনক হলেও সত্য, মানবাধিকার সম্পর্কে আমাদের ধারণা স্পষ্ট নয়। এর উত্পত্তি এবং বিকাশ সম্পর্কেও যথেষ্ট ওয়াকিবহাল নই। মৌলিক অধিকারকে মানবাধিকার মনে করি অথচ মানবাধিকারের ব্যাপ্তি মৌলিক অধিকারের চেয়ে বেশি। যেমন—ভোটের অধিকার নাগরিকের মৌলিক অধিকার। কিন্তু একজন ব্যক্তির চিকিত্সা লাভের অধিকার মানবাধিকার, তিনি যে দেশের হাসপাতালেই যান না কেন। মানবাধিকারের ধারণাটি অনেক খোলামুখ। নতুন নতুন বিষয়সংক্রান্ত অধিকার, এমনকি জন্তুরও অধিকার, ক্রমে ক্রমে মানবাধিকারের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
মানবাধিকার বিষয়ে আমাদের ভাবনার দিগন্ত সময়ে সময়ে দুই দিকেই প্রসারিত হয়েছে—কাদের জন্য অধিকার এবং কোন্ কোন্ বিষয়ে অধিকার। দুই দিন আগে আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন সমকামীদের অধিকারকে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃতি দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, তাদের বৈদেশিক সাহায্যনির্ভর করবে সাহায্যগ্রহীতার সমকামী নাগরিকদের অধিকার-অনধিকারের ওপর। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থানের সঙ্গে অনেকেই সহমত নন।
মূলত ন্যাচারাল ল’ বা স্বাভাবিক আইনের ধারণা থেকে মানবাধিকারের যাত্রা শুরু। ফরাসিদের অষ্টাদশ শতাব্দীর সেই বিখ্যাত এনসাইক্লোপিডিয়াতে ‘ন্যাচারাল ল’ প্রবন্ধটির রচয়িতা ছিলেন অগ্রণী দার্শনিক দেনিস দিদেরো। তাঁর ব্যাখ্যা মতে, স্বাভাবিক অধিকার হচ্ছে এক ধরনের সর্বজনীন অভিপ্রায়, যা অন্তরালে থেকে আমাদের সামাজিক ভালো-মন্দ, উচিত-অনুচিত প্রভৃতির নির্দেশনা দিচ্ছে সতত। এই সর্বজনীকের নিরিখে আমাদের শিখে নিতে হবে আমি কীভাবে মানুষের মতো হয়ে উঠব, কীভাবে আমি নাগরিক হিসেবে, পিতা হিসেবে, মাতা হিসেবে, ঠিকঠাকভাবে আমার যাপন সাব্যস্ত করব। আমার স্বাভাবিক অধিকারে প্রতিবেশীর বিরূপ হওয়ার অথবা প্রতিবেশীর স্বাভাবিক অধিকারে আমারও বিপন্ন হওয়ার কিছু নেই। এই যে অন্য কারও ক্ষতি না হওয়া, এটাই স্বাভাবিক অধিকারের সীমা। দিদেরোর উপসংহার হচ্ছে এমন : ১. শুধু ব্যক্তি অভিপ্রায়ের দিকে মগ্ন ব্যক্তি মানবজাতির শত্রু, ২. প্রত্যেক ব্যক্তির জন্যই সর্বজনীন অভিপ্রায় এমন এক মানদণ্ড, যার সাহায্যে অন্যের কাছে আমার প্রত্যাশা এবং আমার কাছে অন্যের আকাঙ্ক্ষা সহজে নির্ণয় করা যায়, ৩. ওই অভিপ্রায়ের আলোকে নিজের সমাজের কাছে একজন ব্যক্তির দায় যেমন নির্ধারণ করা যায়, তেমনি অন্য সমাজের কাছেও নিজের সমাজের দায় নির্ণয় করা সম্ভব, ৪. সর্বজনীন অভিপ্রায়কে মেনে চলাই সব সমাজের মূল ভিত্তি এবং ৫. আইন সবার জন্য, কোনো একক ব্যক্তির জন্য নয়। এর পর সামাজিক চুক্তির চিন্তা প্রসঙ্গে জন লকের মতো দার্শনিকরা মানবাধিকার নিয়ে ভেবেছিলেন। তিনিও স্বাভাবিক আইনের ভিত্তিতে স্বাভাবিক অধিকারের ধারণা দাঁড় করাতে চেয়েছিলেন। আত্মরক্ষার অধিকার, সম্পত্তি রক্ষার অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষার অধিকার—এই তিন অধিকার ছিল লকের চিন্তায় মূল অধিকার। এই চিন্তাধারায় জ্যঁ জ্যাক রুশো মানবাধিকারকে সর্বজনীন করার ক্ষেত্রে আরও এগিয়ে যান। অধিকারসংক্রান্ত চিন্তার বিবর্তনে আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধও এক জরুরি পর্ব। ১৭৭৬ সালে টমাস জেফারসনের ঘোষণা মোতাবেক সব মানুষের সমানাধিকারের কথাটা খুব স্পষ্ট করে উচ্চারিত হয়েছিল। তাতে বলা হয়, ‘এই সত্য স্বতঃপ্রকাশ বলে আমরা গ্রহণ করি যে, সব মানুষই সৃষ্টিলগ্নে সমান এবং সৃষ্টিকর্তার হাত থেকেই তারা কিছু অপরিত্যাজ্য অধিকার অর্জন করেছে, এসব অধিকারের মধ্যে আছে জীবন, স্বাধীনতা ও সুখের সন্ধানের অধিকার।’ সম্পত্তির অধিকারের জায়গায় এলো সুখের সন্ধানের অধিকার। ১৭৮৯ সালে ফরাসিদের মানবাধিকার ও নাগরিক অধিকারের ঘোষণা মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার পক্ষে বিরাট অগ্রগতি। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের বিভীষিকার পর ১৯৪৮ সালের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বিশ্বজনীন মানবাধিকার সনদ গৃহীত হলো।
তথ্য অধিকার : তথ্যের অধিকার কি মানবাধিকারের পর্যায়ে পড়ে কি না, শুরুতে এ নিয়ে অস্পষ্টতা থাকলেও ফরাসি ঘোষণার পর সে বিভ্রান্তি কেটে যায়। এই ঘোষণার ১৭টি অনুচ্ছেদের ১১-তে বলা হয়েছে, ‘চিন্তা ও মতামতের অবাধ প্রবাহ মানুষের এক মহার্ঘ অধিকার। অতএব প্রত্যেক নাগরিকের বলা, লেখা ও ছাপানোর অবাধ স্বাধীনতা রয়েছে, তবে প্রচলিত আইন অনুসারে এ স্বাধীনতার অপব্যবহারের জন্য দায়িত্বও সেই নাগরিককে বহন করতে হবে।’ জাতিসংঘ সনদের ১৯ ধারায় আরও একটু এগিয়ে বলা হলো : ‘প্রত্যেকেরই মতামতের ও প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার আছে; এই অধিকারের মধ্যে আছে বিনা বাধায় মতামত পোষণ করা এবং কোনো সীমানা নিরপেক্ষভাবে যেকোনো মাধ্যমে তথ্য ও চিন্তা সন্ধান করা, পাওয়া এবং অন্যের কাছে পৌঁছে দেয়ার অধিকার।’ বাংলাদেশের সব সরকার অল্পবিস্তর এ সনদ এর আগে লঙ্ঘন করেছে। অথচ এসব সনদে স্বাক্ষরকারী প্রতিটি দেশের আইনের সমান শক্তি সনদেরও। বর্তমান মহাজোট সরকার সরাসরি মিডিয়া বন্ধ করে দিয়ে, অসাংবিধানিক নীতিমালা চাপিয়ে, সাংবাদিকদের মেরে ও জেলে পুরে, টিভির টকশো ও সরকারি বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণ করে যে মাত্রায় মিডিয়া ও লেখক সমাজকে আপদমস্তকে চেপে ধরেছে, তার নিষ্কৃতি কোথায়? মানবাধিকার ও সেই প্রসঙ্গে তথ্যের অধিকার এ জন্যই জরুরি যে আমরা নির্বাচিতের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর ভেবেছিলাম এসব দিয়ে আমরা এক সমৃদ্ধ মানবিক জীবনযাপনের অনুকূল সমাজ ব্যবস্থায় যাব। উন্নয়ন হবে অধিকারভিত্তিক বা ভত্ববফড়স ড়ত্রবহঃবফ. হয়েছে উল্টোটা। তথ্য বা অতথ্যের আড়ালে জ্ঞানই হারিয়ে যাচ্ছে।
মানবাধিকারের স্তম্ভ : সাংবাদিক হিসেবে শুধু আত্ম-অধিকারের ঘাটতি নিয়ে কথা বলা শোভনীয় নয়। বড়দাগে মানবাধিকারের স্তম্ভ হচ্ছে— জীবনের প্রতি অধিকার, নির্যাতন নিষিদ্ধকরণ, ব্যক্তিস্বাধীনতা ও নিরাপত্তার অধিকার, ন্যায্য বিচার প্রাপ্তির অধিকার, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও পারিবারিক জীবনযাপনের অধিকার, চিন্তা, বিবেক ও ধর্মীয় স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং সমাবেশ ও সংঘের অধিকার।
ক্রসফায়ার বা গুপ্ত হত্যায় যে প্রায়ই লোক মরছে, তাদের কি জীবনের প্রতি অধিকার ছিল না? সেসবের তদন্ত করতে গিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক নারী কর্মকর্তাকে এই আমলে বিপদে পড়তে হয়েছিল। হাইকোর্টের যে বেঞ্চ ক্রসফায়ারের জন্য রুলনিশি জারি করেছিল, সেই বেঞ্চকেই ভেঙে দেয়া হয়। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি উপরোল্লিখিত প্রতিটি বিষয়ের জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সনদগুলোয় অনুস্বাক্ষর দিয়েছে। সেসব মানতে রাষ্ট্র বাধ্য। অথচ আমরা এ নিয়ে সোচ্চার হই না। জাতিসংঘের দ্বারস্থ হই না। ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতে এক ফিলিপিনি-ইউরোপীয় নাগরিক ফিলিপিনো সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকেছিল। সে সময় ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্টের হল্যান্ড সফরের কথা। আদালত ওই অতিথির জন্য আপস সমন জারি করে বললেন, ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট বেড়াতে এলে যেন আদালতে ঘুরে যান। ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট তার ইউরোপ সফরই বাতিল করে দিলেন। বাংলাদেশের ভেতরে ও বাইরে আন্তর্জাতিকমনা ব্যক্তিত্ব বা মেধা আছে, যারা একটু সোচ্ছার হলেই বাংলাদেশ-পরিচালকদের ঘাম ছুটে যেতে পারে। মানবাধিকারের স্তম্ভগুলো যে প্রতিদিন এই দেশে ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে, সে ব্যাপারে আমরা সোচ্চার হই না। শুধু বিরোধী দলের দায়িত্ব এসব নিয়ে বলা। কারণ তারা ভুক্তভোগী। তাদের কথা শুনতে অভিজন সমাজের বেসুরো লাগে। আবার বিরোধী দলটি কে, সে প্রশ্নও ওঠে। আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকলে দেশীয় মানবাধিকার সংগঠনগুলো কী চিত্কারই না করে। গণগ্রেফতারের ঘটনায় সুশীল সমাজ ‘রে রে’ করে তেড়ে ওঠে। কিন্তু বিএনপির ক্ষেত্রে তার সিকি ভাগও ঘটে না। বিএনপি নেতা তারেক রহমানের প্রতি নিরাপত্তাবাহিনীর অমানুষিক নির্যাতনকে আজকের প্রধানমন্ত্রী সংসদীয় বক্তৃতায় হাস্যরসের সঙ্গে উল্লেখ করেন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যে তাঁর বাড়ির মামলায় আপিল বিভাগে ন্যায্য বিচার (একতরফা শুনানির জন্য পাননি, সে সম্পর্কে সুশীল সমাজ বা মানবাধিকারপ্রেমীরা মুখ খোলেন না), যুদ্ধাপরাধ তথা মানবতাবিরোধী ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তোলা হলেই আক্রমণ শুরু হয়ে যায়। সুপ্রিমকোর্টের অ্যাডভোকেট এম ইউ আহমেদকে বিনা অভিযোগে ডিবি পুলিশ ধরে নিয়ে চার ঘণ্টার নির্যাতনে মেরে ফেলেছে বলে যে অভিযোগটি জাতির সামনে উলঙ্গ হয়েছিল, সে সম্পর্কে তো কোনো বিচারপতি সুয়োমোটো রুল জারি করে ডিবি পুলিশকে কাঠগড়ায় দাঁড় করায়নি। অথচ হাসপাতালে মৃত্যু বা চিকিত্সাহীনতার জন্য কোম্পানির পরিচালকমণ্ডলীকে আদালতে তলব করা হয়েছে। মানবাধিকার কমিশনকেও দেখিনি স্বইচ্ছায় তদন্ত করতে। আসলে রাজনীতির পক্ষ-বিপক্ষের তাড়না থেকে মানবাধিকারের প্রয়োগ দানবাধিকারকেই বোঝায়। তাই আসুন সবাই মিলে রাষ্ট্রের নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হই, মানুষের অধিকারকে সম্মান করতে শিখি এবং এই ভাবনায় জেগে উঠি যে কোনো নিরপরাধ মানুষ যেন শাস্তি না পায়। বিনা বিচারে কেউ যেন কারাভোগ না করে, আদালতগুলো সাহসের সঙ্গে নিরপেক্ষ বিচার করুক, ভিন্নমতের জন্য কারও শাস্তি না হয়, প্রত্যেক মানুষ, সংঘ বা দল সমাবেশের অধিকার ভোগ করে, মিডিয়া সরকারের আঁচড়মুক্ত থাকবে এবং কোনো আইন যেন মানুষের অধিকারকে সামান্যতমও খর্ব করতে না পারে। আমি আশাবাদী যে বাংলাদেশ একদিন মানবিক রাষ্ট্র হবেই, তবে মহাজোট সরকার আমাদের অনেকখানি পিছিয়ে নিয়ে গেছে। ইউরোপের আলোক বর্ষের পেছনে আমরা এখনও। তাদের অতীতটা আমাদের বর্তমান। অথচ গণতান্ত্রিকতায় এক সময় আমরা ছিলাম এগিয়ে। ইউরোপের মানুষ যখন পাথরের বাসনে চাকু দিয়ে গোশত কেটে খেত, তখন আমরা কলাপাতা ছেড়ে বাসনে খাওয়া শিখে ফেলেছি।
Wednesday, 23 November 2011
অধিকার-এর সম্মেলনে মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান : এখন গুম করে বিচার বহির্ভূত হত্যা চলছে : অবশ্যই পোশাক পরে গ্রেফতার করতে হবে
বিশেষ প্রতিনিধি
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যার ক্ষেত্রে এখন কৌশল বদলানো হয়েছে। আগে ক্রসফায়ার বলা হতো, এখন নাগরিকদের তুলে নিয়ে গুম করা হচ্ছে। যাকে গুম করা হয়, তার হদিস পাওয়া যায় না। এমনকি পরিবার লাশের খোঁজও পায় না।
মানবাধিকার সংগঠন অধিকার-এর উদ্যোগে মানবাধিকার কর্মীদের দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
অধিকার-এর সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট আদিলুর রহমান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সফররত সিনিয়র গবেষক আব্বাস ফয়েজ, আয়ারল্যান্ডভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ফ্রন্টলাইন ডিফেন্ডারের সফররত এশিয়াবিষয়ক কো-অর্ডিনেটর পকপং লাওয়াসিরি। উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট কবি ও বুদ্ধিজীবী অধিকার-এর উপদেষ্টা ফরহাদ মজহার।
ড. মিজানুর রহমান বলেন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে অনেক লোক এসে নালিশ করেন—কারও স্বামী, কারও ভাই, কারও বাবা, কারও ছেলেকে সাদা পোশাকধারী লোকেরা ধরে নিয়ে যাওয়ার পর গুম করা হয়েছে, কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তখন মানবাধিকার কমিশন র্যাব-পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও শুধু বলা হয়, দেখছি স্যার। এর বেশি কিছু করারও থাকে না। তিনি পুলিশের ইউনিফরম ছাড়া গ্রেফতার বা আটক অভিযান বন্ধের জন্য সরকারের কাছে মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে দাবি জানান। তিনি বলেন, গ্রেফতার অভিযান কখনও সাদা পোশাকে হওয়া উচিত নয়। ইউনিফরম লাগিয়ে পুলিশের পোশাকে আটক বা গ্রেফতার অভিযান চালাতে হবে।
ড. মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের ক্রিমিনাল জাস্টিসের ব্যর্থতার কারণেই সাধারণত প্রথম দিকে ক্রসফায়ারকে মানুষ সমর্থন দিত এবং কারও ক্রসফায়ার হলে অনেকেই খুশি হতো। অপরাধীরা জামিনে বের হয়ে এসে অথবা বিচারে খালাস পেয়ে দ্বিগুণ উদ্যোগে অপরাধ করত। প্রথম দিকে ক্রসফায়ারকে অনেকেই ভালো বলে মন্তব্য করেছে। কিন্তু বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কখনও ভালো হতে পারে না। এটা সবারই মনে রাখতে হবে, অন্যের ঘরে আগুন লাগলে চুপ করে বসে থাকা উচিত নয়, সে আগুন নিজের ঘরেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। ক্রসফায়ারও এখন সেই রূপ ধারণ করেছে। তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় বর্তমান সরকারের প্রতিশ্রুতি ছিল ক্রসফায়ারের বিষয়ে জিরো টলারেন্স দেখানো হবে। নির্বাচনের পরও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ওয়াদা করেছিলেন, ক্রসফায়ারে জিরো টলারেন্স দেখানো হবে; কিন্তু সেই ওয়াদা সরকার রক্ষা করেনি। তিনি বলেন, একসময় অপরাধীদের ধরে এনে ডিটেনশন দেয়া হতো। এখন আর ডিটেনশন দেয়া হয় না, একেবারে পরপারে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, শুধু সরকারি পর্যায়ে নয়—বেসরকারি পর্যায়ে এমনকি ব্যক্তিগত পর্যায়েও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোনো না কোনো ব্যবসায়ী গ্রুপের উদ্যোগে সাধারণ মানুষের ভূমি দখল করে বা বিক্রি করতে বাধ্য করে আবাসিক প্রকল্প গড়ে তোলা হচ্ছে। এটাও মানবাধিকারের লঙ্ঘন। এই সংঘবদ্ধ চক্রটি হচ্ছে কালোটাকার মালিক। তারা টাকার বিনিময়ে সমাজের প্রভাবশালীদের কিনে নেয়। রাষ্ট্র যদি প্রশ্রয় না দিত, তারা এত সুচারুভাবে মানুষের জমি দখল বা বিক্রিতে বাধ্য করে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সুযোগ পেত না।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের আব্বাস ফয়েজ বলেন, বাংলাদেশে সরকারি বিভিন্ন এজেন্সি ও পুলিশ মানুষের অধিকার রক্ষায় কাজ করে না। সরকার নাগরিকদের অধিকার রক্ষায় সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে। পুলিশ ও র্যাবের মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রসঙ্গে তিনি লিমনের ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, প্রথম দিকে বলা হলো ক্রসফায়ারে লিমনের পায়ে গুলি আঘাত করেছে। পরে আবার বলা হলো লিমন একজন চিহ্নিত অপরাধী। তার বিরুদ্ধে একপর্যায়ে অস্ত্র মামলা দেয়া হলো। সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের সদস্য হিসেবে আরেকটি মামলা দেয়া হয় লিমনের বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, এ বিষয়ে তদন্তের জন্য সরকার একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল। এই কমিটির রিপোর্ট আজও কেউ দেখতে পায়নি। তিনি বলেন, লিমনের বিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আমাদের দেখানো হোক। সরকারের ভাষ্য সঠিক হয়ে থাকলে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির রিপোর্ট গোপন করা হলো কেন?
উদ্বোধনী বক্তব্যে ফরহাদ মজহার বলেন, আমাদের আগে ব্যক্তির মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ব্যক্তির মানবাধিকার নিশ্চিত হলেই সমাজে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার কথা চিন্তা করা যায়।
Subscribe to:
Posts (Atom)